আমার দেখা সবচেয়ে কালো মেয়েটিও রোজ সপ্তাহে একবার নিজেকে সাজিয়ে ছাদের উপর রেলিং এ হাত রেখে বিড় বিড় করে যায় আনমনে। এক সকালে আমিও ছাদের রেলিং উপর বসে চায়ের সাথে সিগারেট এর স্বাদ নিচ্ছিলাম। মেয়েটাকে আগে কখনো দেখেছি বলে আমার মনে নেই, কারন আমি এই নতুন বাসায় উঠেছি মাত্র দুদিন হলো। পেছন থেকে একটি মায়াকন্ঠ ভেসে আসলো,
— এভাবে বসে আছেন, পড়ে যাবেন তো।
রেলিং এর উপর থেকেই মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। খুব বেশী সুশ্রীতো সে না কিন্তু তাকে অসুন্দর বলা কোনভাবেই যাবেনা। শুধু গায়ের রংটা কালো হলেও, আশ্চর্য্য ধরনের এক মাধুর্য ছিলো তার পুরো অংগে। তার প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না আমার কথা?”
— জ্বি পাচ্ছি। আসলে ভোরের কুয়াশার মধ্যে আমার বসে থাকতে ভালো লাগে। তাই বসেছিলাম আরকি।
— কুয়াশার সুখ নেয়া হলে নেমে আসুন। পড়ে মরে গেলে পুলিশ আসবে, আর এসব ঝামেলা সহ্য হয়না।
— আপনি কি আমাকে নেমে আসার আবেদন জানাচ্ছেন নাকি নিজেকে সেইফ সাইটে রাখতেছেন।
— অতকিছু বুঝিনা, নেমে আসুন ব্যস।
তার কথায় একটু রাগ মনে হলো, তাই তর্ক না করে নেমে আসলাম। পাশেই দুটো চেয়ার এক ছোট টেবিল ছিলো। সেখানে চায়ের কাপটা রেখে বসে পড়লাম। হাতে জলন্ত সিগারেট দেখে, দয়া করে সেটা নিভাবেন কি? আগুন টাগুন লেগে গেলে ফায়ার সার্ভিস এর ঝামেলা পোহাতে পারবো না।
— এই ছোট আগুনে কিছু হবে না।
— কোন কিছুকে ছোট ভাবা চলেনা। কারন বিন্দু জল একত্রিত হয়ে সমুদ্র হয়।
— তর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন নাকি আপনি?
— হ্যা যুক্তি তর্ক।
— ওকে ওকে আর তর্ক করতে চাচ্ছিনা। ফেলে দিলাম।
সিগারেট এর আগুন ফেলে দিয়ে চুপচাপ বসে আছি, শরীরে এক প্রকার রাগ কাজ করতেছে। কিন্তু এই সুন্দর সকাল কে মাটি কোনভাবেই করতে চাচ্ছিনা। কিছুক্ষন পর মেয়েটি আমার সামনের চেয়ারে বসলো। ঠোটে ঠোট কামড়াচ্ছে, কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু কারন খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমিও তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার অন্যমুখী হয়ে রইলাম।
কিছুক্ষন বসে থেকে আবার উঠে গেলো। উঠে রেলিং এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। নিজে থেকে যেহেতু সে কথা বাড়াতে চাচ্ছে না তাই আমিই কথা বলার চেষ্টা করলাম, “এই শুনুন এইভাবে রেলিং এ হাত ঘুরাবেন না, ক্ষয় হয়ে গেলে, আবার মেরামতের ঝামেলা বইতে হবে। ”
— কি? রেলিং আবার ক্ষয় হয় কি করে?
— কেন জানেন না, ঘর্ষনে ঘর্ষনে তার নিজ গঠন ক্ষয় হয়ে যায়।
— আমার কথা আমাকে শুনিয়ে দিলেন।
— কি করার বলুন, বদ অভ্যাস আর কি।
সে কিছু বললো না, কিন্তু মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। তার মুখে হাসিটাকে বেশ মানিয়েছে। তার রুপ যেন দ্বিগুন হয়ে গেলো। কিছু একটা বলা উচিত কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না, “আপনি সুন্দরী নন, কিন্তু বড্ড মায়াবী। এমন মায়াবী মেয়ে খুব কম নজরে এসেছে আমার। ”
কথাটি শুনে সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, এক বিন্দু নড়লো না। তার চোখ জলজল করে উঠলো। হরিনী চোখের কালো মণিতে ঠিক আমি জলবিন্দুর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। আমিও তাকিয়ে রয়েছি, চোখে কিছু পড়েছে এমন ভাব করে চোখ মুছে নিলো, সাথে সাথে লেপ্টে গেলো কালো কাজলের কালী। খুবই বিষ্ময় হয়েছিলাম, তার এমন আচরন দেখে। সে আর কথা বাড়ালো না। চলে গেলো সোজা নিজ রুমে। আমিও বাধা দেবার সাহস পেলাম না, কারন কি বলে তাকে আটকাবো আমার সেটাই জানা নেই।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আমার কাছে সকাল যেমন প্রিয় তেমনি প্রিয় সাঝবেলা। কোন কাজ নেই এই সকাল সন্ধ্যা দেখা ছাড়া। পড়ালেখা সবে শেষ করে চাকুরীর আশায় আছি, কবে হবে তা জানিনা। চাকুরীর খোজে এখানে আসা, কয়েকদিন পর ইন্টার্ভিউ রয়েছে আপদত আর কিছু নেই করার মত। সাঝবেলা হয়ে আসতেই আবার ছাদে উঠে গেলাম, সেখানে গিয়ে মেয়েটির কথা মনে পড়ছিলো কিন্তু সে আসবে কি আসবে না তা জানা নেই।
তবুও সিগারেট জালিয়ে অপেক্ষা করছিলাম, যদি সে সুপ্রভাত এর মত এই বেলাতেও আসে। আমার মনের কথা আল্লাহ কবুল করেছেন, ইতিমধ্যে সে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কর্কশ গোলায় বলে উঠলো, “আপনি বুঝি আগুন লাগিয়েই দম নিবেন”
কন্ঠ চিনতে কষ্ট হয়নি যত্রতত্র করে আগুন ফেলে দিলাম। আর ঘুরে তাকে দেখলাম। সাদা শাড়ী বুকের কাছে, আর আচলে লাল নীল এম্ব্রোডায়রী, কপালে ছোট টিপ, ঠোটে লালচে লিপ্সটিক, চোঝের অগ্রজ স্থান থেকে ভ্রুর শেষান্ত পর্যন্ত গাড়ো কাজল দেওয়া, কানে লম্বা ঝুমকা নাকে ছোট নলক, হাতভর্তি বাহারী রংয়ের চুড়ি, নুপুর মুখে একটু রাগান্বিত ভাব। মনের অজান্তেই বলে উঠলাম “অপুর্ব মায়াবী”। কথাটি শুনে হয়ত একটু লজ্জা পেয়েছিলো, হাত ঘুড়িয়ে খোলা চুলের শেষান্তভাগ উপরে তুলে মাথা নুইয়ে রাখলো, আহা কি ভংগি এমন ভংগিমায় লজ্জা পেতে কাউকেই দেখিনি।
এভাবেই কিছুক্ষন কেটে গেলো তাকে দেখে। সে বলতে লাগলো, “এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে লজ্জা লাগে”
আমি মাথা নিচু করলাম। অনেকদিন ধরে মা আমার বিয়ের জন্য প্যারা দিচ্ছে। অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখিয়েছে আমাকে কিন্তু মায়াবতী মেয়ে একটিও খুজে পায়নি, যেমন মায়াবতী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। আবোল তাবোল চিন্তা হচ্ছে কিন্তু অনুভুতি অন্যরকম। কিছুক্ষন ভেবে তাকে বলতে লাগলাম “চাকুরীটা হয়ে গেলেই মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। অনেক মেয়েকে দেখেছি, তারা অনেক সুন্দরী কিন্তু মায়াবতী কাউকে দেখিনি। ভাবছি খুব তাড়াতাড়ি মাকে একবার এই বাসার ছাদে নিয়ে আসবো।
— কেন?
— এক মায়াবতী নারীকে দেখাতে।
— আপনি কি আমার…..?
আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। সে নিজে থেকেই বলতে লাগলো, “আপনি আমার সম্পর্কে কিছু না জেনে এমনটা কেন ভাবতেছেন”
— জানার সময় তো অনেক রয়েছে। আগে আপনার পরিবারের সাথে একবার আমার পরিবার কথা বললে কোন আপত্তি রয়েছে কি?
— প্রথন এমন ছেলে দেখলাম, যে আগে পরিবারের পছন্দকে মুল্যায়ন দিয়ে নিজের পছন্দের কথা জানায়। তবে আমার আপত্তি নেই যদি আমার বাবা মা রাজী হয়। আমি তাদের কথা দিয়েছি তারা যেখানে চাইবে সেখানেই আমি যাবো। কিন্তু কিছু কথা না আমার পরিবার জানে না আপনার, অতি গোপনীয় লজ্জার কথা, যা আমি আমার ভবিষ্যৎ স্বামীর কাছে কোনদিন লুকাবো না। আপনার পরিবার আসার আগে আমার কিছু একান্ত কথা আপনারই জেনে রাখা ভালো।
— তাহলে বলুন।
আজ নয় কাল ভোরের কিরন উঠার সময় যখন কুয়াশা ভেদ করে পৃথিবীর বুকে আলো জলবে তখন বলবো। কথাটি বলে সে চলে গেলো, তার নামটাও জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। সেই সময়টাই আমাকে দেয়নি।
ঘরে গিয়ে ভোর হবার অপেক্ষা করতেছি, এক গোপন কথা সে আমাকে জানাবে বলেছে, কি হবে সেই কথা, যা কাউকে নয় শুধু স্বামী জানতে পারবে। আমার মনে হাজারো প্রশ্ন উত্তর নেই, কিছু প্রশ্ন এমন যে মনের ভিতরে আমার মনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। বিছানায় ছটফট করতে করতে এক সময় চোখ লেগে আসলো।
ভোরের কিরন হতেই, ছাদে চলে গেলাম। সে আজ আমার আগেই এসেছে, কতক্ষন আগে এসেছে জানা নেই। তার পাশে গিয়ে পুব আকাশে চোখ রাখলাম, সেকি অপুর্ব দৃশ্য, রাতের আধার কাটিয়ে ধেয়ে আসছে সোনালী রোদ, উচু মেঘের সাথে পাল্লাদিয়ে উড়ে যাচ্ছে ভোরের পাখি, হিমশীতল বাতাস বইছে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মায়াবতী নারীর চুলের বেলীফুলের ঘ্রান ছুয়ে দিচ্ছে বার বার আমার মন। কিন্তু মনে সংশয় এখনো শেষ হয়নি, এখনো জানতে পারিনি সেই গোপন কথা। নিরবতা ভেংগে বলতে লাগলাম, “কিছু কথা জানাতে চেয়েছিলেন?”
কোন প্রতিউত্তর করলোনা। আরও কিছু সময় কেটে গেলো নিরবতার মাঝে। তারপর সে বলরে লাগলো,
তখন আমি ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। যৌবন মাত্র ফুটে উঠেছিলো। কালো হলেও সবাই আমাকে বলতো আমি নাকি বেশ আকর্ষণীয়। তাই মা বাবা সাধ করে মায়া নাম রেখেছিলো। মা বাবার ভালোবাসা কখনো কম ছিলোনা, তারা আজো আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি যে প্রাইভেটটিউটর এর কাছে পড়তাম সেখানে একটি ছেলে ছিলো নাম ফারাবী। আমার ভালো একটি বন্ধু, তাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করতাম আমার বাসাতেও তার আসা যাওয়া ছিলো। মা বাবা দুজনেই তাকে একজন ভালো ছেলে বলে জানতো। তার সাথে আমার অভিমান রাগ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা সব কথা শেয়ার করতাম। তার কথাতেও অনেক মাধুর্য্য মিশে থাকতো। কবিরা যেভাবে কথা বলে সুন্দর গুছিয়ে কবিতার বেশে সে তেমনি করে কথা বলতো। যে কারো মন জয় করে নিতে পারতো খুব সহজেই। দুই বছর বন্ধুত্ব আমাদের স্কুল জীবনের। কলেজে উঠার পর সে আমাকে ভালোবাসার কথা জানায়। তাকেও আমি পছন্দ করতাম, তার মিষ্টি মধুর সহজ কথায় তার পানে ছুটে আসলাম। আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক এক বছর চললো।
এর মাঝে সে প্রায় ফিজিক্যাল সম্পর্কের কথা বলতো, কিন্তু আমি সায় দেয়নি। সেদিন তার জন্মদিন ছিলো। আমাকেও ইনভাইট করলো, আমি মাকে জানালে মা স্বাচ্ছন্দ্যে রাজী হলো। ততদিনে ফারাবী আমাদের পরিবারের সদস্যের মতই হয়ে উঠেছে। তাই কোন বাধা প্রদান করলোনা। তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় আমি বিকেল এ চলে গেলাম, তার বাসায়। বাসা ভর্তি শুধু তার বন্ধুবান্ধব আংকেল আন্টি বাহিরে ছিলেন। যথাসময়ে সে কেক কাটার জন্য প্রস্তুত হলাম, কেক খাবার পর সে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো, খুবই ভয় পাচ্ছিলাম, সাথে লজ্জাও এত গুলো মানুষের মধ্য দিয়ে এভাবে নিয়ে আসবে ভাবতে পারিনি। রুমে এনে সে আমাকে একটি কোল্ড ড্রিংক্স দিলো। খেতে চাইলাম না কারন ইতিমধ্যে আমার মেজাজ বিগড়ে রয়েছে তার জোরাজোরিতে খেতে হলো। খাবার কিছুক্ষন পর প্রচন্ড মাথা ঘুরতে লাগলো, তারপর আমি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এতটুকু মনে রয়েছে।
ঘুম থেকে উঠে নিজের শরীরের কাপড় পেলাম না, একটি কম্বল গায়ে জড়ানো। তল পেটে প্রচন্ড বেথা অনুভব করলাম, হালকা করে কম্বল সরিয়ে বিছানায় রক্তের ছিটেফোঁটা দেখতে পেলাম। এখন আর বুঝতে আমার বাকি নেই আমার সবশেষ হয়ে গেছে। জন্ম থেকে যে সতীত্ব আমি ধরে রেখেছিলাম তা আর নেই। দুচোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো, ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর তিনটে বাজে, তার মানে আমি সারারাত সারাদিন অজ্ঞান ছিলাম। কিছুক্ষন পর ফারাবী ঘরে আসলো, এসে তার মোবাইল এ করা ভিডিও দেখালো, সেকিভাবে আমাকে সারারাত ধরে অজ্ঞান করে ধর্ষন করেছে। কি বিভ্রস্তকর সেই ভিডিও, সাথে ছোট একটি হুমকি দিয়ে দিলো, যদি কাউকে কিছু জানাই তাহলে সে আমার আরো ক্ষতি করবে। তার গালে কষে একটি চড় বসিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওয়াশরুমে গিয়ে পোষাক পড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। এখনো তার মা বাবা আসেনি, তারা কিছুদিন আগেই গ্রামের বাড়ি গেছেন যা আমার অজানা ছিলো।
বাসায় আসতেই মা কিছু বললেন না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন, ফারাবীর মায়ের সাথে কথা বললাম সে বললো তুই ঘুমিয়ে গেছিস, শরীর খারাপ করেছিলো নাকি?
একটু অবাক হলাম, ফারাবীর মা তো ছিলোনা তবে মায়ের সাথে কে কথা বললো। বেশী কিছু ভাবতে পারলাম না শরীর খারাপের বাহানা করে ঘরে গিয়ে শুধুই কেদে গেলাম। তিনদিন পর্যন্ত শুধু অন্ধকার ঘরে কেদেই গেছি। তারপর বাবাকে বলে বোকড়া আনালাম। কলেজে বোকড়া পড়ে যেতাম, আর বাসায় এসে খুলতাম, আর চারটি বছর পেড়িয়ে গেলো সেই ঘটনার সেই থেকে আর কোন পুরুষের সাথে কথাবলিনি বাবা ছাড়া। আজ আপনাকে এসব বলার কারন হয়ত আপনি জানেন। এটাই ছিলো আমার গল্প।
আমার দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম, এই মেয়েটির জীবনের গল্প শুনে। মানুষ ধর্ষিত হয় জানতাম কিন্তু ভালোবাসার মানুষ জন্তু জানোয়ারের মত এভাবে ধর্ষণ করে তা জানতাম না। মুখে কোন কথা নেই চুপকরেই দাঁড়িয়ে রইলাম তার চোখ থেকে জলের ধারা গড়িয়ে পড়তেছে সাথেই ধেয়ে আসতেছে তার চোখের কাজল।
কিছুনা বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। আজ আমার ইন্টার্ভিউ রয়েছে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলাম। এর আগেও অনেক গুলো ইন্টার্ভিউ দিয়েছি চাকুরী হয়নি, আজ হবে বলেও খুব বেশী আশাবাদী না। ইন্টার্ভিউ শেষ করে ফলাফলের অপেক্ষা করছি। সে কি আমার চাকুরী হয়ে গেলো, আনন্দে ভরে উঠলো হৃদয়টা। সেখান থেকে আর বাসায় ফিরলাম না সোজা বাস কাউন্টার এ গিয়ে রাতের গাড়ি করে মাদারীপুর চলে আসলাম। এসে সবার আগে মায়ের কাছে সেই মায়াবতী মেয়ে আর আমার চাকুরীর কথা জানালাম।
দুদিন পর মা বাবা সহ তাদের বাসায় উঠলাম। আমার পছন্দ কে মা সাদরে গ্রহন করলেন, মায়ের কথা ছিলো, সংসার আমি করবো, যাকে নিয়ে করতে পারবো তাকেই বিয়ে করবো। সংসারে সুখ রুপে নয় গুনে আসে। এই কথাটি আমার মনে চিরতরে গেথে গিয়েছিলো।
মায়ার মা বাবাও তেমন আপত্তি না দেখিয়ে বিয়ের জন্য রাজী হলো। এর ফাকে আমাদের দুজনের তেমন কথা হয়নি। শুধু আড়চোখে একে অপরকে দেখেছি। আগামী মাসে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।
বিয়ে হওয়া পর্যন্ত সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি, মাঝে মাঝে ছাদে দুজন দুজনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কথা না বললেও চোখের ভাষা বুঝতে কষ্ট হতোনা। সেই সুখের কথা বলে বুঝাবে পারবোনা যে সুখ দুজন কথা না বলে ভোরের সুর্য উদয়, সন্ধ্যার অস্ত, আর রাতের চাদকে দেখে পেতাম।
আমাদের বিয়ে হলো, মায়া বাসর ঘরে বসে রয়েছে, এই বাসর রাত সকল নারী পুরুষের স্বপ্নের রাত। বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে আমার মায়াবতী। তার পাশে গিয়ে তার হাতে হাত রাখলাম, মৃদু কম্পনে তার শরীর কেপে উঠলো। ধীরে ধীরে তার ঘোমটা উঠালাম, আর বলতে লাগলাম, “অতীত যা গেছে তা ফিরে পাবোনা, ভবিষ্যৎ কি হবে জানিনা, বর্তমান চাইলে আমরা দুজনেই সাজাতে পারি। আমি তোমার দেহের উপর নয় মনের উপর রাজত্ব করতে চাই। দিবে কি অনুমতি?”
চোখে চোখ রেখে মাথা নাড়িয়ে আমাকে তার ভালোবাসার ভুবনে আগমন জানালো। শুরু হলো আমাদের ভালোবাসায় ঘেরা সংসারের সুখ। আমাদের মাঝে হাজারো খুনসুটি আর ঝগড়া হতো, কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য আমি মায়াকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। আজ তিন বছর সংসার জীবন কাটিয়ে আমার মায়াবতী মা হতে চলছে। আমি হাসপাতালে বসে আছি। ঘন্টা খানেক পর নার্স এসে জানালো আমি মেয়ের বাবা হয়েছি। মায়ার কাছে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে মায়ার কপালে চুমু দিয়ে “আমাকে বাবা বানানোর জন্য তোমার কাছে চির ঋণী। ”
এখন সমস্যা হচ্ছে আমি আমার মেয়ের নাম যেটা রাখতে চাই সেটা মায়ার পছন্দ হয়না। সে যেটা রাখতে চায় আমার ভালো লাগেনা। দুই পরিবারের মানুষও অতিষ্ট হয়ে গেছে মেয়ের নাম রাখা নিয়ে ঝগড়া দেখতে দেখতে। আমার মেয়ের বয়স ১০ দিন পুর্ন হলো এখনো নাম রাখা হয়নি, আপদত দুজনেই মেয়েকে মা বলে ডেকে মনের সাধ মিটাচ্ছি। এখন আপনারাই তার নাম রেখে দিন।