সেই মেয়েটি

সেই মেয়েটি

-এই গুলো তোমার না খেলে হয়না।(নিতু)
> অভ্যাস হয়ে গেছে (নিলয়)
– এটাকে কি পরিবর্তন করা যায় না (নিতু)
> সবকিছুই তো পরিবর্তনশীল।
– তাহলে আজকে থেকে আর সিগারেট খাবে না।
এই সিগারেটের গন্ধ্য আমার একদম ভালো লাগেনা।
> তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে এটাই তখন আমাকে ভালো রাখবে।সেইজন্য এটাকে ছাড়তে পারবো না।
-এভাবে বলতে পারলে,তোমার থেকে আমি এমনটা আশা করিনি।
> সত্য কথা বললে সবার সহ্য হয় না। তোমারও হয়নি।
– তুমি থাকো তোমার এই সিগারেট নিয়ে,আর কোনদিন আমাকে ফোন করবে না।
তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক আজকে থেকে শেষ।
.
নিতু কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলে চলে গেলো।
আমি জানি মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে।
সেইজন্য সবসময় আমার ভালো চাই,কখনো খারাপ পথের দিকে সে আমাকে যেতে দেয় না।
.
আজকে মেয়েটাকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি মনে হয়।
ওকে ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি আমার।
মেয়ে মানুষগুলো এমনি,যাকে মন থেকে ভালোবাসে,তার জন্য সেই মানুষটি সব কিছু করতে পারে।
নিতুও ঠিক তেমন মেয়ে।
.
নিলয় পকেট থেকে ফোন বের করলো,
ফোনটা বের করে নিয়ে নিলয় নিতুকে কল করে।
অনেক বার রিং দেওয়ার পরেই নিতু ফোনটা রিসিভ করে।
.
-বাড়িতে চলে গেছো নাকি(নিলয়)
> না এখনো যায় নি,তোমাকে না ফোন করতে মানা করেছিলাম(নিতু)
– একটু দরকার ছিলো সেইজন্য ফোন করেছি।
> আমাকে তোমার প্রয়োজন ছাড়া মনে পড়ে না।
– এভাবে বলছো কেনো?
> তাহলে কি ভাবে বলবো, নরম সুরে আদর মাখা কন্ঠে বলবো।
-তুমি কি এখনো রেগে অাছো নাকি।
> তুমি কে আমার,যে তোমার উপর রেগে থাকতে হবে।
-সেটাই, আমি তো তোমার কেউ না, কি জন্য আমার উপর তুমি রেগে থাকবে,আচ্ছা রং নাম্বারে কল চলে গেছে।
.
নিলয় ফোন কেটে দিয়ে ভাবে, মেয়েটা তাকে এতো ভালোবাসে,কিন্তু সে কেনো তাকে এতোটা কাঁদায়, এতোটা কষ্ট কেনো সে তাকে দেয়।
এতোকিছুর পরেও নিতু তাকে ছেড়ে কখনো যায় না ।
আজকে নিলয় বুঝতে পারছে,আপনজনকে কষ্ট দিলে তার কষ্টটা কেমন লাগে।
সে কতটা কষ্ট পায়।
.
নিলয় ফোন পকেটে রেখে হাঁটা শুরু করে,প্রচন্ড রৌদ্রের তাপ,
তারপরও সে সেই রৌদ্রের মাঝে হেঁটে হেঁটে যেতে থাকে।
কোনদিকে নিলয়ের মন নেই,মন শুধু তার ফাঁকা পকেটের দিকে।
পকেটে শুধু একটি দুইটাকার নোট পড়ে রয়েছে।
.
হটাৎ করে নিলয়ের ফোন বেজে উঠে,
নিলয় পকেট থেকে ফোন বের করে নিয়ে দেখে নিতু ফোন করেছে।

-কি জন্য ফোন করেছো (নিলয়)
> বারে ফোন করা কি নিষেধ আছে নাকি (নিতু)
– আমাদের মতন ছেলেদের ফোনে ফোন করা নিষেধ থাকবে কেনো?
> নিলয় আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,
না হলে তোমার জন্য এই রৌদ্রে এসে দেখা করতাম না।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি ।
বাবার অনেক টাকা আছে,তুমি কি জানো তোমার মতন হাজারটা ছেলে আমার পায়ে পায়ে ঘুরে।
আমি চাইলেই তোমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিতে পারি।
চাইলেই বাবার দেওয়া গাড়ি করে তোমার সামনে আসতে পারি, বিলাসীতা করে চলতে পারি।
কিন্তু এমন করিনি কেনো জানো,
শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে।
.
আমার বাবা মায়ের অর্থ সম্পদ কিছুই চাইনা আমি ,শুধু তোমাকে চাই।
তোমাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তোমাকে সারাজীবনের জন্য পাশে চাই।
স্বপ্নগুলো তোমাকে সাথে নিয়ে বাস্তবে রুপ দিতে চাই নিলয়।
তুমি আমাকে যত কষ্টই দাও,যতই কাঁদাও তবুও আমি তোমাকে চাই।
এক মুহূর্তের জন্য হারাতে চাই না তোমাকে।
.
আমি চাই না তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাও,আমি চাইনা তুমি খারাপ হয়ে যাও,তোমার কোন ক্ষতি হোক আমি সেটা চাই না।
.
নিলয় কোন কথা বলেনা,চুপচাপ শুনে যায়।
এমন সময় কিছু বলার মতন থাকে না,নিলয় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থেকে শুধু শুনে যায়।

.
পেছন থেকে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে,নিলয়ের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
অনেক হর্ন বাজানোর পরে নিলয় পেছন ফিরে তাকাই।
পেছনে তাকিয়ে দেখে নিতু।
নিতুর কানে ফোন,
নিতু এক হাত দিয়ে কানে ফোন ধরে অাছে , অপর হাত দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করতেছে।
নিলয় নিতুর দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বলে না।
শুধু নিতু মেয়েটাকে দেখে নিলয়।
.
– দাড়িয়ে না থেকে গাড়িতে গিয়ে বসো। (নিতু)
>নিলয় গাড়ির পেছনে গিয়ে বসে। (নিলয়)
-আরে তোমাকে পেছনে কে বসতে বলেছে,তুমি সামনে এসে বসো।
> সামনে কেনো?
-এতো কথা বলতে পারবো না,সামনে আসতে বলেছি এখন সামনে আসবে।
> নিলয় কোন কথা না বাড়িয়ে সামনে গিয়ে বসে।
গাড়ি নিয়ে আসলে যে।
– ড্রাইভারকে বলে নিয়ে আসলাম গাড়ি।
> ড্রাইভার কই।
-বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
> কেনো?
-তোমাকে পাশে নিয়ে একটু ঘুরবো বলে ।
.
নিতু গাড়ি ড্রাইভিং করছে,আর মাঝে মাঝে নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
-কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেনো(নিতু)
> এমনিতে।
-মন খারাপ।
> না।
-নিলয় আমি তোমাকে হারাতে চাই না।
> তোমার বাবা মা আমাকে মেনে নিবে না।
– সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
বাবা মা দুজনেই রাজী।
একটি মাত্র মেয়ে তাঁদের , তারা কখনো না করবে না।
>এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছি নিতু?
– তোমার ম্যাচের সামনে,তোমাকে নামিয়ে দিতে যাচ্ছি।
> একটা প্রশ্ন করি?
– করো।
> আমাকে কেনো ভালোবাসো।
– তোমার মাঝেই আমি আমার সবকিছু খুঁজে পাই।
> আমাকে নিয়ে সুখি হতে পারবে?
– একদম পারবো।
আর তোমাকে সব ধরনের বাজে নেশা গুলো ছেড়ে দিতে হবে।
তুমি তো জানো সিগারেটের গন্ধ আমার সহ্য হয় না।
> একহাজার টাকা হবে,পরে তোমাকে শোধ করে দিবো।
– কি করবে টাকা?
> আজকে মন ভরে সিগারেট খাবো।
-তোমাকে না বললাম সিগারেট আর খাবে না।
> আজকেই শেষ বারের মতন খাবো।
– এই নাও টাকা।
> দুই হাজার কেনো?
– পুরোটাই রাখো।
> পুরোটার দরকার হবে না, যেটা চেয়েছি এটা দিয়েই হয়ে যাবে।
-পুরোটার দরকার হবে আমি জানি।
> কেমন করে জানো তুমি।
-কালকে তুমি সকাল দশটার ভিতরে কাজী অফিসে চলে আসবে।
> কেনো?
– ওইযে তোমাকে হারাতে চাই না।
> সবকিছু কালকেই।
– হ্যাঁ কালকেই।
> দেরী করলে হয় না কিছুদিন।
– না ।
> ওইতো ম্যাচে চলে এসেছি গাড়ি থামাও।
-মনে থাকে জেনো সকাল দশটা।
.
নিলয় গাড়ি থেকে নামতে যাবে,ওমনি নিতু নিলয়ের হাত চেপে ধরে।
– আবার কি হলো নিতু?
.
নিতু নিলয়কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে,
নিলয় আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না, তোমাকে আমার চাই,তোমাকে আমি সত্যিই হারাতে চাই না।
.
নিতু কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলে চলে গেলো।
নিলয় দাড়িয়ে থেকে নিতুর চলে যাওয়া দেখছে।
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে নিতু চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেলো।
.
মেয়েটা তাকে এতো ভালোবাসে,এতো কষ্ট দেবার পরেও বার বার তার কাছে ফিরে আসে।
না মেয়েটাকে আর কষ্ট দিতে চাই না নিলয়।
নিলয় ম্যাচে ঢুকতে ঢুকতে ভাবছে,এবার বিয়েটা তাহলে হয়েই যাচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত