ভাড়াটে বউ

ভাড়াটে বউ

মেয়েটিকে ২ মাসের জন্য বউ হিসাবে ভাড়া করে এনেছে রিয়ান। মেয়েটির নাম রাইসা। খুব দারিদ্র্য পরিবারের মেয়ে বিধায়, বাবা চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে রিয়ানের২ মাসের ভাড়াটে বউ হিসেবে অভিনয় করার এ্যাগ্রিমেন্টটা হাসি মুখে মেনে নিয়েছে। অবশ্য এখানে রিয়ানের কোনো জোর জবরদস্তি ও ছিলোনা।রিয়ান বিরাট বোড়লোক শামছুল হকের একমাএ পুএ সন্তান, বাবা – মায়ের আদরের সন্তান বিধায় ছোটবেলা থেকে কখনো অভাব কিংবা বাস্তবতা এগুলো তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আর স্পর্শ করতে পারেনি বিধায় আজ রিয়ানের তার বাস্তবতাকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কারো জন্য সে জিবনটাকে বার – বার থামিয়ে দিতে চাচ্ছে, সুন্দর জিবনটাকে অভিশাপের কালো অধ্যায়ে পরিনত করে ফেলেছে। দিনরাত অন্ধকার ঘরে ঘুমোট ভাবে নির্জিবতার আড়ালে বসে থেকে নিকোটিন আর মদের সাথে বন্ধুত্ব করছে। মা- বাবার চোখের সামনে সন্তানের এই দশা, দেখে মিষ্টার শামছুল হক আর সহ্য করতে পারছিলেন না।


অবশ্য সহ্য করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ও ছিলো না। কেননা রিয়ান তো তার অতীতটাকে কোনো মতেই ভুলার চেষ্টা করছেনা। বরং দিন- দিন আর ও বেশি অতীতটাকে আকড়ে ধরে বাচার চেষ্টা করছে। আর এই অতীতটাকে ও যতবেশি আকড়ে ধরবে তত বেশিই ও ক্রমশ শেষ হয়ে যাবে।রিয়ানের বাবা ছেলের এই অবস্থা আর দেখতে পারছেনা, কেননা দেখতে – দেখতে ৩ টা বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এতো সময় দেওয়ার পর ও রিয়ান এতোটুকু বদলায় নি। ছেলের চিন্তায় ক্রমশ মিষ্টার শামছুল হকের শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর এই দূর্বলতার ফলে এবং ছেলের জন্য অতিরিক্ত টেনশানের ফলে মিষ্টার শামছুল হক গত ৪ দিন আগে হঠ্যাৎ করে হার্ট স্টোক করে। ছোটবেলা থেকেই রিয়ানের কাছে তার রিয়েল হিরো ছিলো তার বাবা। সেই বাবার অসুস্থতা রিয়ানকে খুব বেশি ইমোশনাল করে ফেলে। কেননা ও ইতোমধ্যেই নিজের হিয়ার মাঝে স্হান দেওয়া একজন মানুষকে হারিয়ে ফেলেছে । বাবাকে ও যদি সেই মানুষটার মতো হারিয়ে ফেলে, এই চিন্তাদারা আর ভয় ক্রমশ রিয়ানকে আর বেশি ইমোশনাল করে ফেলে।


আর রিয়ানের এই ইমোশনালটাকেই মিষ্টার শামছুল হক তার কাজে লাগায়।ডাক্তার মিষ্টার শামছুল হকের চিকিৎসা করার পর রিয়ানকে এসে বলে — ওনাকে দয়া করে কখনো উওেজিত করবেন না, কেননা ওনি যদি আর একবার স্টোক করে তাহলে কিন্তু…
যাইহোক ওনি যা চায় সবসময় তাই করার চেষ্টা করবেন, যত পারবেন ওনিকে চিন্তা থেকে দূরে রাখবেন। আর আই থিংক ওনি সবথেকে বেশি টেনশান আপনাকে নিয়ে করে , কারন ওনির জ্ঞান ফিরার পর থেকে ওনি বারবার একটা কথাই বলছেন — রিয়ান, নতুন করে জিবনটাকে শুরু কর বাবা। রিয়ান এভাবে নিজেকে শেষ করে, ফেলিস না বাবা।
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে রিয়ানের চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো, খুব গম্ভীর টাইপের ছেলে, নিজের কষ্টগুলোকে কখনো কারো কাছে প্রকাশ করেনা। আর বোধ হয় বিধাথা ওর নিশ্চুপ চোখ দুটোতে এক ফোটা ও জল দেয়নি।তাইতো ওর মন আকাশে মেঘেরঘটা থাকলে ও চোখের মধ্য কখনো বৃষ্টি জড়েনা । সেদিন ও নিজেকে এভাবে পাথর করে রেখেছিলো যেদিন ও নিজের সবথেকে কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছিলো।

ডাক্তার রিয়ানের এই নিশ্চুপতা দেখে কাতর স্বরে রিয়ানকে বলে উঠলো— রিয়ান অতীতে যা হয়েছিলো প্লিজ ভুলে যাওনা,
রিয়ান তখন অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠলো — আপনে সবকিছু জানার পর ও কিভাবে এটা বলছেন?
— দেখ রিয়ান জিবন কারো জন্য থেমে থাকেনা,আর হ্যা বিধাথা তোমার ভাগ্য এভাবে লেখেছে বিধায় তোমার সাথে এমন হয়েছে।আর তাছাড়া তুমি কি তোমার অতীতের জন্য তোমার আরেকটা প্রিয় মানুষকে হারাতে চাও, তোমার মাকে রঙীন শাড়ি থেকে বিধবা শাড়ি পরনে অবস্থায় দেখতে চাও?
ক্রমশ চুলগুলোকে টানতে– টানতে রিয়ান বলে উঠলো — না,কখনো না, ডাক্তার।
— তাহলে, প্লিজ বাবার কথাটা শুনো।
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে রিয়ান থ হয়ে নিচে বসে যায়।কেননা গত ২ বছর যাবত রিয়ানের বাবা রিয়ানের কাছে একটা আবদারেই শুধু করছে — বাবা বিয়ে কর, বাবা জিবনটাকে নতুন করে শুরু কর। যখনি রিয়ানকে মিষ্টার শামছুল হক এ কথাগুলো বলতো তখনি রিয়ান পাগলের মতো আচরন শুরু করতো, ঘরের জিনিস পএ সব ভেঙে ফেলতো অন্ধকার ঘরে দোর দিয়ে দিনের পর দিন পার করে দিতো।
রিয়ানের চোখের সামনে সেই স্মৃতি গুলো ভেসে আসলো, সাথে আর ও একটা স্মৃতি ও ভেসে আসলো, কয়েকদিন আগে ও মিষ্টার শামছুল হক হঠ্যাৎ রিয়ানের ঘরে ঢুকে অঝোর দ্বারা কেঁদে বলে উঠেছিলো— বাবা আমি যদি মরে ও যাই তাহলে তোর কাছে আমার দাবি ও শেষ ইচ্ছে থাকবে —- তুই নিজের জিবনটাকে নতুন করে শুরু করবি এই ঘর আলো করে একটা লক্ষী বউ ঘরে আনবি।রিয়ানের এই কথাটি মনে পড়তেই ও বুঝে গেলো তার বাবাকে সুস্থ করার মক্ষম উপায়টা কী।
আর এ ও বুঝে গেলো ডাক্তার তাকে কি করতে বলছে।
— কিন্তু ডাক্তার আপনে তো জানেন আমার পক্ষ এটা করা সম্ভব না।
—- আমি জানি, কিন্তু তুমি কি চাও তোমার বাবাকে সুস্হ করতে?
— হুম।
— তাহলে বিয়েটা করে ফেলো।
বিয়ে শব্দটা শুনতেই রিয়ান রাগান্বিত কন্ঠে ডাক্তারকে বলে উঠলো— নো, ডাক্তার,নো আমি এটা কখনো করতে পারবোনা।
ডাক্তার তখন বললো — ও রিয়ান কাম ওন, আমি তো তোমাকে বলি নি তোমার হৃদয়ে অন্য কেউকে স্হান দেও, আমি শুধু বলেছি তোমার বাবার সুখের জন্য একটু অভিনয় কর। কেউকে ২ মাসের বউ হিসাবে ভাড়া কর আন ও।
রিয়ান ডাক্তারের এমন কথায় বলে উঠলো — কিন্তু এমন মেয়ে কোথায় পাবো, যে দুই মাসের জন্য আমার ভাড়াটে বউ হিসেবে অভিনয় করবে?
— আমার কাছে আছে।
— মানে!


— তোমার অতো মানে জানা লাগবেনা, তোমার দুই মাসের ভাড়াটে বউ লাগবে আর মেয়েটার ১ লক্ষ টাকা লাগবে, ব্যস কাহীনি খতম।
আর আমার মনে হয় দু মাসের মধ্য তোমার বাবা সুস্হ হয়ে ও যাবে সো তখন না হয় কোনো একটা অজুহাত দিয়ে তুমি মেয়েটাকে ডির্ভোস দিয়ে দিও ওকে।
রিয়ান ডাক্তারটির কথায় সম্মতি দেয়, কেননা রিয়ান তাকে অনেক বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করে।
কারন এই ডাক্তারটি রিয়ানদের পারিবারিক ডাক্তার। রিয়ান তাকে মামা বলে ও ডাকে, ধরতে গেলে রিয়ানের সাথে তার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মতোই । রিয়ানে সব খারাপ সিশুয়েশনে বন্ধু হিসেবে দুহাতে এই ডাক্তার অথ্যাৎ সাঈফেই, রিয়ানকে আগলে রেখেছে।
আর তাই রিয়ান সাঈফের কথামতো রাইসাকে আজ বিয়ে করছে। চারপাশে লাল- নীল মরিচ বাতি আর আনন্দের উল্লাসে বিয়ে হচ্ছে রিয়ান আর রাইসার। রিয়ানের আত্মীয় – স্বজন সবাই আজ ভীষন খুশী , আর সবথেকে বেশি খুশী মিষ্টার শামছুল হক আর তার বউ কেননা তাদের ধারনা হয়তো তাদের ছেলে আবার আগের মতো স্বাভাবিক জিবন যাপন করবে। আর রাইসার মায়াবী চেহারা, রুপ লাবন্য আর, মৃদু কথা শুনে রিয়ানের বাবা- মা ওকে বউ হিসেবে পেয়ে এতটাই খুশী হয়েছে যে একবার ও ভুল করে ও জিজ্ঞাসা করেনি, ও কোন পরিবারের মেয়ে, ও কতটুকু পড়াশুনা করেছে, কিংবা ওর মা- বাবা কোথায়।
শুধু এক মুখ হাসি নিয়ে প্রানভরে রিয়ানকে আর রাইসাকে দোয়া করে যায়।

আর রিয়ান মা- বাবার মুখে আজ ৩ বছর পর হাসি দেখতে পেয়ে রাইসার সাথে হাসি মুখে দিব্যি অভিনয় করে যাচ্ছে। রাইসা রিয়ানের এই হঠ্যাৎ বদলে যাওয়াটা দেখে নিজেই নিজেকে বলে উঠলো — বাবা, এই হট টেমপারেচার হঠ্যাৎ এমন আইস কুল হলো কেন? কালকেই তো ক্যাফে আমার সাথে এ্যাগ্রিমেন্ট সাইন করার সময় কি গম্ভীর কন্ঠে ভাব নিয়ে কথা বলছিলো — লিসেন আপনাকে বিয়ে করছি শুধু আমার বাবা- মায়ের সুখের জন্য সো একদম আমাকে ভুল করে ও তুমি বলবেন না, মনে রাখবেন জাষ্ট আপনার সাথে আমার ২ মাসের বিয়ে, দুই মাস পর আপনে আপনার পথে আর আমি আমার পথে, আর হ্যা নিজের সীমা একদম অতিক্রম করবেননা, আর ও কত কী ব্লা– ব্লা।
আর এখন আমাকে মিষ্টি করে বলছে — তুমি এই অবস্থায় কমফোর্টেবল ফিল করছো, রাইসা?
যতসব।
রাইসার এই বিড়বিড়িয়ে কথা বলা রিয়ান কিছুটা বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে রাইসাকে বলে উঠলো— হ্যালো আপনে কি কিছু আমাকে বলছেন?
— যাক বাবা একটু আগেই তো আমাকে কী সুন্দর তুমি বলে কী ডং করলেন। এখন আবার আপনে তে চলো গেলেন।
— লিসেন একটু আগে আম্মু – আব্বু এখানে ছিলো বিধায় তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এটা করেছি।
—- ও তাই বলুন এই জন্যইতো বলি হট টেম্পারেচার হঠ্যাৎ আইসকুল হলো কেন ।
রিয়ান কথাটা শুনা মাএই রাগান্বিত কন্ঠে রাইসাকে বলে উঠলো
— এক্সকিউসমি।
রাইসা রিয়ানের চোখ মুখ দেখেই বুঝে ফেললো ও ক্ষেপেছে তাই টপিকটা চেন্জ করার জন্য হাসি মুখে রিয়ানকে বলে উঠলো, আরে দেখুন সবাই আমাদের ছবিও তুলছে ওই দিকে খেয়াল করেন, না হলে বুঝে ফেলবে — কুস তো গড়মিল হে।
— বাচাল।

রিয়ানের বাচাল মন্তব্যটা শুনে রাইসা রাগান্বিত স্বরে রিয়ানকে বলে উঠলো — আপনে কি, হ্যা একটা বক রাক্ষস মুখে একটু ও হাসি নেই, জিবনে কি কখনো হাসতে শিখেননি।
রাইসার এরকম কথায় রিয়ানের হঠ্যাৎ পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো চোখের সামনে চলে আসলো, একটা সময় ছিলো যখন এই মুখে হাসি ছাড়া বিষাদের মেঘ কখনোই ঠাই পেতো না। কিন্তু আজ যে হাসিটা দিয়েছিলো সেই কেড়ে নিয়ে অনেক দূরে চলে গেলো।
রিয়ানের এসব স্মৃতি মনে পড়তেই ও ককর্শ কন্ঠে রাইসাকে বললো — ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট।
কথাটি বলেই জায়গাটি ত্যাগ করে চলে গেলো। রিয়ানের এরুপ আচরন দেখে রাইসা বলে উঠলো — বাবা এতো দেখছি পাগলের পাল্লায় পড়লাম, ভাড়াটে বউ ওকে তোর সাইজ করতেই হবে।
হঠ্যা ৎ রাইসার মনে হলো, পিছন থেকে কেউ একজন তাকে বলছে
— মা, কোনো সমস্যা হয়েছে?
মেয়েলী কন্ঠটা পেয়ে রাইসা পিছনে তাকিয়ে দেখে রিয়ানের মামা রাইসার মাথায় আলতো করে স্পর্শ করে এ কথাটি বলেছে।
রাইসা রিয়ানের মাকে দেখে স্নেহ মাখা কন্ঠে বলে উঠলো— না, কিছু হয়নি মা।
— তাহলে রিয়ান এভাবে চলে গেলো কেন?
— এমনে।
— ও এরুকুমেই ওকে একটু মা আগের জিবনে ফিরিয়ে এনো, তাহলে আমি মা সারাজিবন তোমার কাছে ঋনি থাকবো।
রিয়ানে মা কথাগুলো বলে চোখের জল মুছতে- মুছতে চলে যায়।
রাইসা তখন বলে উঠলো— এই হট টেম্পারেচার কে কিভাবে আমি সামলাবো। আল্লাই জানে।

কাজী চলে এসেছে বিয়ে প্রায় সম্পন্ন, তবে বিয়েটা সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রমশ রিয়ানের চোখে- মুখে মিথ্যে সুখের যে অভিনয় ছিলো তা ক্রমান্বয়ে বিষাদের মেঘের কাছে হার মেনেছে। রিয়ান বারবার রাইসাকে বলতে লাগলো — দেখুন ভাড়াটে বউ, আপনে কিন্তু আপনার সীমা কখনোই ক্রস করবেনা।
রিয়ানের বারবার এই কথাটা য় রাইসা প্রচন্ড রেগে রিয়ানকে বলে উঠলো — আরে মশাই এই কথাটা আর কয়বার বলবেন? লাইফে কত ছেলে দেখেছি, কিন্তু আপনার মতো একটা গাদা ও দেখিনি।
– — হ্যালো।
খালি ভাব দেখায় যতসব।

রিয়ান রাইসাকে কিছু বলার আগেই রিয়ানের চাচাতো বোন মিথিলা দুজনের মাঝে ঢুকে, হাসি মুখে রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বললো—- কি এতো কথা ভাবি, এখনি তোমাদের এই অবস্হা।
মিথিলার এরুপ মজা রিয়ানের একদমেই পছন্দ হচ্ছেনা, গম্ভীর কন্ঠে মিথিলাকে রিয়ান বললো— মিথিলা আমি এসব একদমেই পছন্দ করিনা।
রাইসা তখন রিয়ানকে একটা মুখ বেচকি দিয়ে বলে উঠলো– না, মিথিলা এসব বলোনা, বরং এখানে দাড়িয়ে থেকে কারো শোকে নিরবতা পালন কর।
মিথিলা রাইসার এরুপ কথা শুনে হাসতে থাকে, যেই মাএ রিয়ানের দিকে চোখ পড়ে অমনেই ভয়ে- ভয়ে রিয়ানকে – স্যরি বলে চলে গেলো।
মিথিলা যাওয়া মাএই রিয়ান রাইসার হাতটাকে শক্ত করে ধরে বললো— বেশি বাড় বাড়বেন না হ্যা।
রিয়ান এতটাই জোরে রাইসার হাতটা ধরেছিলো যে রাইসা প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছিলো। এতটাই পাচ্ছিলো যে বাধ্য হয়ে সে রিয়ানকে কাতর স্বরে বলে উঠলো- ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
রিয়ান কথাটি শুনা মাএই হাতটা ছেড়ে চলে যায়। রাইসা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতটা অনেক লাল হয়ে গেছে, প্রচন্ড ব্যাথা করছে। না চাইতে রাইসার চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
—- কি হলো ভাবি?
গলার আওয়াজ পেয়ে রাইসা
পাশে তাকিয়ে দেখে মিথিলা, দাড়িয়ে আছে।
রাইসা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের জলগুলো মুছে ফেললো, এবং একটু মুচকি হাসি দিয়ে মিথিলাকে বললো— কিছু না।
— তাহলে তুমি কাঁদছিলে কেন?
— এমনেই, বাবা- মায়ের কথা একটু মনে পড়েছে।
— থাক ভাবি একদম কাঁদবেনা আর, আর তাছাড়া আজ থেকে আমরাই তো তোমার আপনজন, বড় মাই তো আজ থেকে তোমার মা, আর বড় বাবা তোমার বাবা। আর আমি একমাএ তোমার কিউট বোন।
রাইসা মিথিলার কথাগুলো শুনে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরলো, আর মনে- মনে ভাবলো — সবাই কতো ভালো, শুধু রাক্ষসটাই খারাপ, ওর কীসের এতো কষ্ট, কেনই বশ হঠ্যাৎ করে প্রচুর রেগে যায়।
না, আমাকে জানতেই হবে।
— চলো ভাবি এবার তোমাকে তোমার ঘরে নিয়ে যেতে বলেছে বড় মা।
— হুম।

রাইসাকে নিয়ে মিথিলা ড্রইং রুমে চলে আসে। রাইসাকে রিয়ানের মা দেখে অত্যন্ত আদর মাখা কন্ঠে বলে উঠলো— মা তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে।
রিয়ানের মায়ের কথা শুনে রাইসা বিড়বিড় করে বলে উঠলো — শুধু বক রাক্ষস টাকে নিয়েই সমস্যা হচ্ছে।
–কিছু বললে মা?
— না।
— ও, আচ্ছা রিয়ান কোথায়।
পিছন থেকে রিয়ান তখন বলে উঠলো — এই যে আমি মা।
রিয়ানের ডাক পেয়ে রাইসা পিছনে তাকিয়ে একটা মুখ বেচকি দিয়ে বলে উঠলো — শয়তানকা নাম লিয়া অর শয়তান হাজির।
মিথিলা তখন রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— ভাবি তুমি ভাইয়াকে কি বলোছো আমি কিন্তু শুনে ফেলেছি।
মিথিলার এই কথাটা শুনে রাইসা একটু ভয় পেয়ে যায়, ভয়ে- ভয়ে মিথিলাকে বললো– মানে?
— ভয় পেওনা ভাবি আমি তোমার পক্ষ আছি। এসব দেবদাসকে এগুলো ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
মিথিলা আর রাইসা দুজনেই রিয়ানকে নিয়ে এরুপ মন্তব্য করতে থাকে, আর খিলখিল করে হাসতে থাকে। রাইসা আর মিথিলার হাসি দেখে রিয়ান রাগান্বিত কন্ঠে রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,— আমি কী কোনো জোকার যে আমাকে দেখে এভাবে হাসতে হচ্ছে।
রাইসা রিয়ানের প্রশ্নের উওরে হাসি মুখে বলে উঠলো — হয়তো তাই।
— ইউ।
— কী হচ্ছে এসব এখনি তোমরা জগড়া করবে নাকি, চারপাশে কিন্তু অনেক লোক, সো ভাবি চুপ এন্ড ভাইয়া আপাদত তুমি একটু আইসকুল হওতো।

মিথিলার কথা মতো রিয়ান নিজের রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করে। মিথিলার ভাই অথ্যাৎ রিয়ানের চাচাতো ভাই রাহুল এসে রিয়ানের হাত ধরে বলে উঠলো– আরে ভাইয়া তুমি কী আজকে আমাদের সময় দিবেনা, চলো বাইরে চলো, বাইরে তোমার অনেক ফ্রেন্ড তোমার অপেক্ষা করছে।
— হুম।

রিয়ান চলে যাওয়ার পর রাইসা মিথিলাকে জিজ্ঞাসা করে — আচ্চা তোমার ভাইয়া এমন কেন।
—- আস্তে- আস্তে তুমি সব বুঝতে পারবে ভাবি।
এখন ওপরে তোমার রুমে চলো,
রাইসা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মিথিলার হাত ধরে উপরে যেতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো— আমি কি এই হট টেম্পারেচারকে ঠিক করতে পারবো?

রাইসার মিথিলার সাথে রিয়ানের রুমে যেতেই, অবাক হয়ে যায়। পুরো ঘর যেনো স্বর্গীয়র মতো, ঘরের পশ্চিম পাশে
রাজাদের মতো পালং আর সেই পালংয়ের উপর গোল্ডেন কালারের একটি বিছানা চাদর যেটি রোদের কিংবা তীব্র আলোর স্পর্শে লালচে কালার ধারন করে তার উপরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে একটা লাভ আকা , বিছানাটার চারপাশে রঙ- বেরঙের ফুল, যার গন্ধ আর সৌন্দর্য যে কেউকে ঘরটার প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলবে।
বিছানাটার দক্ষিন পাশে, একটা মস্ত বড় জানালা যা দিয়ে চাঁদেরহাট দেখা যায়। পুরো ঘরে মোট চারটা জানালা, আর চারটা জানালার মধ্যেই লাল পায়ের গোল্ডেন কালারের পর্দা, ঘরের দেওয়ালটায় হালকা ব্লু কালার করা, আর ঘরটার উওর দিকে মস্তবড় এক বারান্দা, যা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যায়।


— কি ভাবি পছন্দ হয়েছে ঘরটা।
— হু, কিন্তু।
— কিন্তু কী?
— না, আসলে আমি এই প্রথম এতো বিলাস বহল ঘর দেখেছি।
— এই টুকু দেখেই তোমার এই অবস্হা। তাহলে বাকি জিবন কী করবে?
— মানে?
— মানে তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে এর চেয়ে আর ও বেশি বিলাসিতা পছন্দ করে। যাইহোক তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও, ভাইয়া কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।

এই কথা বলে মিথিলা চলে যায়।
মিথিলা চলে যাওয়ার পর রাইসা ঘরে ঢুকেই দরজা ভিতর দিয়ে আটকে দেয়।
তারপর মনের আনন্দ গান- গেতে,গেতে পুরো ঘর ঘুরে দেখলো।
— বাহবা, রাক্ষসের দেখি চয়েজ আছে। না, ক্ষেত টাইপের কোনো ছেলের অন্তত ভাড়াটে বউ হয়নি।
এই কথা বলতে- বলতে রাইসা পালংটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেটাকে কাছ থেকে দেখার জন্য তার দিকে যেতেই হঠ্যাৎ তার চোখ পড়লো ঘরের দেওয়াল গুলোর দিকে।
দেওয়ালের দিকে ভালো করে তাকাতেই রাইসার মুখটায় বিষাদের কালো মেঘপুঞ্জ বাসা বাধে, রাইসা দেখতে পেলো রিয়ানের পুরো ঘরের দেওয়াল জুড়ে শুধু একটি মেয়ের ছবি, আর প্রতিটি ছবির নিচ দিয়ে লেখা — এখনো তোমায় ভালোবাসি রিয়া, চলে গেছো তাই বলে কী ভুলে যাবো, এখন ও মাঝরাতে তোমার জন্য বুকটা কেপে উঠে রিয়া ।
রাইসা রিয়ানের এসব কান্ড দেখে সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো— ইশ পাগল ও আবার কাব্য ও লিখে যতসব ডং, কিন্তু এই মেয়েটি কে।সারা ঘর জুড়ে এই মেয়েটির ছবিই বা কেন।
রাইসা যখন এসব চিন্তাভাবনায় মগ্ন ছিলো, ঠিক তখনি রাইসার মনে হলো দরজায় কেউ একজন নক করছে।
দরজার নকের আওয়াজ রাইসার কানে আসতেই রাইসা প্রচন্ড রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো–এই কে?
ওপাশ থেকে ধমক দিয়ে কেউ একজন বলে উঠলো— আমি ?
— আমি কে?

— এই বাচাল মেয়ে দরজা খুল।
রাইসা কথাটি শুনেই বুঝতে পারলো রিয়ান ছাড়া এ আর কেউ নয়।
— ও তাছাড়া এই ঘরটাতো বক রাক্ষসেরেই, সো ওইতো এখন এই ঘরে আসবে।
রাইসা গিয়ে দরজাটা খুললো,খুলতেই দেখতে পেলো রিয়ানের চোখে – মুখে রাগ, রাগ ভাব।রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে রাইসা ভয়ে- ভয়ে বলে উঠলো– হাই সোয়ামি।
— সেটাআপ। এন্ড…
— জানি, এখন আপনে আর কী বলবেন, — ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।
— তো তাছাড়া আর কী বলবো,তুমি আমার ঘরে ঢুকে আমার অনুমতি ছাড়া দরজা লাগিয়েছো সাহস তো তোমার কম নয়।
— সাহসের কী দেখছেন আপনে? হুম আপনে কী জানেন আমি কে?
রিয়ান তখন রাইসার মুখের একদম নিকটে গিয়ে বলে উঠলো– কে আপনে।
— বাবা, এতো দেখছি শুধু হট হয়ে যাচ্ছে,না একে কন্ট্রোল করতেই হবে এই বলে রাইসা খিলখিল করে হাসতে- হাসতে রিয়ানকে বলে উঠলো — হি,হি,, আমি? আমি কেউ না।
— ইউ
— আপনে এতো গরম হোন কেন হ্যা?
যাইহোক এই পুরো ঘরে দেওয়াল জুড়ে এগুলো কার ছবি?
রাইসার এরুপ প্রশ্নে রিয়ানের আচরনের মাঝে একটু পাগলামি ভাব দেখা গেলো,রিয়ান ছবিগুলোর অতি নিকটে গিয়ে একটি ছবির মধ্যে হাত দিয়ে কান্নামাখা কন্ঠে রাইসাকে বলে উঠলো– এ আমার সব, এ আমার ভালোবাসা, ও আমার বউ, ও ছাড়া আমার হৃদয়ে অন্য কারো স্হান নেই আর কখনো হবে ও না,
আর এ কথাটি মাথায় ঢুকিয়ে নিবেন ওকে, আর ভুল করে ও কখনো এই ছবিগুলোকে ট্যাঁস করবেননা।
— যদি ও আপনার বউ হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন? আর তাছাড়া ও ইবা কোথায়।
— সেই কৈফিয়ত আপনার কাছে দিতে আমি বাধ্য নয়। আর তাছাড়া আপনাকে আমি আমার ভাড়াটে বউ হওয়ার জন্য জোর করেনি, আপনার টাকা লাগবে বিধায় আপনে আমার ভাড়াটে বউ হওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন। সো আমার সম্পর্কে কিছু জানার একদম চেষ্টা করবেননা ওকে.।


এই বলে রিয়ান বিছানার দিকে যেতেই দেখে ফুল,দিয়ে পুরো বিছানা সাজানো, ফুল দেখতেই রিয়ান ক্রমশ আর ও বেশি রেগে যায়।
রাইসার কাছে গিয়ে রাইসাকে বলে উঠলো– এই ঘর ফুল দিয়ে কে সাজালো, হ্যা কে সাজালো।
রাইসা রিয়ানের আচরন দেখে খুব বেশি ভয় পেয়ে যায়,ভয়ে- ভয়ে রিয়ানের প্রশ্নের উওর দিলো –; আমি জানিনা।
ওকে ফাইন আজ থেকে জেনো রাখুন –লিসেন, আমি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ফুলকে অপছন্দ করি। আর এসব হয়তো মিথিলার কাজ, যতসব,।

রিয়ান রাইসাকে এই কথা বলে, বিছানার কাছে গিয়ে পুরো বিছানার চারপাশের ফুলগুলোকে ক্রমশ ছিড়ে ফেলে দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো— I don’t like flower.
রাইসা রিয়ানের এরুপ ভয়ংকর আচরনে খুব ভয় পেয়ে যায়,
তারপর ভয়ে- ভয়ে রিয়ানকে থামানোর জন্য ও রিয়ানের কাছে যায় । রিয়ানের কাছে যেতেই রিয়ান ওকে জোরেশোরে একটা ধাক্কা মারে, ফলে রাইসা নিচে পড়ে গিয়ে হাতে প্রচন্ড ভাবে ব্যাথা পায়।
রিয়ান রাইসার ব্যাথাটাকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রিয়ানের এরুপ নিষ্ঠুরতার আচরন দেখে রাইসা খুব বেশি কষ্ট পায় — এতো নিষ্ঠুর কীভাবে একটা মানুষ হয়, ব্যাথা পেয়েছি অথচ একবার ও দেখলোনা। এমন কেন ওনি।
তারপর, রাইসা আস্তে- আস্তে
উঠে দাড়ালো, অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ধীরে-ধীরে বারান্দার কাছে গিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো,আর ভাবলো —
নিচে নিয়ন আলোয় ব্যস্ত শহরের পথগুলো এখন কেমন নির্জন আর এই নির্জনতায় দিনের আলোয় সুখী হওয়া মানুষগুলো এখন একটু- একটু করে নিজেদের কষ্ট গুলোকে আকড়ে ধরবে, আর সাথে কিছু যাযাবর আবেগ আর ক্ষত -বিক্ষত স্মৃতিকে।
— বাহ, বাচাল হলে ও ভালোইতো কথা বলতে পারেন।
— কে?
এই বলে রাইসা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে রিয়ান দাড়িয়ে রয়েছে, একটু অভিমানী কন্ঠে রাইসা তখন বলে উঠলো — ও আপনে, হট টেম্পারেচার।
— আমার উপর অভিমান হয়েছে, কিন্তু তাও আমাকে হট টেম্পারেচার বলাটা গেলো না ?
রাইসা রিয়ানের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে, মুখটাকে নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
রাইসার এই নিরবতা দেখে রিয়ান চুপচাপ অনেকক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটু- আমতাআমতা করে বলে উঠলো — আসলে আমি দুঃখিত তখন আপনাকে ও ভাবে ধাক্কা দেওয়ার জন্য।
রাইসা রিয়ানের এই অপরাধী বোধ দেখে একগাল হাসি দিয়ে সব অভিমানকে আড়ালে রেখে রিয়ানকে বলে উঠলো — হি,হি,কোনো সমস্যা নেই বক রাক্ষস।
–কী?
— না, মানে, রিয়ান সাহেব।
— আপনে তো ভারী অদ্ভুত মেয়ে, একটু আগেই তো দেখলাম একরাশ অভিমান, আর এখন নিমিষেই সব উদাও।
— ও আমি এরকুমেই।
— ওকে ফাইন আমার সাথে আসুন।
এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটি আলতো করে ধরে রাইসাকে বারান্দা থেকে ঘরে বিছানায় নিয়ে বসায়, তারপর — রাইসার হাতের মধ্যে মলম লাগিয়ে দেয়।
—রাইসা রিয়ানের এই কান্ড দেখে নিজেই, নিজেকে বলে উঠলো— কি অদ্ভুত ছেলে, এই গরম, এই আবার ঠান্ডা। এতো অদ্ভুত কেন ওনি।
— কিছু ভাবছেন আপনে?
— ভাবছি কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
— হে মানে?
— মা,মা,মানে আমি বলছি আমি এখন লুডু খেলবো।
— কী?
— আস্তে- আস্তে কানের পর্দাটা তো ফেটে গেলো, আমার।
—বাজে কথা বলা বন্ধ করুন আর ঘুমিয়ে পড়ুন।
এই কথা বলে রিয়ান উঠে দাড়াতেই রাইসা রিয়ানের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো— সব মেয়ে বিয়ের রাতে স্বামীর কাছে চাদ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে, আর স্বামী ও এমনভাবে বউকে চাদ দেখায় যে মনে হয় জিবনে এই প্রথম চাদ দেখেছে, আবার কোনো মেয়ে ছাদে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, আর আমি আপনার ভাড়াটে বউ দেখে আপনার কাছে লুডু খেলার আবদার করেছি আর আপনে তা পূরণ করবেন না?
— না, আমি এসব আলতু- পালতু আবদার পূরণ করিনি।
— কী করবো বলুন আমিই মানুষটাই তো আলতু- পালতু।
রাইসার এমন কথায় রিয়ানের ওর প্রতি একটু মায়া জাগ্রত হয়, তাই রিয়ান সহানুভূতিশীল কন্ঠে রাইসাকে বলে উঠলো— সবেইতো বুঝলাম বাট স্যরি আমার কাছে লুডু নেই।
-ঘুমান।
— আর আপনে কী করবেন? কোথায় ঘুমাবেন, আমার সাথে নাকি।

— আজ্ঞে না, আর কী করবো আমি? মেয়ে মানুষ বিধায় আপনাকে বিছানায় ঘুমোতে দিলাম আর আমি সোফায় গিয়ে ঘুমালাম।
— দূত কার পাল্লায় যে পড়লাম।
রিয়ান রাইসার কথায় কোনো পাওা না দিয়ে সোজা গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। রিয়ানের এই অবস্থা দেখে রাইসা বলে উঠলো — আমি লুডু খেলবই, এই বলে নিজে- নিজে চিল্লাতে লাগলো— চক্কা, হুররে।
— পাচ, পাচ ইয়েস।
রাইসার চক্কা- পাচ চিল্লানিতে রিয়ান সোফায় বসে পড়লো তারপর বলে উঠলো — এই আপনে কী পাগল হয়ে গেছেন, আর লুডুর কোর্ট নেই, চক্কা- পাচ পাইছেন কই।
— হি,হি, মনের ভিতর লুডু কোর্টের ছবি একে খেলছি।
— উফ, প্লিজ দয়া করে আমায় একটু ঘুমোতে দিন।
— ওকে যেহুতো দয়া চেয়েছেন তাই আর কথা বলবোনা।
— ধন্যবাদ।
এই বলে রিয়ান শুয়ে পড়লো।

রাইসা ও আর কোনো কথা বললোনা।
রিয়ানের মনে হলো রাইসা ঘুমিয়ে পড়েছে,
তাই রিয়ান মনে – মনে বলে উঠলো—
যাক বাবা বাচাল ঘুমিয়ে পেরেছে, যাইহোক আমি ও এখন একটু ঘুমাই।
এই বলে রিয়ান ঘুমিয়ে পড়লো।

আদঘন্টা পর রিয়ানের মনে হলো তার মুখের উপর কারো একজনের নিশ্বাস পড়ছে, কেউ একজন তার মুখের একদম নিকটে এসে জোরে- জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে।
এই অনূভুতিতে একটু চমকে গিয়ে রিয়ান চোখ খুলতেই দেখে — রাইসা।
ভয়ে রিয়ান যেই মাএ বসতে যাবে, অমনেই রাইসা রিয়ানকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো।

রিয়ান থাপ্পড়টা খেয়ে কিছুসময় রাইসার পানে তাকিয়ে রইলো তারপর সিংহর মতো গর্জন করে বলে উঠলো — আপনি কী পাগল,
— কে, কে কেন?
— কেন মানে আমাকে থাপ্পড় মেরে আবার কেন বলছেন।
— আসলে কী বলুন তো আমার না, ঘুম না আসলে যাকে সামনে পাই কিংবা আমার আশেপাশে পাই তাকে ইচ্ছেমতো মারতে থাকি।
— আজিব মানুষ তো আপনে,
তো ঘুমান আপনাকে কী কেউ বলেছে রাত জাগতে?
— মানেটা কী? কীভাবে আমি ঘুমোবো।
— কেন চোখ বন্ধ করে ঘুমাবেন।
— আরে আমি সেটা বলিনী, আমি বলছি আপনে তো পুরো বিছানায় ফুল ছিড়ে এক অবস্থা করে রেখেছেন, ও গুলো পরিষ্কার না করলে আমি কিভাবে ঘুমোবো।
— তা পরিষ্কার করে ফেলুন।
— ইশ শখ কত, শুনুন যে ফুল ছিড়েছে তারেই পরিষ্কার করতে হবে।
— মানেটা কী?
— দেখুন, না পরিষ্কার করলে কিন্তু এখন আপনে আর ও একটা থাপ্পড় খাবেন, তখন কিন্তু আমায় দোষ দিতে পারবেননা।
— ওকে ফাইন আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি , বাট আমার একটা শর্ত আছে।
— কী শর্ত।
— বিছানা পরিষ্কার করে দেওয়ার পর এক মিনিট ও দেরি না করে আপনে ঘুমিয়ে যাবেন।
— ঠিক আছে।

রাইসা চুপচাপ বসে থাকে আর,
রিয়ান প্রচন্ড তাড়াতাড়ি করে বিছানাটা পরিষ্কার করে ফেলে।
তারপর রাইসাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো– এই যে ম্যাডাম – পরিষ্কার করে দিয়েছি,এবার দয়া করে গিয়ে একটু ঘুমান,আর আমাকে ও একটু শান্তি দিন।
— কিন্তু স্যার আমার যে ঘুম পাড়ানির গান না শুনলে ঘুম আসেনা।
— সেটাআপ, আপনে কিন্তু এবার আমাকে অতিরিক্ত বিরক্ত করছেন। দেখুন আমার এগুলো একদম পছন্দ না।
— আপনে তো একটা ছাগল, এগুলো আপনার পছন্দ হবে কী করে, যতসব।
এই বলে রাইসা মুখটাকে ভার করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
রিয়ান ও তখন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।
আর অবাক দৃষ্টিতে দেওয়ালের সেই ছবিগুলোর পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ,
তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে— রিয়া কেন আমায় ছেড়ে চলে গেছো আমি যে বড্ড বেশি একা হয়ে গেছি,বড্ড বেশি। রোজ রাতে রিয়ান এক হাতে নিকোটিন আর আরেক হাতে মদের বতল নিয়ে রিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে এরকম নানা কথা বলতে থাকে,কখনো বা চোখগুলো কষ্টের স্পর্শে লাল করে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে এক- একটা রাতকে বেহিসাবেই পার করে দেয় ।
কেননা রিয়ান যখন ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে কিংবা ছবিগুলোর সাথে কথা বলে তখন ওর
মনে হয় ফ্রেমে বন্ধ থাকা ছবিটির মানুষটি ও নিশ্চুপ ভাবে ওর কথাগুলো শুনছে,ওর জন্য কাঁদছে।

আজ ও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি,
সারারাত নির্ঘুম চোখে ছবির পানে তাকিয়ে থাকার কারনে ভোরের দিকে রিয়ানের চোখে একটু ঘুম নেমে আসে।
কিন্তু ঠিক ৫.৩০ হাল্কা পানির স্পর্শে রিয়ানের সেই ঘুমটা ও ভেঙ্গে যায়,
একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে চোখ কচলাতে — কচলাতে তাকাতেই রিয়ান দেখতে পেলো,
রাইসা এক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
—এসব কী?
—- স্যরি, দেখুন
এতো বেলা অবদি মুসলিমজাতির ঘুমোতে নেই, আর তাছাড়া আপনাকে সেই কখন থেকে আমি ডাকছি কিন্তু আপনার কোনো সাড়াশব্দ নেই তাই বাধ্য হয়ে এটা করতে হয়েছে।
এবার দয়া করে যান গিয়ে ওজু করুন তারপর নামাজ পড়তে যান।
রাইসার কথায় রিয়ান কোনো উওর না দিয়ে বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
রিয়ানকে ওয়াশরুমে যেতে দেখে রাইসার চোখে- মুখে আনন্দোৎসব নেমে আসে।
কিন্তু পরক্ষণে তা নিমিষেই আবার মেঘের কাছে হার মানে।
রিয়ান ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি এনে সোজা রাইসার মাথায় ঢেলে দেয়।পানিটা এতোটাই ঠান্ডা ছিলো যে তার স্পর্শে রাইসা কাঁপতে লাগলো। কিন্তু রিয়ান রাইসার কাঁপুনিকে গুরুত্ব না দিয়ে অনায়াসে রাইসাকে বলে উঠলো– ভাড়াটে বউ হিসেবে এসেছেন, ভাড়াটে বউ হয়ে থাকুন, একদম আমার উপর অধিকার ফলাতে চাইবেন না, আর হ্যা ভুল করে ও দ্বিতীয় বার এসব কাজ করার আগে একবার হলে ও ভাববেন যে আপনে কার সাথে এসব করছেন, Understand.

এই বলে,
চোখে – মুখে একরাশ রাগ নিয়ে,
রিয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর রাইসা রিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে -, তারপর চোখ থেকে এক ফোটা বৃষ্টি জড়িয়ে বলে উঠলো — আসলে পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত, এদের চেনা বড় দায়। এরা যখন – তখন বদলে যেতে পারে, যখন, তখন।
এই বলে রাইসা অঝোর দ্বারা কাঁদতে লাগলো, কিন্তু পরক্ষনে রাইসার কান্নাটা হঠ্যাৎ বন্ধ হয়ে যায় একটা কথাই ভেবে– আসলে আমাদের উচিত মানুষের বদলে যাওয়াটা না দেখে তার বদলে যাওয়ার কারনটা খোজা। আর আজ থেকে সেটাই আমি করবো।

চোখের জলগুলোকে মুছে মুখে একগাল হাসি নিয়ে রাইসা লাকেজ থেকে জামা- কাপড় বের করলো,
মেরুন কালারের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে।
তারপর নামাজ পড়ে, পুরো ঘরটাকে পরিপাটি করে সাজাতে শুরু করলো, আলমারিতে তাকের একপাশে নিজের জামাকাপড়গুলো, অন্যপাশে রিয়ানের শার্ট- প্যান্ট গোছাতে লাগলো, হঠ্যাৎ রাইসার চোখে পড়লো রিয়ানের শার্ট- প্যান্টের নিচে তিনটে মদের বতল।
বতলগুলো পেয়ে রাইসা অবাকদৃষ্টিতে বতলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর নিজেই নিজেকে বলে উঠলো– মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরাজীব, অথচ এই সম্মান পাওয়ার পর ও এরা সামান্য কষ্টতে কেন এভাবে ভেঙ্গে পড়ে, ক্রমশ নিজেকে কেন এভাবে শেষ করে দেয়, কিন্তু একবার কী তাদের মাথায় এটা আসেনা যে— জিবন মানে সমস্ত সিশুয়েশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, জিবন মানেই এক- একটা আঘাত থেকে নতুন করে শিক্ষা নেওয়া।
না, এই ভাবে শেষ হতে আমি আপনাকে দিবোনা রিয়ান সাহেব, এই বলে রাইসা মদের বতলগুলো আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলে।

— ভাবি, ভাবি।
— কে?
— আমি।
— ও মিথিলা এসো ভিতরে এসো।
মিথিলা ঘরে ঢুকতেই একগাল হাসি নিয়ে রাইসাকে বলে উঠলো– ভাবি প্রথমদিনেই তো তুমি বাজিমাত করে ফেলেছো।
— মানে?

— ভাবি তুমি আবার মানে জানতে চাও, তুমি জানো ভাইয়া আজকে ভোরে বড় বাবার সাথে ফজরের নামাজ পড়তে গেছে।
— কী বলছো তুমি এসব?
— হ্যা ভাবি আমি ঠিকেই বলছি, কেননা আমি নিজ চোখে দেখেছি ভাইয়া টুপি পড়ে বড় বাবার সাথে মসজিদে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে। আজ এতো বছর পর এই প্রথম আমি আবার বড় বাবাকে হাসতে দেখেছি, ভাবি এতো ভালো একটা কাজ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।
— এই মিথিলা তুমি সত্যি বলছো তো?
— হুম কেন ভাবি।
–আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না এই তুমি আমাকে একটা চিমটি কাটোতো।
— ওকে ফাইন।
এই বলে মিথিলা মুচকি হাসতে- হাসতে রাইসাকে ইচ্ছে করে জোড়েশোরে একটা চিমটি মারে।
চিমটিটা খেয়ে রাইসা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে — উহ! মিথিলা চিমটি দিতে বলেছি বলে এতো জোরে দিবে।
— স্যরি ভাবি।
কিন্তু রাইসা মিথিলার স্যরি কথাটি না শুনে আনমনে চিন্তা করতে লাগলো— সেই তো নামাজ পড়তে গেলো তাহলে আমার সাথে কেন এমন আচরন করলো?
আসলে পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের কষ্ট, অনুভূতি আর নিজের ভিতরের আসল মানুষটাকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখে, সেই মানুষ গুলোকে চেনা ও বড় দায়।
এই মানুষটা ও বোধ হয় তাদের তালিকার একজন হবে।
রাইসার এরুপ রোবটের মতো দাড়িয়ে চিন্তার জগতে মগ্ন থাকতে দেখে মিথিলা একটু বিরক্তিকরভাব নিয়ে রাইসার হাত স্পর্শ করে বলে উঠলো — কী এতো ভাবছো ভাবি।
— না কিছুনা।
— ও
এই বলে মিথিলা নিজের হাতটা গুটিয়ে নিতে ব্যস্ত হতেই হঠ্যাৎ ওর মনে হলো রাইসার শরীরটা কেমন জানি গরম হয়ে আসছে, একটু অবাক কন্ঠে মিথিলা রাইসাকে বললো— ভাবি তোমার শরীর দেখি গরম হয়ে আসছে।
রাইসা মিথিলার কথা ঘুরানোর জন্য হাসিমাখা কন্ঠে বলে উঠলো— আরে আমার ননদিনী ও কিছুনা। এখন তুমি বল এতো সকালে আমার ঘরে কেন আসছো।


মিথিলাও তখন রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো–তোমাকে নিচে মা, বড় মা ডাকছে চলো। আর তাছাড়া কতক্ষন পর পাড়ার লোকজন আসবে তোমায় দেখতে।
— আমায় দেখতে, কিন্তু কেন?
— বা রে তুমি আমার ভাইয়ের বউ, এ পাড়ার সব থেকে ধনী শামছুল হক সাহেবের একমাএ পুএ রিয়ান হকের বউ, তো তোমাকে দেখতে আসবে না কি আমাকে দেখতে আসবে, আর তাছাড়া তুমি নতুন বউ না, সবাই দেখবে না আমার ভাবিটা কত সুন্দর।
মিথিলার কথায় রাইসা একটু অন্যমনস্ক হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো– নতুন বউ, ভাবি, সবকিছু শুধুমাএ দুই মাসের জন্য। দুই মাস পর সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, সবকিছু।
— ভাবি তুমি কিছু বললে?
— হ্যা, না মা,মানে আমি বলেছি, তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
— হুম যাবো কিন্তু এখন না।
— কেন?
–কারন তোমাকে তো এখন ও আমি সাজালামেই না, বড় মা বলেছে তোমাকে অনেক সুন্দর করে সাজাতে।
— এতো সাজ দিয়ে কী হবে।
— বারে আমার ভাইয়াকে তোমার প্রেম ফাঁসাতে হবেনা।
রাইসা মিথিলার কথাটার কোনো উওর না দিয়ে অট্টহাসি দিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে রইলো।
—- ভাবি তুমি ঘরে বসো আমি একটু আসছি।
— কোথায় যাচ্ছ?
— এসে বলবো, জাস্ট পাচমিনিট আর হ্যা ভাবি এই পাচমিনিট তুমি একদম চুপটি করে এখানে দাড়িয়ে থেকো।
এই বলে মিথিলা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

আর রাইসা অন্যমনস্ক হয়ে বিছানার উপর বসে ভাবতে লাগলো— আমি কী এদের ঠকাচ্ছি, এরা যখন জানতে পারবে আমি দুই মাসের ভাড়া করা বউ, দুই মাস পর নিজের ঠিকানায় চলে যাবো তখন এরা কী করবে। আর , আর হয়তো অনেক কষ্ট ও পাবে। কিন্তু আমিই বা কী করতে পারি। আমি যা করছি সব তো…..
— আসবো।
রাইসা একটু চমকে বলে উঠলো— কে?
রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে ভদ্র ছেলের মতো রুমে ঢুকে যায়। রাইসা রিয়ানকে দেখতে পেয়ে বিছানার বালিশগুলোকে ঠিক করতে লাগলো।
রিয়ান ও দাড়িয়ে রাইসার বালিশ ঠিক করার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রিয়ানের এভাবে অসহায়ত্ব ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাইসা বালিশ ঘুচিয়ে একটু শান্ত কন্ঠে রিয়ানকে বললো — আপনে কী কিছু বলতে চান?
— না, মা, মা মানে?
— কী এতো আমতা – আমতা করছেন। কী বলবেন বলে ফেলুন এই বলে রাইসা বিছানাটা ঝারতে লাগলো ।
রিয়ান তখন আস্তে- আস্তে রাইসার কাছে এসে বলে উঠলো— হাতটা পাতুন দেখি।
রিয়ানের এমন কথা শুনে রাইসা বিছানা ঝারা বন্ধ করে বলে উঠলো— কেন?
— আরে পাতুন না।
— ওকে।
একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে রাইসা হাত পাততেই রিয়ান রাইসার হাতে এক পাতা প্যারাসিট্যামল দিয়ে প্রচন্ড রাগী মাখা কন্ঠে বলে উঠলো— এই নিন আগেভাগেই এখান থেকে ঔষুধ খেয়ে ফেলুন কারন বলা যায় না সকালের পানিগুলো অনেক ঠান্ডা ছিলো ওগুলোর স্পর্শতার কারনে আবার জ্বর না চলে আসে তখন কিন্তু আবার সব দোষ তো আমার ঘাড়ে এসেই পড়বে। নিন খেয়ে নিন।
এই বলে রিয়ান নিজের আবেগটাকে লুকানোর জন্য রাইসার থেকে এক প্রকার পালিয়ে চলে যেতে লাগলো, ঠিক তখনি রাইসা একটু হেসে রিয়ানকে বলে উঠলো — অল্প জ্বরকেই যদি সহ্য করতে না পারি তাহলে জিবনের ঝড়কে কীভাবে face করবো। আর তাছাড়া অসুস্থ না হলে বুঝবেন কী করে একজন অসুস্থ মানুষের কতটা কষ্ট।
রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান থমকে গিয়ে রাইসাকে আচমকা কন্ঠে বলে উঠলো— মানে?
— মানে! আপনে বোধ হয় লাইফে কখনো crisis face করেননি কী তাইনা?
—- তা বলতে পারেন এক প্রকার হ্যা, আসলে ছোটবেলা থেকে মা — বাবার ছায়ার নিচে থেকে মানুষ হয়েছি তো , এর জন্য কখনো রিয়েল লাইফের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
— এর জন্যই এই অবস্থা। কিন্তু কী জানেন আমি face করেছি, প্রতিদিন সত্যিকারের বাস্তবতাকে, নিজের চোখের সামনে দেখেছি মর্গে একসাথে স্বামী, ছেলে, মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে ও দেখে একটি মেয়ে দমে যায়নি, জিবনটাকে নতুন করে শুরু করেছে, আমি দেখেছি রোজ চাকরী খুজতে যাওয়া বেকার সেই ছেলেটি যে একদিন হঠ্যাৎ করে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে নিজের পা টাকে হারিয়ে ফেলে তবুও জিবনের কাছে হার মানে নি।
আমি দেখেছি প্রতিদিন শকুনদের কাছে নিজেকে শপে দেওয়া অসতী পাড়ার সেই মেয়েটি যে নিজের শরীরের বিনিময় মা- বাবা , সংসারের আর বোনের পড়ার খরচ চালায়, অথচ এতোকিছুর পর ও একটিবারের জন্য ও আত্মহত্যা নামক পাপের কথা ভুল করে ও চিনতে করেনা।
রাইসার কথাগুলো শুনে রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে রাইসার পানে তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে উঠে —- আমার অনেক কাজ আছে আমি আসি।
রাইসা ও রিয়ানকে কোনো বাধা দিলোনা, কেননা রাইসা বুঝতে পেরেছে — এই মানুষটি প্রত্যহ নিজের থেকে, নিজের কাছের মানুষগুলোকে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হয়তো একদিন এই পালানোর সমাপ্ত হবে।
— শুনুন একটা কথা ছিলো?
গলার আওয়াজটি পেয়ে রাইসা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে রিয়ান দাড়িয়ে রয়েছে।
( চলবে)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত