স্বপ্নচারী

স্বপ্নচারী

-সিয়াম..মেয়েটা দারুণ দেখতে না!
-হুম,আমাদের এলাকায় দুইমাস হলো এসেছে।
-প্রেম করে?
-নাহ্,চরম ভাব।
-তাহলে তো ট্রাই করতেই হয়।
-এই মেয়ের সাথে!
-হুম।
-সেই প্রথম দিন থেকে ঘুরছি কাজ হলোনা,আর তুই কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসছিস।
-বিশ দিনে পটাবো যাহ্।
-বাজি!
-ওকে।
-ওকে,আমি জিতলে হ্যাপি নিউ ইয়ার পার্টি ফুল খরচ তোর আর তুই জিতলে তোদের প্রথম ডেটের সব খরচ আমার।
-ডান,এবার বালিকার কিছু ডিটেলস বলতো।
-নাম আফরিন,ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার্স,সকাল নয়টায় কলেজ আর তিনটায় প্রাইভেট।
-ওকে তাতেই চলবে।
*
রাতে অনেক ভেবে তিন মিশনে আফরিনকে পটানোর একটা আইডিয়া বেড় করলাম।
মিশন1…..
সকাল সকাল বেড়িয়ে বালিকার বাসার সামনে অপেক্ষায় রইলাম।
আফরিন বাসা থেকে বেড়িয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই পিছু পিছু হাঁটতে লাগলাম।
তবে সেটা বখাটে নয় ভদ্র ছেলের স্টাইলে।
কলেজে পৌছে দিয়ে বাসায় রেস্ট নিতে আসলাম।
ঘড়ি ধরে ছুটির সময় আবার কলেজের সামনে হাজির।
সেখান থেকে পিছু পিছু বালিকার বাড়ির পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম।
এভাবে time to time দশদিনে প্রথম মিশন কম্পিলিট করে দ্বিতীয় মিশন শুরু করলাম।
মিশন2…..
-আপু কিছু কথা ছিলো।
-(নিশ্চুপ হেঁটে চলেছে)
-এইযে আপু!
-(…….)
-শুনুন তো।
-প্রতিদিন এভাবে পিছুনেন কেনো!
-(নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে)
-কি হলো,কথা বলুন।
-কেমন আছে।
-ধ্যাত।
বলেই বালিকা কলেজের ভেতরে চলে গেলো।
.
এভাবে আরো তিনদিন রাস্তায় দুই-একটা কথা হলো।
এরি মাঝে বালিকার বিহেভিয়ারও কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে।
তাই ফাইনাল মিশনটায় নেমে পরলাম।
মিশন3…..
দুপুর আড়াইটায় খুব গেটআপের সাথে আফরিনের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে লাগলাম।
দশ মিনিট বাদে বালিকার দেখা পেতেই…
-আফরিন শুনো।
-কি হইছে বলেন।
-তোমার কানের ওখানে পোকা।
-কিইইই,সত্যি….ফেলে দিননা প্লিজ।
-ওয়েট।
বলেই আস্তে আস্তে কাছে এগিয়ে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সুপার একটা কিস দিয়ে দিলাম ঝেড়ে দৌড়।
পেছনে একবার তাকিয়ে খেয়াল করলাম আফরিন হা করে আমায় দিকে তাকিয়ে আছে।
.
তারপর আর বালিকার সামনে যাইনি।
বন্ধুদের থেকে জেনেছি আফরিনও এইকদিন বাসা থেকে বেড় হয়নি।
বালিকার ভাবনা বাদ দিয়ে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়জনে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
যদিও বাজির নিয়ম অনুযায়ী টাকা সব আমার পকেট থেকেই গেছে।
.
নতুন বছরের দেখা মিলতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম নীল শাড়ীতে এক বালিকা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
লাইটের আলো বালিকার মুখে পড়তেই কিছুটা শক খেলাম।
ভাবতে লাগলাম দৌড় দেওয়াটা ঠিক হবে কি না।
মনের কথায় সাড়া দিয়ে দৌড়ের জন্য প্রস্তুতি নিছি আর মিষ্টি কণ্ঠে ডাক পড়লো….
-রফি।
(টিপ টিপ পায়ে তখন কাছে এগিয়ে গেলাম।)
-সরি আফরিন।
-কেনো!
-ওইদিনটার জন্য।
-তোমার ফ্রেন্ডদের কাছে কতবার বলছি,তোমায় দেখা কড়ার কথা বলতে তবুও তোমার কোনো খোঁজ নেই।
-কিইইই,ওরা আমায় একবারো বলেনি।
-মানে কি!
-ওয়েট..ওয়েট..ওয়েট।এবার বুঝছি।
-কি?
-আসলে ওরা বাজি ধরছিলো,তোমায় পটাতে পারলে আমাদের ডেটের ফুল খরচ ওদের পকেট থেকে যাবে আর পটাতে না পারলে আজকের পর্টির ফুল খরচ আমার পকেট থেকে যাবে।এর জন্যই হয়তো বলেনি।
-কিইইই..তুমি আমায় বাজি ধরে পটাইছো![চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে]
-আজব,তুমি তো আর পটোনি।
-ওই ছেমড়া না পটলে আব্বু-আম্মুর কাছে মিথ্যা বলে তোর সাথে এখন দেখা করতে আসি![রেগে]
-ওরে বাবা।[ঘাবড়ে গিয়ে]
-যেদিন কিস করছো,সেদিন থেকে কি হইছে জানিনা সারাক্ষণ শুধু তোমারি ভাবনায় পড়ে থাকি।তোমায় দেখতে না পেয়ে দরজা আটকে বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করি।তোমায় ছাড়া হয়তো বাঁচতে পারবো কিন্তু আমার ভালোথাকাটা এখন সম্পূর্ণ তোমায় ঘিরে।আই লাভ্ ইউ..
আমি তখন রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বললাম “আই লাভ্ ইউ টু।”
হঠাৎ বাজির শব্দ,আফরিন ভয় পেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
তখনি একসাথে সবাই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো “HAPPY NEW YEARS”
রকেট বাজি গুলো উড়ে গিয়ে ফুটে আধাঁর কালো আকাশকে রঙিন করে তুললো।
*
আফরিন লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিও কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।
তখনি হারামী গুলার এন্ট্রি…
-দোস্ত গার্লফ্রেন্ড তো পেয়েই গেলি,এবার আমাদের ট্রিটের ব্যবস্থা কর।(নীল)
-গ্রিল না খাওয়াইলে আর ছাড়ছিনা।(সিয়াম)
-নাহ্,সাথে ব্লাক কফিও লাগবো।(সোহান)
আমি হা করে ওদের কথা শুনতে লাগলাম।
আফরিন তখন আমাদের দিকে ঘুরে বললো “হুম অবশ্যই,কাল দশটায় আমি আর রফি আপনাদের ট্রিট দিবো।”
বালিকার মুখে এমন কথা শুনে খুশিতে সবাই লাফিয়ে উঠলো।
তারপর সেখানে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আফরিনকে এগিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাতে সুপ্পার একটা ঘুম দিয়ে সকালে ফ্রেস হয়ে ট্রিট দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম।
*
রেস্টুরেন্টে সবাইকে পেটপুরে খাইয়ে আমি আর আফরিন সামনাসামনি বসে কথা বলছি।
কথার মাঝে আফরিন বলে উঠলো “চলো।”
-কোথায়!
-ঘুরতে।
-পরে যাই?
-নাহ্,এর মধ্যে দিয়েই তোমার ফ্রেন্ডদের শাস্তি দিবো।
-কিভাবে।
-হিহিহি।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা বালিকা কি বলতে চাইছে।
তখন ফ্রেন্ডদেরকে অপেক্ষা করতে বলে আমরা সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
আর মালিককে বলে দিয়ে গেলাম বিল “ওরা পে করবে।”[ফ্রেন্ডদের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে]
*
তারপর আফরিনের হাতে হাত রেখে চিরচেনা পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হারিয়ে গেলাম।
ক্লান্তিহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে দুঘণ্টা বাদে আবার সেই রেস্টুরেন্টের সামনে হাজির।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলাম বেচারা ফ্রেন্ড গুলা অবশেষে ওয়েটারের কাজ করছে।
ওদের এমন হাল দেখে আফরিনতো খুশিতে আধখানা।
আর আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম বালিকার সেই খুশিমাখা মুখের দিকে।
আমায় আর আফরিনকে বাহিরে দেখতে পেয়ে রাগি একটা লুক দিয়ে সিয়াম তখন বললো “রফিইইইইই,তোরে দেইখা নিমু।”
……………………………………………<সমাপ্ত>…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত