মেয়ে, তোমাকে আমি ভালোবাসি, কথাটা তোমার জানা দরকার।
-বাদল ভাই! আপনার ভয় নেই?
-ভালোবাসায় কিসের ভয়?
-আমার তো শুনেই ভয় করছে। আব্বা জানলে তো আমি শেষ!
-এখনই তোমার আব্বা জানবে কেমন করে? তুমি না বললেই হলো।
-কী বলেন? আব্বা তো আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলবে আপনি আমাকে প্রেম-ভালোবাসার কথা বলেছেন।
-তোমার আব্বার কথা পরে, তুমি আমাকে ভালোবাস কি না বলো?
-ভালো তো আমি সেই কবে থেকেই বাসি।
শিফাতের সহজ উত্তরের পর। গোলাপি পাখায় ভর করে উড়ছি। পরদিন আবার আমাদের দেখা হলো।
-শিফাত, তুমি আমাকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে, কেমন?
-কী বলেন? ভয়েই আমি কলম ধরতে পারব না, লেখা তো পরে…। আর আব্বা যদি…
-ঠিক আছে, চিঠি বাদ। বিকেলে আমরা পার্কে বেড়াতে যাব।
-ওরে বাবা, আমি যাব না। আব্বা যদি জেনে যায়?
-তুমি না বললে জানবে কী করে?
-ভয়ের চোটে আমার মুখ থেকে বের হয়ে যাবে।
আমরা মুখে আর কথা আসে না। তৃতীয় দিন শিফাতকে কলেজের রাস্তায় পেয়ে বলে ফেললাম:
-তোমাকে বিয়ে করতে চাই, বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব?
-না না, আপনাকে বলতে হবে না। আমি বড় আপুকে আপনার কথা বলব। আপুই আব্বাকে বলবে। রাতে শিফাতকে ফোনে পেলাম। খুশির খবর শুনে লাফিয়ে উঠলাম। শেষে শিফাত বলল, বাসার সবাই রাজি। আমার কাছে আব্বা সরাসরি শুনতে চেয়েছে…
-হ্যালো শিফাত, চুপ করে আছো কেন?
-আব্বা আমাকে বলেছে, আমি কলেজে গিয়ে প্রেম-ভালোবাসা করলাম কখন? আবার কোন সাহসে নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলছি। আমার কি কোনো লজ্জা নেই?
-তারপর?
-আমার কাছে জানতে চেয়েছে, আমি বিয়েতে রাজি কি না?
-তুমি কী বললা?
-আমি কোনো কথা বলিনি। চুপ করে ছিলাম। আব্বা মেজাজ খারাপ করে ফেললেন। এখন কেন কথা বলছি না দেখে মারতে এলেন।
শেষে কী হলো?
-আমি বলেছি, আমি বিয়ে করব না।
ফোনের লাইনটা কেটে যায়। পরে শুনি, ভয়ে নাকি অমনটা বলেছিল।
তারপর একদিন শিফাতের সঙ্গে দেখা:
-শিফাত তুমি আমার সঙ্গে ফাজলামি করলা কেন?
-ও মা, ফাজলামি করলাম কখন? আমি তো আব্বার ভয়েই…। তাই পড়াশোনা শেষ করেই বিয়ে করব। আপনাকে তত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। করবেন না অপেক্ষা?
-না।
সেদিনের ঘটনার পর একটি বছর পেরিয়ে গেছে। একদিন পথে যেতে দেখি, শিফাত একটি ছেলের পাশাপাশি হাঁটছে। ছেলেটা তার বাঁ হাত দিয়ে শিফাতের ডান হাতটা ধরছে। একটু পর আবার হাতটা ছাড়িয়েও নিচ্ছে। বুঝতে পারছি না, লোকটা ভয়ে হাত ছেড়ে দিচ্ছে? নাকি শিফাতই ভয়ে হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছে?