তাসনিমকে বিয়ে করে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম।আসলে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে যেয়ে আজকে তাসনিমকে বিয়ে করতে হলো। আপনাদের তো আমার নাম বলা হয়নি আমার নাম নীল। তাসনিম এর সাথে আমার ৫ বছরের সম্পর্ক। যতই ওর পরিবার আর আমার পরিবার চাক আমাদের মিল না হোক।আমাদের ভালোবাসা কি এতই সস্তা যে তাসনিম এর হাত মাঝপথে ছেড়ে দিব।
তাসনিম এর সাথে প্রথম পরিচয় হয় এক বৃষ্টি ভেজা দিনে।আমি রাস্তা থেকে হাটতে ছিলাম তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে যায়। আমার কাছে ছাতা ছিল না তাই বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসতে ছিলাম তখন সে আমার মাথার উপর ছাতা ধরে। সেই মায়াবী কন্ঠস্বর আর তার মায়াবী চোখ। প্রথম দেখাতে ওর প্রেমে পড়ে যাই। এরপর প্রায়ই তাসনিম এর সাথে দেখা হতো।এরপর একদিন আমি আমার মনে কথা ওকে বলে দেই।তাসনিম রাজি হয়ে যায়।শুরু হয় দুইজন এর পথচলা। ৫ টি বছর সুন্দর ভাবে কেটেছিল আমাদের।কি সুন্দর দিন গুলো ছিল।তাসনিম অনেক সুন্দর বিরিয়ানি রান্না করতে পারে আর আমার বিরিয়ানি অনেক পছন্দের তাই ও আমার জন্য নিয়ে আসতো।বেশ যাচ্ছিল আমাদের দিন গুলো। কিন্তু এরপর আমাদের দুইজন পরিবার জেনে যায় আমাদের রিলেশন এর কথা।আমার পরিবার কিছুটা মানে কিন্তু তাসনিম এর পরিবার মানেনি।কি আর করার আমার ভালোবাসারটানে তাসনিম ওর বাসা ছেড়ে আমার বাসায় নিয়ে আসি।
আমাদের বিয়ে হয়।বাসায় কেউ কিছু বলে নাই আমাদেরকে। কিন্তু কয়েকদিন পর আমি আমার পরিবার এর অনেক কিছু পরিবর্তন এর লক্ষ্য করলাম।আমার পরিবার অনেক পাল্টে গেছে। বাসার থেকে কাজের বুয়াকে আসতে মানা করলো।বাসার সব কাজ তাসনিম এর উপর দিয়ে দিল।আমার বোন এর মাঝেও পরিবর্তন। সে তার ভাবিকে নানা রকম কাজে অর্ডার করছে।কি করবো বুঝতেছি না একটা চাকুরী নেই আমার যে তার জোরে প্রতিবাদ করবো। একদিন তাসনিম এসে বলে নীল আমার জন্য একটা মলম এনে দিবে।আমি বললাম কিসের মলম তখন সে বলে আমার বাম হাতে মাছ ভাজার সময় গরম তেল পড়ছে তাই ফোসকা পড়ছে।আমি তাসনিম এর হাতটা দেখি।আমি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। যে মেয়ে রাজকন্যার মতো সারাজীবন ছিল আজ আমার জন্য তার এই দশা।
আমার কাছে কিছু টাকা ছিল আমি তাসনিমকে মলম এনে দেই। এরপর শুরু করি চাকরি খোঁজা।অনেক বড় ভাইয়ের কাছে বলি চাকুরীর কথা।এরমধ্যেই এক বড় ভাই এর মাধ্যমে আমার চাকরি হয়। শুরু হয় আমার পথচলা। আমি ভালো বেতন পাই চাকরি থেকে।আমি তাসনিমকে বললাম আলাদা থাকবা আমাদের পরিবার থেকে।আলাদা বাসা নিয়ে থাকি আমরা। তখন তাসনিম বলে এই কথা আর বলবা না।এটা আমার শ্বশুর বাড়ি হলেও এটা আমার নিজের বাড়ির হয়ে গেছে এখন। আমরা সবাই এক সাথে থাকি।ভালোই তো যায় আমার দিন। আমি তাসনিম এর কথায় মুগ্ধ হয়ে যাই।আসলে ওর চিন্তা ভাবনা আসলে অন্য রকম।
একদিন আম্মু তাসনিমকে কি বলে বকা দিতাছে।এরপর আমি আম্মুকে ধরলাম আব্বু ছিল আম্মুর সাথে। আম্মুকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম তোমার নিজের মেয়ে তোমার মেয়ে আর অন্য ঘরে থেকে যে মেয়ে আসছে সে তোমার মেয়ে না।মানুষকে আপন করতে শিখ আম্মু।একদিন তোমার মেয়ের বিয়ে হবে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি তোমরা যে রকম করেছো আমার বউয়ের সাথে সেই রকম যদি করে সহ্য করতে পারবে তো।আম্মুকে বললাম প্রত্যেক মেয়ে একটা স্বপ্ন নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি আসে।
তোমাদের মতো কিছুলোকদের কারণে ওরাও খারাপ হয়ে যেতে বাধ্য হয়।তুমি জানো তোমাদের এই অত্যাচার থেকে তাসনিমকে বাচাতে আমি আলাদা বাসা নিতে চেয়েছি।কিন্তু তাসনিম আমাকে নিতে দেয়নি কারণ ও আমাদের সবাই এক সুতার বাধনে জড়িয়ে রাখতে চায়। আমার পরিবারের সবাই তাদের ভুল বুঝে এবং তাসনিম এর কাছে ক্ষমা চায়। একটা সময় তাসনিম এর পরিবারও আমাদের মেনে নেয়। শুরু হয় আমাদের নতুন পথের পথ চলা। হাতে হাত রেখে শুরু নিজেদের সুখী জীবন। আসলে এক সুতোর বাধনে রাখলে সবাই সুখী হয়।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা