বাবা মায়ের ভালোবাসা

বাবা মায়ের ভালোবাসা

–বাবা,আমার একটা নতুন মোবাইল নিতে হবে।
–কেন?একটা তো আছে।
–এটা ভালো না।
–আচ্ছা,দেখি সামনে মাসে চেষ্টা করবো।
–আচ্ছা,ঠিক আছে মনে থাকে যেন।
–ঠিক আছে।
(এক মাস পর)
–বাবা,আমি তো মোবাইল কেনার টাকা চেয়েছিলাম।
–দু দিন পর নে।
–ঠিক আছে।
(দুই দিন পর)
–মা,ও মা,বাবা কোথায়?
–কাজে গেছে।
–আজ না আমাকে টাকা দেবার কথা,টাকা না দিয়েই চলে গেল কেন?(রাগ্বানিত স্বরে বললাম)
–টাকা রেখে গেছে।
–ওহহ দাও।
–দাড়া আনছি।(এই বলে মা পাঁচ হাজার টাকা এনে আমার হাতে দিল)
–পাঁচ হাজার দিয়ে কি হবে?আমার বারো হাজার লাগবে।
–এত টাকা তো ঘরে নেই।
–তো আমি কি করব?আমাকে বারো হাজারই দিতে হবে।
–আমি জানতাম তুই এরকমই কিছু একটা করবি তাই আমি গত মাস থেকেই টাকা জমানো শুরু করছিলাম,এই নে আরো দু হাজার তবে এই টাকার কথা যেন তোর বাবা না জানতে পারে।
–নাহ,আমাকে বারো হাজারই দিতে হবে।
–এত টাকা কোথায় পাবো?
–যেখানে পাও সেখান থেকে এনে দাও।
–তাহলে আর দুই মাস অপেক্ষা কর।
–পারব না,আমাকে আজই দিতে হবে।এমনিতেই একমাস অপেক্ষা করিয়েছো তারপরেও এত কম দিতেছো?
.
সেদিন রাগ করে টাকা না নিয়েই বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
সাত হাজার টাকায় কি আর ভালো মোবাইল হবে?
সব বন্ধুদের হাতে দামি মোবাইল কেবল আমারটাই সেকেলে,কোনমতে মান বাচিয়ে চলার মত আর কি।
সারাদিন চৈত্রের কাঠফাটা রোদে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম,রাতেও বাসায় ফিরলাম না।বাসায় আর ফেরার ইচ্ছেও নেই।যে বাবা মা আমার চাহিদা পূরণ করতে পারে না তাদের কাছে আর ফিরব না।রাত পেরোলোই সকালের ট্রেনে শহরে চলে যাব।এই উদ্দেশ্য মনে নিয়ে রাস্তায় বসে বসে হেডফোনে গান শুনতেছি।হঠাৎ জোরে জোরে বাতাস বইতে লাগলো,মনে হচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় হবে।চৈত্রের শেষাশেষিও কালবৈশাখী ঝড় হয়।আমি তখনো রাস্তায় বসেই আছি।কিছুক্ষণ পর একটা সিগারেট ধরানোর জন্য ম্যাচ বের করলাম কিন্তু সিগারেটটা আর জ্বালাতে পারলাম না,বাতাসের বেগে সব কাঠি নিভে গেল।তাই মনে মনে এদিক ওদিক আগুনের সন্ধান করছিলাম।হঠাৎ করেই গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট ঘরে কেরোসিনের প্রদীপের আলো চোখে পড়ল।তাই সেখানেই যেতে মনস্থির করলাম,উদ্দেশ্য হলো ঝড় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া আর সিগারেট ধরানো।তাই দ্রুত হেটে গিয়ে সেই ঘরের ভিতরে উকি দিলাম,দেখলাম একটি মহিলা প্রদীপের আলোয় কাথা সেলাই করছে আর দুটি বাচ্চা মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে।
তাই আস্তে করে দরজায় কয়েকটা টোকা দিয়ে আবার উকি দিলাম।দেখি,মহিলাটা চমকে গেছে,তার চোখে মুখে আতংকের ছাপ বুঝা যাচ্ছে।মাঝরাতে কারো ঘরের দরজায় গিয়ে নক করলে সে ভয় পাবেই। তাছাড়া বেচারী গ্রামের শেষপ্রান্তে স্বামী ছাড়াই থাকে,
এবার ডাক দিলাম।
.
–চাচি,দরজাটা খুলেন।
–কে?
–আমি আবির।
–ভেতরে আসো,এতরাতে কোথেকে আসলে?
–রাস্তায় ছিলাম,আপনার ঘরে আলো জ্বলতে দেখে সিগারেট জ্বালাতে আসলাম।
–আচ্ছা বসো।
(সিগারেট টা জ্বালিয়ে আয়েশ করে টানছি আর মহিলাটি কাথা সেলাই করতে মনোযোগ দিল)
–চাচি,আপনি এতরাতে কাথা সেলাই করছেন যে?
–কি করব কও,গরীব মানুষ।দু দিন পর বৈশাখী মেলা,বড় মেয়েটা বৈশাখী জামার বায়না ধরেছে আর ছেলেটারও অসুখ।তাই রাত জেগে কাথা সেলাই করতে হয়।ওদের যদি বাবা বেচে থাকতে কত কিছু যে এনে দিতো।
–কাথা সেলাই করে কি করেন?
–বিক্রি করি।
–ওওও,কাথা বিক্রি করে মাসে কত টাকা আয় হয়?
–মাসে দুইটা কাথা সেলাই করতে পারি তাতে হাজার খানেক টাকা পাওয়া যায়।
–আর কিছু করেন না?
–নাহ
.
আমার হাতে সাত শো টাকার মতো ছিল সবই মহিলাটিকে দিয়ে দিলাম যদিও নিতে চাইছিল না তবুও জোর করেই দিলাম।যাতে মেয়েটির জামা আর বাচ্চাটির চিকিৎসা করতে পারে।
আর আমার শহরে যাবার চিন্তাটাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।কারণ মহিলাটিকে দেখে বুঝতে পারলাম যে বাবা মা সন্তানের সুখের জন্য সব্বোর্চ চেষ্টা করে।আমার বাবাও তো সারাদিন রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করে কোনদিন আমাকে যেতেও বলে না।যখন যা চাই তাই দেবার চেষ্টা করে।বাবার সামর্থ্য সসীম আমার চাহিদা অসীম তাই বাবা আমাকে খুশি করতে পারেনা।কিন্তু মহিলাটিকে দেখে এতদিনে আমার চাহিদাও সীমিত পর্যায় চলে আসলো।তাই বাড়িতে চলে গেলাম।সকালে ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে।
.
–আবির।
–হুম।
–রাতে কোথায় ছিলি?
–বন্ধুর বাসায়।
–তাড়াতাড়ি উঠে কলেজে যা।প্রায় দশটা বাজলো।
–আজ যাবো না।
(মা হাসিমাখা মুখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো)
–রাগ করেছিস বাবা?চিন্তা করিস না,আজকের দিনটা অপেক্ষা কর,কালকেই তোকে বারো হাজার টাকা দিব,তোর বাবা টাকা দিতে রাজী হয়েছে।
–বাকিটাকা কোথায় পেলো?
–তুই শুনে কি করবি?তুই তোর টাকা পেলেই হলো,ব্যস।
–না আমাকে বলো।
–কালু ব্যাপারীর কাছে সুদ নিবে।
–আমি মোবাইল কিনবো না।
–কেন?
–যেটা আছে আমার সেটাই চলবে।
–বাবার প্রতি অভিমান করেছিস না কি?
–নাহ।
–তাহলে?
–বুঝতে শিখেছি
–কি?
–বাবা মা’র ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত