.হঠাৎ করেই ৫ বছর বয়সী ছোট্ট হৃদয়টা হাপিয়ে হাপিয়ে ‘আম্মু…আম্মু”বলতে বলতে ওর মায়ের কাছে এসে আচল টানতে লাগলো…..
.
.আচল টানা দেখে ওর মা নিচু হয়ে হৃদয় এর গালে একটা পাপ্পি দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,’কি হয়েছে আমার বাবুটার? এভাবে হাপাচ্ছে কেন আমার লক্ষীটা?’
.
.হৃদয় ছোট ছোট দুইটা হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে ওর মাকে বলল,’আমি বলবো, তার আগে আমাকে কোলে উঠাও ‘
.
.ওরে দুস্টু, (নাক ধরে)বলে হৃদয় এর মা ওকে কোলে তুলল,
.
.এখন বলো এভাবে হাপাচ্ছো কেন তুমি?
.
—(হৃদয় ছোট্ট বাচ্চা তাই অজানা নতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ বেশী থাকে,কোথা থেকে জানি ও নিচের দুইটা শব্দ শুনেছে)
.
.নিজের মাকে অবাক করে হৃদয় একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো….”আম্মু,..ভালোবাসা আর প্রেম এর মধ্যে পার্থক্য কি?
.
.চমকে উঠে ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
.এই শব্দ গুলো কে তোমাকে শিখিয়েছে?
.
–কেউ না আম্মু,তুমি আমাকে বলোনা পার্থক্যটা কি?(হৃদয়)
.
কোল থেকে নামিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে ওর মা ওর দুটো হাত নিজের হাতের সাথে রেখে বলল,আচ্ছা শোনো বলছি তোমাকে,
.
.এই যে আমি তোমাকে আদর করি, ঘুম পাড়িয়ে দেই,তোমাকে গল্প শোনাই, গান শোনাই….এগুলো হলো মা হিসেবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা…! আর তোমার যাকে পছন্দ হবে, ভালো লাগবে বা যার জন্যে অনুভুতি সৃষ্টি হবে সেটা হলো তার জন্যে তোমার প্রেম।
.
.
.মা..!অনুভূতি কি?(হৃদয়)
.
.অনুভূতি কি তা প্রকাশ করা যায়না,( উদাহরণ দিয়ে) তুমি যখন বড় হবে তখন এটা কি সেটা নিজেই বুঝতে পারবে বাবু,
.
.তারপর কি মনে করে যেন ওর মা ওকে একটা কথা বলল,’ তোমার বাবা অনেক দিন গেল মারা গেছে এই পৃথিবীতে আপন বলতে এক শুধু তুমিই আছো;আম্মুর হাতটা কখনো ছেড়না ওয়াদা করো বাবু….!
.
.মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ওই ছোট্ট বাচ্চাটি গম্ভীর মুখ ধারণ করে বললো,প্রমিস দিলাম।
.
.মাঝখানে দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৭ টি বছর….
.
.ছোট্ট হৃদয় শৈশব থেকে বাল্য~~বাল্য থেকে কৈশোর~~কৈশোর থেকে যৌবন পার করে ধীরে ধীরে বড় হয়ে গেল,চারপাশের বাস্তব জ্ঞান আছে ওর, সব কিছু বুঝতে শিখেছে এখন।
.
.মায়ের বলা ছোটবেলার সেই অনুভূতি আর প্রেমের ব্যাখ্যা এখন সে ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারে,…..হ্যা..! ও একটি মেয়েকে পছন্দ করে,মেয়েটির মায়াবী চেহারা ওর ভীষণ ভালো লাগে, সেই মেয়েটির জন্যে নিজের মনে প্রতি মূহুর্তে অনুভূতির সৃষ্টি হয়,এবং সে আর কেউ না নীলার জন্যে……
.
.আজ হৃদয় এর সাথে নীলার বিয়ে…..
.
সমস্ত আনুষঙ্গিকতা শেষ করে এই মুহুর্তে বাসর ঘরে বসে আছে দুজন।
.
—আজ আমি তোমার জন্যে আমার মা,বাবা সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি……ওয়াদা করো আমার এই হাত কখনো ছাড়বেনা… (নীলা)
.
——-ওয়াদা করলাম তোমাকে(হৃদয়)
.
.মা, নিলা, হৃদয়, ওদের দিনকাল ভালোই চলছিল, একটা সূখী পরিবার ছিল….
.
সব কিছু ঠিক ই ছিলো কিন্তু একদিন~~~~~
.
.—-আপনার মা এবং আপনার স্ত্রী দুজনেরই কিডনি পুরোপুরি ভাবে ড্যামেজ হয়ে গেছে..এতদিন তারা বুঝতে পারেনি কারণ এর প্রকোপ কম ছিল,, কিন্তু এখন এটা মারাত্মক রুপ ধারন করেছে,(ডাক্তার)
.
—-কি বলছেন আপনি??(হৃদয়)
.
—-মি: হৃদয় আমি ঠিক ই বলছি,এই যে রিপোর্ট দেখুন,,,… আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ৪টি কিডনি জোগাড় করুন ;;নয়তো তাদের বাচানো সম্ভব হয়ে উঠবেনা আর,
.
–ঠিক আছে আমি দেখছি…জোগাড় কিভাবে করা যায় বলে ও বেরিয়ে গেলো কিডনি খোজার উদ্দেশ্যে…
.
.
.আল্লাহ সহায় ছিলনা, দিন রাত খুজেও ৪টা বা ২টা দূরে থাক, একটা ও কিডনি দেওয়ার মত মানুষ খুজে পাওয়া গেলনা……….নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল হৃদয় এর…!চোখের সামনে নিজের প্রিয় দুটি মানুষ মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আর সে কিছুই করতে পারছেনা………
.
..
.দিন শেষে…..
.
——কি পেয়েছেন কিডনি?(ডাক্তার)
.
—-না তন্নতন্ন করে খুজেও পেলামনা।
.
—কিডনি না পেলে ওনাদের বাচানো সম্ভব না মি:হৃদয়।
.
—আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি… আমি কিডনি দিবো..
.
— বেশ তাহলে আপনি দিবেন।কিন্তু আপনি যে কোন একজনকে ডোনেট করতে পারবেন এবং একজনের সঙ্গ আপনাকে ছাড়তে হবে….সারাজীবনের জন্যে
.
.কিছু সময় পর…..
.
.—ডাক্তার, আমাকে কে কিডনি দিলো..(হৃদয় এর মা)
.
—আপনার ছেলে..(ডাক্তার)
.
.—ডাক্তার আমায় কে কিডনি ডোনেট করলো(নীলা)
.
—-আপনার স্বামী..(ডাক্তার)
.
.যে কোন একজনকে কিডনি দান করা ওর পক্ষে সম্ভব ছিলনা….দুজনের কাছেই ও ওয়াদায় আবদ্ধ, ‘কখনো হাত ছাড়ার ওয়াদা….তাই হাসিমুখে নিজের দুটো কিডনিই প্রিয় দূটি মানুষ দের দিয়ে…চলে গেল এ জগতের মায়ার বাধন থেকে আমাদের চিরচেনা সেই হৃদয়।
.
.
.যাওয়ার আগে দুটো চিঠি লিখে যায় :-একটা নিজের মায়ের জন্যে,,,আরেকটা নিজের স্ত্রী নীলার জন্যে
.
.আপনার ছেলে আপনাকে এবং মিস নীলাকে এই চিঠি দিতে বলেছে…(ডাক্তার)
.
.হৃদয় এর মা ও নীলা চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো….লিখা ছিল…
.
আম্মু,
আমাকে ক্ষমা করে দিও।তুমি আমাকে জীবন
দিয়েছো,বড় করেছো,বুঝতে শিখিয়েছ। আর
আমি কিভাবে চোখের সামনে তোমার কিছু হবে
তা দেখতে পারি।
.
আর ওই মেয়েটা….ওই মেয়েটা আমার জন্যে
সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছে,আমিই বা কিভাবে
ওর।সঙ্গ ছাড়তে পারি??
.
.আম্মু তোমার যদি কিছু
হয়ে যেত ~~~তাহলে আমি জীবিত থেকেও মরে
যেতাম….আর আমার প্রেম, আমার নীলার যদি
কিছু হয়ে যেত তাহলে সবার প্রেম থেকে বিশ্বাস
উঠে যেত….
.
.আজ আমি তোমাদের দুজনেরই ওয়াদা পালন করেছি,
.
.আরেকটু নিচে লিখা….
.
”’ প্রেম”'(নীলা)
তোমাকে আমি একটা জীবন দিয়ে যাচ্ছি,কারন
আমি তোমাকে ভালোবাসি!আর সেটা কমবেনা, মরণের
পরও বাড়বে।
.
”’ভালোবাসা”(মা)
যখনি তুমি আমার কবরের সামনে আসবে আমাকে দেখতে আর চোখের পানি ফেলবে…তখন আমার কবর থেকে এক্টাই আওয়াজ বেরোবে,”আজও তোমার ছেলে বেচে আছে মা,….মায়ের ভালোবাসার ভীতরে….
.
..
.মজার ঘটনা কি জানেন….আজও সেই কবর থেকে স্পষ্ট শোনা যায়,
ভালোবাসা আর প্রেমের এক একটা জীবন্ত সেলুলয়েড।
,
আর এভাবেই শেষ হয় একজন ছেলের তার মায়ের প্রতি দায়িত্ব আর একজন স্বামীর তার স্ত্রীর জন্য কর্তব্য।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা