মনটা জুরে আছিস সুধু তুই প্রিয়

মনটা জুরে আছিস সুধু তুই প্রিয়
আজ প্রায় চার বছর পর আমার গার্লফ্রেন্ড মিতু আমারই হসপিটালে আসলো এবরশন করাতে। সে আমাকে দেখেই থ হয়ে রইলো। সে হয়তো যানতোনা আমি এই হসপিটালে আছি। প্রায় চার বছর ধরে আমি যাকে পাগলের মতো খুজেছি তাকে শেষে এই ভাবে দেখব আমি আশা করিনি। আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে যখন আমি মেডিকেলে পড়তাম তখন মিতুর সাথে আমার রিলেসন ছিলো। যখত সেখান থেকে পড়াসুনা সেষ করে লন্ডন যাচ্ছি উচ্চ শিক্ষিত হয়ে মিতুর বাবার সামনে যোগ্য পাএ হয়ে দাড়াবো বলে।
যাওয়ার সময় মিতু আমাকে অনেকবার বলেছিলো তাকে এভাবে একা ফেলে না যেতে। তাকে নাকি বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। বলেছিলাম আর মাএ দুই বছর কোনো রকম মেনেজ করো, তারপর আমি তোমার যোগ্য পাএ হয়ে তোমার বাবার সামনে দাড়াবো। সেদিন সে আমার হাত ধরে বললো দুই বছর মেন্যাজ করতে পারবো কিনা জানিনা, তবে এইটা জানি তোমাকে ছারা আমি থাকতে পারবোনা। যখন আমি চলে গেলাম পথম এক বছর তার সাথে যোগাযোগ ভালো থাকলেও পরে। পরে কেনো জানি মিতু আমার সাথে কম কথা বলতো। হটাৎ তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে আর আমাদের যোগাযোগ হয়নি। যখন দেশে ফিরলাম তখন মিতুকে আমি পাগলের মত খুজেছি। তারা বাসাও চেন্জ করে ফেলেছিলো। তার অনেক বান্ধবিদের জিগ্গেস করেছিলাম তার ব্যাপারে। তারাও কিছু জানেনা।
অনেক দিন খুজেছিলাম তাকে কিন্তু পরে যখন যানতে পারলাম তার বিয়ে হয়ে গলো, তখন যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। মিতু কি কর পারলো। সেকি পারলোনা আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে? এটাই ছিলো বুঝি আমার প্রতি তার ভালোবাসা? নিজেকেও তখন আমার অপরাধি মনে হচ্ছিলো। কারণ ওরতো কোনো দোষ নেই। একটা মেয়ের কতই বা চাপ সহ্য করার ক্ষমতা থাকে? আমারই ভুল হয়েছিলো তাকে একা ফেলে যাওয়া। কিন্তু আমারও যে কিছু করার ছিলোনা। কারণ তাকে পেতে হলে আমার তাকে যোগ্য পাএ হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু নিয়তির কি খেল সারা বছর গাছ পরিচর্যা করে ফল ধরার সময় গাছা ভেঙে গেলো। জিবনে কি পাপ করেছিলাম যানিনা, যার সাস্তি আমাকে এভাবে পেতে হলো।
তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম সারাজীবন দেবদাস হয়ে কাটিয়ে দিবো। কারণ মিতুর যায়গায় আমি কাউকে কল্পনা কখনো করিওনি, করিওনা, আর করতে পারবোনা। কারণ তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা ছিলো অন্য আট দশটা ভালোবাসার থেকে আলাদা। মিতুর যায়গায় অন্য কাওকে সেই অধকার দিতে পারবো কিনা যানি না। এভাবে কেটে গেলো আরো দুইটি বছর। আজ আমি শহরের বড় ডাক্তারদের মাঝে একজন। তবুও আমার মনে কিছু একটা অপূর্ন রয়ে গেলো। চার বছর আগের সেই সৃতিগুলো আজও আমার মনের মধ্য গাথা। কিন্তু আজ আমি মিতুকে এই ভাবে দেখবো তা কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। এই চার বছরে কোনো পরিবর্তন হয়নি মেয়েটার, একধম আগের মতোই আছে। ভেবেছিলাম স্বামির সংসারে সে অনেক সুখেই আছে। তাহলে কেনো আজ ও এবরশন করার জন্য আমার কাছে আসলো। বাচ্চাতো সৃষ্টি কর্তার দেওয়া একটা উপহার। তাহলে কেনো ও। অন্য কিছুও ভাবতে আমার বিবেকে বাধা দিচ্ছে, কারণ মিতুর চরিত্রে আমি কখনো কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। শিশির ভেজা ফুলের মতো পবিত্র ছিলো আমার সেই মিতু। দেখলাম মিতু একা এসেছে। ভাবলাম নিশ্চই কোনো গন্ডগোল আছে নাহলে কেও না থাক অন্তত স্বামিতো সেই সময় তার পাসে থেকতো।
তাকে নিয়ে আলাদা একটা যায়গায় গিয়ে বসলাম। মাথা নিচু করে আছে সে কোনো কথা বলছেনা। ওকে মনের ভেতর জমে থাকা আক্ষপে অনেক কিছুই বলে ফেললাম। তবুও মেয়টা মাথা নিচু করে আছে। যখন জিগ্গেস করলাম বাচ্চাটা কেনো নস্ট করতে চাইছো? তখন সে কান্না জোরানো কন্ঠে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো, তো কি করবো আমি? কি পরিচয়ে তাকে আমি বড় করবো? দিন শেষে যখন সকল ছেলেদেরকে তাদের বাবা এসে বাড়ি নিয়ে যাবে তখন ও জদি আমাকে বাবার কথা জিগ্গেস করে আমি কি বলবো? পৃত্বিহিন পরিচয় নিয়ে কি সে বড় হবে সমাজে? আমি চাইনা এটা। কক্ষনো চাইনা। ও এক নিশ্বাসে সব বলে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করলাম, পৃত্বিহিন বড় হতে যাবে কেনো তোমার তো স্বামি আছে, যা ওর পৃত্বি পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট।
-নিকুচি করি আমি ওই কুকুরের বাচ্চার, ওই রকম একটা অমানুষের পরিচয় দিয়ে আমি আমার বাচ্চাকে বড় করতে চাইনা। তার এই কথায় বুঝলাম সে স্বামির ঘরে তেমন সুখে নেই। নিশ্চই কোনো অমানুষিকতার কারনে তার জীবনে এতো দুঃখ।
মাঝে মাঝে আমার মনেও কিছু অজানা প্রশ্ন এসে হানা দেয়। একটা মেয়ে নিজের পরিবারকে ছেরে আত্বিয় স্বজন সবার মায়া ত্যাগ করে অচেনা একটা মানুষের কাছ চলে যায় সারা জীবনের জন্য। তার বিনিময়েও কি অচেনা মানুষটার কাছে একটু ভালোবাসা আসা করতে পারেনা? আশা করেনা সুন্দর করে ঘরটাকে সাজিয়ে অচেনা মানুষটার হাত ধরে সারাজীবন একসাথে থাকতে? কিন্তু আমরা ছেলে জাতিরা তা বিবেচনা না করে সুধু বউ মানে একটা বৈধ সম্পর্কের উদাহরন হিসেবে বুঝি। বলছিনা সব ছেলেরা এরকম। কিন্তু কিছু কিছু ছেলে আাছে যারা এর ব্যতিক্রম নয়। ওকে জিগ্গেস করলাম, তোমার এই সিদ্ধান্তের বেপারে তোমার স্বামির কি কোনো আপত্বি নেই? ও এবার শান্ত গলায় বললো, আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-যানো তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমি অনেক দিন বাড়িতে কোনো রকম মেনেজ করেছিলাম। কিন্তু বাবার ও তো একটা ধর্যের সিমা আছে। হুট করেই একদিন বাবা আমায় বললো আমার নাকি দুই দিন পর বিয়ে। ছেলের নাকি নিজস্ব বিসনেস আছে। বাবাকে অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছিলাম, কিন্তু শেষে বাবার জেদের কাছে হার মেনে গেলাম।
-আসার পর তোমাকে আমি অনেক খুজেছি পাইনি। পরে যখন সুনলাম তুমি বিয়ে করে নিয়েছো তখন আমি নিজেকে কোনো রকম বুঝিয়ে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু তোমার ডিভোর্স হওয়ার কাহিনিটা কি?
-বিয়ের দুই মাস পরই ওর বাবা মানে আমার শশুর মারা যায়। যার কারনে ও যেভাবে খুশি সেভাবে চলতো। বাধা দেওয়ার কেও ছিলোনা। আমি কিছু বললেই উল্টা আমার সাথে রাগারাগি করতো। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতো। জুয়া খেলতে খেলতে সব কিছুই ও বিক্রি করে দিলো। পরে যখন বাড়িটা ছারা আর কিছুই রইলোনা, তখন আমার উপর খুব অত্যার করতো। বলতো বাবার কাছে থেকে টাকা নিয়ে যেতে। বাবা কয়েকবার তাকে দিয়েওছিলো। কিন্তু ধিরে ধিরে লোভের মাত্রার সাথে আমাকে অত্যাচারে মাত্রাও বেড়ে গেলো। তারপর ডিসিশান নিলাম তার মতো অমানুষের সাথে আর নয়। ওর সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরই আমি জানতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি। ওর কথাগুলো শুনে আমার চোখের কোনে জল জমে গেলো। তখনি ছোট্ট একটা বাচ্চা এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
-তোমার ছেলেটাতো খুব সুন্দর।
-আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, ও আমার ছেলে না। ওর মা এই হসপিটালে ভর্তি আছে যার জন্য ও আমাকে চেনে। খুব দুষ্ট একটা ছেলে, দুই দিনের পরিচয়েই। আমাকে তার আপন করে নিয়েছে।
-তোমার কি কোনো ছেলে নেই?
-ওম হুম আছে।
-আচ্ছা চলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। এই বলেই হাটা সুরু করলো।
পেছন থেকে ওর হাতটা ধরে বললাম, তুমি কি এখন আমায় ভালোবাসো?
ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-তোমার সেই পৃত্বিহিন বাচ্চার দায়িত্বটা যদি আমি নিতে চাই, দেবে আমায় সেই অধিকার?
-তোমার জীবনে আমি নতুন করে জড়িয়ে তোমার সাজানো সংসার নস্ট করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। আর তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমারও একটা বাচ্চা আছে।
-তুমি আমার কাছে ফিরে আসলে তোমার সেই সন্তানটাই হবে আমার সন্তান।
-তুমি কি এখনো বিয়ে করনি?
হটু গড়ে বসে বললাম, না। ধরবে আমার এই হাতটা? কথা দিচ্ছি কক্ষনো ছেরে যাবোনা। আগলে রাখবো সারাজীবন।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত