———- স্যরি আপনার মেয়ের লাশটাতো পেয়েছি। কিন্তু খুনের কোন চিন্হ পাইনি এখনো।
——কি বলছেন এসব?
—–হ্যা এটা যে খুন সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি কিন্তু খুনি সামান্য তম কোন প্রমান ছাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই এটাকে একটা একসিডেন্ট বলা যায়।
এতক্ষন কথা হচ্ছিল ইন্সেপেক্টর ও তিসার বাবার মধ্যে। তিসার খুন হয়েছে আজ দু সপ্তাহ কিন্তু পুলিশ এটাকে একসিডেন্ট বলে প্রমান করতে দিচ্ছে। কারন খুনের কোন প্রমান নাই।
প্রায় এক সপ্তাহ তিসাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। থানায় রির্পোট করা হলো। এক সপ্তাহ পর
তিসাকে কলেজের ছাদ থেকে পরে যেতে দেখা গিয়েছিলো। কলেজটি সাততলা ভবন ছিলো।
সবাই প্রথমে এটাকে আত্নহত্যা ভেবেছিলো। কিন্তু তিসার লাসটাকে যখন পোস্টমর্ডাম করা হলো তখন তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ইনজেকশন এর দাগ ছিলো। আর তার শরীর দেখে বোঝা যায় তাকে বেশ কিছু দিন টর্চার করা হয়েছে।
কিন্তু খুনি সামান্যতম প্রমান রাখে নি। এদিকে পুলিশ তিসার কলেজে এর বন্ধু বান্ধব, শিক্ষকদের জিগেস করেও তেমন কোন প্রমান পায়নি।
তিসার কোর ছেলের সাথে রিলেশনও ছিলো না তাহলে কেন তিসা আত্নহত্যা করবে?
কিন্তু শেষে পুলিশ এটা প্রমান করে দিয়েছে তিসা লেখা পড়ার প্রেসার নিতে না পেরে অতিরিক্ত ড্রাগ নেয়ার ফলে একসিডেন্টলি ছাদ থেকে পরে যায়। এবং কেস ক্লোজ করে দিছে।
তিসার বাবা মা জানে যে তাদের মেয়ের সাথে অন্যায় হয়েছে। কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক এ সমাজের নিয়ম নীতির সাথে পেরে ওঠে না। তারা শুধু অসহায় ভাবে কাঁদতে জানে।
তিসার মৃত্যুর প্রায় দের মাস হয়ে গেলো। তিসার মৃত্যুর পর কিছুদিন কলেজে একটা থমথমে ভাব ছিলো। যার অনেকটাই এখন কেটে গেছে।
কলেজ তার নিজের গতিতে চলছে। কলেজের কিছু বিশেষ লোকদের সাথে পরিচিতো হওয়া যাক।
কলেজের লেডি কিলার হচ্ছে হিমেল। দেখতে যেমন সুন্দর, পড়া লেখায়ও তেমন ভালো। হিমেল অবশ্য ৪র্থ বর্ষে পড়ে। কিন্তু একটু গুন্ডা টাইপ আর ভিষন দেমাগী।
দেমাগ থাকার মত যথেষ্ট কারন আমাদের হিরোর আছে কারন ওনি দেখতে যেমন স্মার্ট তেমনি বাবার টাকার ওর ক্ষমতার জোর আছে। মেয়েরা ওর জন্য পাগল কিন্তু হিমেল সে মেয়েদের পাত্তাও দেয় না।
হিমেল এর বন্ধুদের মধ্যে আছে আসিফ, তাওসিফ, ইমরান। আরো কয়েকটা ছেলে আছে।
তিসার এ কলেজে তেমন বন্ধু ছিলো না। কারন তিসা সবসময় লেখা পড়া নিয়ে থাকতো।
হাতে গোনা কয়েকটা বান্ধবি ছিলো তিসার। রিয়া, পপি, জান্নাতি, আর মুনা। এর মধ্যে তিসা সবথেকে বেশি চলাফেরা করতো রিয়ার সাথে।
তিসার চলে যাবার পর রিয়া অনেকটা নীরব হয়ে যায়। ওর অন্য বন্ধুরাও অনেকটা থমথমে হয়ে যায়।
কিন্তু যে যার মত চলছে এখন।
ক্লাস শুরু হয়েছে কেবল কিছু দিন হলো। নতুন একটি মেয়ে বছরের মাঝখানে ক্লাস জয়েন করলো।
সবাই কিছুটা অবাক হয় কারন এভাবে বছরের মাঝখানে কেউ ভর্তি হতে পারে না। পরে জানতে পারে মেয়েটি বাবা নাকি অনেক বড় ব্যবসায়ী । তার ক্ষমতার বলেই ও ভর্তি হলো।
মেয়েটাকে প্রথমবার যেই দেখবে প্রেমে পরে যাবে। মেয়েটার নাম তুলি। মনে হয় যেনো রং তুলি দিয়ে কোন শিল্পী তার মনের মাধুরি মিশিয়ে একেঁছে তুলিকে।
তুলি ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে পরিচিতো হলো। সবার সাথে টুকিটাকি কথা বলতে বলতে রিয়া বললো
রিয়াঃ তোমার চেহারাটা তিসার সাথে খুব মিলে।
তুলিঃ কে তিসা?
রিয়াঃ আমাদের সাথেই পড়তো কিন্তু কিন্তু কিছুদিন আগে ওর মৃত্যু হয়।
তুলিঃ কি? কিভাবে?
জান্নাতিঃ পুলিশ বলেছে এটা আত্নহত্যা বা একসিডেন্ট কিন্তু আমাদের মনে হয় এটা খুন।
তুলিঃ কি? কে করতে পারে এমন।
তখন মুনা জান্নাতিকে চোখের ঈশারায় চুপ থাকতে বলে।
তুলিকে প্রথম বার দেখেই হিমেলের মনে ধরে যায়। হিমেল ভেবেছিলো বাকি মেয়েদের মত তুলিও ওকে পছন্দ করবে।
কিন্ত তুুলি হিমেলকে একদমই পাত্তা দিতো না। তুলি ছিলো হিমেলের একদম বিপরীত স্বভাবের। সবার সাথে মিশতে ভালোবাসে। সুন্দর হলেও ওর মধ্যে হিংসার ছিটা ফোটামাত্র নাই।
হিমেলকে তুলিও একদমই পছন্দ করে না। কারন কলেজে এসেই দেখেছে মেয়েরা কি রকম ওর জন্য পাগল। আর এরকম ছেলেদের তুলি একদম পছন্দ করে না।
তুলি কলেজে এসেছে প্রায় এক সপ্তাহ কিন্তু হিমেল এর দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকায়নি।
এদিকে তুলির এরিয়ে যাওয়াটাকে হিমেল একদম সহ্য করতে পারছে না।
তাই একদিন কলেজের গেটের সামনে তুলিকে দাড় করালো। তারপর বললো—–
হিমেলঃ এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?
তুলিঃ মানে। কে আপনি?
তুলির মুখে থেকে এমন কথা শুনে হিমেল থ হয়ে গেলো। কারন ওর মতে কলেজের সবাই ওকে চিনে কিন্তু এ বলে কে আপনি?
হিমেলঃ আপনি আমাকে চিনেন না?
তুলিঃ আপনাকে চেনার কোন বিশেষ কারন তো আমার কাছে নাই। আর তাছাড়া আপনিতো মনে হয় আমাদের ক্লাসেও পরেন না । সো কিভাবে চিনবো?
হিমেল তুলির কথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
তুলিঃ আপনার হয়েছে? আমি কি যেতে পারি?
হিমেলঃ হুম।
তুলি কিছুটা সামনে এসে মনে মনে খুব হাসতে ছিলো। কারন কলেজের হিরোকে আজকে একেবারে নাস্তানাবোধ করেছে।
তুলি এসেই প্রায় অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে। কিন্তু রিয়া মেয়েটা একটু বেশিই তুলির কাছে আসতে চায়।
তুলি ব্যাপারটাকে তেমন গভির ভাবে দেখলো না।
এদিকে হিমেল সেদিনের পর তুলির কাছে যেতেও ভয় পায়। তাই দেখে হিমেলের বন্ধুরা ওকে নিয়ে খুব মজা করে।
ইমরানঃ আমাদের দি গ্রেট হিমেল সাহেব যার পিছনে মেয়েরা পাগল সে নিজেই তুলির পিছনে পাগল হয়েছে।
আসিফঃ ভাই তুই আমাদের মান ইজ্জত সব নষ্ট করবি?
হিমেলঃ মানে?
আসিফঃ শালা একটা মেয়েকে পটাতে পারিস না? এই তুই লেডি কিলার? ছি ছি।
হিমেলঃ দেখ আসিফ ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
ইমরানঃ চুপ শালা। একটা মেয়ে পটাতে পারে না আবার কথা বলে?
হিমেলঃ মেয়েটাকে যদি এক সপ্তাহের মধ্যে পটাতে পারি?
আসিফঃ তাহলে আগামী একমাস তুই যা বলবি তাই করবো।
হিমেলঃ ঠিক আছে দেখিস।
বন্ধুদের এমন মজা একটুও সহ্য না পেরে এমন শর্ত লাগিয়ে বসলো হিমেল।
হিমেল ভাবে মেয়েটার খুব অহংকার। তাই যে ভাবেই হোক মেয়েটার অহংকার ভাঙতে হবে।
তাই আবার পরের দিন দেখা করলো তুলির সাথে।
হিমেলঃ কেমন আছো?
তুলিঃ ওহ আপনি। হ্যা ভালো আপনি?
হিমেলঃ ভালো। আমরা কি পরিচিতো হতে পারি?
তুলিঃ কেন নয়? পরিচয় হতে তো আমার কোন সমস্যা নাই।
হিমেলঃ সেদিনের ব্যবহারের জন্য লজ্জ্বিত। স্যরি।
তুলিঃ আরে না না তার কোন দরকার নাই।
দুজন খুব সুন্দর করে পরিচিতো হলো।
হিমেলঃ তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু?
তুলিঃ কেন?
হিমেলঃ কেন মানে? আমরা কি বন্ধু হতে পারি না?
তুলিঃ নাহ। আপনার মত প্লে বয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে আমার কোন ইচ্ছা নাই।
হিমেলঃ আমি প্লে বয় এটা তোমাকে কে বললো।
তুলিঃ বলার কি আছে ? কলেজে এসে থেকেই তো দেখছি।
হিমেলঃ দেখো তুমি ভুল বুজতেছো।
তুলিঃ আচ্ছা। শর্ত হেরে যাবার ভয় পাচ্ছেন?
তুলির মুখে শর্তের কথা শুনে হিমেল অনেকটা চমকে উঠলো।
হিমেলঃ মমা মা মানে?
তুলিঃ অত তোতলানোর দরকার নাই। আমি জানি আপনি আমাকে পটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছেন।
হিমেলঃ ওটা তো—–
তুলিঃ অনেক হয়েছে। আপনি আর আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না। বাই।
এই বলে তুলি ওখান থেকে চলে গেলো।
ইদানিং একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে তুলি প্রায় অনেকের কাছে তিসার বিষয়ে জানতে চায়।
কিন্তু কেন? ———
_______ তুলিঃ আচ্ছা রিয়া তুমিতো তিসার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলা তাই না?
রিয়াঃ বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যায় না। কিন্তু হ্যা রিয়া আমার সাথে বেশি চলাফেরা করতো।
তুলিঃ তাহলে রিয়া কি কোন ড্রাগস নিতো?
রিয়াঃ আরে না। তিসা সেরকম মেয়েই ছিলো না। খুব ভালো মেয়ে ছিলো। আর তাছাড়া এরকম কিছু তিসা কখনোই আমাকে বলে নি।
তুলিঃ ওহ।
রিয়াঃ তুমি কেন তিসার বিষয়ে এত জানতে চাইতেছো?
তুলিঃ আরে তেমন কিছুই না। জাস্ট এমনিতেই। তিসার মরার কথা শোনার পর থেকে কেমন যেনো ওর বিষয়ে জানতে খুব ইচ্ছা করতেছে। তাই।
রিয়াঃ এসব বিষয়ে এত জানার ইচ্ছা না থাকাই ভালো।
তুলিঃ আরে তুমি কেন রাগ করছো? আমি তো এমনিতেই বলেছি। নাকি তুমি জানো তিসার খুনি কে?
রিয়াঃ মমমম মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
তুলিঃ জাস্ট রিলাক্স ডিয়ার। জান্ট কিডিং।
রিয়াঃ এ ধরনের মজা আমার সাথে একদম করবে না।
এই বলে ওখান থেকে রাগ করে চলে গেলো রিয়া।
তুলিঃ যাহ বাবা এমন কি বললাম যে রাগ করলো? মেয়েটা কেমন যেনো? আজব প্রকৃতির।
জান্নাতিঃ ও এমনই। কথায় কথায় রেগে যায়। তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।
তুলিঃ আরে না না। মনে করার কি আছে?
জান্নাতিঃ শুনলাম হিমেল নাকি তোমার পিছনে লাইন মারছে?
তুলিঃ সঠিক জানি না। মনে তো হয় তাই।
জান্নাতিঃ How Lucky you are?
তুলিঃ লাকি না ছাই।
জান্নাতিঃ কলেজের কত মেয়ে হিমেলের পিছনে ঘুরে আর হিমেল তোমার পিছনে। তাহলে তো তুমি লাকিই।
তুলিঃ আরে রাখ তো। প্লে বয় একটা।
Excuse me মিস তুলি। পিছন থেকে হিমেল বলে উঠলো।
তুলি কিছুটা অপ্রন্তুত হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে হিমেল দাড়িয়ে।
হিমেলঃ মিস তুলি আপনার সমস্যা কি?
তুলিঃ মানে?
হিমেলঃ কোন এঙ্গেলে আমাকে দেখে আপনার প্লে বয় মনে হয়?
তুলিঃ মনে হবার কি আছে কলেজের এত গুলো মেয়ে যার পিছনে ঘোরে সে প্লে বয় নয়ত কি?
হিমেলঃ For your kind information আমি এখনো কোন মেয়েকে পাত্তা দেয়নি। বা কোন মেয়ের সাথে এখনো রিলেশন করি নি।
মেয়েরা আমার পিছনে ঘুরে তাতে আমি কি করবো? আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছি কিন্তু আপনিতো অন্য কিছু ভেবে বসে আছেন?
তুলিঃ আচ্ছা তাহলে সেদিন রাতে বন্ধুদের সাথে আমাকে নিয়ে বাজি কেন ধরছিলেন?
হিমেলঃ ওটা জাস্ট রাগ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আর তাছাড়া তুমি কি করে জানলে?
তুুলিঃ আপনারা যেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তার বিপরীত পাশে আমার এক বন্ধু আপনাদের সব কথা শুনেছে।
হিমেলঃ কে সে?
তুলিঃ আমি আপনাকে তার নাম বলি আর আপনি তাকে গিয়ে উত্তম মধ্যম দেন তাই না? তা হবে না।
হিমেলঃ আচ্ছা স্যরি। ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ পিছনের সব ভুলে যাও।
তুলিঃ অনেক হয়েছে। আপনার এই মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি ভুলবো না। আপনি আমার থেকে যত দুরে থাকবেন ততই ভালো।
এই বলে ওখান থেকে চলে গেলো তুলি।
আসিফঃ মেয়েটারে একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। খুব দেমাগ ওর।
হিমেলঃ নারে ওকে ওর মত থাকতে দে।
আসিফঃ কি? মানে কি? এই তুই আবার ওকে ভালোবেসে ফেলিস নি তো?
হিমেলঃ Yes. I Love Her.
আসিফঃ Congratulatoin boss. তাহলে ওকে বলে দে।
হিমেলঃ দেখি। পড়ে বলবো। এখন বললে ও আমায় আরো বেশি ভুল বুঝবে।
জান্নাতি আর তুলি চলে যাচ্ছে তখন জান্নাতি তুলিকে বলছে—–
জান্নাতিঃ তুলি তুমি কিন্তু হিমেল কে সত্যিই ভুল বুঝতেছো।
তুলিঃ মানে?
জান্নাতিঃ দেখো এটা সত্যি যে হিমেল কে অনেক মেয়েই পছন্দ করে কিন্তু তাই বলে হিমেল কোন মেয়ের সাথে আজ পর্যন্ত কোন বাজে ব্যবহার করেনি বা কোন মেয়েকে পাত্তাও দেয়নি। ও মেয়েদের খুব সম্মান করে।
তুলিঃ আচ্ছা তাহলে ভেবে দেখি।
হিমেল রোজ তুলিকে দুর থেকে দেখে। হিমেল সত্যি সত্যিই তুলিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে।
এদিকে তুলি প্রায় অনেকের কাছে তিসার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছে।
তুলি রিয়া মেয়েটাকে কেমন যেনো আজব মনে হয়। সবসময় তুলিকে কেমন চোখে চোখে রাখে। আর মেয়েটার ব্যবহারও কেমন যেনো?
আর তুলি কিছুদিন ধরে বুঝতে পারছে কেউ ওকে ফলো করতেছে। কিন্তু কে? আর কেনই বা তুলিকে ফলো করবে?
রাত এগারোটা—-
খুব জরুরি একটা কাজে তুলিকে একটু বের হতে হয়েছিলো। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে এত রাত হয়ে যায়। নয়তো এত রাত পর্যন্ত তুলি কখনো বাইরে থাকে না।
তুলির এখনো মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে। তাই খুব দ্রুত হাটতেছে। রাস্তার মোড় থেকে ওর বাসায় হেটে যেতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগে। রাত বেশি হওয়ায় কোন রিকশা পাচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে হেটেই যেতে হচ্ছে।
কিছুটা হাটার পরই কয়েকটা ছেলে এসে তুলির সামসে দাড়ালো।
——- হাই সুন্দরি। এত রাতে একা কোথায় যাচ্ছ?
তুলিঃ কি রকম অসভ্যতা এটা?
——–তাহলে একটু সভ্য কাজ করি।
তুলিঃ Don’t toch me.
——- না না তোমাকে টাচ করবো। শুধু তোমাকে মেরে ফেলবো।
বলেই একটা ছুড়ি বের করলো।
তুলি কোন মতে ওদের ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিলো। কিছু দুর যেতেই দেখে কিছু লোক দোকানে বসে আড্ডা দিতেছে।
তুলির তাদের কাছে যেতেই দেখে হিমেল আর ওর বন্ধুরা অড্ডা দিতেছে।
তুলি দৌড়ে ওদের কাছে যায়।
তুলিকে দেখে হিমেল অনেকটা অবাক হয়। কারন তুলির চোখে মুখে ভয়। ঘামে ভেজা। আর চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে।
হিমেলঃ কি হয়েছে তুলি? তোমাকে এমন কেন দেখাচ্ছে?
তুলিঃ কিছু লোক আমাকে মারার চেষ্টা করতেছে।
হিমেলঃ কি?
ততক্ষনে লোকগুলো দোকানের কাছে চলে এসেছে। হিমেল সহ ওর বন্ধু বান্ধব লোকগুলো উত্তম মাধ্যম দিতে গেলো। দুটোকে আচ্ছা করে দিয়েছে কিন্তু আফসোস সব গুলোই পালাইছে। একটাকেও ধরতে পারেনি।
হিমেলঃ এই মেয়ে নিজেকে খুব বেশি বাহাদুর মনে করো নাকি? এত রাতে বাইরে কেন বের হয়েছো? (ধমক দিয়ে)
তুলিঃ কিছু কাজ ছিলো তাই।
হিমেলঃ তাহলে কাউকে সাথে নিয়ে যেতে। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো?
তুলিঃ চুপ—– করে আছে।
হিমেলঃ চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।
তুলিঃ না না আমি একাই যেতে পারবো।
হিমেলঃজাস্ট সেটাপ। বেশি বাহাদুরি আমার কাছে দেখাবা না। চলো
বাড়ির দিকে হাটতেছে কিন্তু দুজনেই নীরব। নীরবতা ভেঙে তুলিই বললো।
তুলিঃ স্যরি।
হিমেলঃ কেন?
তুলিঃ আমি আপনার সাথে অকারনেই অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। পরে বুঝতে পেরেছি যে আমি আসলে ভুল। আপনাকে আমি যা ভেবেছি আপনি তা নন।
হিমেলঃ যাক ম্যাডামের ভুলটা তবে ভাঙলো।
তুলিঃ ফ্রেনডস।
হিমেলঃ হাসি দিয়ে ওকে। ফ্রেন্ডস।
দুজন অনেক কথা বলতে বলতে তুলির বাড়ি পর্যন্ত পৌছে গেলো।
হিমেলঃ তুলি তুমি এখানে একা থাকে?
তুলিঃ আরে না না। এটা আমার মামার বাসা। তাদের সাথেই থাকি।
হিমেলঃ তোমার বাবা মা?
তুলিঃ মা ছোট বেলাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর বাবা বেশির ভাগ সময় ব্যবসার কাজে বাহিরে থাকে।
হিমেলঃ তাহলে বছরের মাঝখানে এই কলেজে কেন ভর্তি হলে?
তুলিঃ আসলে আমি বাবার সাথে বাহিরে থাকতাম কিন্তু ওখানে আমার ভালো লাগতে ছিলোনা। তাই মামার কাছে চলে আসলাম। বাবা আর মামাই আমাকে এখানে ভর্তি করে দিয়েছে।
হিমেলঃ ওহ।
তুলিঃ ভিতরে চলেন?
হিমেলঃ পরে একদিন। বাই।
তুলিঃ আরে একলিস্ট মামার সাথে তো দেখা করে যাবেন?
হিমেলঃ নাহ অন্য একদিন। চলি । সাবধানে থাকবা আর রাত বিরতে এরকম বের হবা না?
তুলিঃ ঠিক আছে। আপনিও সাবধানে যাবেন। বাই।
হিমেলঃ বাই
এর পর থেকে তুলি আর হিমেলের খুব ভালো বন্ধুত্ব হলো।
একদিন——
হিমেলঃ তুলি তুমি আমার কাছে থেকে কি লুকাচ্ছো?
তুলিঃ কি লুকাবো?
হিমেলঃ তিসার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
___ হিমেলঃ কে তুমি?
তুলিঃ মানে? কি বলছো হিমেল?
হিমেলঃ তিসার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
তুলিঃ কি সম্পর্ক আবার? আমিতো তিসাকে চিনিই না?
হিমেলঃ একদম মিথ্যা কথা বলবা না আমার সাথে। যদি তুমি তিসাকে নাই চিনো তাহলে ওর বিষয়ে তুমি সবার কাছে এত প্রশ্ন কেন করতেছো? বলো?
তুলিঃ এমনিতেই। জানতে ইচ্ছা হলো তাই।
হিমেলঃ তাহলে তুমি তিসাকে চিনো না?
তুলিঃ নাহ।
হিমেলঃ তাহলে তোমার আর তিসার এক সাথে ছবি কেন? একটা ছবি দেখিয়ে।
তুলিঃ কি? তুমি এটা কোথায় পেলে?
হিমেলঃ কাল তুমি তোমার পার্সটা ভুলে আমার গাড়িতে ফেলে গিয়েছিলে। তখন পার্সটা আমি তোমাকে দেবার জন্য হাতে নিয়েছিয়াম কিন্তু ভুল বসতো পার্সটা আমার হাত থেকে পরে গিয়ে ভিতরের সব জিনিস বের হয়ে যায়।
সাধারনত মেয়েরা তাদের ব্যাগে মেকাপের জিনিস রাখে কিন্তু তোমার পার্টস এ মধ্যে ছিলো দুটো পেনড্রাভ, কিছু মেমোরি কার্ড, আর তিসার সাথে তোমার খুব যত্ন করে রাখা একটা ছবি।
আমি বাকি সব জিনিস দেখে ততটা অবাক হয়নি যতটা তোমার আর তিসার ছবি একসাথে দেখে হয়েছি।
এখন বলো কি পরিচয় তোমার? তোমার সাথে তিসার কি সম্পর্ক?
তুলিঃ হিমেল তোমার কাছে আমি কিছু লুকাবো না। সব বলবো কিন্তু তোমাকে কিছু দিন ওয়েট করতে হবে। সময় হলে সব বলবো তোমাকে। প্লিজ আমার ওপর ভরশা রাখো।
হিমেলঃ আমি তোমাকে বিস্বাস করি। তুমি যা বলবে তাই হবে । যখন তোমার বলতে ইচ্ছা করবে বলো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। প্রয়োজনে তোমার জন্য জীবন দিয়ে দিবো। তবুও তোমার গায়ে কোন আচর লাগতে দেবো না।
তুলিঃ আচ্ছা? তা আপনি কেন আমার জন্য আপনার জীবন দেবেন?
হিমেলঃ এখনো বোঝার বাকি আছে তোমার?
দুজনেই চুপ। কিছুক্ষন একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
(যখন কথা চোখে হয় তখন মুখে কথা বলে মুখ ব্যাথা করার কি দরকার?)(হি হি)
এর মধ্যে রিয়া এসে কাশি দিলো।
রিয়াঃ হোয়াটস আপ গাইস?
হিমেলঃ কাবাবে হাড্ডি (বির বির করে বললো)
তুলি হিমেল এর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।
তারপর বললো—-
তুলিঃ কিছু না রিয়া। তোমার কি খবর?
রিয়াঃ ভালো। তুলি তুমি কি আমার সাথে একটু মার্কেটে যাবে?
তুলি কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে হিমেল বললো—–
হিমেলঃ রিয়া তুমি বরং অন্য কাউকে নিয়ে যাও। তুলির সাথে আমার খুব জরুরি কিছু কাজ আছে। সো প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
তুলি মনে মনে ভাবলো হিমেল রিয়ার সাথে মিথ্যা কথা কেন বললো?
হিমেল ঠিক কি করতে চাইছে তা জানার জন্য তুলি চুপ করে রইল।
রিয়াঃ নো নো মাইন্ড করার কি আছে?
হিমেলঃ চলো তুলি।
তুলি ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই হিমেলের কথায় সায় দিয়ে হিমেলের সাথে হাটা শুরু করলো।
আর এ দিকে রিয়া রাগে তুলি আর হিমেলের যাবার পথে তাকিয়ে রইলো।
কিছু দূর যাবার পর তুলি হিমেলকে জিগেস করলো—-
তুলিঃ হিমেল তোমার কি এমন জরুরি কাজ আছে? এতক্ষন ধরে তোমার সাথে আছি কেই তখন তো কিছু বললে না।
হিমেলঃ কোন জরুরি কাজ নাই। আমি চাই না তুমি ঐ মেয়েটার সাথে বেশি মিশো?
তুলিঃ কিন্তু কেন?
হিমেলঃ একদম আজব মেয়ে। কেমন যেনো ওর চাল চলন।
তুলিঃ হ্যা সেটাতো আমিও জানি ওর চালচলন একটু আজব প্রকৃতির। কিন্তু তাই বলে ওর সাথে চলবো না কেন?
হিমেলঃ না চলবে না। কারন আজ পর্যন্ত ওর সাথে যে কয়টা মেয়ে মিশেছে কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তুলিঃ মানে?
হিমেলঃ দেখো তুলি তোমার সাথে তিসার ছবি দেখে আমি এটাতো বুজতে পারছি যে তুমি তিসাকে খুব ভালোভাবে চেনো। কিন্তু যেহেতু তুমি বলেছো সময় হলে সব বলবে তাই আমি আর তোমাকে জোড় করবো না।
তুলিঃ কিন্তু এগুলোর সাথে রিয়ার কি সম্পর্ক?
হিমেলঃ শোন তুলি তিসা যেদিন গায়েব হয়। সেদিন বিকালে আমি তিসাকে রিয়ার সাথে দেখেছি পার্কের সামনে।
তখন বিষয়টা আমি মাথায় নেই নাই। কিন্তু পরের দিন শুনলাম তিসাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনও বিষয়টা আমার তেমন কিছু মনে হয়নি।
কিন্তু সাতদিন পরে যখন তিসা মারা গেলো তখন বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেনো লাগলো
কিন্তু সব থেকে আজব বিষয় কি জানো? পুলিশ যখন রিয়াকে জিগেস করলো ও নাকি বলেছে ওরা শপিং করতে গেছিলো।
আমি ভাবলাম হয়তো পার্ক থেকে শপিংএ গেছে । কিন্তু একটা বিষয় আমার খুব জটিল লাগে এর আগেও আমাদের কলেজ থেকে দুটো মেয়ে গায়েব হয়ে যায়। তাদেরতো আর পাওয়াই যায়নি। সেই মেয়ে দুটোও রিয়ার সাথে বেশি চলাফেরা করতো।
আমি এ বিষয়ে পুলিশকেও জানিয়েছিলাম কিন্তু জানি না পুলিশ কেনো কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নি?
তুলিঃ কি বলছো এসব?
হিমেলঃ একদম সত্যি। তাই বলছি তুমি রিয়া মেয়েটার থেকে দূরে থেকো।
তুলিঃ হিমেল আমি তোমার সাথে কাল যোগাযোগ করবো। কিছু কাজ আছে। আসি বাই বাই।
তুলি তাড়াহুরো করে হিমেল এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
দুদিন পর——-
তুলি হিমেলকে কে ফোন করলো।
তুলিঃ হিমেল
হিমেলঃ দুদিন ধরে কোথায় তুমি?
তুলিঃ সব বলছি। আজ তোমায় সব সত্যি কথা বলবো হিমেল। কারন সব সত্যি আমি জেনে গেছি। তুমি কলেজে আমার সাথে দেখা করো। ঠিক সকাল ১১ টায়।
হিমেলঃ ঠিক আছে। আমি আসছি।
তুলি তারপর অন্য কাউকে ফোন করলো।
তুলিঃ হ্যালো। ঠিক দুপুর ১২ টায় কলেজে থাকবেন। বাই।
——– Ok bye.
তুলি কলেজে গিয়ে হিমেল এর সাথে দেখা করলো।
হিমেলকে কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে হিমেল (হিমা) এর বোন ওখানে এসে পড়লো।
হিমাঃ ভাইয়া। কি করছো?
হিমেলঃ তুই এখানে?
হিমাঃ বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে আসছি।
এনিই বুঝি আমার ভাবি? (তুলিকে উদ্দেশ্য করে বললো)
তুলিঃ মানে?
হিমেলঃ কিছু না। তুলি তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।
হিমাঃ কিছু মনে করবে মানে? জানো ভাবি তোমার কথা আমাদের ঘরের সবাই জানে। আমরা সবাইতো তোমার ছবি দেখেই ফ্লাট হয়ে গেছি। মা কি বলছে জানো? মানুষ কি করে এতো সুন্দর হয়।
হিমার কথা গুলো শুনে তুলি রাগন্বিত হয়ে হিমেল এর দিকে তাকালো।
হিমেলঃ (কানে ধরে বললো)। স্যরি।
তুলি শুধু একটু মুচকি হাসলো।
হিমেলঃ তুলি তুমি কি যেনো জরুরি কথা বলতে চাইছিলা।
তুলিঃ হ্যা কিন্তু—–
হিমাঃ বুজছি প্রাইভেট কথাবার্তা। ওকে আমি পরে আসছি।
তুলিঃ না না তেমন কিছু না। তুমি থাকো না আমাদের সাথে। আমার কোন সমস্যা নাই।
হিমেল তোমার ফোনটা একটু দিবা? আসলে আমার ফোনটা ভুলে মনেহয় বাসায় রেখে আসছি। জরুরি একটা ফোন করা দরকার ছিলো।
হিমেলঃ এই নাও।
তুলি হিমেলের ফোনটা নিয়ে একটু দূরে সরে কার সাথে যেনো কথা বলছে।
হিমেল আর হিমা দাড়িয়ে কথা বলছে।
হঠাৎ একটা বড় গাড়ি এসে তুলিকে টান দিয়ে গাড়িতে তুলি নিয়ে গেলো। তুলি শুধু হিমেল বলে একটা ডাক দিলো। পরে নিজের জ্ঞান হারালো।
হিমেল আর হিমা উপস্তিত ঘটনায় যেনো কিছু মূহুর্তের জন্য স্টাচু হয়ে গেলো। তারপর হিমেল তুলি ডাক দিয়ে গাড়িটির পিছনে ছুটছে। কিন্তু গাড়িটার সাথে পেড়ে ওঠে না। ওরা তুলিকে নিয়ে চলে যায়।
যখন তুলির জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা ঘরে আবিষ্কার করলো।
মাথাটা পচন্ড ব্যাথা করতেছে। কেমন যেনো সব ধোয়াসা ধোয়াসা লাগছে।
তুলির হাতদুটো বাঁধা। মুখটাও বাধা। চিৎকারও করতে পারছে না।
হঠাৎ মনে হলো রুমের মধ্যে কেউ প্রবেশ করেলো।
সাথে সাথে রুমে অনেক গুলো আলো জ্বলে উঠলো।
অনেকক্ষন পর এতগুলো আলো একসাথে চোখে পড়ায় তুলির চোখটা যেনো ধাঁধিয়ে গেলো কিছু সময়ের জন্য।
চোখটা বন্ধ করে নিলো তুলি।
——-চোখটা খোলো তুলি! (কেউ একজন বলে উঠল)
তুলি চোখটা মেলেই বললো।।।
তুমি—————–
_______ তুমিই——-
—– OMG মিস তুলি তাহলে আপনি ওকে চিনতে পারছেন?
তুলির সামনে যে লোকটা দাড়ানো তুলি তাকে চিনতে পেরেছে। কিছু দিন আগে রাতে রাস্তায় যারা তুলিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। তাদের মধ্যেই একজন। কিন্তু এই লোকটা কোন কথা বলছে না।
যে কথা বলছে তার কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে না। কে বলছে? তুলি মনে মনে ভাবছে। কে?
——- আমাকে দেখার জন্য মনটা আনচান করছে তাই না তুলি?
তুলিঃ কে আপনি? যা বলার সামনে এসে বলেন?
——স্যরি ডিয়ার। তোমার এ ইচ্ছাটা আমিতো পুরোন করতে পারবো না। কিন্তু হ্যা তোমাকে আমার পরিচয়টা দিচ্ছি। আমার নাম—- থাক। নামটা থাক। নামটা বললেও চিনবা না। কিন্তু হ্যা আমি কিন্তু তোমাকে চিনি।
তবে হ্যা আমার আরেকটা পরিচয় আছে। তা হলো তিসাকে আমিই মেরেছি।
তুলিঃ কি?
——–আরে আরে অবাক হয়েও না। আমি ওকে ছাদ থেকে ফেলে মারতে চাইনি।
আমিতো ওকে শান্তির মৃত্যু দিতে চেয়েছিলাম। যেমনটা তোমাকে এখন দিবো।
প্রথমে ওকে আমি অনেকবার ড্রাগস দিয়েছিলাম।
তারপর ধিরে ধিরে ওর সুন্দর শরীর থেকে রোজ রোজ অল্প অল্প করে রক্ত নিয়েছিলাম।
কিন্তু শালী পালিয়ে গেলো। তাই বাধ্য হয়ে ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে হয়েছে।
কিভাবে ফেলেছি সেটা পরে বলি। আগে তোমাকে ড্রাগস দিয়ে নি।
এই তুলি আপুর চোখটা বেঁধে দে তো।
রুমের লোকটা তুলির চোখটা বেঁধে দেয়।
তারপর তুলির হাতে ইনজেকসন দিয়ে ড্রাগ দেয়।
—–এই আমি বাইরে যাচ্ছি। কিছুক্ষন পর ম্যাডামের শরীর থেকে প্রায় এক ব্যাগ রক্ত নিবি।
——জ্বী স্যার।
তুলির ড্রাগস এর কারনে চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে।
তার কিছুক্ষন পরে তুলির শরীর থেকে রক্ত নেয়ার জন্য যেই তুলির কাছে যাচ্ছিল। অমনি দড়জা ভেঙে পুলিশ সহ হিমেল প্রবেশ করলো।
লোকটা পালানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পুলিশ ধরে ফেললো।
তুলি তখন ড্রাগের নেশায় পুরো মাতাল।
হিমেলঃ আরে এটাতো সেই লোকটা কিছুদিন আগে যারা তুলিকে মারার চেষ্টা করেছিলো।
পুলিশঃ ব্যাটাকে নিয়ে রাম ধোলাই দিলেই সব পেয়ে যাবো।
পুলিশ ঘরে সার্চ করে কিছু ক্যামেরা ও মনিটর পায়। সেখানে বিভিন্ন মেয়েকে টর্চার করে মারার ভিডিও আছে।
কিন্তু কে এগুলো করেছে তার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি।
পুলিশঃ মিঃ হিমেল ধন্যবাদ। আপনার জন্যই আমরা মিস তুলিকে বাঁচাতে পারলাম আর এই সিরিয়াল কিলারকেও খুব তাড়তাড়ি ধরে ফেলবো।
হিমেলঃ ধন্যবাদ দেয়ার ধরকার নাই আপনারা ঐ ছ্যাছড়াটার কাছ থেকে জানুন এসবের পিছনে কে? ততক্ষনে আমি তুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
পুলিশঃ জ্বী। ধন্যবাদ।
হিমেল তুলিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়।
তুলি তখন পুরো মাতাল। কারন এর আগে তুলি নেশার জাতীয় দ্রব্য দেখেনি পর্যন্ত। আজ তাই নেশাটা একটু বেশিই হয়েছে।
আর নেশার ঘোড়ে তুলি কি বলছে দেখুন মানে শুনুন——
তুলিঃ ঐ হিম হিম হিম হিমেল।
হিমেলঃ আমার নাম শুধু হিমেল তুলি।
তুলিঃ আচ্ছা শুধু হিমেল তুলি। তা আপনার নাম ঠান্ডা কেন?
হিমেলঃ আমার নাম ঠান্ডা না হিমেল।
তুলিঃ ওকে ঠান্ডা না হিমেল।
হিমেলঃ প্লিজ তুলি চুপ করে একটু বসে থাকোতো।
তুলিঃ নাহ । তার আগে বলো।
হিমেলঃ কি বলবো?
তুলিঃ বলো বলো বলো বলোওওও
হিমেলঃ আরে ভাই কি বলবো সেটাতো বলবা?
তুলিঃ হিমেল কে একটা চড় দিয়ে বললো ঐ আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি? আমাকে জানু বলবি।
হিমেলঃ চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে বললো। ওকে ঠিক আছে জানু।
তুলিঃ ঐ আমি কি তোর বিয়ে করা বৌ যে আমাকে জানু ডাকোস?
হিমেলঃ তুলি প্লিজ একটু চুপ করো। আমি ড্রাইভ করছি।
তুলিঃ ঠিক আছে আগে বলো?
হিমেলঃ কি বলবো?
তুলিঃ তুমি আমাকে কোল থেকে নামালা কেন?
হিমেলঃ তোমাকে নিয়ে গাড়ি কিভাবে চালাবো?
তুলিঃ তা আমি কি করে জানবো? তুই এখন আমাকে কোলে নিয়ে ড্রাইভ করবি।
হিমেলঃ O GOD. Please save me. যেই বেটা তোমারে ড্রাগস দিছে ওরে পাইলে ড্রাগ ওর টুট ———-টুট।
তুলিঃ জানো হিমেল তুমি না একটা চকলেট বয়। আর আমি চকলেট খুব ভালোবাসি।
হিমেলঃ তো?
তুলিঃ তো আমি এখন তোমাকে খাবো।
হিমেলঃ প্লিজ তুুলি এরকম করে না।
তুলিঃ করবো। ১০০ বার করবো।
হিমেলঃ ঠিক আছে করো আগে সুস্থ হয়ে নাও।
তুলিঃ ঠিক আছে। তোমাকে একটা কথা বলবো কাউকে বলবে নাতো?
হিমেলঃ ঠিক আছে বলবো না। বলো?
তুলিঃ আমি না একজনকে খুব ভালোবাসি।
হিমেলের মাথায় একটু দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। তাই বললো কাকে?
তুলি নিজের মুখটা হিমেলর কানের কাছে নিয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বললো তোমাকে——
এত জোড়ে চিৎকার করায় হিমেল তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে ফেললো।
হিমেলঃ তুলি তুমি নেশার ঘোরে আছো তাই বাজে বকছো
তুলিঃ নাহ?
হিমেলঃ কি নাহ?
তুলিঃ আগে তুমি আমাকে আই লাভ ইউ বলো।
হিমেলঃ পরে বলবো।
তুলিঃ এখন বলবা। নয়তো গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে যাবো।
হিমেল কোন উপায় না দেখে তুলিকে বললো। দেখো তুলি তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি কিন্তু এ কথা গুলো আমি তোমাকে তখন বলবো যখন তুমি নিজের চেতনায় থাকবে। যখন তুমি আমার কথার মানেটা বুঝতে পারবে। ঠিক তখন বলবো। বুঝলা মিস তুলি।
তুলি তুলি। এই তুলি!
হিমেল তুলির দিকে তাকিয়ে দেখে তুলি বাচ্চা মেয়ের মত হিমেলের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
হিমেল তুলির মুখের উপরের চুল গুলো আস্তে করে সরিয়ে দিলো।
তারপর বললো পাগলি একটা।
তুলির এরকম পাগলামি কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হিমেল হসপিটালে পৌছে গেলো।
তুলিকে ডাক্টার চেক করে বললো। ভয় পাবার কিছু নাই। ড্রাগের কারনে এরকম হয়েছে। একদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
পরের দিন তুলির জ্ঞান ফিরলো। হিমেল কাল থেকে সারাক্ষনই তুলির কাছে ছিলো। তুলির মামা মামিও তুলির কথা শুনে হসপিটালে আসছে। তুলির বাবা বিদেশে থাকায় আসতে পারেনি।
তুলির জ্ঞান ফেরার পর দেখলো হিমেল ওর পাশে বসা। তুলি হিমেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
হিমেল তুলির দিকে তাকিয়ে বললো—–।
হিমেলঃ এখন কেমন লাগছে তুলি?
তুলিঃ মাথাটা খুব ভারি লাগতেছে।
হিমেলঃ একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
প্রথমবার নেশার জিনিস নিয়েছো তো। না মানে জোড় করে দিয়েছে তো তাই এমন হচ্ছে।
তুলিঃ কি ? নেশার জিনিস?
হিমেলঃ হ্যা ম্যাডাম। আপনাকে কালকে ড্রাগস দেয়া হয়েছিলো। প্লিজ তুলি ভুল করেও কখনো তুমি নেশা টেশা করো না?
তুলিঃ কেন?
হিমেলঃ কালকে তুমি আমার অবস্থা বারোটা বাজাইছো।
তুলিঃ কি করছি?
হিমেলঃ কি করো নাই তাই বলো?
তুলিঃ কি? আচ্ছা বাদ দেও তো ওসব। আগে বলো কাল থেকে আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে?
হিমেলঃ তোমার কি কিছু মনে নাই নাকি?
তুলিঃ হ্যা কিছু কিছু মনে আছে। কিছু লোক আমাকে কিডনাপ করছিলো। তারপর একটা অন্ধকার ঘরে আমাকে রাখা হলো। কারো আওয়াজ পাচ্ছিলাম কিন্তু দেখতে পাইনি। আমাকে কিসের যেনো ইনজেকসন দেয়া হলো। তারপর থেকে আমার আর কিছু মনে নাই।
হিমেলঃ যাক ভালো। বেঁচে গেলাম।
তুলিঃ মানে?
হিমেলঃ ও কিছু না। কালকে আমিই পুলিশ নিয়ে গিয়ে তোমাকে বাঁচিয়েছিলাম।
তুলিঃ কিন্তু তুমি কি করে জানলে আমি কোথায়?
হিমেলঃ তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমার ফোনটা তোমার কাছে ছিলো। আর আমার ফোনে জিপিএস লোকেসন অন ছিলো। তা দিয়েই সহজে তোমাকে খুজে বের করেছি।
তুলিঃ ও হ্যা মনে পড়েছে। তোমার ফোন দিয়ে কথা বলার সময় লোকগুলো যখন আমাকে গাড়িতে তোলে তখন ফোনটা গাড়ির সিটের নিচে পরে যায়।
হিমেলঃ যাক ভালো। তুমি সুস্থ আছো সেটাই আমার কাছে অনেক।
তুলিঃ আচ্ছা হিমেল পুলিশ কি ওখানে কাউকে পেয়েছে?
হিমেলঃ হ্যা । তোমাকে সেদিন যে লোকগুলো মারতে চেয়েছিলো তাদের লিডারকে ধরেছে ওর নাম সুমন। মানুষকে মাডার কারার কন্টাক্ট নেয়। কিন্তু এখনো আসল খুনির নাম জানতে পারেনি পুলিশ।
তুলিঃ তার দরকার নাই। আমি জানি কে আসল খুনি?
হিমেলঃ কি? কে?
তুলিঃ সব বলছি তার আগে পুলিশ খবর দাও। আর আমাকে নিয়ে কলেজে চলো।
হিমেলঃ ঠিক আছে কিন্তু—–
তুলিঃ কোন কিন্তু নাই যা বলছি তাই করো।
হিমেল তুলিকে নিয়ে সোজা কলেজে গেলো। পুলিশও এসে পরলো।
সেখানে তুলি যাদের যাদের উপস্তিত থাকতে বলেছিলো সবাই আছে।
তুলিঃ আপনাদের সবাইকে এখানে ডাকার কারন হচ্ছে। তিসার খুনি কে তা আমি জানি।
জান্নাতিঃ কি বললা তিসার খুন হয়েছে?
তুলিঃ হ্যা। তিসা আত্নহত্যা করেনি। বা তিসার একসিডেন্ট মৃত্যুও হয়নি। তিসাকে খুব নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে।
আর সে শুধু তিসাকেই না আরো ছয়টা মেয়েকে খুন করেছে। রে মধ্যে তিনটা মেয়ে আমাদের কলেজের। বাকিরা অন্যান্য জায়গার। He is a serial killar.
রিয়াঃ কে সে?
তুলিঃ তার নাম হচ্ছে————
_______ তুলিঃ খুনি হচ্ছে রিয়ান।
হিমেলঃ কে রিয়ান?
তুলিঃ রিয়ান ওরফে আমাদের রিয়া।
রিয়ার নামটা শুনে সবাই বড়সড় ধাক্কা খেলো।
জান্নাতিঃ কি? রিয়া। কি করে সম্ভব।
হিমেলঃ আমি ভেবেছিলাম রিয়া জানে খুনি কে? কিন্তু রিয়া নিজেই এই খুনগুলো করেছে। কিন্তু তাহলে রিয়ান কে?
তুলিঃ রিয়ার আসল নাম রিয়ান।
হিমেলঃ কিন্তু তুলি রিয়ান তো ছেলেদের নাম?
রিয়াঃ হ্যা ঠিক আর আমি তো মেয়ে। তুলি তুমি কি বলছো এসব? আমি কেন তিসাকে খুন করবো। তিসার সাথে কি শত্রুতা আমার?
তুলিঃ জাস্ট সেটাপ। আরেকটা কথা বললে। আমি নিজেই তোমাকে খুন করে ফেলবো।
হ্যা রিয়ান ছেলেদের নাম কারন রিয়া কোন মেয়ে নয়। ও একটা মেয়েদের ভেসধারী ছেলে।
এটা বলেই তুলি রিয়া ওরফে রিয়ানের নকল চুলগুলো টান দিয়ে হাতে নেয়।
উপস্তিত সবাই এ ঘটনা দেখে অবাক হয়ে গেলো। কারন এরকম ঘটনা দেখলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠবে।
তুলিঃ হিমেল আমি তোমাকে সব কথা কালকেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই আমাকে কিডনাপ করা হয়। আর তার পর থেকেতো তুমি সবই জানো।
রিয়ান পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ওকে ধরে ফেলে।
পুলিশঃ কিন্তু আপনি কি করে জানলেন যে রিয়াই রিয়ান? আর ও ছেলে নয় মেয়ে?
তুলিঃ রিয়ার ওপর প্রথম থেকেই আমার সন্দেহ ছিলো। কিন্তু কোন প্রমান না পাওয়ায় সরাসরি কিছু করতে পারতেছিলাম না।
But thanks to হিমেল। ওই অামাকে রিয়ার বিষয়ে প্রথম বলে যে, তিসা গায়েব হওয়ার আগের দিন রিয়ার সাথে ছিলো। আরো অনেক কিছু।
তখন আমি রিয়ার বিষয়ে সব খোজ খবর নেয়ার জন্য। রিয়াদের গ্রামের বাড়ি যাই। রিয়ার ঠিকানাটা খুজে বের করতে খুব কষ্ট হয়েছে কারন রিয়া নামের কেউ ছিলো না। কিন্তু যখন রিয়ার বাবার নাম ধরে খুজলাম তখন পেয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ রিয়া মানে রিয়ান তুমি তোমার বাবা মা আর গ্রামের নামটা অন্তত সঠিক দিয়েছো কলেজ রেজিট্রি খাতায়।
তো যখন রিয়ার গ্রামে গিয়ে রিয়া এবং রিয়ার বাবা মায়ের বিষয়ে জানতে চাইলাম। তখন একটা বিষয় শুনে খুব অবাক হলাম যে রিয়ার বাবা মায়ের কোন মেয়ে নাই। তাদের শুধু একটা ছেলে যার নাম রিয়ান।
খুব কষ্টে রিয়ান এর এক বন্ধুর কাছ থেকে রিয়ান এর একটা ছবি পেলাম।
ছবিটা দেখেতো আমার চোখ চড়কগাছ। কারন রিয়ান আর রিয়ার চেহারা একদম এক। শুধু ছেলে আর মেয়ের তফাৎ। তাই আমি ফটো এডিট করে রিয়ান এর ছবিটাকে মেয়েদের মত করলাম।
তখন বুঝলাম রিয়ানই রিয়া। রিয়ান কে আজ পর্যন্ত কেউ ধরতে পারেনি তার প্রধান দুটো কারন হচ্ছে রিয়ান মানুষের গলা সহজে নকল করতে পারে। আর দ্বিতীয়ত রিয়ান এর চেহারাটা অনেকটা মেয়েদের মত। তাই সহজেই ও মেয়েদের রূপ ধারন করতে পারতো।
আর রিয়াকে আমার প্রথম থেকেই খুব আজব লাগতো কারন ও যখন আমাকে টাচ করতো আমার কেমন যেনো লাগতো।
একটা মেয়ে আর যাই হোক মেয়েদের স্পর্শ গুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে। কিন্তু যতবারই রিয়া আমাকে স্পর্শ করেছে ততবারই আমার খুব অসস্তি লেগেছে।
হিমেলঃ সব তো বুঝলাম কিন্তু তুমি এত সব কেন করলে? তিসা কি হয় তোমার? আর রিয়া মানে রিয়ানই বা কেন তিসাকে মারলো?
তুলিঃ তিসা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। বেস্ট ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে বোন বললেও ভুল হবে তিসা আর আমি একে অপরের জীবন ছিলাম। ছোট বেলা থেকে তিসা আর আমি একসাথে বড় হয়েছি। আজ আমি বেঁচে আছি তাও তিসার জন্য।
হিমেলঃ মানে?
তুলিঃ খুব ছোট বেলায় মানে যখন আমার বয়স ১১ কি ১২ বছর। তখন আমার দুটো কিডনীই নষ্ট হয়ে যায়। তখন তিসাই তার একটা কিডনি দিয়ে আমাকে বাঁচায়।
তারপর বছর দুই আগে আমি লন্ডন ইউনির্ভাসিটিতে চান্স পাই কিন্তু দুর্ভাগ্য বসতো তিসা চান্স পায় না। কিন্তু আমি ওকে ছেড়ে যেতে চাইনি। তাও তিসা আমাকে জোড় করে পাঠায়।
রোজ ফোনে কথা হতো। কিন্তু যখন তিসা শতবার ফোন করেও পাচ্ছিলাম না তখনই বুঝেছি তিসার কিছু না কিছু হয়েছে।
কিন্তু সাত দিন পর যখন ওর মৃত্যুর খবর পেলাম পুরো পৃথিবীটা যেনো থমকে গেলো।
তারপর দেশে এসে তিসার বাবা মার কাছ থেকে সব জেনে। সোজা ডিসিপি স্যার এর সাথে দেখা করি।
তিনি আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বললেন যে খুনি এই কলেজে আছে। আর এটা একটা সিরিয়াল কিলারের কাজ।
কারন খুনিটা সেসব মেয়েদের খুন করে যাদের নাম “ত” দিয়ে শুরু হয়, এবং মেয়েটা গলায় এবং ঠোটের উপর তিল থাকবে আর মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর।
খুনিকে পুলিশ সেজে ধরা সম্ভব না।
তখন আমি কলেজে ভর্তি হবার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।
ডিসিপি স্যার এর কাছ থেকে সব শুনে
আমি নিজের নাম অয়নি থেকে তুলি রাখলাম। ঠোটের উপরের তিলতো আমার আগে থেকেই ছিলো গলার তিলটা নকল।
গতকাল ১২টায় ডিসিপি স্যারকেও কলেজে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু—-
ডিসিপিঃ স্যরি অয়নি কালকে ট্রাফিক এর কারনে আমার আসতে দেরি হয়েছিলো। কিন্তু কলেজে এসে তোমার বিষয়ে সব শুনলাম।
হিমেলঃ কি ? তোমার নাম তুলি না?
তুলিঃ হ্যা আবার না।
হিমেলঃ মানে?
তুলিঃ মানে তুলি নামটা আমাকে তিসা দিয়েছিলো। তিসা নিজের নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলো। ওই এই নামে আমায় বেশি ডাকতো।
কিন্তু সবাই আমাকে অয়নি নামেই চেনে। এখানে তুলি নাম দিয়ে খুনিকে ধরার জন্য আমি নিজেকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছি।
কারন রিয়ান এ পর্যন্ত যে সব মেয়েদের খুন করেছে। তাদের নাম “ত” থেকে শুরু হয়েছে। যেমন তন্নি, তনু, তনিকা, তনিমা, তামান্না আর তিসা।
আর প্রত্যেকটা মেয়ের ঠোটের উপর আর গলায় তিল ছিলো। আর প্রত্যেকটা মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর।
হিমেলঃ কিন্তু রিয়ান মেয়ে গুলোকে কেন মারতো?
তুলিঃ রিয়ান এটা কি তুমি বলবে? নাকি এটাও আমি বলবো?
রিয়ানঃ কারন আমি এসব মেয়েদের খুব ঘৃনা করি।
তুলিঃ কিন্তু কেন?
রিয়ানঃ আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম। মেয়েটার নাম ছিলো তন্নি। ও দেখতে খুব সুন্দর ছিলো ঠোটের উপর আর গলায় তিল ছিলো।
কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে প্রতরনা করে অন্য একজনকে বিয়ে করে বিদেশ চলে গেছে।
আর তারপর থেকেই আমি এ ধরনের মেয়েদের সহ্য করতে পারি না। ঘনিা করি প্রচন্ড ঘৃনা।
আমি এই সব মেয়েদেরকে খুন করে ফেলবো।
কিন্তু ছেলে হয়ে মেয়েদের সাথে সহজে মিশা একটু কঠিন কিন্তু একটা মেয়ে সহজেই মেয়েদের সাথে মিশতে পারে। তাই আমি মেয়েদের রূপ ধারন করেছি।
আর আমি তোমাকেও খুন করবো।
তুলিঃ আরে যা যা। তোর মত অনেক পাগলকে সোজা করছি। তুই কোন ক্ষেতের ধান রে? তোর তো নির্ঘাত এখন ফাসি হবে।
তোকে ফাসির সাজা না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না।
পুলিশ তুলিকে ধন্যবাদ দিয়ে রিয়ানকে নিয়ে চলে গেলো।
সবাই বিষটা খুব সহজে যেনো নিতে পারেছে না।
তুলিঃ স্যরি হিমেল।
হিমেলঃ কেন?
তুলিঃ আমি প্রথমে তোমাকে সন্দেহ করেছিলাম কিন্তু পরে বুঝতে পারি আমি ভুল ছিলাম। আর অনেক ধন্যবাদ আমার সাথে থাকার জন্য।
হিমেল কিছু বললো না শুধু তুলির দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।
১৫ দিন পর——-
তুলি, হিমেল, তিসার বাবা মা, সবাই মিলে তিসার কবর যেয়ারত করতেছে। তুলির চোখ যেনো আজ কোন বাঁধা মানছে না। বৃষ্টির মত চোখের জলগুলো ঝরে যাচ্ছে।
তুলিঃ তিসু আমি পেরেছিরে তোর খুনির উপযুক্ত শাস্তি দিতে। গত কাল রিয়ানের ফাসি হয়ে গেছে।
তুই কত প্লান করছিলি যে আমি দেশ আসলে কত কি করবি। দেখ আমি দেশে আসছি কিন্তু তুই আমার কাছে নাই।
ভালো থাকিস রে।
তুলি প্রায় সবসময়ই এখন মন খারাপ করে থাকে।
তার এক সপ্তাহ পর—
হিমেলঃ হ্যালো তুলি তোমার সাথে খুব জরুড়ি একটা কথা ছিলো? একটু দেখা করতে পারবা?
তুলিঃ ঠিক আছে। আমাদের বাসার পাশের পার্কে চলে আসো।
কিছুক্ষন পর দুজন পার্কে মুখোমুখি দ্বাড়িয়ে।
তুলিঃ কি বলবে বলো?
হিমেলঃ রিয়ানকে তার প্রাপ্য শাস্তি তো দিলে?
তুলিঃ যে যেটার প্রাপ্য তাকে কো সেটা পেতেই হবে।
হিমেলঃ আচ্ছা তাহলে তোমাকে আরেক জনকে শাস্তি দিতে হবে?
তুলিঃ কাকে?
হিমেলঃ যে আমার মনটা চুড়ি করেছে তাকে কি শাস্তি দিবে?
তুলিঃ (মুচকি হেসে) তা চোরটার নামটা তো বলো?
হিমেলঃ তুমি এখনো বুঝতে পারো নি?
তুলিঃ নাহ। (মনে মনে দুষ্ট বুদ্ধি খাটিয়ে)
হিমেলঃ তোমাকে আবার নেশা করানো উচিৎ তাহলে সেদিন এর মত সব সত্যি কথা বলে দিবা।
তুলিঃ মানে?
হিমেলঃ সেদিন নেশার ঘোরে কত কি বললা আর আজ কিছু বলতে পারছো না।
তুলিঃ কি বলেছিলাম। তাড়াতাড়ি বলো (রাগ করে)।
হিমেলঃ থাক রাগ করো না। তুমি যা বলার বলেছো এখন আমাকে যা বলতে বলছিলে তাই বলি—-
তুলিঃ হুম বলো?
হিমেলঃ আমার মন যে চুরি করেছে তার নাম হচ্ছে অয়নি ওরফে তুলি। চোরটা শুধু আমার মন না আমার অস্তিতকেও চুরি করেছে। এখন চোরটাকে ছাড়া যে বেঁচে থাকা দায়। চোরটাকে যে ভিষন ভালোবেসে ফেলেছি। এখন ভাবো চোরটাকে কি শাস্তি দিবা?
তুলিঃ আচ্ছা একটা চোরের জন্য এত মায়া?
হিমেলঃ ভালোবাসি তো। এখন বলো কি শাস্তি দিবা?
তুলিঃ চোরটার শাস্তি হচ্ছে বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩০২ ধারা মতে তাকে সারা জীবন তোমার মনের কারাগারে বন্দি করে রাখার আদেশ দেয়া হলো।
হিমেলঃ ইয়াহু । I love u. বলে যেই তুলিকে জড়িয়ে ধরতে গেলো।
তুলিঃ ওয়েট। বাবা গতকাল বাড়ি আসছে। আগে তার সাথে কথা বলো। তাকে রাজি করাও তারপর লেখা পড়া শেষ করো তারপর কবুল বলো তারপর জড়িয়ে ধরার অনুমতি পাবা।
হিমেলঃ This is not fair তুলি।
তুলিঃ Everything is fair in love Dear.
অতঃপর হাসিখুশি ময় কিছু মূহুর্ত।
পাঁচ বছর পর——
তুলি আর হিমেলের বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর । তুলির কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে নাম তিসা।
তুলি তিসার ছবি দেখছে আর বলছে I miss u তিসু।
হিমেলঃ We miss u তিসা।
হিমেলঃ I love u.
তুলিঃ মুচকি হেসে I love u too.
…………………………………………সমাপ্ত…………………………………….