ভালোবাসার রঙ

ভালোবাসার রঙ
ঘুম থেকে উঠে দেখি একের পর এক ফোন কল।অনেকগুলা মিসকল।অরন্যের ফ্রেন্ড আমার ফ্রেন্ডরা সবাই কল দিছে।বুঝতে পারলাম না কি হয়েছে।ভাবতে ভাবতে আরেকটা কল আসল।কলটা ধরার সাথে সাথে আমার ফ্রেন্ড বলে উঠল লাবন্য ভালো আছিস তো।আমার তো ওর কন্ঠ শোনে মনে হলো কিছু একটা হয়েছে।আমি উত্তর দিলাম আমি তো ভালোই আছি।কেন কি হয়েছে?এরপর যা বলল তা আমার বাম পাজর গিয়ে আঘাত করল কেন তুই জানিস না অরন্য আর নেই। নাহ এ তো হতে পারে না।
অরন্য থাকবে না কেন।এইতো আমাকে বলে গেল লাবন্য তুমি আমাকে লাস্ট বার বাইক রেইস দিতে দাও প্রমিস আর যাব না।আমি আর বাইক রেইসে গিয়া তোমাকে কষ্ট দিব না।তুমি চাও না তাই আমি বাইক রেইস ছেড়ে দিব।কিন্তু তুমি আজকে না করো না।তুমি না করলে হয়ত যাব না।কিন্তু আমার মন খারাপ থাকবে প্লিজ তুমি না কর না। এতভাবে বলতেছিল তাই না দিয়ে করে পারলাম না।ওকে বললাম আচ্ছা যাও কিন্তু এটাই শেষ।আর এমন করলে আমিই চলে যাব কিন্তু।সে আমার মুখ চেপে ধরে বললো ধুর পাগলি তোকে ছাড়া কি আমি থাকতে পারব নাকি।আমি তো আর যাব না এটাই লাস্ট।এসে একসাথে চা,ফুসকা খাব।।তারপর হাসিমুখে বিদায় নিল।
নাহ অরন্য তো আসবে বলছে ওহ তো বলছে আমাকে চা আর ফুসকা খাওয়াবে।আমি জানি আমার অরন্যের কিছু হয় নি।ও আসবে।আমি আমার বান্ধবীকে ধমক দিয়ে বললাম চুপ কর।বাজে বকা ছাড়।অরন্য আসবে এসে আমাকে চা আর ফুসকা খাওয়াবে অরন্যের কিছু হয় নি। আমি সেদিন পাথরের মূর্তি হয়ে গেছিলাম।অরন্যের সাথে আমার দেখা কলেজে উঠার পর।আমরা একেই কলেজে পড়তাম একেই ক্লাসে ছিলাম।আমাদের বন্ধুত্বটাও ছিল বেশ।সবসময় একজন আর একজন এর পিছু লাগতাম।ভালোগাটা যে কখন ভালোবাসায় পরিণত হল টেরেই পায় নি।অরন্য তো একটা নাছোড়বান্দা ছিল আমার ছোট ছেোট খুশি গুলা ও জানি কিভাবে বুঝত।ছোট ছোট বিষয় গুলা নিয়া এত কেয়ার করত কি বলব।আমি তো পুরাই অবাক হতাম ও কিভাবে পারে এত সুন্দর করে সব মেইনটেইন করতে।এই তো কিছুদিন আগে আমার জন্মদিন গেল আমি তো ভুলেই গেছিলাম।
সবাই উইশ করা শুরু করল ভাবলাম অরন্য হয়তো ভুলে গেছে।কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম অরন্যের মেসেজ আসছে,লাবন্য একটু নীচে নামতো।আমি দৌড়ে নীচে নামলাম দেখলাম তার হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ আর বেলুন।আমি তো এতটাই খুশি হয়েছি কি বলব।আমার জন্য একগুচ্ছ কাচের চুড়ি নিয়া আসছে।চুড়ি গুলা পড়ে বাসায় আসি।আমাদের সম্পর্ক টা সবাই জানত।পরিবারের সবাই মেনেও নিয়েছিল।দুই পরিবার মিলে এনগেজড ও করিয়ে রেখেছিল।কোন কিছুর কমতি ছিল না।শুধু মাঝে মাঝে জগড়া হত ওর বাইক রেইস নিয়া।ওর বাইকের প্রতি অনেক নেশা ছিল।আর সেটা আমার একদম ভালো লাগত না। কিন্ত সেদিন ও বলেছিল আর বাইক চালাবে না।এইবারেই লাস্ট।আমাকে তো সে বলেছে ফিরে আসবে।সবাই মিথ্যা বলছে।আমার অরন্য আমার কাছেই আসবে।
আমার বান্ধবীরা বলতেছিল লাবন্য চল একবার দেখে আসবি।আমি কারও কথায় শোনে নি।আমি জানিত আমার অরন্যের কিছুই হয় নি।আমি কি দেখতে যাব।আমি যাব না।শত চেষ্টার পর ও কেউ আমাকে নিতে পারল না।আমি সেদিন থেকেই একটা আবেগহীন মূর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। কথা বার্তা বলা ছেড়ে দিয়েছিলাম।কারন আমি জানি তো আমার অরন্য এসে আমার রাগ ভাঙ্গাবে।আমাকে এসে বলবে লাবন্য তুমি রেগে আছ কেন? এই তো আমি এসেছি।চল চা ফুসকা খাই।আমার লাবন্য রেগে থাকলে আমার খারাপ লাগে না বুঝি।আমি তখন ওর কান মুলে দিয়া বলব হারামজাদা কেমনে পারলি এভাবে কষ্ট দিতে।ফাকি দিতে।আসবি বলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে।অনেক করে বকে দিব ওকে।কিন্ত অরন্য কেন যে আসতেছে না বুঝতেছি না।অরন্যকে খুব বকতে ইচ্ছা করছে।কত মেসেজ যে করছি।কিন্তু কি যে করে ছেলেটা নিশ্চয় বাইক নিয়া পড়ে আছে রিপ্লাই দিচ্ছে না।ফোনটাও অফ করে রেখেছে।
সবাই কত বুঝাচ্ছিল যে অরন্য নেই কিন্তু আমি তো জানি ও আছে।এভাবে কাটল তিনমাস।অরন্যকে ভাবতে ভাবতে আমার মাইল্ড এটাক হল।আমার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেল।আমি যে এত অসুস্থ অরন্য কেন আসছে না।অনেক কিছুর পর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলাম।বুঝতে পারলাম আমার অরন্য আর আসবে না চা আর ফুসকা খেতে নিয়ে যাবে না। সে তো আমাকে ফাকি দিয়া চলে গেছে না ফেরার দেশে।।সবসময় বলতাম ওকে তোমার বাইক রেইসটা আমার সতীন আর আজকে সে সতীনটাই আমার অরন্যকে কেড়ে নিয়েছে।এত ভালোবাসছি তবু কেন ছেড়ে গেলা তুমি।কেন ফাকি দিলা।আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।আমার কলিজার হাহাকার কি তুমি শোন না।আসবা না তুমি আমাকে বলবা না লাবন্য প্লিজ আর যাব না বাইক রেইসে এটাই লাস্ট।প্লিজ ফিরে আস তোমাকে বাইক রেইসে যেতে আর না করব না।খুব ভালোবাসব তোমায়।আমার কিছু চায় না তোমাকে চায়।প্লিজ ফিরে আস।তুমি কি জানো না তোমার লাবন্য তোমাকে কতটা ভালোবাসে।জানোনা তোমার লাবন্য তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।তবে কেন লুকোচুরি খেলছ। প্লিজ চলে আস। জানি অরন্য আর ফিরে আসবে না।ও আমায় ফাকি দিয়া না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে।
সময় কাটতে লাগল অরন্যের শূন্যতা আমাকে গ্রাস করতে লাগল।হুট করে একদিন আমার হাতে কেউ হাত রেখে বলল ধূর পাগলি তোর পাগলামি আর গেল না।আমার জন্য এ হাল করছিস কেন।তোরে পিটাইতে মন চাচ্ছে।আমি চলে গেছি কে বলেছে আমি তো আছিই।এই যে তুই অন্তর থেকে যাকে ফিল করছিস সেটাই তো আমি।এই যে তুই নিঃশ্বাস নিচ্ছিস সেটাই তো আমি।আমি তো আছি তোর মাঝে।কেন তুই নিজেকে কষ্ট দিয়ে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।পাগলি একটা বড় হয়ছিস ঠিকেই কিন্ত বুদ্ধি হয় নি তোর।আমি তোরে ছেড়ে যায় নি।কিন্তু তুই তোকে না আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস। আমি অরন্যকে ধরে বললাম তুমি যেও না।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পার না।অরন্য বলল আমি আছি তোর মাঝে। সেদিন থেকে নিজেকে ভালো রাখা শিখে গেছি।কারন আমি কষ্ট পেলে তো অরন্য কষ্ট পাবে।আমি তো আর অরন্যকে কষ্ট দিতে পারব না।আজ আমি খুব সুখী। জানি আমার অরন্য আমার মাঝেই আছে।ভালো আছে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত