প্রতিদিনের মত আজও কলেজে লেট করে গেল শাহরিম। গণিত ক্লাস হচ্ছে। ম্যাডামের ক্লাস।দেরি করে গেলেও ম্যাম কিছু বলে না।ক্লাসে ঢুকেছে। পরীক্ষা ছিল। কিন্তু হবে না। এমনিতেই প্রস্তুতি ভালো ছিল না। পরীক্ষা না হওয়ায় খুশিই হল সে। শাহরিমের সবচেয়ে কাছের বন্ধু গুলো পরীক্ষা দেওয়ার ভয়ে কলেজেই আসে নি। গণিত ক্লাস শেষ হতে হতে পরিচয়টা দেওয়া যাক।
শাহরিম ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্র।শাহরিম যেই কলেজে পড়ি সেই কলেজের অধ্যক্ষ তার আব্বু। কলেজে আলাদা একটা ক্ষমতা আছে তার। সবার চোখেই সে দুষ্টু, চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। তার কাছের বন্ধুর অভাব নাই।রাশিদ,সাহিল, রানা আরো অনেক।
গণিত ক্লাস শেষ হতেই বন্ধুরা হাজির।সাহিলকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে।শাহরিম বলল “কি হয়ছে তোর?”
সাহিল:দোস্ত তোর জন্য দারুন খবর আছে।
শাহরিম:কি খবর দোস্ত?
সাহিল:দোস্ত হাইস্কুলে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে অনেক স্টুডেন্ট এসেছে।দোস্ত, হেব্বি সুন্দর সুন্দর মেয়ে এসেছে।চল, হাইস্কুলে যাই।
শাহরিম:এত মেয়ে আসছে কেন??
সাহিল:আরে দোস্ত গানের অনুষ্ঠান আছে হাইস্কুলে।
সাহিল যে হাইস্কুলের কথা বলছিল সেই স্কুল থেকে গত বছর ওরা সবাই এসএসসি পাস করেছে।শাহরিম, সাহিল সবাই ভালো ছাত্র ছিল।সবাই অনেক ভাল ফলাফল করেই পাস করেছিল।আর কলেজ আর হাইস্কুলের দূরত্ব মাঠের এপার ওপার। প্রিয় পাঠক বৃন্দ, কলেজ স্টুডেন্ট গুলো যে কি রকম হয় তা আপনারা ভাল করেই জানেন।শাহরিমকে হাইস্কুলের সব টিচার অনেক ভালোবাসত।শাহরিম এমনিতেই অনেক দুষ্টু।অনেক কথা বলতে পারত।সবাইকে মাতিয়ে রাখত।সাহিলের মুখ থেকে নিউজটা শোনার পর সবাই চলে গেল হাইস্কুলে।শাহরিম গিয়ে দেখে পরীদের মেলা লেগেছে।কত মেয়ে।অভাব নাই। বন্ধুরা তো এদিক ওদিক তাকিয়ে ভালো ভালো মেয়েদের খুঁজে বের করছে।শাহরিমের চোখে কোন মেয়ে নজরে আসছে না। এমনিতেই শাহরিম দেখতে অনেক সুন্দর। তাছাড়াও পারিবারিক অবস্থা ভালো।আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল একটু আকটু।শাহরিম ছেলেটা ছিল অনেক মিশুক। যেকোন কাজ পড়লে শাহরিমের ওপর সেই কাজ করার দায়িত্ব পড়ত। স্কুলে ঘুরতে ঘুরতে শাহরিমের হেডস্যারের সাথে দেখা হয়।শাহরিম এমনিতেই স্যারদের সাথে অনেক ফ্রী ছিল।শাহরিম হেডস্যার কে বলল,
“স্যার,এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে আসবে। একবারও বললেন না।লাইন টাইন করে দেন।”
হেডস্যার হাসতে হাসতে চলে গেল। ইতিমধ্যেই সকল স্যার-ম্যাডামের সাথে হালকা পাতলা দুষ্টুমি করা শেষ শাহরিমের। ওদিকে বন্ধুরা মেয়ে খুঁজতে ব্যস্ত। ভালো মেয়ে দেখলেই একটু ভাব জমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত সবাই।শাহরিম দেখছে আর ভাবছে আমার মনের মত মেয়ে যে কবে পাব। ভাবতে ভাবতে স্কুলের গেটের দিকে তাকালো সে।
এক নিমেষের মধ্যে তার চোখগুলো আটকে গেল গেটের কাছে। মনের মধ্যে একটা আকস্মিক ধাকধাক শুরু হয়েছে।সাত-আটজন মেয়ে আসছে স্কুলের দিকে।শাহরিমের চোখ আটকে আছে ঐ মেয়েদের দলের একজনের মাঝে।কি বাচ্চা বাচ্চা চেহারা।চোখে চশমা পড়া।যার জন্য মেয়েটাকে আরো সুন্দর লাগছিল।মেয়েটা মাঝে মাঝে হাসতেছে।কি নিষ্পাপ হাসি।আকাশী রঙের বোরকা আর সাদা রঙের হিজাব পড়ায় সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে কয়েকগুণ।শাহরিমের চোখ যেন আর সরছে না।মেয়েটা যেখানে যাচ্ছে শাহরিম সেখানে যাচ্ছে।যত দেখছে তত আকর্ষন বেড়ে যাচ্ছে।কি নিখুঁত সৌন্দর্য।নাহ! কিছু করতে হবে।শাহরিম ভাবে যে, যেভাবেই হোক ফুল বায়োডাটা জানতে হবে। শুরু হলো খোঁজাখুঁজি।শাহরিম দুজন ছোট ভাইকে ঠিক করল খোঁজ নেওয়ার জন্য।সকল খোঁজ খবর নেওয়া শেষ।
মেয়েটির নাম তনিমা। ক্লাস নাইনের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।ছাত্রী হিসেবে অনেক ভাল শাহরিমের বাসা থেকে ৭ কিমি দূরে বাড়ি।বাবা এসআই।একটা ভাই আছে।
শাহরিম সকল কিছু শোনার পর মেয়েটিকে ফলো করতে লাগলো। তনিমার সাথে যারা যারা এসেছিল সবাই গানে অংশগ্রহণ করল।তনিমার দলই প্রথম হয়েছিল।কি সুন্দর কণ্ঠ তার। তনিমা যখন শুনলো তারা প্রথম হয়েছে তখন সে সব বান্ধবীর গালে একটা করে চুমু দিল।শাহরিম দেখে তো লজ্জায় পড়ে গেল। কতটা বাচ্চাদের মত আচরণ হলে মেয়েটা এরকম করতে পারে। বন্ধুরা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিল যে শাহরিম একটা মেয়েকে ফলো করছে। বন্ধুরা গিয়ে শাহরিমকে জিজ্ঞাসা করে ঘটনা কি তোর?
শাহরিম:আরে কিসের ঘটনা?
বন্ধু:তুই মেয়ের পিছনে ঘুরছিস দেখতেছি।
শাহরিম: আরে না আমি নাকি মেয়ের পিছে ঘুরবো।কি যে বলিস।
বন্ধু:দেখ,আমরা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি যে তুই একটা মেয়ের পিছে ঘুরছিস। সত্যি বল।
বন্ধুদের জোরাজুরিতে শাহরিম সব বলে দিল এবং মেয়েটিকে দেখাল।সাহিল দেখে তো চমকে গেল।সাহিল বলে উঠল।”আরে লালা,এটাতো আমার খালাতো বোন হয়।শাহরিম শুনে তো লজ্জায় লাল হয়ে যায়।সাহিলকে জড়িয়ে ধরে বলে,”দোস্ত তুই আমায় শালা ডাকছিস কেন?আমি তো তোর দুলাভাই লাগি।”
সাহিল: দুলাভাই মানে??
শাহরিম:আরে, তনিমা তোর খালাতো বোন আর আমার বউ।তার মানে তুই আমার শালা আমি তোর শশুর থুক্কু দুলাভাই।
সাহিল:না দোস্ত।এটা সম্ভব না।
শাহরিম:সম্ভব না কেন?
সাহিল: কারণ আছে।
শাহরিম:কি কারণ বল।
সাহিল:কারণ,আমি ওকে ভালবাসি।
শাহরিম:কি বললি??আবার বল।
সাহিল:আমি ওকে ভালবাসি দোস্ত অনেক আগে থেকেই।বলতে পারি নি দোস্ত। আমার পরিবার আর ওর পরিবারের মধ্যে বিস্তর ফারাক।একটা হীনমন্যতা কাজ করত। দোস্ত আমি জানি ওর অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে হবে।তুইও অনেক ভালো ছেলে। কিন্তু তোর সাথে যদি ওর রিলেশন হয় আমি নিজেকে সামলাতে পারব না দোস্ত।তুই আমাকে ক্ষমা করিস।
শাহরিম ডাক দিল তনিমাকে।সাহিল তো অবাক। তনিমা কাঁদছে।শাহরিম বলল,আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছ কেন??যাও, সাহিলের কাছে যাও। তনিমা দৌড়ে চলে গেল সাহিলের কাছে। জড়িয়ে ধরল তাকে।সব বন্ধুরা হাত তালি দিচ্ছে।শাহরিম আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় নি।চলে এসেছে ঐখান থেকে। প্রিয় পাঠক বৃন্দ, ভাবছেন তো কিভাবে কি হল? চলুন দেখছ নিই কি ঘটেছিল।শাহরিম যখন পিছে পিছে ঘুরতেছিল। হঠাৎ করেই তনিমা ডাক দেই শাহরিমকে।শাহরিম তো মহা খুশি।ভাবে কাজ হয়ে গেছে।তনিমার কাছে যেতেই শাহরিম বলে;
শাহরিম:আমাকে ডেকেছেন?
তনিমা: আপনার নাম?
শাহরিম:শাহরিম হোসেন। আপনার নাম আমি জানি।তনিমা রহমান।
তনিমা: জ্বি,আপনি সাহিলের বন্ধু।তাই না?
শাহরিম: হ্যাঁ, আপনি কিভাবে জানলেন?
তনিমা:সাহিল আপনাকে আমার প্রতি আপনাকে নজর রাখতে বলেছে।তাই না?
শাহরিম:না তো।ও কেন বলবে?
তনিমা:থাক,আর মিথ্যা বলতে হবে না।আমি ওর খালাতো বোন।আমি জানি সাহিল আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু বলতে পারছে না।
তারপর সব ঘটনা খুলে বললো।শাহরিম তো শকড। জীবনের প্রথম ভালোবাসা যে এভাবে হারাবে শাহরিম বুঝতে পারে নি।শাহরিম ভাবে যেহেতু বন্ধু ভালোবেসেছে সেহেতু ভালোবাসা পাওয়ানোর ব্যবস্থা ওকেই করতে হবে।তাই,শাহরিম এই বুদ্ধি ঠিক করে এবং তনিমাকে জানাই। তারপরের ঘটনা আপনারা সবই জানেন। তানিম পরের দিনই ঢাকা চলে আসে কোচিং করবে বলে। পরবর্তীতে সাহিল ও তনিমার জীবনে যত বিপদ এসেছে শাহরিম দায়িত্ব নিয়ে তা সামাল দিয়েছে।
৫ বছর পর;
আজ সাহিল ও তনিমার বিয়ে। এতদিনে শাহরিম রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।শাহরিমই সাহিলকে একটা ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।সাহিল ও সাহিলের পুরো পরিবার সেদিন শাহরিমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিল। নিজের ভাইয়ের মতোই সাহিলের সব সমস্যা সমাধানে শাহরিম এগিয়ে আসত। বন্ধুত্ব তো মূল কারণ ছিলই কারণ ছিল আরো একটা। তনিমা। বিয়ের দিন, তনিমা বলেছিল,”ভাইয়া, আপনি আমাদের জন্য অনেক করেছেন।আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
শাহরিম বলেছিল”তোমাদের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে আমাকে স্মরণ করবে।আর সাহিল কে ভালো রাখবে।ও যেন কোন কষ্ট না পায়।’
তনিমা বলেছিল”আপনিও ভালো থাকবেন।”
শাহরিম আর কথা বাড়ায়নি।চলে আসে ওখান থেকে। চোখের কোণে এক ফোটা পানি জমা হয়।ভালো? হ্যাঁ, ভালো তো সে থাকতেই চাই। কোন না কোনদিন ভালো রাখার জন্য কেউ না কেউ আসবেই। অপেক্ষায় রইল শাহরিম।
……………………………………………সমাপ্ত……………………………………….