আজ আমার বিয়ে হয়েছে। ব্যাপার টা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে,বর আমার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোট।কমপক্ষে ৭ বছর তো হবেই। সে কিছুতেই বিয়েটা করতে রাজি হয়নি।অনেক টা বাধ্য হয়েই রাজি হলো।ছেলেটার মুখের ভঙ্গী দেখেই আমার হাসি পাচ্ছে! আসলে ব্যাপার টা এরকম, আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেখতে দেখতে অনেক বছর চলে গেলো কিন্তু বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।
আজ এত বছর পর শেষ বয়সে এসে বিয়ে করলাম তাও আমার চেয়ে বছর ছয়েক ছোট ছেলেকে।কিংবা তার চেয়েও বেশি হবে। আমি ডাক্তার হয়েছি বহু বছর হলো।এখন আমার নিজেরি একটা ক্লিনিক আছে।এই ছেলেটার ডাক্তারি পড়ার খুব শখ কিন্তু টাকার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বসেছিল।আমার অবশ্য ওকে ভীষণ ভালো লাগে।কিউটের ডিব্বা টাইপ চেহারা একদম! তাই সুযোগ বুঝে কোপ মারলাম। সরাসরি তাকে প্রস্তাব দিলাম আমাকে বিয়ে করবে কিনা? সে প্রথম দিকে রাজি হয়নি।
আমার শ্বশুর মশাই রাজি করিয়েছে তাকে।আমি তার পড়াশুনার দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি তার ছোট ভাইকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এ ঢুকিয়ে দিলাম নগদ টাকা দিয়ে।বেচারা বিয়ে না করে যায় কই? বাসর ঘরে বসে বসে অট্টহাসি দিচ্ছিলাম। আজ ওর মন টা বহুত খারাপ! পিচ্চির সাথে প্রথম কথা কি বলবো তাই ভেবে আমার দাত ফাটানো হাসি আসছে।সে কি আমাকে শ্রদ্ধা করবে,ভয় করবে? নাকি আমাকে রেখে পালাবে? অন্যথায় আমাকে খুন করে সব সম্পত্তি দখল করবে? হা হা হা… ও হো হো হো… . – কি ব্যাপার? এত হাসছো কেন তুমি!
আমি চমকে উঠে তাকালাম।আমার বর এসেছে! ভেবেছিলাম সে আমাকে আপনি করে বলবে।ধারণা ভূল,সে পরিষ্কার তুমি করে বলছে! এর আগে তার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে,সে আপনি ই বলেছিল।আজ তুমি! বাব্বাহ! ভালো তোহ! . – হাসছো কেন? – তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে! – তাতে হাসির কি হলো? তোমাকে ও সুন্দর দেখাচ্ছে।কই আমিতো হাসছি না। – আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে কিন্তু মিষ্টি দেখাচ্ছে না।তাই হাসছো না। বলেই আবারো হাহা হিহি শুরু করলাম। ইফতি বলল,তুমি অনেক ক্ষণ ধরেই হাসছো।কিন্তু কেন? – এই যে তুমি বুড়ি মহিলাকে বিয়া করে ফেল্লা।জাস্ট লাইক এ ইন্টেলিজেন্ট বয়।আমি আর কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাবো। দেন ইউ ক্যান ম্যারি এগেইন।এন্ড আই থিংক, ইউ হ্যাভ…. হা হা হা.. ও হো হো হো….. ইফতি হা করে তাকিয়ে আছে।হয়ত ভাবছে, এই মহিলার মাথায় প্রব্লেম আছে নাকি?
আমি বললাম, be easy my dear.. be easy.. – আই এ্যাম পারফেক্টলি ইজি।তুমি হাসো যতক্ষণ মন চায়। কথাটা বলেই ইফতি রুমের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলল,বাড়িটা সুন্দর! এর আগে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখিনি। – হুম।কিন্তু বেশি না,মাত্র ২ কোটি টাকার বাড়ি। – নিজে ইনকাম করে করেছো তাইনা? – হ্যা।আমার কষ্টের টাকায় গড়া বাড়ি এটা। – বাড়ি গাড়ি,ক্লিনিক সবই করেছ।বিয়েটা করোনি কেন আগে? – সবকিছু করে তারপর বিয়ে করবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। সবকিছু করতে গিয়ে বয়স অনেক হলো।কিন্তু অপূর্ণতা একটাই,বিয়ে করিনি।আজ পূর্ণ হলাম। – আচ্ছা তোমার তো অনেক খ্যাতি এখন। তুমি যে কাউকে প্রপোজাল দিলে সে রাজি হতো।বাট করোনি কেন? – তোমাকে বিয়ে করবো বলে।হা হা হা… ও হো হো হো.. – স্ট্রেঞ্জ!! – হুম।
আমি ইফতির পাশে এসে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম,কফি খাবা? – শিউর।নিয়ে আসো। . এরপর কফি নিয়ে বসলাম।ইফতি আমার সামনে ই বসলো।আমার তো একদম ই হাসি থামছে না। ইফতি নিজেই বলল,ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলতেই পারবো না।কিন্তু বিয়েটা হওয়ার পর থেকেই কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা পূর্ব পরিচিত। – হুম।এটাই তো কবুলের শক্তি। – আমি কি তোমাকে আপু ডাকবো? – হা হা হা.. ও হো হো হো.. – হাসছ যে! বয়সে তুমি আমার ৮ বছর ৮ মাস ১৭ দিনের সিনিয়র। – সিরিয়াসলি! – ইয়াহ, – কাউন্ট করা হয়ে গেছে? ইহাহা ইহাহা.. – দ্যাখো মিশু আপু।এভাবে হাসবে না।এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। – ও হা হা হা।আমি কি অভদ্রের মত হাসছি? আই এম লাফিং লাইক এন অভদ্র! ইহাহা ইহাহা… কথাটা বলেই উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক বার লাফালাম। ইফতি বলল,কি হচ্ছে এটা? – আই এম লাফিং.. এবার ইফতি ও হেসে উঠল। আমি হাসতে হাসতে হাফিয়ে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম। – কেমন যেন লাগছে মিশু আপু.. – আন ইজি? – না… জীবনে প্রথম বার বিয়ে তো তাই। – বিয়ে কয়বার হয় ইফু? – হা হা.. তুমি খুব ফানি। – হুম।আমার পেশেন্ট রা আমার কথা শুনে হেসেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়।
– wow! you are great! – thanks darling! বলেই আবারো হেসে উঠলাম। কফি খাওয়া শেষ করে কফির গ্লাস টা অব্দি খেয়ে ফেললাম।ইফতি অবাক হয়ে বলল,মিশুপু! তুমি কি মানুষ! – কেন পিচ্চি! চোখ বড় বড় করেছো কেন? – কফির গ্লাস তুমি খেয়ে ফেল্লা! কিভাবে সম্ভব! – ওহ,এই গ্লাস টা আসলে সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে তৈরী।এটা খাওয়া যায়।খেতেও সুস্বাদু আর শরীরের জন্য ও ভালো! বলেই ইয়া বড় ঢেকুর তুললাম। ইফতি অবাক হয়েই বলল,তুমি!
অদ্ভুত! – কিটক্যাট খাবা? – চকোলেট? – হুম।এই নাও.. বলেই চকোলেট এগিয়ে দিলাম। বাসর রাত জমে উঠেছে। আমার পিচ্চি বর চকোলেট খাচ্ছে আর আমি হাসছি! কি অদ্ভুত সুন্দর বাসর আমাদের!! . ইফতি বলল,শুনেছি তুমি খুব সংগ্রাম করে আজ এতদূর অব্দি পৌছেছ? আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। সত্যিই অনেক সংগ্রাম করেছি এ জীবনে! বলবো,সবই বলবো।
ইফতি অবাক হওয়ার ভঙ্গী তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হাসি চেপে রাখতে পারছি না।হাসতে হাসতেই বললাম,ইফতি তুমি কি আমাকে খুন করবা?
ইফতির চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়! অবাক হয়ে বলল,
– খুন করবো! কি বলছো এসব? আমি কেন তোমাকে খুন করতে যাবো?
– বয়স্ক মহিলা বলে।যদি খুন করে ফেলো!
– মিশুপু তুমি কি আমার সাথে রসিকতা করছো? এরকম রসিকতা করবে না।কারণ আমি কিন্তু তোমার চেয়েও রসিক।পরে সমস্যা হবে।
আমি হেসে বললাম,বাহ বাহ! দারুণ দারুণ!! কেয়া বাত হ্যায়!
বলেই আবারো অট্টহাসি শুরু করে দিলাম।আমার কখনো এমন হয়না।আজ হঠাৎ এত হাসি আসছে কেন বুঝতে পারছি না।
.
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। ইফতি ই প্রথমে কথা বলল,
– আপু,একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– আমি তোমার ওয়াইফ। সো,ডোন্ট কল মি আপু।ওকে?
– তুমি তো আমার সিনিয়র।
– সো হোয়াট? বাংলার প্রতিটা ঘরেই স্বামীরা স্ত্রীর চেয়ে সিনিয়র। তাই বলে কি বউরা তাদের স্বামীকে ভাইজান বলে ডাকে?
ইফতি কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।তারপর ফিক করে হেসে ফেললো।
আমি বললাম,নিজের বউয়ের সাথে যেভাবে মিশতে,আমার সাথেও সেভাবে ই মিশতে পারো।আমি তো একটা মেয়ে তাইনা? বয়স কোনো ফ্যাক্ট না।
– হুম।আমারো বড়াপুদের প্রতি দূর্বলতা আছে।
– ইহাহা ইহাহা..
আমি প্রাণ খুলে দাত ফাটানো হাসি দিচ্ছি।আমার পিচ্চি বরটা রসিক বটে!!
ইফতি চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার হাসি দেখছে নিশ্চয় ই! আমিও রসিকতা করে বললাম,আমার হাসি দেখছো? দ্যাখো দ্যাখো। আমি হাসলে আমাকে নুসরাত ফারিয়ার মত লাগে!
– ওহ নো।নুসরাত ফারিয়াকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারিনা।
– কেন কেন?
– ওর ঠোট একদম অসহ্যকর।আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে,কি দেখলে তোমার বমি আসে? আমি বলবো, নুসরাত ফারিয়ার ঠোট।
ইফতির কথায় আবারো দাত ফাটানো হাসি দিলাম। ছেলেটা তো আমার চেয়েও রসিক!
বললাম,তুমি দেখেছো?
– কি?
– নুসরাত ফারিয়ার ঠোট, দেখেছো?
– শুধু দেখা না।একেবারে জুম করে দেখেছি!
– হা হা হা.. ও হো হো হো..
ইফতি ফিসফিস করে বলল,তোমার হাসিটা সুন্দর!
আমি চমকে উঠলাম কথাটা শুনে।যেন বিদ্যুৎ শক খেলে গেলো মাথার ভিতর দিয়ে।আমার পিচ্চি বর আমার প্রেমে পড়েছে রে! হাসতে গিয়েও হাসলাম না।লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলাম।
ইফতি চুক চুক করে বলল,ইস কি লজ্জা! ডাক্তারদের আবার লজ্জাও থাকে নাকি? জানতাম না তো।
– ডাক্তারদের লজ্জা থাকেনা? তাহলে তারা পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়ায় কেন?
আরেক দফা হেসে উঠলাম দুজনে।যাক,অবশেষে আড্ডা দেয়ার জন্য একজন বন্ধু পাওয়া গেলো!
.
ইফতি একনাগাড়ে অনেক গুলো চকোলেট খেয়ে ফেললো।
তারপর বলল,রাত কত হলো?
– হবে হয়ত সাড়ে ১২ টা।
– ঘুমাবে না?
আমি হেসে বললাম,নাহ।আজ আড্ডা ই চলুক?
– ওকে,নিজের ব্যাপারে শেয়ার করা যাক।
– তুমি শুরু করো।
– আমি না,তুমি।
– আমিনা কে?
– আমিনা আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ড।
– গার্ল ফ্রেন্ড আবার এক্স ওয়াই জেড হয় নাকি? জানতাম না তোহ!
বলেই হেসে উঠলাম। ওরে বাবাহ! আজ এত হাসি কোথায় পেলাম কে জানে!
.
ইফতি হঠাৎ বলল,আচ্ছা তুমি কি আমাকে লোভী ভাবছো? টাকার জন্য তোমাকে বিয়ে করলাম বলে?
আমি বিস্ময় কাটিয়ে বললাম,এটা কখনো ই ভাবিনি।তুমি এখন আমার হাসব্যান্ড।টাকার কথা তুলছো কেন?
– যা সত্যি তাকে তো এড়ানো যাবে না।এটা ই তো সত্যি যে,তোমার টাকার কাছেই নিজেকে বলি দিলাম আমি আর আমার পরিবার।এটা খারাপ লাগলেও সত্যি।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমার আর কিছুই করার ছিল না।তোমাকে বিয়ে করলে সবাই খুশি হবে বলে বাধ্য হয়েই বিয়েটা করলাম। কিন্তু তোমার টাকার প্রতি আমার লোভ নেই।আমি আমার ক্যারিয়ারের জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি,কিন্তু বিয়ে নয়।তবুও বাবার ইচ্ছার জন্য বিয়ে করলাম।আমাকে মেরুদণ্ড হীন ভেবোনা প্লিজ।
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ইফতির মাথা ঠিক আছে তো? এসব কথা কেন তুলছে ও? শীতল গলায় বললাম,আমাকে কতটা জানো ইফতি?
ইফতি নিশ্চুপ।
বললাম,ইফতি আমার অতীত টা খুব বেদনাদায়ক।অনেক কষ্টে বড় হয়েছি আমি।সাধে কি এত বয়স অব্দি আনম্যারেড ছিলাম? প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত দিন নিজের লক্ষ্যে পৌছাবো না,তত দিন বিয়ের নাম মুখে আনবো না।আমার লাইফ এ অনেক লং স্ট্রাগল করেছি ইফতি।অনেক কষ্ট করেছি।
ইফতি এগিয়ে এসে বলল,বলো।শুনবো সব।
– জানো,আমি নিজে ইনকাম করে পড়ার খরচ জুগিয়েছি।আমার বাবা নেই।আমি জানি অভাবের ভয়াবহতা। মেডিকেল পাশ করার আগ থেকেই আমি বহুদূর হেটে হেটে পেশেন্ট দেখে আসতাম।খুব সামান্য পয়সা নিতাম আর ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট করতাম। এভাবে আমার অনেক পেশেন্ট হয়ে গেলো।ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েই আমি ছোট একটা রুম ভাড়া নিয়ে চেম্বার খুলে বসি।আমার পরিচিত সকলেই সেখানে আসত।তারপর ৩ টা রুম ভাড়া নিই।সেখানে ই অপারেশন করাতাম। নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সকলেই আমার কাছে আসত।আবার যারা হসপিটালে সিজার করাতে গিয়ে টাকা দিতে পারবে না,তারা ও আমার কাছে আসতো। এভাবে দেখতে দেখতে এক বছরের মধ্যেই অনেক টাকা করে ফেললাম।তারপর ক্লিনিক দিলাম। ডিসপেনসারি দিলাম।বাড়ি,গাড়ি সব করে ফেললাম।এখন বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় একদিনের জন্য বসলেই, ১ লাখ টাকা ইনকাম করার সৌভাগ্য হয়ে গেছে আমার।সৌভাগ্যকে নিজের হাতে তৈরী করতে হয় ইফতি।ইন্টারে পড়ার সময় অনেক বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল।তখন বিয়ে করে ফেললে আজ এতদূর পৌছাতে পারতাম না।
ইফতি অবাক হয়ে বলল,তোমাকে স্যালুট জানাই হে নারী!
আমি চুপ থেকে বললাম,তোমার আর ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা নাই।একজন নামকরা ডাক্তার কে বিয়ে করে ফেলা মানেই ক্যারিয়ার ওকে।তুমি এখন আরামসে বসে খাবা আর আমার সেবা করবা।
– হুহ,আমি তো তোমার গোলাম।
– ইফতি,আমাকে রাগাবা না।
– তুমি ক্যারিয়ারের জন্য বিয়ে করোনি,আর আমি ক্যারিয়ারের জন্য বিয়ে করলাম। আমি তো কাপুরুষ, আর তুমি নন্দিত নন্দিনী! আমার তো তোমার গোলাম হয়েই থাকা উচিৎ।
– ইফতি,রেগে যাচ্ছি কিন্তু।ফাজলামির ছলে নিজেকে ছোট করবা না।
ইফতি চেঁচিয়ে বলল,
– তাহলে কি করবো? আমি মেরুদণ্ড হীন কাপুরুষ, টাকার জন্য বিয়ে করছি তোমাকে। এটা ই তো সত্যি তাইনা?
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ইফতির কলার টেনে ধরে বললাম,ভালোবাসতে পারবা না আমায়? সিনিয়র বলে কি ভালোবাসা যাবেনা? যোগ্যতা নিয়ে আর কিছু বলবা না।এখন আমরা স্বামী স্ত্রী, এটাই সবচেয়ে বড় সত্য।নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবা,ব্যস।বেশি বেশি বুঝলে খুন করে ফেলবো একদম!
.
এরপর দুজনেই চুপ! ঘটনার আকস্মিকতায় একটু বেশিই মুগ্ধ আর স্তব্ধ হয়েছে ইফতি! আমি নিজেও অবাক নিজের আচরণে।ওর কলার ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সংযত করলাম।
.
মিনিট পাচেক কেউ কোনো কথা বললাম না।
ইফতি এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বলল,আচ্ছা সরি।কিন্তু মাঝেমাঝে রাগাবো তোমাকে।তুমি রেগে গেলে এমন ভয়ংকর সুন্দর রূপ টা দেখতে পারবো!
– তাই না?
– হুম।তুমি একটা জিনিস বটে! আমিতো ভাবছিলাম বুড়ি মহিলাকে বিয়ে করছি,নিন্তাত নির্জীব মহিলা।কিন্তু এ তো দেখছি, একেবারে বারুদ!
আমি ইফতির কান টেনে ধরে বললাম,শয়তান। খুব পাজি দেখছি!
– ডাক্তার বলে কথা!
– হুম।
.
ঘড়িতে এলার্ম বাজলো। তারমানে ১ টা বেজে গেছে।আমি ইফতিকে বললাম,এখন আমার ঘুমানোর সময়।ঘুমাতে যাবো?
– না।তুমি ঘুমালে আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো।
– হা হা হা,
শব্দ করে হাসছি আমি।ইফতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
ইফতির চেহারায় এক ধরণের মায়া আছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই আর দৃষ্টি সরাতে ইচ্ছে করেনা।মন চায় তাকিয়েই থাকি!
ইফতির কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। ও বলল,ম্যাডাম কি ঘুমাবেন না?
– হুম ঘুমাবো।
– আচ্ছা,এক বিছানায় ঘুমাতে আপত্তি আছে? নাকি আলাদা শোবো?
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।এ কেমন প্রশ্ন! হয়ত আমি তারচেয়ে বয়সে বড়।কিন্তু তাই বলে আলাদা ঘুমাতে হবে কেন? সদ্য বিবাহিত দম্পতি রা কি কখনো আলাদা ঘুমায়?
– কি ভাবছেন মহারানী?
– তোমার ইচ্ছা।
– আমার যা ইচ্ছা তাই হবে?
– হ্যা হবে।
ইফতি কি যেন ভাবলো।তারপর শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলল,তুমি না আমার স্ত্রী।
আমি হেসে বল্লাম- হুম স্ত্রী।
– তোমার প্রতি না আমার অনেক অধিকার আছে?
বলেই এগিয়ে আসলো। আমি কখনো ই লাজুক ছিলাম না।কিন্তু আজ কেন যেন খুব লজ্জা লজ্জা লাগে।মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললাম,হুম আছে।
– আমার ইচ্ছা তুমি পূরণ করবা না?
বলেই আরো এগিয়ে আসলো।
আমি লজ্জায় নীল হয়ে বললাম,হুম।
– তাহলে একটা ইচ্ছে পূরণ করো না..
– কি?
আমি উৎসুক চোখে তাকালাম। ইফতি খুব মিষ্টি গলায় আদুরে স্বভাবে বলল,আমার না এখন ইচ্ছে করছে…
– কি ইচ্ছে করছে?
– ইচ্ছে করছে তোমার হাতে…
– আমার হাতে? কি?
– ইচ্ছে করছে তোমার হাতের একটা ডিম ভাজি খাই।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।ডিম ভাজি! এত্ত রোমান্টিক ভাবে কাছে এসে,মিষ্টি গলায়,আদুরে স্বভাবে কেউ ডিম ভাজি খাওয়ার কথা বলে! কোথায় আমি ভাবলাম একটু ইয়ে টিয়ে হবে… তা নয়,এ দেখি একটা বান্দরের হাড্ডি! দুষ্টু ছেলে কাহাকা!
.
ইফতি এগিয়ে এসে বলল,ও মহারানী..
– হ্যা..
– যাও না,একটা ডিম ভেজে দাও না..
– এখন?
– হু… দেখি কেমন স্বামী সেবা করতে পারো। যাও না ম্যাডাম মিশু বুড়ি।
– বুড়ি! আমি বুড়ি?
– আরে বাবা রাগছো কেন? বুড়ি টা হচ্ছে আদরের ডাক।আসলে আরেকটা নামের সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছি তো।তাই বললাম।
– কিসের নাম?
– মাদাম মেরি কুরি, আর ম্যাডাম মিশু বুড়ি… মিল আছে না?
আমি উৎসুক চোখে চেয়ে আছি ইফতির দিকে।ছেলেটা কখন কি বলে আমি কিছুই বুঝতে পারিনা!
ইফতি বলল,দিবেনা?
– কি দিবো?
– ডিম ভেজে? যাও একটা ডিম ভেজে আনো।নাকি আমি বয়সে ছোট বলে স্বামী হিসেবে মানবে না?
– কি যে বলো! বলেছি না বয়স কোনো ব্যাপার নয়।এখন আমরা স্বামী স্ত্রী এটাই আসল সত্য।
– ওহ,তারমানে আমাকে স্বামী বলে মানবে? আমার কথামত চলবে?
– হ্যা,
– আমার সেবা করবে?
– হ্যা,
– বাহ! বাহ! যাও আগে একটা ডিম ভেজে দেখাও দেখি।
.
আমি মুখ কাচুমাচু করলেও কিছু বললাম না।প্রায় দেড় বছর যাবত আমি নিজে রান্না করে খাইনা।আজ বাসর রাতে আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে হবে! হায় আল্লাহ! পিচ্চিরা যে আসলেই যন্ত্রণার হয়,এবার বুঝলাম।
.
আমি রান্নাঘরে এসে ডিম ভাজতে লেগে পড়লাম। ইফতি ও পিছুপিছু এসে আমার ডিম ভাজা পরিদর্শন করছে।
বলল,মহারানীর মুখ গোমড়া কেন? হাসি মুখে ডিম ভাজো,নয়ত আমি ডিম ভাজি খাবো না।
হায় কপাল! এখন নাকি হাসিমুখে ডিম ভাজতে হবে!
মুখটা হাসি হাসি করে কড়াইয়ে তেল ঢাললাম।
ইফতি বলল,ডিমে লবণ কম দিও।
আমিও ওর কথামত ডিম ভাজতে লাগলাম। ইফতি বলল,একি! তুমি শুধু কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে আছো কেন?
– তাহলে আর কিসের দিকে তাকাবো?
– আমার দিকে।একবার আমার দিকে তাকাবা,আরেকবার ফ্রাইপ্যানের দিকে তাকাবা।
– কিহ! তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ডিম ভাজতে হবে?
– হ্যা হবে।
– পারবো না।
– বুঝেছি। তারমানে তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানবে না।আমার দূর্ভাগ্য,আজ বয়সে ছোট বলে স্ত্রী আমাকে মানেনা!
আমি তো একদম থ! এ কেমন কথা! আমি না মানলে আবার ডিম ভাজতে আসি?
– সে তো সবাই ভাজবে।সব স্ত্রী কেই বললে ডিম ভাজবে।কিন্তু স্বামীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কয়জন ডিম ভাজে শুনি? আমার দিকে তাকিয়ে থাকো নয়ত ভাব্বো,আমাকে মেনে নিচ্ছো না।
– হায় আল্লাহ! কে কেমন ছেলে!
.
বাধ্য হয়েই একবার ইফতির দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার ডিম ভাজার দিকে।হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না!
.
ইফতি পুরো রান্না ঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। আমার ডিম ভাজা হয়ে গেছে।তখন ই ইফতি ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে এনে আমার সামনে রেখে বলল,মহারানী। ফিশ ফ্রাই খাবো।
– কিহ! এখন আবার ফিশ ফ্রাই! অসম্ভব!!
ইফতি মুখ কালো করে বলল,তারমানে ফিশ ফ্রাই করবা না? হায় কপাল আমার! আজ বয়সে মাত্র মাত্র মাত্র ৮ বছরের বড় বলে বউ আমার কথা শুনেনা! আমাকে স্বামী হিসেবে মানেনা! আমি বাচতে চাইনা,এ জীবন রেখে কি হবে আমার!
– ন্যাকা! ন্যাকামো রাখো। ডিম ভাজি খেয়ে চুপচাপ ঘুমো গিয়ে।
– বুঝেছি। তুমি আমাকে বিয়ের রাতেই মানছো না,আর বাকি জীবন টা তো পড়েই আছে! আমি অভাগা,বউ আমাকে স্বামী হিসেবে মানেনা!
আমি হতভম্ব! এই ছেলে তো আচ্ছা বিচ্ছু একটা! ১ ঘন্টা আগেও বোঝা যায়নি এই ছেলে এতটা বিচ্ছু!
সে যাই হোক,আমি এবার ফিশ ফ্রাই করতে লেগে গেলাম।এমনি তেই শীতকাল, তারউপর ফ্রিজে রাখা মাছ বরফে জমে হিম হয়ে আছে।এই মাছ দিয়ে কিভাবে কি হবে,ভাবতে পাচ্ছি না।বিচ্ছু ছেলেটা যেভাবে জ্বালাতন শুরু করলো, না জানি কপালে আরো কি আছে! হাসিও পাচ্ছে,রাগ ও হচ্ছে।
.
ইফতি খুব মজা করে ডিম ভাজি খাচ্ছে।আহা! যেন জীবনে কখনো ডিম ভাজি খায়নি!
ইফতি বলল,কি ভাবছো মহারানী?
– কিছুনা।
– আমি জানি তুমি কি ভাবছ।
– কি?
– ভাবছ,ছেলেটা বাপের জনমে ডিম ভাজি খায়নি।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।হাসতে হাসতে বললাম,হুম সেটাই ভাবছি।কিভাবে বুঝলে?
– তুমি তো আমার বউ।চোখ দেখলেই বুঝতে পারি কি ভাবছো।
– বাহ! ভালো তোহ!
– আজ্ঞে মহারানী। আমার ফিশ ফ্রাই কতদূর?
– এখনো ঢাকায় জ্যামে আটকে আছে।
ইফতি হো হো করে হেসে উঠল। এমন ভাবে হাসছে যেন জীবনে এমন মজার কথা শুনেনি!
হাসতে হাসতে সম্ভবত ডিম ভাজি গলায় আটকে গেছে।কাশতে শুরু করলো।
আমি ছুটে গিয়ে পানি এনে দিলাম।ইফতি পানি খেয়ে ইয়া বড় ঢেকুর তুলে বলল,এই না হলে আমার বউ! তাহলে বর হিসেবে মানছো তো?
– এ কেমন কথা ইফু?
– কি ফুঁ?
– ইফু,ইফতি থেকে ইফু।
– আহ! দারুণ দারুণ! তাহলে তুমি মিশু থেকে মি.. ওকে মি দেখো তো মাছ কতদূর?
.
আমি এসে মাছ ভাজার কাজ শুরু করে দিলাম।ছেলেটা ভীষণ জ্বালাচ্ছে।আমার বিরক্ত হওয়ার কথা।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়,আমার বিরক্ত লাগছে না।বরং ভালো লাগছে।
.
ইফতি তার প্রেমের গল্প শুনাতে লাগলো। আমি গল্প শুনতে শুনতে মাছ ভেজে ফেললাম।তারপর ইফতিকে খাইয়ে দিতে হলো।খাইয়ে না দিলে বলছিল,আমাকে বর হিসেবে মানছো না? বাধ্য হয়েই খাওয়ালাম। বিচ্ছু একটা!
.
রাক্ষস ছেলে একাই খাচ্ছে।আমাকে একবার খেতেও বলছে না! এ কেমন!
ইফতি বলল,এভাবে তাকিয়ো না।আমার পেট খারাপ করবে তো।
– মানে!
– মানে আমার পাতলা পায়খানা হবে।
– ছিঃ, কি যে বলো!
– হুম মি,এখন তুমি খাও এইগুলা।
বলেই আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমার হয়েছে যত জ্বালা!
.
রুমে আসতেই ইফতি বলল,মহারানী আমি কি তোমাকে আন্টি ডাকতে পারি?
– নাউজুবিল্লা। কেন এ কথা?
– তুমি যদি তাড়াতাড়ি বিয়া করতা,এতদিনে আমার মত একটা জোয়ান ছেলে থাকতো তোমার।
– ছি ইফতি।এসব কি বাজে কথা! আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি।
– ওরে বাবাহ! আমার বুড়িটা রেগে যাচ্ছে! আচ্ছা সরি।আসো এদিকে।
– না…
– আরে বুড়ি কথা শোনো।
আমি আরো গাল ফুলিয়ে ফেললাম।ইফতি শব্দ করে হেসে আমাকে কাছে টেনে নিলো!
ইফতির ডাকে ঘুম ভাঙল।
আমার এখনো ভালোভাবে ঘুম হয়নি।এত তাড়াতাড়ি ডেকে দেয়ায় মেজাজ গরম হয়ে গেলো। নতুন বর,কিছু বলাও যাবেনা।তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আমি একটু পরে উঠবো।
ইফতি আরো বারকয়েক ডাকলো।আমি ঘুমের ঘোরে কি বলেছি না বলেছি জানিনা।কয়েক মুহুর্ত পরেই বুঝলাম গা ভেজা ভেজা লাগছে।
একি! সর্বনাশ! ইফতি বালতি থেকে মগে মগে পানি তুলছে আর বিছানায় ঢালছে! হায় আল্লাহ! এ কেমন বর! আমার এত সুন্দর গদির বিছানা ভিজাইয়া দিলো রে!!
এক লাফে উঠে পড়লাম। ইফতির হাত থেকে মগ কেড়ে নিয়ে ওর মাথাতেই ঢেলে দিলাম।
ও দাত কেলিয়ে বলল,গোসল করিয়ে দিচ্ছো? দাও দাও..
– ইফু,এটা কেমন ভদ্রতা?
– এটা অভদ্রতা..
– চুপ করো ছেলে।এই বিছানা শুকাতে দিবো কিভাবে?
– দিবেনা..
– ঘুমাবো কিভাবে তাহলে?
– এর উপরেই..
– এটা তো ভেজা.. এই ঠাণ্ডায়?
– প্রবলেম কি? আমার বউয়ের ত অনেক টাকা।একটা নতুন জাজিম কিনে নিলেই হবে।
– চুপ! একদম চুপ..
– যদি চুপ না করি?
– খুব দুষ্টামি হচ্ছে না? কি দরকার ছিল এই সকাল সকাল বিছানায় পানি ঢালার?
– যাতে রোজ রোজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো তাই।যদি না উঠ, আবারো পানি ঢালবো। তুমি ভয়ে ভয়ে রোজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়বা।
– ইফতি,না জেনে কিছু বলবা না।আমি ভোরে উঠে গোসল সেরে, নামাজ পড়ে তারপর আবার ঘুমিয়েছি।
– সত্যি নাকি?
– হুম,এই দেখো আমার ভেজা চুল..
বলেই চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। ইফতি থতমত খেয়ে বলল,ইস রে! তাইলে আমিই ত ভুল করে ফেলছি! সরি।
– তুমি সরি বললে না হয় আমার রাগ টা কমবে।কিন্তু বিছানা কে সরি বললে,সেকি শুকোবে?
ইফতি জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,সরি,সরি। সরি বউ,সরি বিছানা।
বলেই বিছানায় গিয়ে একাই ফোম টা তুলে বাইরে নিয়ে গেলো। আমি তো একদম হতভম্ব!
এক পাজির পা ঝাড়াকে বিয়ে করেছি।না জানি আরো কি কি আছে কপালে!
.
ব্রেকফাস্ট করার সময় ইফতি একটা কথাও বলল না।
আমি বললাম,কাল থেকে ক্লাস করবা ঠিকমত। কিছু না বুঝলে আমাকে বলবা।
ইফতি চেঁচিয়ে উঠল, নান্না।
– কি নান্না?
– আজ বিয়ে হতে না হতে কাল থেকে আবার ক্লাস? উহু,কয়েকদিন বিয়ে খাই,তারপর।
– বিয়ে খাবা মানে! কাল থেকে ক্লাস করবা ব্যস।আর আজ বিকেলে তোমাকে আমার ক্লিনিকের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবো।
– আজই? না একদম না।আগে কয়েকদিন রেস্ট নেই,তারপর।
– চুপ করো।কিসের রেস্ট? ডক্টর দের রেস্ট বলে কিছু থাকেনা।
– ডক্টর দের হাসব্যান্ডদের তো থাকে।আমি যেতে পারবো না।
– কি বল্লা আরেকবার বলোতো দেখি?
– আই এম আনএবল টু কানেক্ট।
– কিহ!
– সরি,
আমি দাত কিড়মিড় করে তাকালাম। সাথে সাথেই ইফতি বলল,আজ বয়সে ছোট বলে! বউ আমাকে শাসন করে! সে আমাকে স্বামী হিসেবে মানেনা।হায় কপাল!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,আচ্ছা আচ্ছা।আজকে যেতে হবেনা।দুদিন রেস্ট নাও।আমি একাই যাবো আজ।
– তুমিও যাবেনা।
– আমি যাবো।
– পারবা না।আমি আটকাবো।
– হুহ,আটকাবো বললে ই হলো।একদম ই পারবা না।
– ওকে,চ্যালেঞ্জ।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।সামান্য কথায় চ্যালেঞ্জ! হুম,আমিও দেখবো কিভাবে আটকাও আমাকে!
.
পুরোটা দুপুর ভালো সময় কাটালাম। এরপর রেডি হয়ে নিলাম ক্লিনিকে যাবার জন্য।ইফতি কিভাবে আটকায় তাই আমি দেখবো!
ওমা! পেট টা মোচড় দিয়ে উঠল। তলপেট খামচে ধরলো।ওরে বাবাহ! একি পেট ব্যাথা!
এক ছুটে বাথরুমে গেলাম।
কিন্তু এক ছুটেই শেষ হলোনা।বারবার বারবার যাচ্ছি,তবুও আরাম পাচ্ছিনা।ব্যাপার টা কি? এ কেমন দশা!
ইফতি মিটমিট করে হাসছে আমার বাথরুমে ছোটা দেখে।হুম,বুঝেছি। তারমানে এটা ইফতির কারসাজি। আমার পাতলা পায়খানার জন্য সেই দায়ী।
দুপুরের খাবারে নিশ্চয় ই কিছু মিশিয়েছিল।তাই তো বলি,এত যত্ন করে তুলে খাওয়াতে চাচ্ছে কেন! এতক্ষণে বুঝলাম।
ওরে বাবাগো!
.
৫/৬ বার টয়লেটে গিয়ে আমার অবস্থা কাহিল।বাসায় তো ওষুধ ও নেই।
ইফতি বলল,কি হইছে মিশু বুড়ি? বারবার টয়লেটে যাচ্ছো যে? হাগা ধরেছে বুঝি?
– চুপ করো পাজি ছেলে।কি খাইয়েছো আমাকে?
– আমি তো বিরিয়ানি খাইয়েছি। আসলে হয়েছে কি,আমার হাতে খেতে পেরে তুমি একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছো।তাই হজমে কুলায় নাই,বদহজম হয়ে গেছে গা।
ইফতি হা হা করে হাসছে।আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
বললাম,চ্যালেঞ্জ এ তুমিই জিতেছ।যাও।
– হুম জিতলাম।ওষুধ এনে দি?
– নো থ্যাংকস।
– তেল্কাম।
বলেই আবারো হাসি শুরু করলো। এত পাজি কেন ছেলেটা!
.
ইফতি কাকে যেন ফোন করে ওষুধ আনতে বলল।
তারপর নিজে স্যালাইন এনে মুখে ধরলো।
আমি খেয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।
ইফতি বলল,এখন কেমন লাগছে?
– পেট টা গুড়গুড় করছে।
– ইহাহা ইহাহা… এক কাজ কর,বাথরুমে গিয়ে বসে থাকো। আমি বরং ল্যাপটপ এ ভালো ছবি ছেড়ে দিয়ে ওটা দিয়ে আসবো, তুমি হাগবে আর ছবি দেখবে।
– ছিঃ,
ইফতি খিলখিল করে হাসছে।সেই হাসি হিচকির মত চলছে তো চলছেই।থামছে না।ধুর,এ কেমন ছেলেরে বিয়া করলাম!
বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করাটাই ভূল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।অবশ্য ভূল টা একদম খারাপ হয়নি।বরং ভালোই লাগছে।ইফতি অনেক মিষ্টি একটা ছেলে! বেশ ভালোলাগে ওকে।
ঘরে বসে কাজ করছিলাম।
ইফতি কোথ থেকে যেন এসে আচমকা বলে বসল,মিশু আমাদের বাচ্চা হবে কবে?
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালাম!
ইফতি আবারো জিজ্ঞেস করলো, কবে হবে?
– বাচ্চা হওয়ার কথা ছিলো নাকি?
– হ্যা ছিল।সিনেমায় দেখো না,বিয়ে হতে না হতেই কেমন বাচ্চা ও হয়ে যায়।আবার পিচ্চি ছেলেটা টুপ করে পড়ে গিয়ে দুম করে বড় হয়ে যায়।
– হা হা হা,রিয়েলিটি তে অমন হলে আমি সত্যি সত্যি শত সন্তানের জননী হতাম।
ইফতি খুক খুক করে কেশে বলল,তাই নাকি! আগে তো একটা ই হোক।বাকি ৯৯ টা পড়ে সময় করে নিবো।
– কি ব্যাপার বলোতো? হুট করে এই বাচ্চার ব্যাপার টা মাথায় আসলো কেন?
– লিসেন মিশু,এখন তোমার বয়স অনেক হয়ে গেছে।এই বয়সে বাচ্চা না হলে কখন হবে? আরো বুড়ি হলে বাচ্চা নিবা,তাহলে ছেলেমেয়ে মানুষ করবা কখন? নাকি তুমি মরলে আমি আরেক টা বিয়া করবো?
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,কি বলছ এসব?
– হুম।আমাদের হবে না?
– কি হবে?
– একটা গুলুগুলু,টুনটুন, মিষ্টি, কিউট একটা বেবি!
আমি হেসে বললাম,মাথা ঠিক আছে আপনার?
– জ্বি মহারানী। এবার বলেন তো কবে হবে?
– ভাবতে দাও।
– হ্যা ভাবো।আর আমাকে ১ লাখ টাকা দাও তো।
আমি চমকে তাকালাম। কত টাকা?
– মাত্র ১ লাখ।
– সিরিয়াসলি?
– জ্বি,১ লাখ টাকা দাও আমাকে। লাগবে।
– এমন ভাবে বলছ যেন একশ টাকা চাইছ!
– দিবা না? তোমার কাছে তো এক লাখ টাকা একশ টাকার মতই তাইনা?
– মোটেও না।যাই হোক,টাকা দিয়ে কি করবা? হালাল কাজ হলে দিবো। আদারওয়াইজ,দিবো না।
– এ কেমন কথা মহারানী? এই দুই সপ্তাহের সংসারে নিজের বরের প্রতি এইটুকু আস্থা জন্মায় নি তোমার? আমাকে বিশ্বাস করোনা? আমি যা বলি,সত্যি বলি।
– হুম,তো সত্যিটা কি?
– হানিমুনে যাবো।
– কিহ! আমাকে না জানিয়েই প্লান চলছে? বললে তো আমিই ব্যবস্থা করতাম।
– বললে তুমি লাত্থি দিয়ে বের করে দিতা আমায়।আরো হানিমুন ত দুরের কথা।
– কি বলছ এসব?
ইফতি আরো চঞ্চল হয়ে বলল,আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে হানিমুনে যাচ্ছি।
– আরেকবার বলোতো? কার সাথে?
– জি এফ,মানে গার্ল ফ্রেন্ড।নাম নূপুর।
– ইয়ার্কি হচ্ছে ইফতি?
– তুমি তো জানো,ইফতি ইয়ার্কি হলেও সত্যি টাই বলে।আমি আর নূপুর পালিয়ে যাচ্ছি।
– এর মানে কি! মাথা মুন্ডু কিচ্ছু বুঝতেছি না!
ইফতি আমার পায়ের কাছে বসে বলল,ওর সাথে আমার ৫ বছরের প্রেম।আমার বিয়ের কথা ওকে গতকাল জানিয়েছি।শোনামাত্রই বলল,ব্রেকাপ।তারপর হুরহুর করে ছুটে বাড়ি চলে গেলো।আমার তো বউ আছে তবুও একটু খারাপ লাগছে।হাজার হলেও ৫ বছর একটা মেয়ের সাথে কাটিয়েছি।তাকে কি একমুহুর্তে ছাড়া যায়? একটা মায়া জড়িয়ে আছে।কিন্তু গতরাতে ও ফোন দিয়ে বলল নতুন বউকে রেখে আমার কাছে চলে আসো।
আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি।ইফতি কখনো মিথ্যা বলেনা।তারমানে এটা কি সত্যি! কিন্তু এত অনায়াসে কেউ এমন কঠিন সত্য উচ্চারণ করতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।করুণ চোখে তাকিয়ে বললাম,ফাজলামি করছ?
– একদম না।তোমার কসম।
আমি এবার অপলক ভাবে তাকালাম ওর দিকে।দুনিয়া টা বড়ই আজব! কত অদ্ভুত অদ্ভুত মানুষ যে দেখা যায়! এই দুই সপ্তাহে আমার যথেষ্ট যত্ন নিয়েছে ইফতি।এমনকি একটু আগেও এসে বলল আমাদের বাচ্চা হবে কবে? আর এখন এভাবে এমন একটা কথা কিভাবে বলল ও!
.
আমার চোখের পলক পড়ছে না।অদ্ভুত এক প্রাণীর পাল্লায় পড়েছি আমি!
ইফতি বলল,দাও না গো ১ লাখ টাকা।নূপুর ওয়েট করে আছে।
– হুম,আমার গয়নার ড্রয়ারে দেখো ১ লাখ আশি হাজার টাকা আছে।
– ইস! তুমি কত্ত ভালো! মনে আছে ছেলে মায়ের কাছে আবদার করছে।
– ইফতি! এই সিচুয়েশনে ও তোমার মুখে রসিকতা আসছে?
– বলেছিলাম না আমি তোমার চেয়েও রসিক।আমি মৃত্যুশয্যাশায়ী মানুষ কে নিয়েও রসিকতা করতে পারি।
– প্রচুর রাগ উঠছে। টাকা নিয়ে বিদেয় হও এখান থেকে।
.
ইফতি কিছু না বলে দ্রুত অন্য রুমে গেলো। তারপর এসে বলল,এক লাখ ই নিয়েছি।গুণে দেখবা?
– প্রয়োজন নাই।এসব ফালতু রসিকতা করবা না দয়া করে।প্লিজ ইফতি।
– ওকে,আরেকটু করি?
– তুমি কি মানুষ?
– দেখতে তো মানুষের মতই।স্পষ্টবাদী ইফতি।আমি যাচ্ছি,বিয়ে করা বউয়ের কাছে টাকা নিয়ে প্রেমিকার সাথে পালাচ্ছি।হাউ থ্রিলিং!
– হ্যা,শুভ কামনা রইলো। সুখী হও।
– থ্যাংকস মিশু।বড় ভালো মেয়ে তুমি।অন্য কেউ হলে আমাকে রিভলভার দিয়ে ঢিস্ক্যাও করে উপরে পাঠিয়ে দিতো। নয়ত পুলিশে ফোন দিয়ে বলত,ওসি সাহেব এই ছোট লোকের বাচ্চাটাকে নিয়ে যান।তারপর আমি কেঁদে বলতাম, আমাকে মাফ করো মিশু।আর তুমি চিল্লায়ে বলতা,দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
ইফতির অভিনয় আর রসিকতা দেখে আমি ইমপ্রেসড! হায় রে ভাগ্য আমার! শেষ বয়সে বিয়ে করলাম, সেও এক বিরল প্রজাতির প্রাণী!
.
ইফতি বলল,আমি যাচ্ছি।শরীরের দিকে খেয়াল রাখবা।আর তোমার হাই প্রেশার ট্রেশার নাই তো?
আমি চোখ তুলে তাকালাম। ইফতি লাফিয়ে উঠে বলল,তারমানে নাই।ওহ আমি যাওয়ার সময় ড্রাইভার আর ম্যানেজার কে বলে যাবো তোমার দিকে খেয়াল রাখতে।যেন হার্ট এটাক হলে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যেতে পারে।ডাক্তার কেও বলে যাচ্ছি টেনশন করোনা।
– আমি মোটেও টেনশন করছি না।বরং মুগ্ধ হচ্ছি তোমার কথায়।আজব ক্যারেকটার তোমার!
– কথাটা এইভাবে বলতে হয়না।এটা এভাবে বলা উচিৎ, আজব ক্যারেকটার মাইরি!
বলেই ইফতি হাসতে শুরু করলো। আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারলাম না।
ইফতি বলল,আমি যাচ্ছি মিশু।
– হুম।সাবধানে যেও।
– ইস! কি সুইট মেয়ে! এভাবে কেউ স্বামী কে ভালোবাসে না।তুমি সত্যি খুব ভালো মেয়ে ডার্লিং! শুনেছি বউকে মা ডাকলে তালাক হয়ে যায়।নয়ত আজ একবার ডাকতাম।
– ছিঃ ইফতি।
– ছিঃ বলার কিছু নাই।তোমার গুণেই বললাম।এই নূপুর কল দিচ্ছে গো।আমি বরং যাই।টেক কেয়ার ওকে?
আমি হা করে তাকিয়ে আছি।ইফতি ছুটে বেড়িয়ে যেতে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,দরজা খোলা রেখো। বলা তো যায়না,আবার হার্ট এটাক কিংবা স্ট্রোক হতে পারে! হাজার হলেও স্বামী তো!
আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি।ইফতি চলে গেলো।পরমুহুর্তে আবার এসে বলল,মিশু আমাদের বাচ্চা হওয়ার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার নিও কেমন? আর হ্যা,মেয়ে হলে নাম রাখবো ‘প্রাপ্তি’ আর ছেলের নাম টা তুমি ঠিক করো প্লিজ।
কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ের হতভম্ব আজ!
ইফতি বলল,একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
বলেই দৌড় দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
.
আমি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লাম। এটা জানি যে,ইফতি কখন ও মিথ্যা বলেনা।ফাজলামি করেও ও সবসময় সত্যি টাই বলে।ইয়ার্কির ছলেও মিথ্যা বলার অভ্যাস ওর নাই।কিন্তু যদি এটা সত্যি হয়,তবে? ইফতি কি সত্যি চলে গেলো? এই কয়েক দিনে ওর ফোনে নূপুর নামে এক মেয়ে কল দিয়েছিল,দেখেছি আমি।তাহলে কি সত্যি ই!
আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে! ইফতিকে আমি কত টুকুই বা চিনি! সম্পূর্ণ অচেনা একজন কে বিয়ে করেছিলাম আমি।যাকে প্রতিদিন ই দেখছি আর নতুন করে জানছি!
মাথা ঘুরতে শুরু করেছে আমার।মনে হচ্ছে বুঝি চেয়ার থেকে পড়ে যাবো।এমন সময় দাড়োয়ান এসে বলল,আপার কি শরীর খারাপ লাগছে?
ধেৎ, ইফতি টা যে কি! সত্যি সত্যি দারোয়ান কে বলে গেছে!
.
বাকি দিন টা ঘোরের মধ্যে কাটালাম।কিছুই ভালো লাগছে না।ইফতিকে বারবার ফোন দিতে গিয়েও দিচ্ছিনা।এই কয়েক দিনেই ওর প্রতি অনেক টা মায়া জন্মে গেছে! আর ইফতি!
কি এক যোজন – বিয়োজনের খেলায় মেতেছে কে জানে!
.
সারাদিন রুমেই পড়ে আছি।উঠে কিছু খাই ও নি।শুয়েই আছি সেই তখন থেকে।
.
রাত ১১ টা..
প্রচণ্ড শীতেও জানালা খুলে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।ঠাণ্ডায় হাত পা বরফ শীতল হয়ে আছে।নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এমন সময় কে যেন পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো।মাথা ঘুরিয়ে দেখি ইফতি!
ইফতি বলল,একি মহারানী! ঠাণ্ডায় তো বরফ হয়ে গেছেন। ভালোই হলো,এখন আপনার গায়ে ক্রিম মাখালেই হবে যাবে মিশু আইসক্রিম!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে আছি!
ইফতি বলল,খুব অভিমান হয়েছে তাইনা?
আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে ই আছি।ইফতি জানালা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে এসে বিছানায় বসালো।তারপর বলল,সারাদিন খাওনি তাইনা?
আমি মাথা নাড়ালাম।
ইফতি উঠে গিয়ে দুই টা প্লেট নিয়ে আসল।প্যাকেট থেকে বিরিয়ানি বের করতে করতে বলল,তোমার ফেভারিট। চিকেন বিরিয়ানি।
আমার কথা বন্ধ।বোবা টাইপ হয়ে চেয়ে আছি! পিচ্চিরা কি আসলেই এত দুষ্টু হয়!
ইফতি আমাকে তুলে খাওয়াতে শুরু করল।আমি ও চুপচাপ খাচ্ছি।বিরিয়ানি টা মজা হয়েছে!
ইফতি বলল,ভয় পেয়েছিলে?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝালাম, হুম।
– দূর পাগলী।বউকে রেখে কি কেউ যেতে পারে?
– তবে যে বললা?
– হুম।গিয়েছিলাম তো।কিন্তু টাকা দিতে।
– মানে!
– মানে ওর নাকি খুব বিপদ। ১ লাখ টাকা খুব দরকার। তাই দিতে গিয়েছিলাম।পাগলী মেয়ে,কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছ দেখছি! এত ভালোবেসে ফেলেছো আমাকে?
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলাম। সত্যি আজ অনেক কেঁদেছি। এই গত ৭/৮ বছরেও হয়ত ৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে কাদিনি।কিন্তু আজ সারাদিন কাঁদলাম। জানিনা কেন! একটা জিনিস বুঝতে পারছি,নিজের স্বামীর ব্যাপারে সবার ই আকাশ সমান দূর্বলতা কাজ করে!
ইফতি বলল,ডাক্তার রা এত ইমোশনাল হয়?
– নিজের স্বামীর ব্যাপারে সবাই এমন সেনসিটিভ। ভালোবাসা টা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ফিল্ম মেকার দের জন্য আলাদা হয়না।এর অনুভূতি টা সবার ই থাকে।
ইফতি হাত তালি দিয়ে বলল,দারুণ ডায়ালগ দিয়েছ তো! একদম নায়িকা শাবনূর! কেয়া বাত হ্যায়! কেয়া বাত হ্যায়!
আমি খেপে গিয়ে ইফতির সাথে মারামারি শুরু করে দিলাম।
ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,সরি মহারানী।আর কখখনো এভাবে কষ্ট দিবো না।
– সত্যি তো?
– হুম একদম।এই তোমার নাক ছুঁয়ে বল্লুম।
বলেই আমার নাক ধরে ফেলল।আমি হেসে বললাম,পাজি ছেলে কোথাকার।
– দূর হ ছোট লোকের বাচ্চা।
বলেই ইফতি হাসি শুরু করলো। আমি ও হাসতে লাগলাম।
ইফতি আমার মুখ চেপে ধরে বলল,হাসি পড়ে।আগে বলো ছেলের নাম কি রাখবা?
– বান্দর একটা।
– বান্দর রাখবা? হায় হায়,আমি কি তোমাকে বান্দরের আম্মু বলে ডাকবো?
আমি অনেক ক্ষেপে ইফতির দিকে তাকালাম।ইফতি মুখ বাকা করে একটা সেলফি তুলে নিলো!
.
………………………………………………………………………………………………………………………………………