১।
দ্যাখ ,এইসব্ আমাকে মানায় না । তুই করবি কর । তোর ব্যপার আলাদা । একা মানুষ , টাকার অভাব নাই । আমার পুরা ফ্যমিলি টানতে হয় । আমার দরকার ছিল তোর জায়গায় থাকা … কিছু একটা এক্সট্রা শুরু করতে হবে ; যা কিছু হোক । আসল কথা হচ্ছে টাকা টা ইম্পর্টেন্ট ! এছাড়া লাইফ টাই অচল !! বেকার !
অন্তু টলতে টলতে পাশের ঘরে চলে গেল । রাশেদ উঠে দাঁড়াল । অন্তুর সাথে কথা বলা এখন বেকার ! পাগলের মত কিসব বলে চলেছে ! এক ধাক্কায় জানালাটা খুলে দিলো রাশেদ । মিষ্টি একটা বুনো ফুলের গন্ধ এসে লাগলো নাকে । ঠিক যেন যুঁইয়ের শরীরের গন্ধ এর মত । এলোমেলো , মাতাল করা । অন্তুটা আসলে বোকা ! টাকা দিয়ে অনেক কিছুই হয় ! কিন্তু সব কখনোই না । মানুষের আনন্দের অনেক খানিই আশেপাশে ছড়িয়ে আছে । তা পেতে কোন টাকাই লাগে না । শুধু একটু খুঁজতে হয় । তাকিয়ে দেখতে হয় আশে পাশে । রাশেদের টাকা নিশ্চয়ই আছে । কিন্তু যুঁই তো নেই তার । যুঁই তো অন্তুর ই । গাধা অন্তু টা জানেও না কি আছে তার ! কার যে কি আছে না হারালে কেউ জানতে পারে না তার গুরুত্ব কতখানি ছিল ! শুধু যা নেই তার পিছে ছুটে বেড়ায় ! আবার কেউ কেউ হয়ত কোনদিন ও জানে না তার কি ছিল । কেন যে এমন হয় ?
হ্যাঁ । আজ রাশেদের টাকা , সাফল্য , সম্মান সব ই আছে । এসব ই তো চায় অন্তু ! যদি সব সে দিয়ে দেয় অন্তুকে ? শুধু যুঁইয়ের বিনিময়ে … দেবে অন্তু ? দিবেনা আবার হয়ত বা দিবে । কিন্তু যুঁই কেন আসবে ? সে তো একটা পৃথক স্বত্বা ! একজন পৃথক মানুষ । সে কেন দিবে নিজেকে ? একটা মানুষ যদি নিজেকে দিয়ে দিতে চায় , কেউ পারেনা আটকে রাখতে । আর না দিতে চাইলে হাজার জোর করেও হয়না ।
পরদা ঠেলে যুঁই মাথা বের করল ! সাথে সাথে সেই নেশাধরা গন্ধ টা আবার ফিরে এল !
আলো টা না জ্বালালে চলছে না রাশেদ ?
কেন ?
কেন কি আবার ? বাইরে এত্ত সুন্দর জ্যোৎস্না হয়েছে !! এত অদ্ভূত মায়াময় একটা আলো চারদিকে ঘিরে আছে । আলো টা নিভিয়ে বাইরে এসে দেখ !
সাথে সাথে আলো নিভিয়ে দিল রাশেদ । নিজেকে কেমন মোহাবিষ্টের মত লাগছে । যুঁই ডেকেছে তাকে ! দুজন বারান্দার চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে ।
তোমার মেয়ে কই যুঁই ? ঘুমিয়েছে ?
হুমম । অন্তুটা পুরা বেহুঁশ !
ছেড়ে দাও । আপনিই ঠিক হয়ে যাবে ।
জানি । কম তো দেখিনি …
ছাড়ো ওর কথা ! জ্যোৎস্না টা দেখেছ !
হুমম ! ঢাকার বাইরে এই প্রথম জ্যোৎস্না দেখছি ! ঢাকায় ছাদে উঠে দেখি আমি মাঝেমাঝে । কিন্তু চারপাশে অনেক আলো থাকে তখন ।
অন্তু যায় না তোমার সাথে ?
অন্তু ? আজ দুদিন এসেছি এখানে । দেখছ তো ওকে !
একটু হাসল যুঁই । সেই হাসিতে কি আছে বুঝতে পারল না রাশেদ । বিষাদ ? কষ্ট ? না বিদ্রুপ ?
যুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সে । ফিসফিস করে বলতে থাকে রাশেদ ,
এতটাদিন কই ছিলা তুমি ? একই ফ্ল্যাটে না থাকতাম আমরা ? কোনদিন নিচে , উপরে , ছাদে , লিফটে , রাস্তায় কেন দেখা হয় নি তোমার সাথে ?কোথায় ছিলে তুমি ? অন্তু এল কোথা থেকে ? এলে যখন এতদিন পরেই কেন এলে আর ?
তুমি কি কিছু বলছ রাশেদ ?
নাহ !
কি ভাবছ ?
তেমন কিছু না ।ঘুমাবে না তুমি ?
নাহ , ঘুম আসছে না । তোমার ঘুম আসছে রাশেদ ?
আমি এত্ত জলদি ঘুমাই নাতো ! তুমি শুতে চলে যাও যুঁই । এইখানে এতরাতে একা থাকাটা নিরাপদ না ।
তুমি তো আছ ! একা কোথায় ?
রাশেদ কিছু বলার খুঁজে পেলনা । যুঁই একটু হেসে উঠে দাঁড়াল ।
আচ্ছা রাশেদ …
কি ?
আমাকে একটু এই পাহাড় টার উপরে নিয়ে যাবে ? অই খান টাতে ?
এত রাতে ?
প্লিজ রাশেদ …
যুঁইয়ের কাতরতা রাশেদের সব বিবেকবোধ কে দুমড়ে দিল । অমন করে কেন বলে যুঁই ?
ঠিক চূড়ায় উঠেই চুপ হয়ে গেল যুঁই । স্তব্ধ হয়ে গেল বলা ঠিক হবে । এতক্ষণ খুব বকবক করছিল । অনেক নীচের সমুদ্রের ঢেউ গুলো চাঁদের আলোয় মাখামাখি হয়ে আছে ! কেমন যেন সুন্দর ! প্রথম প্রেমের স্বপ্নের মত !! এরকম একটা দৃশ্য দেখলে একটা সুস্থ মানুষের মাথা নষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য !অবাক চোখে জ্যোৎস্না আর ঢেউয়ের ভালবাসাবাসি দেখছিল যুঁই ! আর তার দুচোখের দিকে তাকিয়ে ভালবাসছে রাশেদ ।
হাল্কা বাতাস । ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হিমশীতল ! হঠাত যুঁই চোখ ফেরাল ! কেমন উন্মাদিনীর মত ! রাশেদের খুব কাছে এসে দাঁড়াল সে । চাপা গলায় বলতে লাগলো …
‘কেন ভালবাস ? কেন ?’
আটকে রাখা সব আবেগের দরজা খুলে দিল যুঁই । নিজেরও , রাশেদের ও …
‘যুঁই জ্যোৎস্নার কবিতা শুনবে একটা ?’
‘না , আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা । আমার কথার উত্তর দাও তুমি ।’
অনুমতি না পেয়েও আবৃত্তি করে যায় রাশেদ । ভরাট কণ্ঠে । চোখ বন্ধ করে ফেলে যুঁই । তার মনে হয়ে যেন হাজার মাইল দূর থেকে কেউ বলছে…
“মধ্যরাতে জ্যোৎস্না হলে আমার স্বপ্ন দেখা বারণ বারণ খুনসুটি, হাতে রেখে হাত কারণ বা অকারণ তুই তো বলিস না, চল যাই জ্যোৎস্নাস্নানে থাকে না ওষ্ঠে সুরের আভা কারণ বা অকারণে।
ঘুম ঘুম তোর চোখে থাকে না তো কোন আহবান , ঘুম ঘুম তোর দুচোখে হয় না তো কোন মায়াবী সাতকাহন আমি বসে থাকি সাথে নিয়ে স্বপ্ন ও জ্যোৎস্না তুই তো বলিস, কি এই হেয়ালিপনা! ঘুমাতে যাবি না ? অতৃপ্ত মন নিয়ে হয়না আমার বলা হয়না কথা ও কবিতার শিহরণে পথ চলা জ্যোৎস্না আসবে আবার, থাকবে না আধার তাই আমি বসে থাকি নিয়ে ভালোবাসা তোর আমার ।’’
চোখ খুলে তাকায় যুঁই । তার চোখের কোণে চাঁদের আলোয় চিকচিক করে এক বিন্দু অশ্রুজল । সব সামাজিক বাধা নিষেধের বেড়া জ্বাল ভেঙ্গে যায় দুজনের ।
২।
অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেল … ভাবছিল রাশেদ । আগুল একবার জ্বললে তা বাড়তেই থাকে শুধু । সব পুড়িয়ে ছাই করে দেয় । আগুন টা জ্বালিয়ে দিয়েছে রাশেদ । এতদিনের সংযম কে ধরে রাখতে পারেনি সে । এতদিন নিজে নিজে জ্বলেছে সে , এখন সেই আগুনে যুঁই জ্বলবে । অন্তু জ্বলবে । টুপুর ও !!!
ব্যস্ত পায়ে হাঁটছিল রাশেদ । ঘুম আসছে না কিছুতেই । ঘুম আসার কথাও না । সে তো কিছু বলেনি কখনো যুঁই কে । কোনদিন ই তো কিছু বলেনি । যুঁই জানল কেমন করে ? মেয়েদের সেই তৃতীয় দৃষ্টি থিওরি ?
৩।
ঘুম নেই যুঁই এর চোখেও । চোখ দুইটা জ্বালা করছে ভীষণ । রাশেদের স্পর্শ টুক সে এখনো অনুভব করতে পারছে । থরথর করে কেঁপে উঠছে সে গোপন এক ভাল লাগায় । পাশে অন্তু ঘুমাচ্ছে । নিজের চাহিদা মিটতেই ঘুম । একবার এদিক ফিরে দেখেও না । কিছু জানতেও চায় না । কখনও না । অন্তুর কাছে সে মানুষ নয় , নারী নয় । শুধু একটা শরীর । প্রয়োজনে শুধু ক্ষুধা টাই মিটিয়ে নেয় যখন খুশি । মনের প্রবল তৃষ্ণা যে মরতে মরতে প্রায় অস্তিত্ব হীন – তার কোন খবর ও নেই অন্তুর । মেয়েদের মনের অন্তহীন গভীরতা কে স্পর্শ করার ক্ষমতা সব পুরুষের থাকে না । তারা শুধু শরীর হাতড়ে খোঁজে , গরবে অহংকারী হয় । মনের খোঁজ রয়ে যায় অজানা ।
ছেলেরা বড্ড বোকা । একটু আদর , একটু হাসি , নরম কথা , দুইটা সস্তা ফুলের বিনিময়ে মেয়েরা যে তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারে , তা বোঝে না । শুধু চোখ রাঙিয়ে চলে ।
সাহস আর স্বাধীনতা হীন মেয়েরা নিজের সুখটুক কেড়ে নিতে পারেনা । পরিস্থিতির কারনে বাধ্য হয়ে যখন কাউকে কষ্ট দিয়ে অন্যের ঘর করতে যায় তারা ; তা নিয়ে কত ব্যঙ্গাত্মক লেখা , গান , কবিতা , গল্প ।সেই দুঃখ দেয়ার মাঝে নিজের দুঃখ যে কতখানি অইটি কেবল চোখে পড়ে না । একজনকে ভালবেসে অন্যের বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর কষ্ট টা কতোখানি তা কেবল সে মেয়েই বোঝে । সব মেয়েই এরকম , তা নয় । কিন্তু বেশির ভাগ ই তো । অথচ কিছু মেয়ের জন্য সবাইকে কথা শুনতে হয় ।
কাউকে কখনো ভালো লাগেনি তা নয় । কিন্তু কাউকে ভালবাসার আগেই মায়ের চাপে অন্তুকে বিয়ে করে যুঁই । পছন্দের কেউ ছিল না । তাই আপত্তিও ছিল না । শুধু বয়স টাই ছিল অল্প ।
অনেক মনোযোগ , অনেক যত্ন ,অনেক স্বপ্ন ছিল তখন । একে একে সব মরে যাচ্ছে । টুপুর এর জন্মের সময় ! মাত্র বাইশ বছর তার । কত আহ্লাদ ছিল বাচ্চা টা ঘিরে , সব এক মুহুর্তেই মরে গেছিল অন্তুর এক কথায় ,
“ এত্ত জলদি কেন ? অ্যবর্ট করে ফেল ?’’
সব আবেগ মরে গিয়েছিল যুঁইয়ের । সেদিন থেকে । টুপুর ঠিক ই এসেছে পৃথিবীতে ! দুবছর হল । এখন তাকে সবচেয়ে বেশি আদর তো অন্তুই করে । তবু কেন যে একটা চোরা রাগ কিংবা অভিমান রয়ে গেছে যুঁইয়ের ।
অন্তুকে ভালবাসার চেষ্টা টা সেদিনের পর করতে আর ইচ্ছে হয়নি যুঁইয়ের । কাউকে ভালবাসার সে ইচ্ছা টা আবার এতদিন পর জেগে উঠতে চাইছে কেন ? রাশেদের সে উত্তাল প্রেম অনেক আগেই বুঝেছে যুঁই । চুপ থেকেছে শুধু মেয়েটার জন্য । একটু একটু করে রাশেদ কিভাবে তাকে কাছে টেনে নিল ? রাশেদ নিজেও কি জানত ? অপমানিত আর অতৃপ্ত শরীর মন আজ বড্ড বেশি সাহসী হয়ে গেছে । পাশের ঘরেই আছে রাশেদ , যাবে যুঁই ? কেউ বলে না দিলেও জানে সে রাশেদ তার ই অপেক্ষাতেই আছে । এমন অস্থির , দুর্বিনীত প্রেমের জন্য অপেক্ষা করে প্রতিটা মেয়েই । সে চায় , কেউ আসুক । তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক প্রবল ঢেউয়ের তালে । পাগল করে দিক ! সেই প্রেম এখন যখন যুঁই পেল, কি করা উচিত তার ?
সতী সাধ্বী স্ত্রীর মত সব জলাঞ্জলি দিয়ে স্বামীর পাশে পড়ে থাকবে ? ভালবাসাহীন সম্পর্ক টাকে প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াবে ? কেন ? সমাজের জন্য ? আজ রাশেদের কাছে গেলেই সে অসতী হয়ে যাবে ? সতীত্ব টা কী শুধুই শরীরের ? আর মনের ? এই যে এখন সে এত চাইছে রাশেদ কে এখন এখন অসতী হচ্ছে না সে ? এমন অসতী তো কত মেয়েই রোজ হচ্ছে । কেউ জানে সে কথা ? জানে শুধু শরীরের পবিত্রতাটাই ! অন্তুর ছুঁড়ে দেয়া শাড়ি টা নিচ থেকে কুড়িয়ে নিল যুঁই …
বেরিয়ে এল ঘরের দরজা খুলে । মনের সাথে যুদ্ধে সে বিপর্যস্ত ভীষণ ।
৪।
ঘরের নীরব একাকীত্ব সহ্য করতে পারছিল না রাশেদ । বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরাতে গিয়েও থেমে গেল সে । এই ঠোঁটে যুঁইয়ের স্পর্শ লেগে আছে ! কেমন করে অপবিত্র করবে সে ? পা দিয়ে মাড়িয়ে আগুন টা নিভিয়ে দিল । তীব্র এক অপরাধ বোধ আচ্ছন্ন করে রেখেছে তাকে । যুঁই তার চির আকাংখিত ভালবাসার মানুষ ; কিন্তু তার প্রিয় বন্ধুর স্ত্রী ও ! মাথার উপর ছেয়ে থাকা নীল আকাশের মত । যখন খুশি দেখা যায় । শুধু হাত বাড়িয়ে পাওয়া যায় না ।
রাশেদ !
মায়াময় কণ্ঠে ডাকছে যুঁই তাকে । না ডাকলেও তার উপস্থিতি টের পেত রাশেদ । যুঁইয়ের শরীরের গন্ধটা তার চেনা । খুব বেশি চেনা । পিছন ফিরে তাকায় রাশেদ । রণরঙ্গিণীর বেশে দাঁড়িয়ে আছে যুঁই । রাশেদ তাকাতে পারছে যুঁইয়ের তীব্র দৃষ্টির সামনে । যুঁইয়ের চোখের আগুনের অর্থ জানে রাশেদ । এই জন্য সে অপেক্ষা করেছে কতকাল !
‘যুঁই ! প্লিজ ফরগিভ মি । প্লিইজ ! যা হয়েছে , ঠিক হয়নি ।’
‘কেন রাশেদ ? তুমি ভালবাসনা আমাকে ?’
‘তাতে কিছু যায় আসে না ।’
‘আমি অন্তুর স্ত্রী বলে ? ’
দুহাতে যুঁইয়ের মুখ টা ছুঁল রাশেদ । ফিসফিস করে বলল –
‘ইচ্ছে করছে উড়িয়ে নিয়ে যাই তোমাকে ! অন্য কোথাও । অনেক দূরে । আটকে রাখি সারাটা জীবন আমার সাথে !’
একবার ও কিচ্ছু না ভেবে রাশেদের দিকে এগিয়ে গেল যুঁই । হঠাত বিদ্যুৎ তরঙ্গের মত কিছু এসে থামিয়ে দিল তাকে মাঝপথেই । চিরচেনা ঘুমন্ত সেই মানুষ টার মুখ কেন এখন মনে পড়ছে ! এত রাগ , এত অভিমান , তবু অই মুখ টাকেই মনে পড়ছে ! কানের কাছে যেন টুপুর প্রচণ্ড শব্দে রেকর্ড বাজাচ্ছে… মা , মা , মা , মা ……
এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারল না যুঁই । এক ঝটকায় সরিয়ে দিল রাশেদকে । ছুটে চলে গেলো সমুদ্রের তীরে । পৃথিবীটা কেমন অসহ্য রকম অদ্ভূত ! যার অবহেলা , নির্লিপ্ততায় তিলে তিলে শেষ হচ্ছিল যুঁই তার জন্য সে …… কেন ? কেন ?? একটু আগে যখন শুধু অধিকারের দাবি নিয়ে তার শরীর টা নিংড়ে ফেলে রেখে শুতে চলে গেল , কী তীব্র বিতৃষ্ণা আর অপমানে জ্বলছিল শরীর ! রাগে অন্ধ হয়ে বেরিয়ে এসেছিল সে । সে মানুষ টার জন্য কি করে কান্না পায় তার ?
পিছনে পায়ের শব্দে একটু স্থির হল সে । নিঃশব্দে চোখের পানি মুছে নিল সে ।
নিচু গলায় বলল, ‘ আমি পারবনা । তুমি আমার উপর রাগ করনা । আমি পারবনা .. তুমি আর এস না প্লিজ । চলে যাও তুমি …’
যুঁই … – কে যেন ডাকল বিহ্বল গলায় । কাতর কণ্ঠে !
ভ্রূ কুঁচকে সন্তর্পণে পেছনে তাকাল যুঁই ।
অন্তু !!!!!!!! তাকে দেখে মনে হচ্ছে ঝড় বয়ে গেছে তার উপর দিয়ে ! হিস্টিরিয়া রোগীর মত কাঁপছে সে । অন্তুকে ধরে বসাল যুঁই বালির উপর ।
কি হয়েছে তোমার ? এমন করছ কেন ?
ভয় পেয়েছিলাম ।
কিসের ভয় ?
একটা স্বপ্ন দেখেছি । বাজে একটা স্বপ্ন ।
আরে ? তুমি ভয় পেয়েছ স্বপ্ন দেখে ? তুমি ?
দেখলাম , তুমি নেই । তুমি আমার সাথে নেই । আমার কাছে নেই । অনেক বেশি দূরে চলে গেছ ।
অন্তুর কথা শুনে বুক কেঁপে উঠল যুঁইয়ের !
ঘুম ভেঙ্গে দেখি তুমি পাশে নেই । কোথাও নেই । ঘরে , বারান্দায় , নিচে , ওয়াশ রুমে কোথাও নেই । আমার মনে হল তুমি সত্যি হারিয়ে গেছ !
আমি আবার কোথায় যাবো ? এইত্ত আছি । – বলতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে উঠল তার ।
তুমি আমার উপর রাগ করে আছ আমি জানি । আমি স্যরি । আমি সত্যি স্যরি যুঁই । আমার মাথা কাজ করে না সবসময় । কিসব করে বসি আমি । তোমাকে একবার স্যরি বলতেও মনে থাকেনা আমার ।
আচ্ছা বাবা , ঠিক আছে । এইবার চল । শুতে চল ।
তুমি কখনো ছেড়ে যাবে না তো যুঁই ?
তাকিয়ে আছে যুঁই ? কী তীব্র আকাঙ্ক্ষা অন্তুর চোখে ! এর সন্ধানেই কি ছিল সে এতদিন ? বিদ্ধস্ত অন্তুকে জড়িয়ে ধরল যুঁই প্রবল আবেগে ! এই আবেগ কে মরে যেতে দিবেনা যুঁই ! হোক সে গম্ভীর , হোক সে একটা রামগরুড় কিংবা আন রোমান্টিক! তবু সে তার ! একান্ত তার ! এই এক মুহূর্তের ভালবাসার জন্য আবার হাজার টা জীবন সে অপেক্ষা করে যাবে !! ভাগ্যিস এসেছিল কক্সবাজারে , ভাগ্যিস স্বপ্ন টা দেখেছিলো অন্তু !
আড়াল থেকে সরে গেল রাশেদ । কটেজের দিকে এগিয়ে গেল ধীর পায়ে । এতদিন পর নিজের ভালবাসাটা চিনতে পেরেছে যুঁই । এতে যদি যুঁই ভাল থাকে তো থাকুক । রাশেদের কষ্ট পাওয়া উচিৎ , পাচ্ছেও । তবু কেন যে শান্তি ও লাগছে তার ! অপরাধ বোধ থেকে মুক্ত লাগছে নিজেকে !
তখনও দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল … একটু একটু করে রূপালি চাঁদ টা ডুবছিল যখন !