অসহায় ভালোবাসা

অসহায় ভালোবাসা
-আচ্ছা আপনি প্রতিদিন এখানে বসে থাকেন কেন? “হঠাৎ এমন কথা শুনে বাম পাশে তাকিয়ে দেখি এক মেয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে।”
-এই যে স্যার,আমার কথা কি শুনতে পাইছেন?
-আপনি কে?
-আমি কে সেটা বড় কথা নয়,আমি কি বলছি সেটাই বড় কথা।এখন বলেন…..
-আরে আরে! কে আপনি?আর এভাবে আমার পাশে বসে পড়ছেন কেন?
-আমি সিমি।বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছি।ওই যে আপনার পিছনে একটা নীল বিল্ডিং দেখতে পাচ্ছেন আমি তার দোতালায় থাকি।আর আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন,আপনি মহান কেও একজন।আপনার পাশে বসে বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছি।
-মহান তো অবশ্যই।একজন মহান ধোঁকা খাওয়া প্রেমিক।(বিড়বিড় করে)
-কিছু বললেন নাকি?
-নাহ কিছু না!ভুল তো অবশ্যই করেছেন একটা অপরিচিত ছেলের পাশে হুটহাট করে বসে পড়া ভুল কিছু নয় কি?
-হুম!এখন আপনার নাম টা বলা যাবে কি?
-আমি মেঘ।
-অহহ আচ্ছা!আসলে আপনাকে বিগত কয়েকদিন ধরে দেখছি আপনি এখানে বসে থাকেন।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে আনমনে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকেন,কখনো বা হাঁ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।আপনার এই সব দেখে কৌতুহলের জন্ম হয়েছেতো তাই এসে কথা বলতে ইচ্ছে করল।
-তারমানে আপনি আমাকে এত দিন ধরে অনুসরণ করছেন?
-হ্যাঁ করছি তো।আপনি প্রতিদিন বিকালে এখানে এসে বসেন হাতে থাকে সবসময় এই অসহ্য জ্বলন্ত সিগারেট।গভীর রাতে আপনি এখান থেকে উঠে চলে যান।আচ্ছা এই ধোঁয়া উড়িয়ে কি শান্তি পান?জানেন না,ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর?
-আপনি তো দেখছি আমার খুঁটিনাটি সব কিছু জানেন! কি চান আমার থেকে?
-এই তো লাইনে এসেছেন।এখন বলেন আপনি কি করেন?এখানে প্রতিদিন এসে বসে থাকেন কেন?
-আচ্ছা কে আপনি?এত প্রশ্ন করছেন কেন আমাকে?চলে যান তো এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দিন।
-এহহ বললেই হলো! নদীর ঘাঁট কি আপনার একার।আমার ইচ্ছা হইছে আমি এখানে থাকবো।আপনার……
-ঠিক আছে আপনিই এখানে থাকেন।আমি চললাম।
অনেকটা রাগ নিয়েই সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম।ওহহ আপনাদের তো পরিচয়ই দেওয়া হয়নি।
“আমি মেঘ।বাবা-মার একমাত্র সন্তান।এই বার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।বাবা-মার অনেক স্বপ্ন আমাকে নিয়ে।আমি বড় হয়ে অনেক বড় কিছু হবো।সমাজে নিজের,বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করব।ঠিক তেমনি আমারো স্বপ্ন ছিল একজনকে নিয়ে।ছিল বলছি কারণ এখন তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।নীলা।আমার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ।যাকে ঘিরে ছিল আমার সকল রঙিন স্বপ্ন।কিন্তু আমি ছিলাম তার কাছে হাতের খেলনা মাত্র।তার স্বপ্ন ছিল হয়তো অন্য একজন কে ঘিরে।” সেদিন ওই মেয়েটার সাথে রাগ করে চলে আসার পর আমার চাচাতো বোনের বিয়ের কারণে তিন দিন আর সেখানে যেতে পারিনি।তিন দিন পর সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ সেখানেই বসে থাকতেই মেয়েটা আবার এসে হাজির।
-যাক আবার তাইলে আসছেন।আচ্ছা একটা কথা বলেন তো আপনি প্রতিদিন এখানে এসে বসে থাকেন কেন?
-নদী আমার ভাল লাগে তাই।নদীর ধারের স্নিগ্ধ বাতাসে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।নদীর বিশালতা নিজের মাঝে ধারণ করার চেষ্টা করি।
-প্রেমে ছেঁকা খেয়েছেন? অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।কেমন করে বুজলো সে?আমি তো তাকে বলিনি!
-উমম্ তা বুঝতেই পেরেছি।আচ্ছা মেয়েটা আপনাকে ছেঁকা দিলো কেন?দেখতে তো মাশআল্লাহ।
-না মানে মেয়েটা আমাকে ছেঁকা দেয় নি।ওর বাবা ওকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছে।আমার মত বেকারের হাতে কেই বা মেয়ে দিবে বলুন?
-বুঝলাম!এখন বলেন আপনি এই তিন দিন আসেন নি কেন?আমি আপনার জন্য কত অপেক্ষা করেছি জানেন?
-আমার তো এখানে আসার কোন কথা ছিল না!আর আপনি কে যে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন?
-তাই বলে আপনি আসবেন না?
-সেটা আমার ইচ্ছা।
-আচ্ছা আপনার ফেসবুক আইডিটা দেওয়া যাবে?
-নাহ দেওয়া যাবে না।আর আপনি আমাকে এত বিরক্ত করছেন কেন?
-আমি আপনাকে বিরক্ত করছি?
-জ্বী করছেন।
-সরি,আর আপনাকে বিরক্ত করব না। ভালো থাকবেন।(মেয়েটা মুখ কালো করে চলে যাচ্ছিল,চোখ ছলছল করছে এই বুঝি কেঁদে দিবে)
এটা দেখে কেন জানি মায়া হল।তাই আইডিটা দিয়ে আসলাম।আর আসার সময় বলে আসলাম আমার বোনের বিয়ের জন্য এই তিন দিন আসতে পারিনি। এরপর থেকে আমাদের প্রতিদিনই দেখা হয় নদীর তীরে।নিয়মিত কথা হতো ম্যাসেঞ্জারে।এভাবে কেটে যায় প্রায় কয়েক মাস।আপনি ডাকটা এখন তুমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।পাগলীর মত প্রতিদিন হাজারো কথা বলতো আমার সাথে।যত আজব,উদ্ভট বায়না করত আমার কাছে।এক্কেবারে পুরাই পাগলী একটা।আশেপাশের সবাই ভাবতো আমরা রিলেশনে আছি।যদিও আমি কখনো এমনটা ভাবিনি।কারণ দ্বিতীয়বার আবার কারো প্রেমে পড়া আমার দ্বারা সম্ভব না।
“ইদানিং সিমির কথা গুলো কেমন জানি লাগছে।কথা বলার ধরণ, চালচলনে আমাকে বোঝাতে চায় সে আমাকে ভালোবাসে।বুঝতে পারছি যে মেয়েটা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।বাট আমি চাই না আবার কারো সাথে রিলেশনে জড়াতে।তাই যতটা সম্ভব আমি সিমিকে এড়িয়ে চলছি।আকার ইংগিতে বোঝাতে চাইছি আমি তাকে ভালোবাসি না।কিন্তু আজকে হঠাৎ সিমি আমাকে ডেকে এনে প্রপোজ করে প্রমাণ করে দিল সে আমাকে ভালোবাসে।”
আজ দুপুরের দিকে সিমি ফোন দিয়ে বলে মেঘ আজকে একটু তাড়াতাড়ি নদীর ঘাটে আসতে পারবা? কিছু কথা ছিল।
ওর কথা মত আমি বিকালে ৪ টার আগেই সেখানে পৌছালাম।গিয়ে দেখি সিমি আরো আগে থেকেই সেখানে বসে আছে।আমি গিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।কিছুক্ষণ নিরবতা থেকে সিমি বললো,আচ্ছা মেঘ নদীর কি ভাষা আছে?ওর দিকে তাকিয়ে দেখি গভীর আগ্রহে উত্তরের অপেক্ষায় আছে।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,হয়তো। সিমি উঠে নদীর একদম কিনারে গিয়ে জোরে বলে উঠলো আই লাভ ইউ মেঘ,আই লাভ ইউ।তোমাকে সারজীবনের জন্য আমার পাশে চাই।তোমার ওই হাত ধরে চলতে চাই অজানা দিগন্তে! সেই শব্দ চারদিকে বার বার প্রতিধ্বনি হতে থাকে।আমার বিশ্বাসের দেয়ালটা মুহুর্তেই ভেংগে চুরমার হয়ে যায়। আমার ধারণা ছিল এত এড়িয়ে চলার পর সিমি আমাকে আর ওর ভালোবাসার কথা বলবে না।হয়তো সে বুঝতে পারছে যে আমি তাকে ভালোবাসি না।
সিমি পিছন ফিরে বললো,”দেখেছো মেঘ নদীরও ভাষা আছে আমি তাকে একটা কথা বললাম সেও আমাকে সেই কথাটা পুনরায় ফিরিয়ে দিল।” আচ্ছা মেঘ দিবে কি আমাকে তোমার ওই হাত দুটো ধরার সুযোগ? আমি সেখান থেকে কিছু না বলেই ফিরে আসি।কারণ আমার পক্ষে কারো সাথে রিলেশনে যাওয়া সম্ভব না। “আজ বড্ড নীলার কথা মনে পড়ছে।কি না করিনি আমি তাকে পাওয়ার জন্য?খুব বেশি ভালোবাসতাম আমি নীলা কে।খুব বিশ্বাস করে ওকে আমার নিজের জীবনের অধিকার সঁপে দিয়েছিলাম, কিন্তু দিনশেষে জানতে পারলাম সেই মানুষটি অন্য কারো সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত।সেটাও একজন না কয়েকজন।আমি জানতাম যে নীলার আগে একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু সে নীলাকে ছেড়ে চলে গেছে।
এই সব জেনেই আমি তাকে আপন করে নিয়েছিলাম কিন্তু কে জানত যে ওর কাজই এটা।ছেলেদের সাথে রিলেশন করে তাকে মিথ্যে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করা!অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম আমি তাকে।কিন্তু আমাকেও সে আর দশ জনের মত ছুড়ে ফেলে দিলো।একবার ভেবেও দেখলো না তাকে ছাড়া আমি কিভাবে চলব?” দুর এই সব আমার কে ফোন দিলো।হাতে নিয়ে দেখি সিমি ফোন দিয়েছে।কি বলব এই মেয়েকে?নীলা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের অস্তিত্বও আমি কল্পনা করতে পারি না।আবার এটাও বলতে পারব না যে নীলা আমার সাথে প্রতারণা করে চলে গেছে।কারণ সে আমার সাথে প্রতারণা করলেও আমি তো সত্যিই তাকে অনেক ভালোবাসতাম।কিভাবে তাকে অন্যের কাছে প্রতারক বানাই? ভাবতে ভাবতেই ফোন টা কেটে গেল।আবার রিং হতেই ফোনটা ধরে ফেললাম।
-মেঘ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল?
-কি বলবা তাড়াতাড়ি বল আমার কাজ আছে।
-কেন এমন করলা?আমি তো তোমার সব অতীত জেনেই তোমাকে মেনে নিয়েছি।কি নেই আমার?
-সিমি শোন,আমি জানি তুমি অনেক ভাল একজন মেয়ে।
ভবিষ্যতে আমার চাইতেও অনেক ভাল কাওকে তুমি পাবা।তোমাকে ভালোবাসার যোগ্যতা আমার নেই।আমি একজন প্রতারক।আমি ভালবাসায় বিশ্বাসী না।আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি না।তোমাকে বলছিলাম নীলার বাবা নীলাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে এটা ভুল।আমিই নীলার সাথে প্রতারণা করেছিলাম।কাওকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তার সাথে খেলা করায় আমার কাজ।কিন্তু এটা আমি তোমার সাথে পারব না কারণ তুমি অনেক ভালো মনের এবং আমার খুব কাছের একজন মানুষ ছিলে।আমার কোন যোগ্যতা নেই তোমাকে কাছে পাওয়ার।আশা করি তুমি উত্তরটা পেয়েছো?
-কিন্তু মেঘ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।আমার সব টা জুড়েই যে তুমি!
-এটা হাস্যকর কথা সিমি।মানুষ নিজের চাইতে কখনোই কাওকে বেশি ভালোবাসে না।আজ যেটা ভেবে তুমি মন খারাপ করছো কাল সেটা ভাবলেই তুমি হাসবে।জীবন কারো জন্য কখনো থেমে থাকে না।তুমিও এক সময় আমাকে ছাড়াই খুব ভালোভাবে চলতে পারবা।আজকেই হয়তো আমাদের শেষ কথা।ভালো থেকো সব সময় আর নিজের খেয়াল রেখো।আল্লাহ হাফেজ।
-মেঘ মে….
ফোনটা কেটে দিয়ে সিম খুলে ভেঙ্গে ফেললাম।আমি চাই না আমার জীবনে আবারো কেও আসুক।হয়তো প্রত্যেক অবহেলিত ভালোবাসায় এমনি হয়।অসহায়ের মত পরাজিত হয় অপর পাশের মানুষের কাছে? “একটা মানুষ হলফ করে বারবার বলে যে সে আপনাকে ভালোবাসে। আপনার বিশ্বাস হয় না, কিছুতেই বিশ্বাস হয় না আপনার… পৃথিবীতে কেউ কাউকে এত ভালবাসতে পারে? কিন্তু সেই মানুষটা আপনাকে বিশ্বাস করায়। ক্রমশ একসময় স্থান করে নেয় আপনার মন-মস্তিষ্কে-জীবনে। তারপর একদিন যখন আপনি সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেন তাঁকে, আপনার গোটা অস্তিত্ব যখন কেবলমাত্র তার জন্য বরাদ্দ হয়, তখন আস্তে আস্তে বের হয় ভালোবাসার “সত্যিকারের” চেহারা।ওয়াদা গুলো মিথ্যা হয়ে যায়, অনুভবগুলো বিবর্ণ হয়ে যায়, বিশ্বাস হয়ে দাঁড়ায় সবচাইতে মূল্যহীন বস্তু। “
হয়তো আমার সাথে এমন টা হয়েছে।নীলা হয়তো আমার সাথে প্রচারণা করেছে কিন্তু আমি তো করিনি।আমার মনে-প্রাণে,সকল ভাবনাতে ছিল নীলা।যেখানে অন্য কাওকে বসানো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।নীলা আমার ভেতরের এমন একটা সত্তা যাকে মন প্রান সঁপে শ্রদ্ধা করা যায়, হৃদয় উজার করে ভালবাসা যায়। শুধু দুঃখ একটাই যার জন্য আমার হ্নদয়ে এত ভালোবাসা যার জন্য আমার এত আশা-আকাঙ্ক্ষা সেই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেল।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত