‘আচ্ছা,আপনি কি সত্যিই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন কাল?’
‘শুদ্ধতার করা প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে তাকালো সাহিল।বললো, তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হবে শুদ্ধতা?কালই তোমার আমার সব সম্পর্ক শেষ।’
‘শুদ্ধতার গলার কাছে কান্নারা দলা পাকিয়ে এসেছে।অনেক কষ্টে কান্না চেপে বললো, শেষবেলায়ও আমার প্রতি এত ঘৃণা আপনার?’
‘সাহিল ভ্রু কুঁচকে রাগী গলায় বললো,শোনো শুদ্ধতা!তোমাকে আমি একদমই পছন্দ করিনা।ঘৃণা ও করিনা।’
-‘আগে তো আমাকে কতো ভালোবাসতেন।’
‘সাহিল রেগে বললো,আগে ভালোলাগতো,তাই ভালোবাসাটাও ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই।’
‘শুদ্ধতা অদ্ভুত হাসলো।বললো, ভুল বলেছেন বোধহয়!কোনোদিনই আপনি আমাকে ভালোবাসেননি।মোহ ছিলো সবটাই!’
‘সাহিল ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বললো,সবই জানো দেখছি!এতোই যখন জানো তাহলেএখন চুপ থাকো।’
-‘আপনার কাছে একটা কথা জানতে চাই!’
-‘কি?’
-‘আমি চলে গেলে আপনি কি আবার বিয়ে করবেন?’
-‘হুম,অবশ্যই করবো।ইভেন কাল/পরশুর মধ্যে। কাকে করবেন?’
-‘কাকে জানতে পারি?’
-‘তুমি তাকে চেনো।’
-‘কে সেই ভাগ্যবতী?’
-‘তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড অবন্তিকা।’
‘শুদ্ধতা চমকালো,থমকালো।অবন্তিকা যে পেছন ওর পিঠে ছুরি মারছে এটা এতদিনেও বুঝতে পারলো না ও?আর বুঝেই বা কি করবে?আসল মানুষটাই তো আর ওর নেই।তাহলে কেন সে বুঝবে?’ ‘শুদ্ধতা চুপচাপ বসে রইলো। একটা কথাও বললো না।সাহিল ল্যাপটপে চ্যাটে ব্যস্ত,নিশ্চয়ই অবন্তিকার সাথে কথা বলছে!’
‘যত যাই-ই হোক।শুদ্ধতা সাহিলকে নিজের প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে।ডিভোর্স নিয়ে আলাদা একা একটা পৃথিবী হয়তো সাহিল গড়তে পারবে,কিন্তু শুদ্ধতা কখনোই বেঁচে থাকতে একা পৃথিবী গড়তে পারবে না।সবসময় কাছের মানুষগুলোই কেন এরকম বিশ্বাসঘাতকতা করে?নিজের বন্ধুবেশে থাকা প্রিয় বান্ধবীটা কিভাবে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙতে পারে?কিভাবে নিজের স্বামী স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে?সবকিছু সবাই-ই জানে,পারে ঠকাতে!তাহলে শুদ্ধতা কেন এসব পারে না?’ ‘শুদ্ধতা চোখের পানি মুছে নিলো।ভালোবাসার মানুষকে সবসময় সে সুখী দেখতে চেয়েছে,কিন্তু এভাবে যে তার থেকে দূরে সরে গিয়ে সুখী করতে হবে এটা শুদ্ধতা ভাবতেও পারে না।গুটিগুটি পায়ে সাহিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।সে এখনো চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত!’
‘শুদ্ধতা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আপনার কাছে একটা সত্য কথা বলার আছে,আর একটা আবদার আছে!ধরে নিন,এটাই আমার শেষ আবদার!’
‘সাহিল ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বললো, কি বলবে বলো!আর কি আবদার?’
‘শুদ্ধতা এক নিঃশ্বাসে বলে দিলো,ছাদে গিয়ে খানিকক্ষণ বসি?আজ পূর্ণিমা!আকাশে অনেক মেঘও আছে!আপনি যেমন পছন্দ করতেন?ঠিক তেমন মেঘের ভেলা!হয়তো এই মেঘভেলাতেই কোনো একসময় আপনি আমায় খুঁজে পাবেন!’
‘সাহিল এমন কথায় খুব অবাক হলো।কিছু একটা ভেবে বললো,ঠিক আছে।চলো!’
‘ছাদে যাওয়ার পর সাহিল বললো, তোমার আবদার পূরণ হয়েছে?’
‘শুদ্ধতা মুচকি হেসে বললো,হুম হয়েছে!তারপর একটু চুপ হয়ে বললো, আচ্ছা,আপনি আমি যদি না থাকি তাহলে আপনি কি করবেন?’
‘তুমি না থাকলে কি আর করবো,তুমি চলে যাওয়ার পর আমি আর অবন্তিকা দুজনে ছোট্ট সংসারে হেসে খেলে কাটিয়ে দেবো।’
‘শুদ্ধতার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এই কথাটাই সাহিল সবসময় ওকে বলতো।কিন্তু কই?হেসে খেলে তো জীবনটা কাটাতে পারলো না!মাঝরাস্তায়ই জীবন থেমে গেলো।’
‘শুদ্ধতা বললো, একদিন আপনি বলেছিলেন না মেঘভেলায় আপনি আর আমি?’
‘সাহিল বললো, হয়তো!’
‘শুদ্ধতা বললো, আমি কিন্তু এতক্ষণ সেটা বলিনি।বলছি আমি যদি এই পৃথিবীতেই না থাকি,তবে?’
‘সাহিলের কি হলো কে জানে,আচমকা শুদ্ধতার বলা কথাটা তীরের মতো বুকে বিঁধলো।সত্যিই তো,শুদ্ধতা না থাকলে কি হবে ওর?অবন্তিকাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারবে তো ও?হুম, নিশ্চয়ই পারবে!’
‘শুদ্ধতা আকাশের দিকে শান্ত গলায় বললো, দেখেছেন,আজ রাতটা কত সুন্দর? এই পূর্ণিমা রাতে মরতেও সুখ!সে মরণ যদি আজ হয়,তাহলে তো আরও ভালো, তাইনা?’
‘সাহিল চমকে তাকালো শুদ্ধতার মুখপানে।চাঁদের আলোয় মেয়েটার ফর্সা মুখখানাতে কেমন পবিত্র ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এই পবিত্র মুখখানারই প্রেমে পড়ে একদিন শুদ্ধতাকে কথা দিয়েছিলো সে,মৃত্যু ছাড়া আর কিছু কোনোদিন শুদ্ধতাকে সাহিলের কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।তাহলে? আজ শুদ্ধতার সাথে কি করে সে এমনটা করবে সে?নাহ,পারবে না সে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে!ওর জীবন থেকে শুদ্ধতাকে কোনোদিনই সরাতে পারবে না সে।সত্যিই যদি কাউকে ও ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা শুধু এবং শুধুই শুদ্ধতা। অবন্তিকা নামক কোনো তৃতীয় ব্যক্তিকে নয়।’ ‘ভাবনার ছেদ ঘটলো শুদ্ধতার ডাকে।পেছনে ঘুরেই দেখতে পায়,শুদ্ধতা ছাদের রেলিঙের উপর দাঁড়ানো।সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলছে,আপনাকে খুবই ভালোবাসতাম!আপনাকে ছেড়ে একা একটা পৃথিবী গড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আপনি আমার ছিলেন আর আমারই থাকবেন চিরজীবন, সেইজন্য ডিভোর্সটা দিতে পারলাম না।ক্ষমা করবেন আমায়।ভালোবাসি আপনাকে এবং বাসবো সবসময়।’
‘অতঃপর শুদ্ধতার একটা আর্তচিৎকার শোনা যায়।পাঁচতলার উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে নিজের ভালোবাসাটাকে বাঁচিয়ে রেখে গিয়েছে শুদ্ধতা।আজ এতদিন হয়ে গেলো, নিজের করা প্রতিটি অন্যায়, শুদ্ধতার সাথে করা অবিচার তাকে কুড়েকুড়ে খায়।এখন বুঝতে পারে সাহিল,যে মেয়েটাকে ও এতো কষ্ট দিয়েছে তাকে ছাড়া এ পৃথিবীতে ও নিঃশ্বাস ফেলতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে,খুব! মেঘভেলায় কোনো না কোনো একদিন হয়তো দেখা মিলবে দুজনের!জীবন সাহিলকে চরম একটা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে, দিয়েছে শুদ্ধতাও।”ভালোবাসাকে কখনো অবহেলা বা ক্ষণিকের মোহে দূরে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ নয়! চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললে পরে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না।মেঘভেলা ছাড়া আর কোনোকিছুর অস্তিত্বের খোঁজ রাখে না সাহিল এখন,অপেক্ষায় আছে সে ভুল শুধরানোর।কিন্তু ভুলটা কি আদৌ শুধরানোর?’
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা