শেষ বারের মত জেরিন এর জন্য ফুসকা নিয়ে বসে আছি। আজ তার সাথে ৫ বছরের সম্পর্ক শেষ হচ্ছে।আজ অনেক সুন্দর করে জেরিন সেজে এসেছে।কালকে ওর গায়ের হলুদ তাই হয়তো সে অনেক খুশি। আমার পাশে এসে বসেই আজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কিছু বলার আগেই জেরিন আমাকে বলে উঠে নীল আমাকে মাফ করে দিও।আমি বললাম কেনো।
তখন জেরিন বলে আসলে আজ থেকে ৫ বছর আগে তোমার হাত ধরে বলেছিলাম তোমার হাত ছাড়বো না। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস আজ তোমাকে ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। আমি তখন বললাম তুমি তো পারতে থেকে যেতে আর কিছুদিন অপেক্ষা করলে তো আমাকে পেতে তুমি।এই ভাবে চলে নাও যেতে পারতে।তখন জেরিন কান্না করে বলে আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিবার এর চাপ আমাকে আজ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।তখন আমি হতাশা ময় একটা হাসি দিয়ে জেরিন এর দিকে তাকিয়ে থাকি।জেরিন আমাকে বলে তুমি তো কালকের পর আমাকে ভুলে যাবে ঘৃণা করবা তাই না।নতুন একটা মেয়েকে নিয়ে নতুনভাবে শুরু করবা।
আমি তখন আবার হাসি দিয়ে বলি আমার থেকে তুমি আমাকে সবার আগে ভুলে যাবা।কাল তোমার গায়ের হলুদ পরশু বিয়ে এরপর বাসর রাত, তারপর বউ ভাত হানিমুন ইত্যাদি করতে করতে আমার কথা ভাবার সময় থাকবে না।একটা সময় তুমি আমাকে ভুলেই যাবা।আমি হয়তো কিছুদিন মনে রাখবো তারপর আমিও তোমাকে ভুলে যাবো।।
এই কথা শুনার পর জেরিন কান্না করতে থাকে।আজ শেষবারের মতো ওকে ফুসকা খাওয়া দিলাম।এরপর জেরিন আমাকে একটা উপহার দিয়ে বললো স্মৃতি হিসেবে রেখে দিও।এটাই আমাকে তোমার কথা মনে করাবে।
এরপর বিদায় নিয়ে সে চলে যায়।
অনেক কষ্টের দিন যেতো আমার। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি বুঝাতে পারবো না।এরপর আমার জীবন এ আসলো মেহেদী নামের একটা বন্ধু। আমাকে সারাদিন মোটিবেশন দিত।আমার জীবনটা আসতে আসতে পরিবর্তন হতে থাকে।আমি নিজেকে গুছিয়ে নেই। এরপর জীবন এ অনেক মেয়ে এসেছিল কিন্তু কেউ স্থায়ী হয়নি।কারণ বুকে যে শুধু জেরিন ছিল।কাউকে আর পছন্দ হয়নি।এরপর ভাবছি না এই ভাবে করলে আর হবে না।তাই ভালো করে পড়াশোনা করা শুরু করলাম।পরিবার এর অনিচ্ছাতেও দেশ থেকে চলে গেলাম। ৭ বছর পর দেশে ফিরে আসলাম।এই ৭ টা বছর অন্য রকম কেটেছে আমার।প্রিয়জনের জন্য সব সময় মায়া হতো।জেরিন এর কথাও মনে পড়তো আজও ভুলতে পারি নাই কারণ ভুলার জন্য ওকে ভালোবাসেনি। দেশে আসার পর শুরু হয় পরিবারের বিয়ে নিয়ে কথা বার্তা।এই বার বিয়ে আমাকে করতেই হবে। দেশে আসার পর মেহেদীর সাথে দেখা করা হয়নি তাই যমুনা ফিউচার পার্কে গেলাম ওর সাথে দেখা করতে। আমি আমার মতো করে হাটতে ছিলাম হঠাৎ আমি থেমে গেলাম।আমার চোখ বলছে আমার পাশে আমার ভালোবাসার মানুষ। পাশে তাকিয়ে দেখি জেরিন। জেরিনো আমার দিকে তাকিয়ে আছি।
দুইজন দুইজনকে দেখে চিনতে পারি।আমি কথা বলার আগেই জেরিন বলে উঠে কেমন আছো তুমি।অনেক বছর পর দেখলাম তোমাকে অনেক পালটে গেছো তুমি।জেরিন এর পাশে একটা মেয়ে।আমি জিজ্ঞেস করলাম আম্মু তোমার নাম কি।তখন জেরিন এর মেয়ে বললো আমার নাম বর্ষা।মনে পড়ে গেলো সেই দিন এর কথা আমি আর জেরিন দুইজন এ মিলে আমাদের সন্তানের নাম রেখেছিলাম। এরপর জেরিনকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার স্বামী। তখন জেরিন বলে ও আসলে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে ২ বছর হলো।জেরিন এর মেয়ের জন্য মায়া হচ্ছে মেয়েটার বয়স ৩ বছর হবে। এরপর জেরিন এর মেয়েকে নিয়ে কথা বলি।মেয়েটা আমার গলা ধরে বসে আছে।মনে হচ্ছে ও আমার নিজের মেয়ে। আমি জেরিন এর ফোন নাম্বার নিলাম।পরদিন জেরিনকে ফোন দিলাম।জেরিনকে বললাম তুমি আমাকে বিয়ে করবে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।জেরিন প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়েছে।
আমার বাসার কেউ এই বিয়েতে রাজি ছিল না।অনেক কষ্টে রাজি করাই।তারপর আমরা বিয়ে করি।মজার বিষয় কি জানেন আমাদের দুইজন এর মাঝে সে দিন বর্ষা ছিল আর বর্ষাকে আমি নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করতে চাই।বর্ষাকে কোনো দিন বুঝতে দিব না ওর বাবা আমি না।ওর একজন ভালো বন্ধু হয়ে ওর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। বিয়ের পর আমি,জেরিন আর বর্ষা মিলে ঘুরতে গেলাম।আমার আর জেরিন এর হাত ধরে মাঝখান থেকে বর্ষা হাটতেছে। শুরু হলো আমাদের নতুন পথ চলা।নতুন এক দিগন্ত, নতুন এক ভালোবাসা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা