অভিমানী বউয়ের ভালোবাসা

অভিমানী বউয়ের ভালোবাসা
আমি রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এসেছি। আসার আগে একটা চিঠিও লিখে এসেছি যেনো ঐ হনুমানটা আমাকে নিতে না আসে এবং আমাকে যেনো ফোনও না করে। আমি আর ওর সংসারে ফিরে আসবো না । এই সব হাবিজাবি লিখে এসেছি আর কিছু শান্তিদায়ক কাজও করে এসেছি। ফ্রীজের সব খাবার ফেলে দিয়ে এসেছি যেনো সে আজ রাতে না খেয়ে থাকে। কাল থেকে সে হোটেলে খাবে তারপর ওর পেট খারাপ করবে তাই ওষুধের বক্সটাও লুকিয়ে রেখে এসেছি। ওর সব শার্ট প্যান্ট ও লুঙ্গিসহ ওর সব কাপড় পানিতে চুবিয়ে রেখে এসেছি যেনো ঐ সব ওর ধুয়ে শুকিয়ে আয়রন করতে কষ্ট হয় আর রাতে ঘুমানোর জন্য যেনো লুঙ্গি না পায়। বলে কি না বউ ছাড়াই সে দিব্যি চলতে পারবে! চল এখন একা একা, আমি তো চলেই এসেছি। এখানে আসার পর একা এসেছি বলে আম্মু এক ঝাড়খানেক প্রশ্ন করলো। যেনো আমি কি না তে কি অপরাধ করেছি।
এমন মা পৃথিবীতে এক পিচই আছে যে নিজের মেয়ের থেকে জামাইকে বেশী বিশ্বাস করে, অসহ্য! সারাটা দিন এই সব সাত পাঁচ ভেবেই শেষ করলাম। সন্ধ্যে হতেই বেশ খুশি খুশি লাগছে কারণ এই সময় রোদ্দুর বাসায় ফিরে। আজ বাসায় ফিরে দেখবে ওর বউ পালিয়ে গেছে, কি মজা! পালানো শব্দটা খুব একটা ভালো শব্দ নয় মনে হয়, তাই পালানোটা বাদ। আসলে তো আমি রাগ করে এসেছি এটাকে কি পালানো বলা যাবে? বাসায় ফিরে হতভাগাটা লুঙ্গীটাও পাবে না, লুঙ্গী পানিতে চুবিয়ে এসেছি। অফিসে যে প্যান্ট পরে গেছে সারা রাত হয় সেই প্যান্ট পরে থাকতে হবে নয় বস্ত্রহীন, কি মজা! এই সব ভেবে বেশ শান্তি লাগছে। বউ ছাড়া নাকি ওর দিব্যি চলবে। চল এখন লুঙ্গি ছাড়া। রাত আটটা বাজে সে বাসায় কোনো খাবার পাবে না এমন কি বিস্কিটের কৌটোও লুকিয়ে রেখে এসেছি, কি মজা! বলে কি না বউ ছাড়া তার দিব্যি চলবে! এখন শুধু বউ নয় খাদ্য দ্রব্য ছাড়াও চল।
নয়টা বাজে বউ ছাড়া নাকি তার দিব্যি চলবে! চল এখন লুঙ্গি খাবার ওষুধ সব কিছু ছাড়া আমি ছাড়া রাতে ওকে সুরা মুলক তিলওয়াত করার কথা মনে করিয়ে দেবে কে? নিজ থেকেই পড়ে নিক এখন থেকে! রাত দশটা বাজে এতক্ষণে খালি পেটে ওর পেটে এসিডিটি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ওষুধ খুঁজে পাবে না। সারা রাত পেটে এসিডিটি নিয়ে সে নিশ্চই ঘুমাতে পারবে না, কি মজা! বলে কি না বউ ছাড়া ওর দিব্যি চলবে! এখন পেটে এসিডিটি নিয়ে দারুণ করে চল হতভাগা ফজরের সলাত বাসায় বাসায় পড়ার জন্য অকে আর কেউ বকা দেবে না! আমি ছাড়া ও আরামেই থাকবে!! রাত এগারোটা বাজে কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। হঠাৎ মনে হলো ওর ঘুম না হলে ওর ভীষণ মাথা ব্যাথা করে। ওর মাইগ্রেইন আছে।ইস্ মাথা ব্যাথায় সে খুব কষ্ট পায়। ওষুধ গুলোও লুকিয়ে রেখেছি। এটা করা বোধ হয় ঠিক হয়নী।
ফোন করে না হয় বলি যে, ওষুধের বক্স ফ্রীজের পেছনে লুকিয়ে রেখেছি। নাহ থাক বলবো না, বউ ছাড়া যদি ওর চলে তাহলে ওষুধের ব্যবস্থাও করে নিক। সে তো একটি বারও আমাকে ফোন করেনী তাহলে আমি কেনো যেচে ফোন করবো? বর ছাড়াও আমার দিব্যি চলবে। রাত বারোটা বাজে, মরার ঘুম কেনো আসছে না? এই এক বছরে ঐ হনুমানটার সাথে থেকে থেকে দেখছি আমার বদ অভ্যেস হয়ে গেছে। একলা ঘুমই আসছে না! ধ্যাত্তেরি! সারা রাত কি জেগেই কাটাবো নাকি? একটা রাত না হয় জেগেই পার করলাম কিন্তু রোজ যদি ঘুম না আসে তাহলে কি করবো? ওকে তো চিঠিতে লিখেছি যে আর কখনো ফিরে যাবো না। আর ওকেও নিতে আসতে বারণ করেছি। সত্যিই যদি নিতে না আসে তাহলে আমার কি হবে ?
মান সম্মান বিসর্জন দিয়ে হ্যাংলার মতো তো আর যেচে যেতে পারি না! কি করতে যে রাগ করে এলাম ? এলামই না হয় কিন্তু চিঠিটা না লিখলেই পারতাম! আর ঐ মহাপুরুষও কি বেয়াদব যে চিঠিতে যা লিখেছি সেটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে! অন্য কথা বললে তো উনি এ কান দিয়ে শোনেন আর ঐ কান দিয়ে বের করে দেন। আর এটার বেলা দেখছি হাদীসের মত পালন করছে আসলে সে আমাকে ভালোই বাসে না। এক বছর দুই মাস হলো বিয়ে হয়েছে আমাদের আর ঐ ভালবাসাহীন মানুষটার সাথে থেকে থেকে কি করে যেনো আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। আর সে আমাকে একটুও ভালবাসেনি এসব ভেবে নিজের জন্য দুঃখ পেয়ে কাঁন্না আসছে সব দোষ আম্মুর, আম্মুর পছন্দেই আমার বিয়ে হয়েছে।
আমি ঐ হনুমানটাকে বিয়ে করবো না বলে বিয়ের দিন খুব কেঁদে ছিলাম এই সব ভেবে আম্মুর উপর খুব রাগ হচ্ছে এখনই আম্মুকে ডেকে এর হেস্ত নেস্ত করেই ছাড়বো কিন্তু এত রাতে ঘুম থেকে ডাকা বোধ হয় ঠিক হবে না। সকাল হোক এর হেস্ত নেস্ত করেই আমি ছাড়বো। রাত একটা বাজে, হনুমানটা ঘুমিয়েছে কিনা কে জানে। ওর মনে হয় খুব খিদে পেয়েছে। না খেয়ে এতক্ষণে ওর পেটে এসিডিটি শুরু হয়েছে মনে হয়। এসিডিটি নিয়ে ওর মনে হয় ঘুম আসছে না। তাহলে এতক্ষণে ওর মাইগ্রেইন শুরু হয়েছে। একবার ফোন করবো? না থাক, ওর তো বউ ছাড়া দিব্যিই চলবে। সে তো পারতো একটি বার আমাকে ফোন করতে! কিন্তু করেনী, মানুষ কত খারাপ হলে নিজের বউয়ের খোঁজ নেয় না! এই সব স্বামীদের পুলিশে দেয়া উচিত। রাত দুইটা- তিনটা- চারটা- পাঁচটাও শেষ এখন ছয়টা বাজে।
সারাটা রাত একটা মিনিটও ঘুমাইনী। ওকে শিক্ষা দিতে গিয়ে আমি নিজেই শিক্ষিত হয়ে গেছি। এখন তো দেখছি ওর বউ ছাড়া দিব্যিই চলছে কিন্তু আমারই বর ছাড়া চলছে না! এসব ভেবেই কাঁন্না পাচ্ছে সাতটা বাজে, হনুমানটাকে না ডাকলে তো ওর ঘুম ভাঙে না। তাহলে অফিসে যাবে কি করে? একবার ফোন করে ডেকে দিই না হয়। না থাক, ওর তো বউ ছাড়াই দিব্যি চলবে তাই অফিসটাকেও চালিয়ে নিক সকাল আটটা বাজে,সে ঘুম থেকে উঠলো নাকি সারা রাত মাইগ্রেইন নিয়ে বসে ছিল কে জানে! অফিসে লেটে পৌছালে বসের ঝাড়ি শুনতে হবে। এক বার না হয় ফোন করে বলি। নাহ থাক, বউ ছাড়া তো ওর দিব্যি চলবে, এখন বউ ছাড়া ঝাড়ি খেয়ে চলুক। খালি পেটে ঝাড়ি খেয়ে পেট ভরুক মহাপুরুষের ধ্যাত্তেরী! কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। একটি বার আমাকে ফোন করলে কি হয়? আজব মানুষ একটা! সব দোষ আম্মুর, এমন কেয়ারলেস ছেলেকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। এখনই আম্মুর সাথে এর বোঝা পড়া করবো। আম্মুর রুমে গিয়ে বললাম-“তুমি পৃথিবীতে আর কোনো ছেলে খুঁজে পাওনী আমার গলায় ঝুলানোর জন্য?”
অবনীর আম্মুঃ-“কেনো কি হয়েছে?” আমি রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বললাম-“এমন ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছো যে ছেলে আমাকে ভালোই বাসে না”
আম্মুঃ-“ওমা তাই নাকি? কিন্তু রোদ্দুর তো বললো তুই নাকি ওকে ভালবাসিস না”
অবনীঃ-“ঐ হনুমানটা তাই বলেছে? তো এতই যখন ভালবাসে তাহলে কাল থেকে একটি বারও আমাকে ফোন করে আমার খোঁজ নেয়নি কেনো?”
অবনীর আম্মুঃ-“সে তো বললো তুই নাকি বারণ করেছিস”
অবনীঃ-“সে তোমাকে ফোন করেছিল?”
অবনীর আম্মুঃ-“হ্যা, রাতেই ফোন করেছিল”
অবনীঃ-“কই আমাকে তো বলোনি?”
অবনীর আম্মুঃ-“তুই তো বললি তোর আব্বুর জন্য তোর মন কেমন করছিল তাই এসেছিস। ঝগড়া করে এসেছিস সেটা তো বলিসনি”
অবনীঃ-“এটা বলার কি আছে? ঐ হনুমানের অত্যচারেই তো আসতে বাধ্য হয়েছি”
অবনীর আম্মুঃ-“সে জন্যই ভাবছি তোকে আর ওখানে ফিরে যেতে হবে না”
অবনীঃ-“কেনো?”
অবনীর আম্মুঃ-“ভাবছি তোকে ডিভোর্স করিয়ে আবার বিয়ে দেবো”
অবনীঃ-“এই এই আম্মু তুমি আমার সংসার ভাঙার ষড়যন্ত্র করছো নাকি?”
অবনীর আম্মুঃ-“তুই তো বললি রোদ্দুর তোকে অত্যাচার করে? তাই ডিভোর্স করিয়ে রোদ্দুরকেও একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দেবো”
অবনীঃ-“কি বললে? আমি ভালো মেয়ে নই? আমার স্বামীকে আবার বিয়ে দেবে? এই তুমি আসলেই আমার নিজের মা তো? আমার ডাউট হচ্ছে”
অবনীর আম্মুঃ-“তুই তো তোর স্বামীকে ভালোবাসিস না”
অবনীঃ-“কে বললো তোমাকে?”
অবনীর আম্মুঃ-“তোর ভাব ভঙ্গিমা তো তাই বলছে”
অবনীঃ-“তাই বলে তুমি আমার সংসার ভাঙার ষড়যন্ত্র করবে? এই তুমি নিশ্চই আমার নিজের মা নও। বলো আমার মাকে কোথায় গুম করে রেখে আমার বাবাকে বিয়ে করেছো?” এবার অবনীর আম্মু বেশ রেগে গিয়ে বললো
অবনীর আম্মুঃ-“ফালতু কথা বলবি না অবনী”
অবনীঃ-“আমার সংসার ভাঙার ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামীকে বিয়ে দিতে চাইছো, এটা কোনো নিজের মা করতে পারবে?”
অবনীর আম্মুঃ”তোর মাথার তার ঢিলা সেটা তো তোর জন্মের পর থেকেই জানি। এখন দেখছি তোর সেই ঢিলা তার খুলে পড়ে গেছে”
অবনীঃ-“কি বললে?”
অবনীর আম্মুঃ-“ছোট বেলা থেকেই তুই আমাকে জ্বালিয়ে ছাই কয়লা এই সব করেছিস, এখন আবার ঐ সরল ছেলেটার পেছনে লেগেছিস; এই তুই বড় হবি না কখনো?”
অবনীঃ-“কি আমি খারাপ আর ঐ হনুমানটা সরল? সে যদি সরল হয় তাহলে গোটা পৃথিবীতে জটিল কে?”
অবনীর আম্মুঃ-“ছেলেটা তোর জন্য না খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে আর ঐ শরীরেই অফিসেও গেছে তো কি বলবো আমি?”
অবনীঃ-“এতক্ষণ পরে এসব বলছো? এই তুমি আসলেই আমার মা তো?”
অবনীর আম্মুঃ-“আবার বাজে কথা বলছিস?”
অবনী রাগ দেখিয়ে রুমে চলে এসে লাগেজ গোছানো শুরু করলো। তারপর বেরিয়ে যেতে দেখে অবনীর আম্মু বললো-“কোথায় যাচ্ছিস?”
অবনীঃ-“স্বামীর বাড়ি যাচ্ছি”
অবনীর আম্মুঃ-“তোর গলায় না আমি হনুমান ঝুলিয়েছি? তাই যেতে হবে না”
অবনীঃ-“আমার কাজ আছে যেতেই হবে”
অবনীর আম্মুঃ-“কি কাজ আছে?”
অবনীঃ-“ইয়ে মানে!!ফুলের টবে পানি দিতে হবে”
অবনীর আম্মুঃ-“এই কাজ করতে চলে যাচ্ছিস?”
অবনীঃ-“হ্যা আমি এখানে থাকি আর তুমি আমার স্বামীকে বিয়ে দাও।
আর আমি যেয়ে দাওয়াত খাই” অবনীর কথা শুনে অবনীর আম্মু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আমি বাসায় পৌছে দেখলাম ওর কাপড় গুলো পানিতেই ডুবে আছে, সাথে আমার গুলোও চুবে আছে হনুমানটা এই ভাবে শোধ নিছে দেখে খুব রাগ হচ্ছে। আমি সব কাপড় গুলো শুকিয়ে আয়রন করলাম,রান্না করলাম। ঘরটাকে এক রাতেই ম্যাস বাড়ি বানিয়ে রেখে গেছে, সব কিছু গোছগাছ করলাম।
রাত আটটা বাজে তবুও রোদ্দুরের বাসায় ফেরার খবর নেই আমি বাপের বাড়ি গেছি দেখে এই সুযোগে আবার কোনো বান্ধবীর বাসায় যায়নী তো? না না রোদ্দুর এমনটা করবে না, মুখে যা-ই বলুক না কেনো সে আমাকেই ভালোবাসে। কিন্তু পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। রুমে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে থেকে এই সব হাবি জাবি ভাবছিলাম। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম হনুমানটা এসেছে। অবনী ঘুমের ভান করে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলাম। রোদ্দুর রুমে এসে লাইট অন করে চিৎকার করে উঠলো। অবনী অপ্রস্তুত ভাবে লাফ দিয়ে বসে ওর সাথে চিৎকার করতে শুরু করলো। অবনী ভাবসে রুমে হয়ত সাপ পোকা মাকড় কিছু একটা দেখে সে চিৎকার করছে রোদ্দুর চিৎকার থামিয়ে বললো-“এই আপনি কে?” অবনী ওর কথায় অবাক হয়ে গেল। রোদ্দুর আমাকে চিনতেই পারছেনা! এক দিনের মধ্যে কি এমন ঘটলো যে, সে আমাকে চিনতে পারবে না? মাইগ্রেইনে কি তবে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?
অবনীঃ-“রোদ্দুর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার অবনী” তারপর রোদ্দুর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-“আপনি দেখতে ঠিক আমার বউয়ের মত”
অবনীঃ-“মানে কি?”
রোদ্দুরঃ-“আমার বউ তো বাপের বাড়িতে তাহলে আপনি কে?”
অবনীঃ-“আমি চলে এসেছি রোদ্দুর”
রোদ্দুরঃ-“আমার বউ তো চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে গেছে। বিশ্বাস না হলে এই চিঠিটা পড়ে দেখুন”
অবনীঃ-“রোদ্দুর আমি ফিরে এসেছি, আমি অবনী”
রোদ্দুরঃ-“বুঝেছি আপনি ভুত প্রেত ডাইনী টাইপের কিছু হবেন”
অবনীঃ-“আজব তো! আমাকে পেত্নীর মত দেখতে লাগছে?”
রোদ্দুরঃ-“আসল রূপ তো দেখাচ্ছেন না, আমার বউয়ের রূপ ধারণ করে আছেন”
অবনী রোদ্দুর কথা শুনে মহা বিপদে পড়ল। হনুমানটাকে বুঝাতেই পারলাম না যে আমি তার বউ অবনি। অবনী খাট থেকে নেমে বললাম-“রোদ্দুর আমাকে ছুয়ে দেখো আমি অবনি” অবনীর কথা শুনে রোদ্দুর চিৎকার করে বললো-“এই না খবরদার না, আমার কাছে আসবেন না। আমি ভুত দেখে খুব ভয় পাই। আর বউ ছাড়া পৃথিবীর সব নারীকেও ভয় পাই এবার অবনীর খুব রাগ হলো তাই জোর করে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ওমা হনুমানটা চুপ করে আছে। মনে মনে ভাবলাম ভয়ে জ্ঞান হারায়নি তো? রোদ্দুরকে ছেড়ে দিয়ে দেখে মিটমিট করে হাসছে।
অবনীঃ-“এখন বলো আমি কে?”
রোদ্দুরঃ-“আমার বউ”
অবনীঃ-“কি করে বুঝলে?”
রোদ্দুরঃ-“তোমার শরীরের ঘ্রাণ বললো তুমি আমার বউ”
অবনীঃ-“এত দেরী করে বাসায় ফিরলে কেনো?”
রোদ্দুরঃ-“কাজ ছিল”
তারপর রোদ্দুর বাথরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো। অবনী দেখে আম্মু ফোন দিছে। অবনী রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই তার আম্মু বললো-“শোনো বাবা তুমি তো জানোই আমার মেয়েটা একটু আহ্লাদী আর ছেলে মানুষ তাই ওকে একটু মানিয়ে নিও। তুমি তো ওকে নিতে এসে একটুও দেরী করলে না, তাই কিছু বলতে পারিনী বলে ফোন করলাম।
মেয়েটা সারা রাত এক মিনিটও ঘুমায়নি। ওকে খাইয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে বইলো। কি হলো বাবা তুমি কথা বলছো না কেনো?” অবনী লাইনটা কেটে দিল। অবনী তার আম্মুকে বুঝতে দিল না যে অবনী সব জেনে গেছ। হনুমানটা অফিস শেষ করে আমাকে নিতে গেছিল। আমি ওখান থেকে চলে এসেছি শুনে সে ওখানে দেরি করেনি। এ জন্যই হনুমানটার বাসায় ফিরতে এত দেরি হয়েছে। তাহলে মনে হয় সে আমাকে ভালবাসে। কিন্তু ভাব দেখায় যেনো আমাকে পাত্তাই দেয় না। এ জন্যই তো আমিও ওকে বুঝতে দিই না যে আমিও হাবু ডুবু হয়ে আছি। তাহলে এতক্ষণ সে আমার সাথে ভুতের নাটক করছিল? ভালোই তো অভিনয়ে এক্সপার্ট দেখছি! আমাকে এ ভাবে ভয় দেখালো! রাগে আমার হাত পা কাঁপা শুরু হলো। যতই ভাবি একটু ভালো হয়ে যাবো,এই হনুমানটা আমাকে কিছুতেই ভালো হতে দেয় না! সে বাথরুম থেকে বের হতেই বললাম-“তুমি গেস্ট রুমে ঘুমাবা”
রোদ্দুরঃ-“সেকি কেনো?”
অবনীঃ-“বউ ছাড়াই তো তোমার দিব্যি চলে তাই আমার কাছে শুইবা না”
রোদ্দুর -“আমি গেস্ট নই এটা আমার বাড়ি তাই ইচ্ছে হলে তুমি ঐ রুমে যাও”
ওর কথা শুনে খুব কাঁন্না আসলো একটি বারও বললো না যে,”অবনি তোমাকে ছাড়া আমার একটা মিনিটও চলবে না” আমি রাগ করে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঐ হনুমানটাকে ছাড়া আমার ঘুম আসছে না। আমার ভেতরের আমিটাই আমার সাথে শত্রুতা করছে। আমি যেনো আর আমিতেই নেই,আমিটাও ঐ হনুমানের হয়ে গেছে। আর ঐ হনুমানটা আমাকে একটুও ভালোবাসে না এই সব ভাবতে ভাবতে কেঁদেই ফেললাম তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।
সকালে ঘুম ভেঙে দেখি রোদ্দুর আমার পাশে শুয়ে আছে। আমি অবাক হলাম কিন্তু কিচ্ছু বললাম না। বিছানা থেকে নেমে আসতেই সে আমার হাত টেনে ধরে আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার কানে কানে বললো-“বউ ছাড়া আমার দিব্যি চলবে কিন্তু এই তার ছেড়া পাগলী অবনিকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ডও চলবে না । আর এই কথাটা আমার পাগলীটা একদমই বুঝে না।” ওর কথা শুনে আমি স্ট্যাচু হয়ে গেলাম আর মনে মনে বললাম-“তাহলে হনুমানটা বোধ হয় আমাকে ভালোই বাসে! কিন্তু ওকে ছাড়াও যে আমার প্রতিটি সেকেন্ডই নষ্ট, সেটা আমি কিছুতেই ওকে বলবো না”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত