“রিহান দু মিনিট কথা বলতে পারবে”?
নেট অন করতেই ম্যাসেঞ্জারে টুং শব্দে তমার ম্যাসেজ এলো। মাত্রই তো ফোনে কথা বলে অনলাইনে এলো রিহান এর মধ্যেই আবার দুমিনিটের জন্য কথা বলতে চাইছে। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে “ওকে” বলে রিহান নিজেই ফোন দিলো।
“হ্যালো!…… আবার কি হলো?
“বলছিলাম যে তুমি কি এখনো নাবিলাকে ভালোবাসো”?
“হঠাৎ এই প্রশ্ন”?
“না এমনি জানতে ইচ্ছে হলো”।
“বাদ দাও এসব, এখন ঘুমিয়ে যাও অনেক রাত হয়েছে”।
তমা আর কোন কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রিহানের কথায় “হুম আচ্ছা” বলে রেখে দেয়।
তমা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে। আর মনে মনে ভাবে রিহানের জীবনে থাকার কোন মানেই হয় না। রিহান তো আমাকে নয় এখনো নাবিলাকেই ভালোবাসে। নাবিলাকে এখনো মিস করে, নাবিলাকে ভেবে এখনো মন খারাপ করে। তাহলে আমি আর কেন জোর করে তার মনে জায়গা নিতে চাইবো?
রিহান ফোনটা সাইলেন্ট করে চোখ দুটো বন্ধ করে। বড় করে একটা শ্বাস নেয় আবার ভিতর থেকে শ্বাসটা বের করে দেয়। মুচকি হাসে আর ভাবে এখনো কি আমি নাবিলাকেই ভালোবাসি? নাকি আমার অতীত বলে বার বার মনে করি? নাকি তমার মাঝে নাবিলাকে খুঁজে বেড়াই আর তাই নাবিলার কথা বলি।
আচ্ছা নাবিলা কি আমাকে সত্যি ভালোবাসতো? যদি ভালোইবাসতো তাহলে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল? রিহানের এত এত প্রশ্নেরা ঘুরেফিরে উত্তরের জন্য কিন্তু উত্তর গুলো রিহানের কাছে নেই। উত্তর গুলোতো নাবিলার জানা। নাবিলা কেন তাকে ছেড়ে চলে গেল? কেন সম্পর্কটাকে এভাবে ভেঙ্গে দিলো?
বছর ছয়েক আগে নাবিলার সাথে রিহানের পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে তারা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ায়। খুব ভালোই চলছিলো তাদের সম্পর্কটা, দিন দিন রিহান নাবিলার প্রতি অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। সম্পর্কটা যত দিন গড়াচ্ছে রিহান ততই দূর্বল হয়ে পড়ছে নাবিলার প্রতি। হঠাৎ নাবিলা ঘুরে দাঁড়ায় রিহানকে ইগনোর করতে থাকে। হুট করে একদিন সম্পর্কটা ভেঙ্গেও দেয়। রিহান তখন পাগল প্রায়। কোন ভাবেই নাবিলাকে ফেরাতে পারেনি। তার অনূভুতি গুলো নাবিলার কাছে ছিলো তুচ্ছ। আর ভালোবাসাটা ছিলো মূল্যহীন। তিন বছরের সম্পর্কটা এক নিমিষেই শেষ করে দিলো। রিহান ভেবে পাচ্ছিলো না তার ভুলটা কোথায় ছিলো? যে ভুলটার জন্য নাবিলা তাকে ছেড়ে চলে গেলো। রিহান আজও উত্তর খুঁজে ফিরে “কেনো নাবিলা তাকে কষ্ট দিলো? কেনো তাকে ছেড়ে গেলো”?
নাবিলাকে ভুলতেই রিহান আবার ভুল পথে পা বাড়ায়। ভুল নাকি ঠিক তা রিহানের জানা নেই। নাবিলার স্মৃতি গুলো তাকে দিন রাত অসহ্য যন্ত্রনা দিতে থাকে। নাবিলার স্মৃতি গুলো থেকে বাঁচতে রিহান নতুন করে সম্পর্কে জড়ায়। রিহান ভাবে কাউকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে হয়তো নাবিলার কথা তার মনে হবে না, কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারবে। আজ নতুন সম্পর্কের তিন বছর চলছে তবুও নাবিলাকে ভুলতে পারেনি। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা কখনোই ভুলা যায় না। সময়ের স্রোতে হয়তো মানুষটি হারিয়ে যায় তবে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো রয়ে যায়। নতুন কারো আগমনে হয়তো কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকলেও পুনরায় মনে পড়ে যায়। যখন একান্তই নিজের হয়ে কেউ থাকতে চায় তখনই পুরোনো ব্যাথা জেগে উঠে। বুকের ভিতরে পুনঃপুনঃ করে জেগে উঠে আর উত্তরের জন্য হাহাকার করে।
.
তমা মেয়েটাকে রিহান এখনো ভালোবাসতে পারেনি। মেয়েটাকে ছাড়তেও পারেনি। অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে আছে রিহান। তমা প্রচন্ড ভালোবাসে রিহানকে। রিহান খুব ভালো করেই জানে, রিহানও চেষ্টা করে তমাকে ভালোবাসতে। তবে হয়ে উঠে না। রিহান তমাকে কষ্ট দিতে চায়না, তবে সময় যে বড় স্বার্থপর চাইলেই হয় বললেও হয় না। তিন বছরে সম্পর্কটা কতবারই ভেঙ্গে গেছে আবার পুনরায় ঠিকও হয়ে গেছে। তমাকে ভালো না বাসলেও তমাকে ছাড়া রিহান চলতে পারে না। রিহান মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে এটাই কি ভালোবাসা? নাকি এটাও সেই পুরোনো ব্যাথার জখমটাকে নতুন করে দেয়ার সময়ের সুযোগ? সময় বুঝে আবারো কেউ কষ্ট দিবে? কথাটা ভাবলেও আবার রিহান নিজে নিজেই বলে উঠে না তমা তাকে কষ্ট দিবে না। আজ অব্দি তমা তাকে নয় বরং রিহানই তমাকে কষ্ট দিয়েছে।
কি অদ্ভুত তাই না? আমরা যাকে চাই তাকে পাই না। যাকে পাই তাকে চাই না। আবার যারা আমাদের চায় আমরা তাদের চাইনা। একে অন্যের পিছু ছুটি। যে আমাদের পিছু ছুটছে তাকে এড়িয়ে যাই। ভাবতে ভাবতে রিহান ঘুমিয়ে পড়ে।
তমা রিহানকে ফোন দেয়। আজ তমা রিহানের সাথে দেখা করবে। রিহান ভাবছে তমা মেয়েটা যতটা ভালো ততটাই জেদী। না জানি আবার কোন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে চেঁচামেচি করবে। যাই করুক তার সব কিছুকেই ভালো লাগানোর চেষ্টা করি। হয়তো সব ঠিক হতেও পারে তার ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করতে পারি।
রিহান আসতেই দেখে তমা বসে আছে। রিহান ভাবছে এত তারাতারি চলে এলো তমা। যেখানে দেখা করার কথা ৪টায় সেখানে আমি ৪টার আগেই চলে আসি যাতে তমার অপেক্ষা করতে না হয় আর সেখানে। যাই হোক ধীর পায়ে রিহান এগিয়ে যায় তমার দিকে। তমার পাশে গিয়ে বসে রিহান। তমা অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে রিহান যে তার পাশে বসেছে সে বলতেই পারে না। রিহান তোমার হাত ধরে। তমা চমকে উঠে……
“আরে আমি এমন চমকে গেলে কেনো? কী ভাবছিলে অন্যমনস্ক হয়ে”?
“নাহ কিছু না”।
তমার চোখ মুখ কেমন দেখাচ্ছে। মেয়েটি যে সারা রাত কান্নাকাটি করছে তা স্পষ্ট মুখে ভেসে উঠেছে।
“বাসায় কি তোমাকে কেউ বকেছে”?
“না তো”।
“মেরেছে”?
“না তো…… মারবে কেনো”?
“তাহলে”?
“কি”?
“কান্নাকাটি কেনো”?
তমা চুপ করে নিচে তাকিয়ে আছে কথা বলছে না।
“কি হলো চুপ কেনো”?
“রিহান তুমি নাবিলার কাছে ফিরে যাও”।
তমার কথায় রিহান হাসবে নাকি কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। তমা আবার বলতে শুরু করল।
“অনেক ভেবে দেখেছি তুমি নাবিলার সাথেই ভালো থাকবে। এত দিনেও আমি তোমার মনে জায়গা নিতে পারিনি আর পারবোওনা। তুমিও এত দিন চেষ্টা করেছো আমাকে ভালোবাসতে কিন্তু পারোনি। তুমি এখনো নাবিলাকেই ভালোবাসো। তুমি চাইলে আমি নাবিলার”…………
রিহান তমার মুখ চেপে ধরেছে। তমার চোখ দুটো টলমল করছে এই বুঝি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। রিহান শান্ত গলায় বলল,
“এই নিয়ে কতবার বলেছো এই কথাটা? তুমি নাবিলার সাথে কথা বলে আবার সব ঠিক করে দিবে। দেখো তমা আমি তোমাকে ভালোবাসি, আসলে কতটা ভালোবাসি তা জানি না তবে তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। আমি চেষ্টা করি সত্যিই আমি চেষ্টা করি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতে আবার ভয়ও পাই, হারিয়ে ফেলার ভয়। তবে এতটুকু বেশ ভালো করেই জানি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না। যাওয়ার হলে অনেক আগেই চলে যেতে। দেখো না ও আমার ছিলো না কখনোই, আমি ওকে আমার করতে চেয়ে ছিলাম। আর তাই ও হারিয়ে গেছে চলে গেছে আমাকে ছেড়ে কারণ ওর যাওয়ার কথাই তাই চলে গেছে। তুমি কেনো যাবে? আমি তো এখন আর নাবিলাকে চাইনা। অতীতের পাতাটা জাস্ট মাঝেমধ্যে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখি আর কিছু না। তুমি তো আছো আর আমি তোমাকেই চাই”।
তমা অপলক দৃষ্টিতে রিহানের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘ গুলো জমতে জমতে এখন বৃষ্টি হয়ে চোখ দিয়ে নেমে গাল গড়িয়ে পড়তে লাগলো তমার। রিহান হেসে বলে,
“আরে পাগলী এত ঠান্ডায় আবার বৃষ্টি নামাচ্ছো কেন? ঠান্ডা তো আরো বেড়ে যাবে”।
তমা মুচকি হেসে দিয়ে রিহানকে জড়িয়ে ধরে।
.
[জীবনে চলার পথে হোচট খাবেন। কারো প্রেমে পড়বেন বা কাউকে ভালোবাসবেন। কেউ সারাজীবন থাকবে আবার কেউ জীবনটা এলোমেলো করে দিয়ে হারিয়ে যাবে। সেই এলোমেলো জীবনটাকে যদি কেউ গুছিয়ে দিয়ে পাশে থাকতে চায় তাহলে কেন তাকে চলে যেতে বলবেন? অতীতকে ভেবে বর্তমানকে কেন এড়িয়ে যাবেন? যার থাকার সে সব সময় থাকবে যার না থাকার সে একদিন ঠিকই হারিয়ে যাবে আপনাকে একা রেখে। তাই বলে কি আপনার জীবন থেমে যাবে? মোটেই না তাহলে কেন অতীত নিয়ে পড়ে থাকবেন? প্রিয় মানুষ গুলোকে নিয়ে ভালো থাকুন। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব ভালোবাসা গুলো। খুনসুটি আর ভালোবাসায় ভরে উঠুক সবার জীবন।