১.
মাঝে মাঝে বিষণ্ণ হতে ভাল লাগে মিশকাতের ।
অথবা ব্যাপারটি এরকম ও হতে পারে , বিষণ্ণ একটি জীবন নিয়ে চলতে চলতে সে বিষণ্ণতাকে ভালবেসে ফেলেছে ।
শীতের কুয়াশা ঢাকা এই সকালটিতে দাঁড়িয়ে গরম কফি খেতে খেতে তার মনে হতে লাগল ,
বিষণ্ণ মানুষদের কাছে শীতের সকালটি হয়ত নিজস্ব একটি রুপে ধরা দেয় , যেমনটা দেয় তার কাছে ।
অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে, জীবনটা তাকে হয়ত অনেক কিছুই দিয়েছে ,
সেই অনেক কিছুটা তাকে আর সকলের কাছে অসহায় হবার হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে ঠিকই ,
কিন্তু নিজের কাছে নিজেকে অনেক সংকীর্ণ মনে হয় তার ।
মেডিকেল থেকে পাশ করা একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে ঢাকা শহরের উঁচু স্তরে ঠেলে না দিয়ে,
চট্টগ্রামের বেসরকারি একটি মানসিক হাসপাতালে চাকরি নেয়াটাকে সবাই হয়ত বোকামিই বলবে ।
কিন্তু মিশকাত এটাই চেয়েছে ,তার জীবনে সুখ চাইবার মত মানুষ তো নেই , একমাত্র হয়ত প্রকৃতি পারে তাকে শান্তিতে রাখতে ।
জোরে একটা ফু দিল , ধোঁয়ার মত বেরিয়ে গেল মুখ থেকে ।
আনমনে হেসে ফেলে মিশকাত, তার জীবন থেকেও ক্ষণিকের জন্যে আসা কিছু হাস্যকর সুখ এভাবেই ধোঁয়ার মত বেরিয়ে গিয়েছে ।
সুখের পরে নাকি দুঃখ আসে, দুঃখের পরে সুখ , একথাটি মিশকাতের কাছে খুবি হাস্যকর,
দুদিনের জন্যে এসে যে সুখ সারাজীবনের জন্যে তাকে দুঃখ দিয়ে গেছে , সে সুখকে সুখ বলে মানা যায় কি ?
নানা নানির কাছে মানুষ সে , নানির মুখ থেকেই শুনেছে পালিয়ে বিয়ে করা তার বাবা মাকে মেনে নিতে পারেনি তার নানা ,
কিন্তু তার জন্মের আগেই বাবার এক্সিডেন্টে মৃত্যু এবং তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যুর পর ছোট্ট মিশকাতকে তার নানা ছুঁড়ে ফেলতে পারেননি।
তবে আদর আহ্লাদেও মানুষ হয়নি মিশকাত , নানা কে ভীষণ ভয় হত তার।
মেডিকেলে পড়বার ২য় বছরের মধ্যে এই দুজন ও যখন চলে যায় তখন মিশকাত অনুভব করে টানবার মত তার আর কোনও শিকড় রইল না ।
নানার উইল করা টাকা দিয়েই পড়াশুনা চলতে লাগল , জীবনের প্রতি যখন তার অতিমাত্রায় অভিমান তখনি নীরার আগমন ।
কত পাগলামিটাই না নীরা করত তাকে পাবার জন্যে । ক্লাসের সবাই যদিও জানতো মিশকাতের প্রতি নীরার পাগলামির কথা ,
কিন্তু মিশকাতের চোখে সেদিনি প্রথম ধরা পড়ল যেদিন সে তার ক্লাসের টেবিলে ”মিশকাত + নীরা” লেখাটি খোদাই করা দেখল ।
তারপর নীরা কে কতই না বুঝিয়েছে সে , তার কেউ নেই পৃথিবীতে , এরকম নিঃসঙ্গ মানুষের এসব মানায় না,
কিন্তু নীরার এক কথাই ছিল , তাকে সে ছেড়ে যাবেনা । মিশকাত পারলনা নিজেকে দূরে রাখতে ,নীরা কে জড়াল নিজের জীবনে।
কিন্তু ৪ বছর পর মিশকাত অবাক হয়ে দেখল সেই নীরার বদলে যাওয়া,
দুইকুলে সব হারানো মিশকাতের তখন কোনও যোগ্যতাই পারলনা নীরাকে ধরে রাখতে ।
২৯ বছরের জীবনটাতেই নিজেকে,নিজের স্মৃতির আধারকে অনেক ভারি মনে হয় মিশকাতের ।
হঠাত ই বাস্তবে ফিরে আসে সে যখন কফি মগে চুমুক দিয়ে জিভের আগায় আর কফির ছোঁয়া পেলনা ।
বড় ধরনের পাগলামি ,ইদানিং এই ঘটনাটা বেশি ঘটছে , কফি কখন শেষ হয় বুঝতেই পারেনা ।
ঘরে ঢুকে দেখল হসপিটালে যাবার সময় হয়ে গিয়েছে । তৈরি হল সে ।
কয়েকটা পেশেন্টকে চেক করে নিজের কেবিনে ঢুকবার সময় মিশকাতের সাথে সিনিয়র নার্সের দেখা হল ,
সে মিশকাতকে জানাল ডাঃ আশরাফ তাকে রুম নং ২৪ এ যেতে বলেছে , সেখানে একজন নতুন পেশেন্ট এসেছে, খুব ঝামেলা করছে,
ডাঃ আশরাফ নিজে এক পেশেন্টকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় তাকে দায়িত্ত নিতে বলেছেন । মিশকাত রুম ২৪ এর দিকে ছুটল,
ভেতরে ঢুকে দেখল ২২-২৩বছর বয়েসি একটা মেয়ে , কাউকে কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছেনা ,
চিৎকার করছে , কান্নাকাটি ও করছে , বেডে দাপাদাপি শুরু করেছে ।
মিশকাত নার্সদের ইঞ্জেকশানের ব্যবস্থা করতে বলে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল ।
মেয়েটা প্রবল আক্রোশে মিশকাতকে খামচে দিল এবং মিশকাতের আইডি কার্ডটিও খুলে নিয়ে আসল ।
মিশকাত অবাক হয়ে দেখল মেয়েটা মিশকাতের আইডি কার্ডটার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে, তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
মেয়েটির নাম ত্রিনি । ত্রিনি যখন ঘুমিয়ে পড়ল তখন মিশকাত লক্ষ করল মেয়েটির হাতে মুখে পায়ে অসংখ্য কাটা দাগ, ব্লেড দিয়ে পোচ দিয়েছে যেন ।
নিজের কেবিনে আসল মিশকাত । সেখানে ত্রিনির বাবা আর ছোট বোন রিনি।
মিশকাত বলল , ” ওর গায়ে ব্লেডের অনেক দাগ , ওসব কি ও নিজেই দিয়েছে ? ”
ত্রিনির বাবা মাথা নেড়ে হ্যা বললেন ।
মিশকাত আবার বলল ” ওর অসুস্থতা কি আগে থেকেই ? নাকি কোনও ঘটনা আছে ? আমাকে একটু পরিষ্কার করে বলুন ” ।
ত্রিনির বোন শুরু করল , ”আমরা আসলে কানাডা থাকতাম ।
আপু সেখানে একজন কানাডিয়ানকে ভালবাসত ,
তাকে বিয়ে করার কথাও ছিল অথচ বিয়ের ৪-৫দিন আগে আগুনে পুড়ে সেই ছেলেটা মারা যায়, আমার আর আপুর সামনে ।
তখন থেকেই এই অবস্থা ।”
খুব খারাপ লাগল মিশকাতের , অবশ্য বেশিরভাগ রুগির ক্ষেত্রেই এরকম অনেক কাহিনি দায়ী , তবুও এই কাহিনিটা আলাদা লাগল মিশকাতের কাছে।
কিছুক্ষন পর ত্রিনির বাবা উঠে গেল, রিনি উঠলো না , মিশকাতের মনে হল মেয়েটা কিছু বলতে চায় ।
মিশকাত বলল, ”’ কিছু বলবেন কি ?” ” স্যার আপনি চেষ্টা করলে আমার আপুকে সুস্থ করতে পারবেন ” ,
মিশকাত একটু হাসার চেষ্টা করতেই রিনি আবার বলল , ” আপনার মনে কি প্রশ্ন হয়নি আপনার আইডি দেখে আপু এত শান্ত কিভাবে হল ?”
” আমি এটাই জিজ্ঞেশ করতাম ”
রিনি কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার বাবার তাড়াতে উঠে চলে যায় । মিশকাত চশমা খুলে ভাবতে থাকে । সবকিছু জট পাকিয়ে যায় ।
মিশকাত এরপরদিন লক্ষ করল , তাকে দেখলেই ত্রিনি কেমন যেন শান্ত হয়ে যায় ।
ত্রিনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করে মিশকাত ,
প্রথম প্রথম মেয়েটা তার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকত আর টপটপ করে পানি পড়ত দুই চোখ থেকে ।
মিশকাতও ত্রিনির আবেগে কেমন যেন বিভ্রান্ত হয়ে যায় । বেশিরভাগ সময় ই সে ত্রিনির কাছাকাছি থাকবার চেষ্টা করে, ত্রিনি কথা বলেনা ,
তবে ৩য় দিন সে মিশকাতকে তার জামার পকেট থেকে একটা ব্লেড বের করে দেখাল ,
মিশকাত ব্লেডটা নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই ত্রিনি নিজের হাতে ব্লেড দিয়ে অতর্কিত আঘাত করতে লাগল…
এবং ত্রিনিকে আটকাতে গিয়ে মিশকাতের হাত ও কেটে গেল।
মিশকাত ”আহ” বলে আর্তনাদ করতেই মেয়েটা মিশকাতের হাতের রক্তের দিকে তাকাল….
তারপর ব্লেডটা ফেলে দিয়ে কেপে উঠে হঠাত করেই অচেতন হয়ে গেল।
মিশকাত গভীর এক মায়াতে নিজের ব্যাথা ভুলে ত্রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটার সাথে তার কিসের যোগাযোগ ?
পরদিন ত্রিনির কেবিনে গিয়ে মিশকাত দেখল ত্রিনি শান্ত হয়ে বসে আছে । মিশকাত গিয়ে ত্রিনির সামনে বসল ।
মিশকাতকে অবাক করে দিয়ে ত্রিনি মুখ তুলে তাকিয়ে একটু হাসল । মিশকাতের বুকের বামদিকটা মোচড় দিয়ে উঠল ,
এমন মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে কতটুক শক পেলে নিজেকে এভাবে আঘাত করতে পারে ।
মিশকাত হাসার চেষ্টা করে বলল , ” কেমন লাগছে এখন ?”
ত্রিনি বলল , ” আমি তো জানিনা , তুমি বল তো কেমন আছি এখন ”
মিশকাত সামলে নিয়ে বলল , ” তুমি এখন ভাল আছ ত্রিনি ”
ত্রিনি বাচ্চাদের মত ফিক করে হেসে দিল। মিশকাত বলল , ” নিজেকে ব্যাথা দাও কেন ? কষ্ট হয়না ?”
ত্রিনির চোখ হঠাত করেই ধক করে জ্বলে উঠল । সে আচমকাই হাটু মুড়ে বসে মিশকাতের শার্ট খামচে বলল , ” আমার তো অনেক কষ্ট ।
তুমি কেন জাননা ? তুমি তো মিশকাত তুমি কেন জাননা ?”
ত্রিনিকে এভাবে অস্থির হতে দেখে মিশকাত তাকে কোনও রকমে শান্ত করে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিল ।
মিশকাত ত্রিনির কথাগুলি মাথা থেকে সরাতে পারল না ।
বিকেলে রিনি ত্রিনিকে দেখার পর মিশকাতের সাথে দেখা করতে আসল । মিশকাত রিনিকে চেম্বারে বসাল , তার ভেতরে অনেক প্রশ্ন ।
সে একেক করে সব কথাই জানাল রিনি কে ।
রিনি দুর্বল ভাবে বলল , ” আমি সেদিন ই বলেছিলাম আপনি আপুকে সুস্থ করতে পারবেন , কারন ”
মিশকাত আগ্রহ নিয়ে তাকাল । রিনি বলল , ” কারনটা আপনি নিজেই ”
” মানলাম , কিন্তু আপনার বোনের সাথে এর সম্পর্ক কি ?
আপনি স্পষ্ট বলেছেন ত্রিনির যে লাভার সে কানাডিয়ান , আমার সাথে তার সাদৃশ্য থাকার কথা নয় ”
রিনি তার ব্যাগ টা খুলল ।
সেখান থেকে একটা ডায়েরি বের করল, মিশকাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল..,
” আপনি চাইলে এটা পড়তে পারেন , আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ।”
মিশকাত হাতে নিল ডায়েরিটা । রিনি চলে গেল ।
মিশকাত স্থির চোখে তাকিয়ে রইল ডায়েরিটার দিকে ।
২.
ছোটবেলা থেকেই খুব চঞ্চল একটি মেয়ে ত্রিনি , সারাক্ষণ দুষ্টুমি, হাসি আর চাঞ্চল্লে মাতিয়ে রাখত পুরো বাড়ি ।
কানাডাতেই তার জন্ম, পুরো পরিবারের সাথে সেখানেই বেড়ে ওঠা ।কানাডার বরফ শীতল পরিবেশ তাকে স্থির রাখতে পারত না ।
ত্রিনি শুধু অবাক হয়ে দেখত তার এসব দুষ্টুমির অত্যাচারগুলি তার পরিবারের সবাই কি নির্মল ভাবে মেনে নেয় ।
শীতের দিনগুলি তে যখন কানাডা সাদা শুভ্র তুশারে ঢেকে যায় ত্রিনির তো তখন ঘরে মনই টেকে না ।
স্নো বল বানিয়ে ছুড়োছুড়ি খেলতে তার কি যে ভাল লাগে !
কিন্তু এমনই এক হিম শীতল কানাডাতে তার ভেতর যে হঠাতই বসন্ত নেমে আসবে সেটা কি ত্রিনি ভাবতেও পেরেছিল ?
ঘটনার সুত্রপাত ত্রিনির ঘরের জানালা থেকেই । ত্রিনির রুমটা বাড়ির দোতলায় , তার জানালা থেকেই পাশের বাড়ির একটা রুম দেখা যায় ।
একটা লম্বা টাইপ ছেলেকে দেখা যায় , সে জানালার পর্দা তুলে রেখে সারারাত পড়াশোনা করে ,
তাও আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে , ত্রিনি ছেলেটার নাম দিল ” white horse ” !
তারপর একদিন স্নো দিয়ে খেলতে গিয়ে ছেলেটার মুখে মেরে বসে , একটু খুনসুটি , জানালা দিয়ে তাকিয়ে মুখ ভেংচানো ,
ভেংচি টা অবশ্য ত্রিনিই দিত আর ছেলেটা শুধু হকচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত ।
ক্রমেই ত্রিনির কাছে কোনও একজন কে ভেংচি কাটাটা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াল ,
আর ছেলেটাও কেন যেন ভেংচি খাবার জন্যেই জানালায় এসে দাঁড়িয়ে উকি দিত ।এভাবেই এরিকের সাথে পরিচয় ত্রিনির।
ছেলেটা ব্রোকেন ফ্যামিলির , বাবা মা কারো কাছেই না থেকে একা একা একটা এপার্টমেন্টে থাকে ,
পড়াশোনায় অনেক ভালবাসা তার , সেটার পেছনেই সময় চলে যায় । ত্রিনির মুগ্ধ সময় গুলি কাটতে থাকে এরিকের সাথে ।
একসময় দুজনই বুঝতে পারে ভেতর থেকে কি যেন এক বাধনে জড়িয়ে পড়েছে । সময় চলে যেতে থাকে ।
বছর দুই পর একদিন হঠাত করে এরিক ত্রিনিকে বলে যে সে ইসলাম গ্রহন করতে চায় ।
ত্রিনি বারবার জিজ্ঞেস করে সে এটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে করছে কি না ,
কিন্তু না এরিক অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয় এবং কিছুদিনের মাঝেই ধর্মান্তরিত হয়।
ত্রিনির পছন্দ অনুযায়ী এরিকের নতুন নাম হয় —- মিশকাত।
এরিক তার নতুন নামটিকে এতই পছন্দ করল যে ত্রিনিকে সবসময় এই নামেই ডাকতে বলল । ত্রিনির কাছে এরিক ফিরে এল মিশকাত হয়ে ।
এর দেড় বছর পর মিশকাত আর ত্রিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ।ত্রিনির পরিবার থেকেও বাধা আসেনা । কিন্তু বাধাটা হয়ত অদৃষ্টেই ছিল ।
মিশকাত ছোটো একটা বাড়ি কেনে , সেখানে এক বিকেলে ত্রিনি আর রিনিকে নিয়ে যায় ।
মিশকাত নিজেই রান্না করবে বলে কিচেনে রান্না বসিয়ে দেয় , তারপর শাওয়ার নিতে যায় ।
ত্রিনি আর রিনি ঘর কি দিয়ে সাজাবে তাই ঠিক করছিল, হঠাত কিভাবে যেন কিচেনে আগুন লেগে যায় ,
ছোট বাড়িটা আগুনে ছেয়ে যেতে একটা মুহূর্তই লেগেছিল হয়ত, রিনি ত্রিনিকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে, ত্রিনি বেরোতে চায়না ,
মিশকাতের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে , কিন্তু মিশকাত আর বের হয়নি । আর ফিরে আসে নি ।
ত্রিনি স্বাভাবিক হতে পারলনা আর । ভিতরের কষ্টটা যখন অসহ্য আকার ধারন করে নিজেকে তখন ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে ।
ব্যাথা দিয়েই ব্যাথা কমানোর চেষ্টা ।
মিশকাত যখন ডায়েরিটা পড়া শেষ করল তখন মধ্যরাত, রাত ২টা বাজে।
নিজের এত কষ্টতেও এতটা কাদেনি সে, আজ তার চোখ কে সে আটকালও না।
অনেক দিনের খরতাপে শুকিয়ে যাওয়া মনের মাটিটাকে ভিজতে দিল মিশকাত । সকালে জাগ্না পেয়ে মিশকাত নিজেকে টেবিলে আবিষ্কার করল ।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হস্পিটালে ছুটল , ত্রিনির রুমে ঢুকে দেখল ত্রিনি গুটিসুটি মেরে ঘুমুচ্ছে । মিশকাত ত্রিনির মাথার কাছে বসল ।
সকালের সোনা রোদ খেলা করছে তার মুখে ।
একটু আচ লাগতেই মিশকাতের দিকে ঘুরল ত্রিনি ,
হাতের সাথে হাত লাগতেই চমকে তাকাল সে মিশকাতকে দেখে বাচ্চাদের মত দাঁত বের করে বলল..
”মিশকাত ! ”
তারপর মিশকাতের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল ,” তুমি এভাবেই বসে থাক , আমি ঘুমাই, হ্যা? ”
মিশকাত ত্রিনির হাতে হাত রেখে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসল , বলল ,
” আমি এখানেই আছি ত্রিনি , তুমি ঘুমাও ” ।
মিশকাত অবাক হয়ে দেখল কি পরম নির্ভরতার হাসি মুখে নিয়ে ত্রিনি এক পলকেই ঘুমিয়ে গেল ।
মিশকাত কখনও ভাবতেই পারেনি এত মিষ্টি একটা মেয়ের কাছে এত ভরসার একজন মানুষের স্থান টা সে পাবে ।
নিজের কথাই বা কেন ধরছে না ?নিজের কাছে ধরা দেয় মিশকাত ,ভীষণ ভালবেসে ফেলেছে সে ত্রিনি কে ।
এতখানি ভালবাসা কে মিশকাত হারিয়ে যেতে দেবেনা , কিছুতেই না ।