রং নাম্বার

রং নাম্বার

আজ সকাল সকাল আমার ঘুম টা ভেংগে দিলো, আমার আম্মুর চিরশত্রু মোবাইল টা!
আম্মু তো মাঝে মাঝেই বলে মোবাইলের সাথেই নাকি আমার বিয়ে দিবে, আমি হাসি মুখে বলি আম্মু এসব কি বলো?
আম্মু উত্তরে বলে তোর কাধে যদি একটা জোয়াল দিতে পারতাম তাহলে আমি অন্তত রেহায় পেতাম।
আম্মুর এসব কথায় আমি কান দিতাম না, সারাদিন ল্যাপটপ আর মোবাইল আমার চির বন্ধু, এদের সাথেই আমার আড্ডা…
.
ঘুম টা ভাংলো একটা কলের কারণ এ,
খুব তাড়াতাড়ি করে ফোন টা রিসিভ করতেই যেতেই, ফোন টা কেটে গেল।
মেজাজ টা হট হয়ে গেল, আমি এমনিতেই এত আগে ঘুম থেকে উঠিনা।
আম্মুও ডাক দেওয়ার সাহস পায় না, আর এই রং নাম্বার, উফ অসহ্য।
তবুও নাম্বার টা দেখে নিলাম, দেখছি রবি নাম্বার ফোনে টাকাও নেই! ফোন দিতে পারব না।
গ্রামীণ হইলে তাও ফোন দিয়ে যানা যেত কে এটা, মেজাজ টা খারাপ করেই আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
কারণ আমি সকালা ৯ টার আগে ঘুম থেকে উঠি না।
আম্মুও ডাকে না, আর এখন বাজে ৬ টা এখন ৩ ঘন্টা ঘুম হবে।
কাজের ব্যাগার দেওয়া ভাল কিন্তু ঘুমের ব্যাগার দেওয়া মুটেও ভাল না, কারণ ঘুম আল্লাহ্‌র দেওয়া বড় এক নিয়ামক।
.
৩ দিন পর আবার অই নাম্বার থেকে ফোন!
সকাল ৯ টায়,
আমি ফোন টা রিসিভ করতেই, ফোনের ওপাশ থেকে, একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো!
– আসসালামু আলাইকুম (মেয়েটি)
– কে…? (আমি)
– সালাম দিয়েছিলাম,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম! কে আপনি?
– চিনেন না?
– না তো,
– অহ তাহলে ফোন রাখলাম,
– আজব তো, পরিচয় টা দিতে প্রব কোথায়?
– আচ্ছা আপনি তো উপন্যাস লিখেন তাইনা?
– হ্যা, লিখি! আপনি কে পরিচয় টা দেন প্লিজ!
– কেন অপরিচিত মেয়ের সাথে আপনি কি কথা বলেন না?
– না,
– অহ তাহলে ফোন রাখেন,
– আচ্ছা আপনি আমার নাম্বার কই পেয়েছেন।
– আপনার লেখা উপন্যাস,
“জীবন দিয়ে ভালোবাসা রেখে গেলাম”
এই উপন্যাস থেকে পাইছি।
– অহ, ত নাম টা বলা যাবে কি?
– হুম যাবে,
– তো বলেন?
– আমার নাম দিয়া,
– অহ সুইট নেম।
– হুম জানি আপনারা লেখক রা খুব ভাল পাম্প দিতে পারেন!
– অহ তাই?
– হুম তাই!
– আচ্ছা আপনি এত কিছু কিভাবে জানেন?
– তা বলতে পারব না, তবে আমি জানি।
– গুড,
– হুম।
– আচ্ছা এখন আমি ফোন টা রাখি, নাস্তা করব!
– অহ ওকে বাই,
– হুম বাই,
.
আমি ফোন টা কেটে দিয়ে, নাস্তা করতে গেলাম।
আম্মু বলছে,
– এখন কয়টা বাজে?
– কেন?
– এত আগে ঘুম থেকে উঠছো কেন আব্বু?
– আম্মু ৯:৪৫ বাজে।
– অহ তাই,
– হ্যা তাই, নাস্তা দাও।
– আজ নিজে নিজে করে খা,
– আম্মু?
– হ্যা বাবু আমি আজ বিজি অনেক, ঘরের ময়লা সব পরিষ্কার করতে হবে।
– আম্মু আমিও হেল্প করব, তোমাকে নাস্তা বানিয়ে দাও?
– জানি কত হেল্প করবি, তুই না হয়ে যদি একটা মেয়ে হতো তাহলে এত কষ্ট আমাকে একা করতে দিতো না।
– এই কান ধরে বলছি, আজ ঘরের সব ঝুল ঝেরে দিবো প্রমিস।
– ওকে ১৫ মিনিট দেরি করতে হবে।
– হুম,
.
আম্মুর গালে একটা চুমু খেয়ে আমার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ অন করে গান শুনছি।
কিছুক্ষণ পর আম্মু ডাকতেছে, আমি ঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম আসছি।
.
নাস্তা করে আম্মুর কাজে আজ হেল্প করলাম, আজ আম্মুর কাজে হেল্প করে বুঝতে পারলাম আম্মু একা একা কত কষ্ট করে।
.
কিছুক্ষণ পর আবার অই নাম্বারে ফোন করছে,
– হ্যালো, (আমি)
– আসসালামু আলাইকুম (মেয়েটা)
– ওয়ালাইকুম আসসালাম,
– ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে হয় জানেন না?
– হুম জানি,
– তবে, সালাম দিলেন না কেন?
– সরি!
– আচ্ছা একটা কথা বলব?
– হুম বলতে পারেন!
– আমরা কি ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি?
– হুম শিওর কেন নয়?
– ওকে থ্যাংকস,
– ওয়েলকাম!
– আচ্ছা নাস্তা করছেন?
– হ্যা, তোমার হইছে সকালের নাস্তা?
তুমি করেই বললাম কিছু মনে করবেন না!
– ওকে, আমি নাস্তা করছি সকাল ৮ টায়।
– অহ গুড,
– হুম,
– আচ্ছা কি করেন আপনি?
– আমি স্টাডি করি,
– গুড,
.
এভাবে আমাদের মাঝে ফ্রেন্ডশিপ টা চলতে থাকলো, মেয়েটির নাম দিয়া, আমার ফেসবুক আইডি টা দিলাম।
দেখি বিকেল বেলা একটা নিউ রিকুয়েস্ট, আইডিটির নাম ছিল, মেঘের আড়াল।
আমি ভিতরে গিয়ে দেখলাম, নিক নেম দিয়া।
তাই রিকুয়েস্ট টা এক্সেপ্ট করলাম, পরে আমিই নক করলাম…
– হাই (আমি)
– হ্যালো,
– কেমন আছো?
– ভাল আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ্‌ যাচ্ছে কোন রকম,
– গুড
– হুম,
– আচ্ছা আমি এখন অফ লাইন এ যাবো!
– ওকে যাও,
– বাই
– বাইইই
.
এভাবে প্রতিদিন আমাদের চ্যাট হতে থাকে, আমি দিয়ার প্রতি অনেকটা মায়ায় পরলাম!
আসতে আসতে দিয়াকে মনে মনে ভাল বাসতে লাগলাম, কিন্তু কথা গুলো আমার মনের মধ্যেই চাপা রাখছিলাম।
দিয়াকে কিছুতেই বুঝতে দিতাম না যে আমি ওকে ভালবাসি।
.
একদিন চ্যাট করার সময় দিয়া আমাকে তুমি বলে ফেললো, পরে সরি বললো। আমি বললাম সরি বলার কি আছে আমরা ত ফ্রেন্ড তাইনা?
উত্তরে হুম বলেছিল, আর সেদিনের পর থেকে দিয়া আমাকে তুমি করেই বলে।
দিয়ার মুখ থেকে তুমি করে ডাকটা শুনে আরও প্রেমে পরে যায় দিয়ার।
কিন্তু প্রকাশ করিনি কখনো, বা বুঝতেও দিতাম না।
.
এভাবে আমাদের আরও দুমাস সময় পার হয়ে গেলো, আমি মনে মনে দিয়াকে নিয়ে এর মধ্যে অনেক স্বপ্ন দেখেছি।
মনে মনে ভাবছি দিয়াকে আমার মনের কথা টা বলব, তাই ডিসিশন নিলাম!
একদিন ফোন করে দিয়াকে সব বলে দিবো, কিন্তু অনেক ভয় হচ্ছিলো ভিতর ভিতর।
.

কয়েক দিন পর দিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বলে,
– হ্যালো রাজ?
– হুম বলো?
– কেমন আছো তুমি?
– আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল তুমি?
– আমিও ভাল আছি, রাজ তোমাকে একটা কথা বলার ছিল!
– হুম বলো?
– ফোনে নয় দেখা করে,
– অহ ওকে,
– হুম আগামীকাল তুমি “মায়া পার্কের লাভারস পয়েন্ট” এ দেখা করবা!
– সেখানে কেন, সেখানে ত সব লাভারস রা থাকে!
– হুম সেই জন্যেই,
– ওকে দিয়া,
– হুম, আজ রাখলাম হ্যা?
– ওকে বাই,
– বাই।
.
আমি মনে মনে ভাবলাম আমার আশাটা পূরণ হবে, আমার স্বপ্নটাও পূরণ হতে চলেছে।
আমি দিয়াকে সেখানে আমার মনের কথা টা বলব।
কিন্তু ভাবলাম দিয়া আমাকে সেখানে কেন যেতে বললো, দিয়াও কি আমাকে ভালবাসে?
মন কে নিজে নিজে প্রশ্ন করছি, কিন্তু উত্তর দিচ্ছে না।
কারণ অবুঝ আমার মন।
.
পরের দিন বিকাল ৩ টা…
আমি মায়া পার্কে গেলাম গিয়ে দিয়ার জন্যে ওয়েট করলাম, একটু পর দিয়া আসলো! দিয়াকে নিয়েই আমি লাভারস পয়েন্ট এর দিকে গেলাম।
কারণ সেখানে দুজন ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, জায়গাটা অনেক নিরিবিলি। মনের কথা গুলো খুলে বলতে এটাই পারফেক্ট জায়গা। আমি দিয়ার হাত ধরেই গেলাম সেখানে।
.
সেখানে গিয়ে আমি বললাম,
– বলো কি বলবে?
আমার মন টাও ছটফট করছে দিয়াকে ভালবাসি এই কথাটা বলার জন্যে।
– দিয়া বলো কি বলবে?
– আসলে রাজ, কিভাবে যে বলি?
আর তুমি আমার ভাল বন্ধু ব্যাপারটা তোমার সাথে না শেয়ার করে থাকতে পারছি না।
– আরে ইয়ার বলে ফেলো?
– রাজ আমি খালিদ কে ভালবাসি💜
কথাটা শুনা মাত্রই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো! আমি মনে হয় এখনি জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলবো এই রকম অবস্থা।
তবুও অনেক কষ্ট করেই বললাম,
– খালিদ কে?
– ওর সাথে আমার ফেসবুকে প্রথম পরিচয় হয় ৭ মাস আগে, আমি খালিদ কে অনেক ভালবাসি আর খালিদও আমাকে অনেক ভালবাসে।
– তো প্রব কোথায়?
– প্রব হচ্ছে আমি ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে চ্যাট করি এটা সে মানতে পারে না।
– সেলেটা কে? আর তুমি তারসাথে কিভাবে চ্যাট করো?
– ছেলেটা মোস্তাকিম, দেখতে তেমন ভাল না, কিন্তু বন্ধু হিসেবে আমি ওর সাথে চ্যাট করি!
আর এটা খালিদ মেনে নিতে পারছে না।
– তুমি মোস্তাকিমের সাথে চ্যাট করা বন্ধ করে দাও?
– নাহ, আমি পারব না,
– কেন?
– কারণ মোস্তাকিমের কাছে আমার কয়েক টা পিক আছে, আমি যদি কথা বলা বন্ধ করে দেই তাহলে ও আমাকে ব্লাক মেইল করে।
– যেমন?
– ও ভয় দেখায় আমার সাথে কথা না বললে, পিক পেইজ এ পোস্ট করবে, গ্রুপে পোস্ট করবে!
আবার এডিটিং করে কি জানি করবে এগুলা ভয় দেখায়।
– আরে নাহ, পারবে না ও!
– কেন?
– কারণ আমিও একটা ছেলে, ছেলেরাই পারে ছেলেদের মন বুঝতে, মেয়েরা তা কখনোই পারে না।
ও হয় তো তোমাকে ভালবাসে, আর সেইজন্য তুমি কথা না বললে ও এসবের ভয় দেখায়।
কারণ একটা ছেলে যখন কাউকে ভালবাসে তখন তার সাথে কথা না বললে তার দুনিয়াটা অন্ধকার মনে হয়।
– কিন্তু রাজ আমি ত খালিদ কে ভালবাসি।
– হুম তুমি খালিদ কেই ভালবাসবে, দেখো মোস্তাকিম তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না।
– রাজ তুমি কাউকে ভালবেসেছো?
– আমি?
– হুম,
– হ্যা বেসেছিলাম কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– আমি মেয়েটিকে ভালবাসি বলার আগেই, জানতে পারি মেয়েটির মনে অন্যে কারও নাম লেখা।
– সো স্যাড, মেয়েটি কে বলা যাবে?
– আরে ইয়ার, অতিত টেনে আর কি লাভ 😭
– হুম রাজ,
– তুমি মোস্তাকিম কে ব্লক করে দাও, আর খালিদ কে বিয়ে করে নাও, সব ক্লিয়ার।
– হুম তাই করবো,
– ওকে চলো এইবার।
– ওকে চলো,
.
আমি সেদিন বাড়িতে কিভাবে আসছি নিজেও মনে করতে পারছি না।
আমার হৃদয়ের না বলা কথা গুলো সারাজীবন না বলাই থেকে যাবে…😭😭😭
.
.
……………………………………………………….সমাপ্ত……………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত