কথা রাখার ছলে

কথা রাখার ছলে

1.আমি বাপ্পী।সকল থেকে মনটা খুব খারাপ।কারন এই বৃষ্টি।ছোটবেলা থেকেই এই বর্ষাকাল অপছন্দ আমার।সারাদিন শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি।ফলে খেলাধুলা সব বাদ।তাই আমি বড় হলেও রাগটা এখনও রয়ে গিয়েছে।আর এখন তো রাগ আরও বেশি হয়েছে।কারন এখন এই বৃষ্টির মধ্যে অফিসে যেতে হচ্ছে।প্রথমে ভেবেছিলাম ছুটি নেব কিন্তু তখন দেখি বৃষ্টি কমে এসেছে।ফলে বৃষ্টির জন্য ছুটিও নেয়া যাবে না।কিন্তু এখন দেখছি বৃষ্টি যেন আরও বাড়ছে।না আর থাকা যাচ্ছে না।সামনের বাস স্টপে গিয়ে দাড়াতে হবে।তাই এক ছুটে এসে হাজির হলাম স্টপে।বৃষ্টির জন্য কেউ ছিল না সেখানে।হঠাৎ দেখি সাদা পোশাকের এক মেয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে।আমি একটু ভয় পেলাম।একা একা আছি যদি মেয়েটা ভুত হয়।কিন্তু আস্তে আস্তে যখন মেয়েটার মুখ পরিষ্কার দেখা গেল তখন আমি আরও বেশি ভয় পেলাম।কারণ মেয়েটি আর কেউ নই আমার একমাত্র ভালবাসা যে আমাকে একটা খেলার বস্তু বানিয়ে রেখেছিল এবং পরে লাথি দিয়ে তার জীবন থেকে বের করে দিয়েছিল।আজ 10 বছর পর দেখলাম তাকে।আমাকে দেখে দাড়িয়ে পড়ল সে এবং বৃষ্টির মধ্যে আবার হাটা ধরল।আমিও মায়া কাটাতে শিখেছি তাই আর পিছু নিলাম না।
2.জোরে এলাম বাজছে।
মা: এই বাপ্পী কলেজে যাবি না।আজ না তোর প্রথম দিন।
আমি:হম।যাচ্ছি।
ফ্রেশ হয়ে বের হলাম কলেজের দিকে।আসলে এটা স্কুল এন্ড কলেজ আর আমি এই স্কুলে পড়তাম তাই বিশেষ কোন আগ্রহ নেই প্রথম দিন নিয়ে।জানি অধিকাংশই আমার মত পুরনো পাপী।ক্লাসে ঢুকে আমি একদম অবাক।ছেলেদের মধ্যে আমি সবার আগে এসেছি যা এ যাবত কালীন রেকর্ড।তবে ক্লাসে আরও একজন আছে।একটা মেয়ে।আগে দেখিনি তাকে।তাই চুপ করে এক বেঞ্চে বসে গান শুনতে থাকলাম।হঠাৎ মেয়েটা আমাকে ডাক দিল।
মেয়েটি : এই শোনো
আমি :আপনি 1st year.
মেয়েটি:হ্যা!!
আমি :তাহলে তুই করে বলবি।আমার তুমি ডাক সকলের মুখে শোনা পছন্দ না।
মেয়ে: নিজে থেকে কথা বলতে এসেছি বলে কি ভাব নিচ্ছ।
আমি : না।আসলে তুমি একটা অন্য রকম শব্দ।আমরা যেহেতু ক্লাস মেট তাই তুই করে বলবি।
মেয়ে: ও বুঝছি।সমস্যা নেই।আমি তিথি।তুই ?
আমি : বাপ্পী।
মেয়ে: তুই বাপ্পী।মানে 1st boy বাপ্পী।
আমি : এমন ভাবে বলার কি আছে।
মেয়ে: না তোর সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি তাই!!
আমি :কি শুনেছিস?আর কে বলেছে?তুই তো নতুন।
মেয়ে: হম নতুন।তবে আমি তোদের পাশের স্কুলে পড়তাম।তো তোদের অনেক ক্লাসমেট আমার সাথে টিউশন পড়ত।তাদের কাছে শুনেছি।
আমি :কি শুনেছিস?
মেয়ে: ভয় নেই।ভাল কথাই শুনেছি।
আমি : আচ্ছা ভাল।বাদ দে।
মেয়ে: হম বাদ দে।
এরপর থেকেই আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা ভালবাসাতে পরিনত হয়।কিন্তু কেউই বলার সাহস পাই না।হঠাৎ একদিন
তিথি:আচ্ছা বাপ্পী তুই এরকম কেন?
আমি :কেমন?
তিথি :এত straight forward কেন?
আমি :আমি কোথাই এত straight forward?আমি যদি straight forward হতাম তবে এখনও কি তোর সাথে বন্ধুত্বের মিথ্যা সম্পর্ক রাখতাম।এত দিনে …
তিথি: এত দিনে কি?
আমি :কিছু না ।
দুজনেই চুপ।
তিথি :বাপ্পী
আমি :হম
তিথি :আমার মনে হয় এখন আমাদেরকে তুমি বলে ডাকার সময় এসেছে।
আমি :হম। by the way তুই কি প্রোপজ করছিস।আমি কিন্তু ও ভাবে কিছু বলিনি তাই বলে হেসে দিল বাপ্পী।
তিথি : কুত্তা ।হাসছিস কেন।তুই ভালবাসিস না আমাকে?
আমি :না।
তিথি কথা শুনে মারতে যায় বাপ্পীকে।বিনিময়ে আলিঙ্গনের মাধ্যমে শুরু হয় তুই থেকে তুমির পথ চলা।
3.এত বছর পর তিথিকে দেখে কষ্ট হচ্ছে না বরং হাসি পাচ্ছে।কারণ ও তো জানে না ও যতই দুরে সরে যাক না কেন আমারই রবে।তাই ওকে interview এ দেখে বসকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম ওকে আমার অফিসের আন্ডারে নিতে অবশ্য এর জন্য বড় রকমের ট্রিট দিতে হয়েছে।তবে আমার কাজ তো হয়েছে এতেই খুশি।বৃষ্টি কমে আসল।অফিসের দিকে রওনা হলাম।রীতিমত অফিসে এসে দেখলাম তিথি ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে এবং এক মনে কাজ করছে।এবার ও আমাকে দেখে রেগে গেল।উঠে এসে আমাকে বলল লজ্জা নেই তোমার।আমার পিছু পিছু এখানে এসেছ।এটা আমার অফিস বেরিয়ে যাও এখান থেকে।আমি না চেনার ভান করে মি.রহিমকে (কর্মচারী) বললাম,মি.রহিম?
মি.র.-জী স্যার
আ- ওনি কে?এখানে কি করছে?
মি.র.-new joined sir.
আ-ও।আপনি মিস তিথি।
তিথি-(অবাক হয়ে)জী।
আ-এটা কোন পার্ক না অফিস।আপনি মন মত ঘুরাঘুরি করতে পারেন না।যান গিয়ে কাজ করুন।
তিথি – জী স্যার ।
নিজের ডেস্কে এসে বসল সে।পাশের ডেস্কের নীলা বলল,প্রথম দিনেই হ্যান্ডসাম বসের ঝাড় খেলে।এতো ভাল লক্ষণ।প্যারকা শুরুয়াস ইসছে হোগা।
তিথি-বস?
লীলা-হম.বস।ইনে এই শাখার হেড।প্রচন্ড কাজ পাগলা তবে ভালো লোক।যে নিয়মিত কাজ করে তার উপর খুব খুশি হন আর যে ফাঁকি মারে সে শেষ।
তিথি-ও।আর যেন কি বলছিলে।
লীলা-ওনার উপর অফিসের সব মেয়ে ক্রাশিত।কিন্তু ওনি বিনা প্রয়োজনে কারও সাথে কথা বলে না।
তিথি-ও
আসলে তিথি নিজেও কনফিউজড।নাম ও চেহারা তো তার সেই চেনা বাপ্পীর সাথে মিলে যাচ্ছে কিন্তু তবু এ যেন খুব অচেনা।সে বুঝতে পারছে না কি করবে।তাই আপতত সিদ্ধান্ত নেই এড়িয়ে যাবে বসকে।
কিন্তু বাপ্পীর মনে চলছে অন্য প্ল্যান।
এভাবেই কয়েক মাস কেটে গেল।তিথি খুবই ভালো কাজ করছিল।হঠাৎ একদিন তিথিকে কাজের জন্য বাইরের শহরে যেতে বলা হল এবং তার সাথে বাপ্পী ও যাবে।অফিসের কাজ তাই তারা একসাথেই গেল।তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হল বসের ঐখানকার বাড়িতে।
রাত জাগার স্বভাব টা তিথির আগের থেকেই।বাপ্পীকে হারানোর পর থেকে সে রাতকে সঙ্গী করে নিয়েছে।তাই বসে বসে গল্পের বই পড়ছিল সে।তখনই তার সেই চিরচেনা গান শুনতে পেল।দৌড়ে গেল সেখানে তিথি।সেখানে আশামত বাপ্পীকে দেখতে পেল এবং বলল: বাপ্পী?
বাপ্পী : বল?
তিথি :কেন করছ এসব?আমাকে কষ্ট দেবার জন্য তাই না।এবার বুঝতে পারছি সবচেয়ে খারাপ ইন্টারভিউ দিয়েও কেন এই চাকরিটা হল।তুমিই করিয়েছ।তাই না?
আমি :হম।
তিথি:কেন?আমাকে আরও কষ্ট দিতে।
আমি:কষ্ট! সেদিনের কথা মনে আছে তোমার?উন্মাদের মত একটা মেয়েকে ভালবাসত একটা ছেলে।হঠাৎ একদিন ছেলেটা আড়াল থেকে শুনতে পাই বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তাকে ফাসিয়ে ছিল মেয়েটা।তখন কতটা কষ্ট পেয়েছিল সে জান তুমি?
তিথি :আমি জানি সেদিন আমি ভুল করেছিলাম।কিন্তু তার জন্য তো আমি ক্ষমা চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি একের পর এক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছ আর আমাকে কষ্ট দিয়েছ।কতটুকু অভিমান জমেছিল তোমার উপর জান?
বাপ্পী : পরিক্ষা করছিলাম আবার কোন বাজি ছিল না তো সেটা।পরিক্ষা শেষে এত বছর নিজেকে কষ্ট দিয়েছে তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলাম বলে।
তখনই জড়িয়ে ধরল বাপ্পীকে তিথি।আর কান্না করতে থাকল সে।
কিছুক্ষণ পর…
তিথি: আচ্ছা বাপ্পী,তুমি আবার প্রতিশোধ নেবার জন্য কিছু করছ না তো।প্লিজ এমন কিছু কর না।প্লীজ আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিও না।
বাপ্পী :কাউকে কথা দিয়ে ছিলাম পাশে থাকব,কাউকে কথা দিয়েছিলাম হৃদয়ে রাখব।আজ না হয় কথা রাখার ছলে তাকে ভালবাসব।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত