অমর প্রেম

অমর প্রেম

এভাবে সম্ভব নয় বাবু।মিমি আর আমি একসাথে কিছুতেই এ বাড়িতে থাকতে পারবো না। হয় মিমি নয়তো আমি।যেকোনো একজন কে বেছে নিতে হবেই তোমাকে।”

—” না,মা এটা হয় না।মিমি কে আমি ছাড়তে পারি না। একটু বোঝো।ওকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।” মা কে হাত জোড় করে বললাম আমি।কিন্তু কে শোনে

কার কথা।মিমির সাথে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না মা এর।মিমি থাকলে মা নাকি বাড়ি ছেড়েই চলে যাবে।কি করে মা কে বোঝাই ও আমার ঠিক কোথায় আছে?

আমি অর্পণ রায়।কেয়ার অফ ডক্টর অভিজিৎ রায়। মাতা সুমিতা রায়।আমার পিতৃদেব শ্রী অভিজিৎ রায় একজন সহৃদয় চিকিৎসক।মাতা একজন স্কুল শিক্ষিকা।আমি

বেকার এক যুবক।পড়াশুনার গণ্ডি টা গতবছর সমাপ্ত করে বাবা মা কতৃক চালিত হোটেলে নিশ্চিন্তে খাওয়াদাওয়া ও নিশিযাপনের কাজটা সম্পন্ন করি।এ হেন ছেলের

ব্যক্তিগত কাউকে ভালোলাগা অথবা তাকে নিজের কাছে রাখতে চাওয়াটা বাতুলতা।কিন্তু মিমি কে তো আমি ছাড়তে পারি না।ও বাড়িতে আসার পর থেকে বাড়িতে

অশান্তি।কিছু করার ছিলনা।মিমির বাবা মা কেউ নেই।এক পিশাচের বাড়িতে ও ছিল।যারা ওকে ঠিক মতো দুমুঠো খেতে দেওয়া তো দুর। মারধোর করতেও ছাড়তো না।

সেই নরপিশাচের হাত থেকে কার্যত মুক্ত করে নিজের কাছে নিয়ে আসি।কিন্তু দুঃখের কথা কি বলবো বলুন? মা বাবাও ওকে মেনে নিল না।ওর আর আমার মধ্যে যে

অপার ভালোবাসার এক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে সেটা কেউ বুঝলো না।একদিন ভুলবশতঃ মিমির জন্য আমাদের বাড়ির ফুলদানি টা পড়ে ভেঙ্গে যায়।মা এমন করে তেড়ে

এলো যে মিমি কে পেলে খুন করে ফেলবেন।আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওকে বাঁচাই।কি বলবো বলুন? মিমি যে আমার কতখানি সেটা মা বাবাকে কে বোঝাবে?

এই তো সেদিন আমি টিউশান পড়িয়ে ফেরার পর ঘরে আসলাম।মিমি ও এলো।সেদিন ওকে আমি কোলে তুলে নিয়ে একটু আদর করতে গেছিলাম।দরজা টা খোলা

ছিল খেয়াল করিনি।মা ঘরে চলে আসেন।মিমি লজ্জায় দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মা এমন অশান্তি শুরু করেন যেন আমার ফাঁসি কার্যকর হতেই হবে।নিদেনপক্ষে

কারাবাস।

মিমি কে মা রান্নাঘরে অবদি ঢুকতে দেয়না।বাবা সেরকম কিছু বলেননা।কিন্তু বুঝতে পারি আমার আর মিমির সম্পর্কটা বাবা মেনে নেননি।আমি মিমি কে ছাড়া

ফনিহারা মনি।এই কদিনে ও আমার মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে সেটা কিছুতেই বোঝাতে পারি না মা বাবাকে।মিমি আমার সাথে থাকে,আমার সাথে খায়।

তবু মা বাবার কি সমস্যা বুঝি না।আমি যখন বাড়ি থাকি না ও যে কি করে তাই জানি না।যখন মা বাংলা সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত থাকেন তখন ও মা এর ঘরে গিয়েছিল

একদিন।মা এমন ব্যবহার করেছেন যে ও আর কখনো যায় না।আমি ঘরে ঢুকলে তবেই ঘরে ঢোকে।আমি যতটা পারি ওকে আগলে রাখি। কিন্তু মা জেদ ধরলেন মিমির

সাথে থাকা সম্ভব নয়।

ওকে কেউ সহ্য করতে পারছে না,বলা ভালো আমাদের সম্পর্ক টা কেউ মেনে নিচ্ছে না।একজন মেয়ে হওয়া সত্বেও ওকে মা বোঝে না।আমার খুব কষ্ট হয়।কেন

মিমিকে মা বাবা মেনে নিল না? বাবা পছন্দ করে কাউকে আনলে তাকে মেনে নিতে অসুবিধা হতো না।আমি রাস্তা থেকে তুলে এনেছি বলেই কি এত বাঁধা?

ওকে যে কেউ পছন্দ করছে না মিমি ও বুঝতে পারে।আমি বাড়ি ফিরলে ওর অভিমান গুলো পড়ার চেষ্টা করি।কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে

দেখি মিমি কোথাও নেই।ঘরের দরজা টা খোলা।আমি কি রাতে দরজা খুলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম? নাকি লক করিনি,মা সকালে খুলেছে!বারান্দা,রান্নাঘর কোথাও মিমি

নেই।মাকে জিজ্ঞাসা করলাম,” মা মিমি কোথায়?”মা সোজাসুজি বললেন, ওর খোঁজ রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না।আমি পাগলের মতো হয়ে গেলাম।কি করবো?

কোথায় খুজবো ওকে? ওর একটা ফটোও নেই আমার কাছে।দিশেহারা উন্মত্তের মতো ওকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকলাম।কোথাও নেই।মিমি,মিমি……….ওর নাম ধরে

ডাকতে লাগলাম।ওর চেহারার বিবরণ দিয়ে রাস্তায় সবাই কে জিজ্ঞাসা করলাম।কেউ বলতে পারলো না।দিশেহারা হয়ে বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকলাম।দরজা বন্ধ করে

আনমনা হয়ে বসে পড়লাম।না,এ বাড়িতে আমি ও থাকবো না। আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব নয়।মিমি ছাড়া আমি কিছুতেই……..

ভাবনায় ছেদ পড়ল।মিমির গলা পেলাম মনে হলো।খুব কাছেই পেলাম। হ্যাঁ,ঠিক শুনেছি,।ঘরের বাইরে।ও কি তাহলে ফিরে এলো? দরজা তো বন্ধ।ছুটে গিয়ে দরজা টা

খুললাম।খুলেই দেখি মিমি দাঁড়িয়ে।ও যায়নি আমকে ছেড়ে।ও আবার ফিরে এসেছে।আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম।মিমিকে কোলে তুলে নিলাম।স্নেহবন্ধনে আবদ্ধ

হয়ে মিমি ও চোখ বন্ধ করলো।আমার মুখে ভাষা নেই।শুধু মিমি ই ওর চেনা স্বরে বলে উঠলো,”মিয়াও”।।

………………………………………..(সমাপ্ত)…………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত