বসের সাথে একটা মিনি তর্ক করে আজ অফিস থেকে বেরিয়েছি। লোকটা জানে যে প্রতিদিন আমি ৩০ মিনিট আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যাই, কি কারনে যাই সেটাও জানে। তবুও উনার একটু বসগিরি ফলাতেই হবে। অফিস থেকে বেরিয়ে প্রথমেই গেলাম ফার্মেসি তে। শান্তার জন্য ঔষধ কিনতে হবে। এরপর গেলাম বাজারে। বেগুন আর টমেটো কিনলাম। ও বেগুন ভাজি আর টমেটো ভর্তা খেতে খুব পছন্দ করে।
ওহ প্রথমে আমার পরিচয় দেই। আমি শাওন। আর শান্তা আমার বৌ। ও প্রায় দু বছর যাবৎ বিছানায়। ইলেকট্রিক এক দুর্ঘটনায় ওর পুরো শরীর প্যারালাইজড। ।
বাসায় শুধু আমি আর শান্তা। ওর দেখাশোনা আমিই করি। উচ্ছল মেয়েটি কথাও বলতে পারেনা। শুধু তাকিয়ে থাকে।
বাসায় ঢুকে দেখলাম ও ঘুমাচ্ছে। আমি ওকে না জাগিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম। ওর পছন্দের খাবার রেডি করলাম। এরপর রুমে ফিরে দেখি ও জেগে আছে। আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে শান্তা।
নিজেকে ইদানিং কেন জানি সুপারপাওয়ারফুল মানুষ মনে হয় আমার। কেননা আমি শান্তার চোখের ভাষা অবলীলায় পড়তে পারি।
যেমন এখন ও বলছে, “তোমাকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন? কিছু খাওনি?”
আমি বললাম, “কাজের চাপে এ অবস্থা।”
ও হাসার চেষ্টা করে। ওর বাকানো মুখের অদ্ভুত হাসির চেষ্টাটুকু কেন জানি আমাকে প্রচণ্ড আনন্দ দেয়।
আমি ওর পাশে গিয়ে বসি।
এরপর এলোমেলো চুল গুলো আঁচড়ে দেই। ও অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে।
ওর চোখ দেখে বুঝলাম ও বলছে, “কেন এত কষ্ট করো আমার জন্য?
আমি হেসে উঠি। অসহায়ত্ব নিয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে ও।
প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে আমার। একটু পরে উঠে খাবার রেডি করলাম। নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিলাম।
ও খাচ্ছে । অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে আমার হাতে খাচ্ছে ও!
ওর চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। যেগুলোর ভাষাও আমি বুঝি। ওগুলো যেন বলছিলো, ” দু:খিত শাওন, তোমাকে একটা সুখী জীবন দিতে পারলাম না, তবে তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি ”
আমি উত্তর দেই ” তুমি যেভাবেই থাকো, আমি সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখবো। আমিও তোমাকে ভীষণ ভালবাসি ”
শান্তার খুব ইচ্ছে ছিল কাশ্মীর বেড়াতে যাবে। আমার দিকে বরফের গোলা ছুড়ে মারবে। আমিও ওর দিকে মারবো। কিন্তু অর্থাভাবে আর হয়নি। আমি প্রায় রাতেই স্বপ্ন দেখি শান্তা সুস্থ হয়ে গেছে। ও আর আমি কাশ্মীরে ধবধবে বরফের মধ্যে ছুটে চলেছি। ও আমার পিছনে ছুটছে আর বরফের গোলা ছুড়ে মারছে। আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য ছুটছি আর পিছনে তাকিয়ে ওর অদ্ভুত সুন্দর হাসিটা উপভোগ করছি।
হয়তো শান্তাও প্রতি রাতে এই স্বপ্নটাই দেখে। কারন আমি জানি স্বপ্নগুলো আকঁড়েই ভালবাসাগুলো বেঁচে থাকে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা