নীরবতাহীন ভালোবাসা

নীরবতাহীন ভালোবাসা

কি ব্যাপার সারাক্ষণ শুধু আয়না দেখিস? প্রেমে পরলি নাকি?
– কি যে বলিস টয়া। আমি করবো প্রেম? আর কেই বা করবে আমার মতো আনস্মার্ট ছেলের সাথে প্রেম?
– কি বলিস এইসব? তুই মোটেও আনস্মার্ট না ভাইয়া।
– আচ্ছা বাদ দে তো।
– আচ্ছা দিলাম। তো এখন বল কেমন চলছে তোর দিনকাল?
– সবসময় যেমন কাটে তেমনি ভাবেই কাটছে।
– এভাবে কথা বলছিস কেনো?
– না এমনি। আচ্ছা একটু বের হতে হবে এখন। তুই সাবধানে থাকিস।

কথাটি বলেই বাসা থেকে বের হয় নাদিম। ইদানীং নাদিমকে খুবই বিষন্য দেখা যাচ্ছে। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না, খাওয়া দাওয়া ঠিক সময় মতো করছে না। হঠাৎ নাদিমের চনচলতা একা হয়ে গেছে। সেটা নাদিমের বোন টয়া বুঝতে পারে। কিন্তু নাদিম তার সব কষ্ট নিজের বুকের মধ্যেই চেপে রাখে। কারো সাথেই নিজের কথা শেয়ার করতে পছন্দ করে না। তাই যখন খুব বেশি কষ্ট পায় তখন প্রায়ই সময় একা থাকতেই পছন্দ করে।

নাদিম একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। ৬ মাস যাবৎ জব করছে। নাদিমের পরিবারে তার মা, ছোট বোন আছে। অনেক আগেই তার বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে নাদিমকেই পরিবারের সকল দায়িত্বের অধিকারী হতে হয়। আর আল্লাহ্‌র রহমতে খুব ভাল ভাবেই কাটছিলো তাদের দিনকাল।

দিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে প্রায়ই দেড় বছর সম্পর্ক নাদিমের। কিন্তু দিয়ার সাথে গত এক সপ্তাহ হলো ব্রেকাপ হয়। এর কারণেই নাদিমের মনটা খারাপ।

টয়া নাদিমের ছোট বোন একদিন তার লাইফ ডায়েরি পড়ে জানতে পারে দিয়ার কথা। পরে তার মায়ের কাছে বলে দেয়। নাদিমের মা খোঁজ নেয় দিয়ার পরিবারের সাথে।

একটা সময় দিয়া এবং নাদিমের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে যায়। দুই পরিবার রাজি হয়ে যায়। শুধু জানে না দিয়া এবং নাদিম। এটা জানতো যে তাদের বিয়ের কথা চলছে কিন্তু কার সাথে সেটা কেউই জানতো না।

একদিন দেখা করার জন্য বলে। একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা। রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে আছে নাদিম। গায়ে একটা লাল রংয়ের টি শার্ট। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে কাউকে আসতে দেখে নাদিম অবাক হয়ে যায়। এইকি দিয়া এখানে কেনো?

– কি ব্যাপার কেমন আছো?
– তুমি এখানে?
– আমারো একই প্রশ্ন। তুমি এখানে কেনো?
– ইয়ে মানে।
– যা বলার সরাসরি বলে ফেলো নাদিম।
– আমার হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি। এখানেই আজ প্রথম দেখা করবো তার সাথে। কিন্তু তুমি এখানে কেনো দিয়া?
– আমারো তো সেইম। বা ভালই হলো একসাথে দুজন দুজনার জীবনসঙ্গীদের সাথে দেখা হবে।
– আচ্ছা দিয়া সত্যি করে একটা কথা বলবে?
– হুমম বলবো।
– আচ্ছা আমার কথা কি এখন তোমার মনে পড়েনা?
– বাদ দেও না এইসব কথা। কেনো আগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছো আবার?
– না এমনি জানতে ইচ্ছে করলো।

দুজনেই অপেক্ষা করছে তাদের জীবনসঙ্গীর জন্য। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে যায়। তবুও আসছে না কেউই। কারো কাছে নম্বরটা পর্যন্তও ছিলো না। সেইদিনের মতো করে ফিরে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে। দেখা হয়েও যেনো দেখা হলো না তাদের।

বিয়ের আগে আর দেখা হলো না। ইচ্ছে করলে এই ডিজিটাল যুগে দেখা হতো। কিন্তু কারো কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তাই বলেই দেখা হয়নি আর। ছবিটাও দেখেনি কেউ। শুধু মাত্র মা-বাবাকে খুশি করার জন্যই সব কিছু মাথা পেতে নিচ্ছে।

বিয়েরদিনই দুজনের দেখা। দুজনেই চমকে যায় দেখার পর। কিন্তু কথা বলার সুযোগ পায়নি তখন। দুজনেই তো খুব খুশি। কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো তা তারা বুঝতে পারছেনা। দেখার পর যেনো এক চিলতে খুশি মনের মধ্যে এসে পড়লো।

বাসর ঘরে বসে আছে দিয়া। ফুল দিয়ে সারাটা রুম সাজিয়েছে। ফুলের ঘ্রাণে রুমটাকে অনেক বেশি মধুর লাগছে। নাদিম রুমের ভেতরে গেলো খুব খুশিতেই।

– উঁহুম উঁহুম। আস্তে করে কাশি দিলো।
– এতক্ষণ লাগে আসতে? আমি কতক্ষণ ধরে বসে আছি একা একা।
– সত্যি কি তুমি দিয়া? নাকি দিয়ার আত্না।
– হুমম মাথা তোমার। আচ্ছা এখন বলো কেমনে কি হয়ে গেলো?
– আমি তো কিছুই জানিনা। তুমি কি জানতে না?
– জানলে কি আর কান্না করতাম?
– ওলে বাবালে কান্না করতে কেনো?
– কেনো আবার আপনার জন্যই তো।
– তাহলে রিলেশন ব্রেকাপ করছিলা কেনো?
– মা-বাবার কথা রাখতে।
– এখন রাখতে পেরেছো?
– হুমম পেরেছি তো। এবং শাসন করার জন্যও একটা গাধাকেও পেয়েছি।
-কি আমি গাধা!
– নয় তো কি!
-গাধা তাই না? দেখাচ্ছি গাধার কির্তী।

জড়িয়ে ধরে দুজন দুজনকে। যেনো আকাশের চাঁদটি তার ঘরের মধ্যে পেয়েছে। ভালবাসা কি কখনো শেষ হয়ে যায়? না হয় না। ভালবাসার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। তাই বলেই তো তাদের একটা কিউট বাবু হয়েছে। বাবুটার নাম রেখেছে ফেরদৌস।

ফেরদৌস এসে যেনো তাদের জীবনটা আরো নতুন করে রাঙিয়ে দিয়েছে। এখন যেনো তাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। ভালবাসায় অটুট থাকুক তাদের মধ্যে। বেঁচে থাকুক তাদের আনন্দের জীবন গুলো। ভাল থাকুক তাদের সন্তান ফেরদৌসকে নিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত