ভালোবাসার অনুভূতি

ভালোবাসার অনুভূতি

নিয়াজ সাহেব তার ড্রয়ার থেকে চেকবই বের করে টাকার ঘরে চার লক্ষ টাকা লিখলেন, এরপর স্বাক্ষর করলেন। কেন জানি স্বাক্ষর করতে গিয়ে তার হাতটা কাপছিলো আর চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছিলো। যেই হেনা আপুর প্রেমে ওর কিশোর বয়স টা কেটেছে, তার চিকিৎসায় সাহায্য করতে গিয়ে অমন অনুভূতি হয়তো স্বাভাবিকই ছিল।
সে প্রায় ২৮ বছর আগের ঘটনা। নিয়াজ সাহেবের বয়স তখন ১৭ হবে। তাদের পাশের বাড়িটিই ছিল হেনা আপুদের। হেনা আপুর বয়স তখন ২৩/২৪ হবে। বয়স বলুন আর ফ্যান্টাসি বলুন, কোনো এক অজানা কারনে নিয়াজ তার চেয়ে ৭ বছরের বড় হেনা আপুর প্রেমে পড়লেন। হেনা আপু ছাড়া অন্য সব মেয়েদেরকে তার কাছে কাজের মেয়ে মনে হত। বিভিন্ন অজুহাতে তিনি হেনা আপুকে দেখতে তাদের বাড়ি যেতেন। হেনা আপুর পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করতেন। হেনা আপুও নিয়াজ কে বেশ আদর করতেন। নিয়াজ একদিন সাহস করে হেনা আপুকে “Love you” বলে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ঠিক পরের দিন হেনা আপু ওকে ডেকে বললেন, “বোকা ছেলে আমি তো তোর অনেক বড়, তাছাড়া তুই দেখতে অনেক সুন্দর। আমার চেয়ে অনেক সুন্দরী বৌ পাবি তুই। আর তোর বয়সটাই এমন যে এখন যে কাউকে ভাল লাগতে পারে। তুই এগুলো নিয়ে ভাবিস না। আর আমিতো আছিই তোর বন্ধু হিসেবে”
কিন্তু নিয়াজ বুঝলো না। ওর মনে হেনা আপু এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, আপুর বিয়ের দিন তার হবু জামাই কে ছুড়ি দিয়ে মারতে তাড়া করেছিল ও। পরে যদিও এ কারনে দুদিন কারাগারেও ছিল। হেনা আপুর অনুরোধেই ওকে জেল থেকে ছাড়ানো হয়েছিল। এরপর ওর বাবা মা ওকে ঢাকায় বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অবশ্য লজ্জায় আর কখনো নিয়াজ গ্রামে আসেনি, আর হেনা আপুর সামনেও দাঁড়ায়নি।
সময়ের পরিক্রমায় নিয়াজ সাহেব আজ দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। তার গ্রামের লোকজন সব ধরনের সাহায্যের জন্য তার কাছেই ঢাকাতে ছুটে আসে। নিয়াজ সাহেবও সবাইকে সাহায্য করেন। তেমনই সাহায্যের জন্য হেনা আপুর ছোট বোন আর মা এসেছেন। তাদের কাছ থেকেই নিয়াজ সাহেব জেনেছেন হেনা আপু আজ বিধবা এবং তার দুটি কিডনিই নষ্ট। চিকিৎসার জন্য ঢাকায়ই একটা ক্লিনিকে ভর্তি আছেন উনি। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্যই আর্থিক সাহায্য দরকার।
নিয়াজ সাহেব চার লক্ষ টাকার চেকটা হেনা আপুর মায়ের হাতে দিয়ে বললেন “এটা রাখুন, আর চিকিৎসার বাকী দায়দায়িত্ব ও আমি নিলাম, ইনশাআল্লাহ উনি সুস্থ হয়ে যাবেন”
নিয়াজ সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন বিকেলে হেনা আপুকে দেখতে যাবেন। সে উদ্দেশ্যে অফিস থেকে বেড়িয়ে একটা ফুলের তোড়া এবং বেশ কিছু ফলমূল কিনে ক্লিনিকের পথে গাড়ি ছোটালেন। যেভাবেই হোক আজ উনি হেনা আপুর সামনে দাঁড়াবেনই।
নিয়াজ সাহেব অনুভব করছিলেন হেনা আপুর প্রতি সেই ২৮ বছর আগের অনুভূতি গুলো কোনো এক অদ্ভুত কারনে এখনো জীবিতই আছে।


#নোট_ : পৃথিবীতে যদি রহস্য বলতে কিছু থেকেই থাকে, সেটা হলো প্রথম প্রেম কিংবা ভালোলাগার অনুভূতি গুলো। হোক না সে প্রেম কিংবা ভালবাসা একপাক্ষিক। সেই প্রেম কিংবা ভালোলাগার বেহায়া অনুভূতিগুলো মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই এবং তখনই আপনি আপনার হৃদয়ের উপর নিয়ন্ত্রন হারাবেন।
এজন্যই হয়তো বলে, ভালবাসলে একবারই বাসুন। কারন দ্বিতীবারের অনুভূতি গুলো কখনোই প্রথমবারের চেয়ে সেরা হয়না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত