ফিরে পাওয়া ভালবাসা

ফিরে পাওয়া ভালবাসা
প্রচন্ড গরম।তার উপর এই লোকাল বাসে উঠার কারণে শার্টটা ভিজে গেছে।মনে হচ্ছে মাত্র পুকুর থেকে গোসল করে উঠলাম।দাঁড়িয়ে আছি বাসের একটা খুটি ধরে।সামনে আর পিছন থেকে মানুষের ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমার বমি বমি ভাব চলে আসছে।কিন্তু কিছুই করার নাই।আমাকে খুব তাড়া আছে।আজকে কলেজে একটা এসাইন্টমেন্ট জমা দিতে হবে।তাই বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হচ্ছে।একেতো মানুষের ধাক্কা তার উপর এই অসহ্য গরম।ইচ্ছা করছে বাসটাকে উল্টিয়ে দিই।রাগকে কোনোমতে কন্ট্রোল করে পাশের সিটে তাকালাম।হঠাৎ আমার চোখ গেলো জানালার পাশে বসা একটা মেয়ের দিকে।তার খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।তার চুলগুলো থেকে একটা মাতাল করানো গন্ধ আসছে।
যেটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।গন্ধটা আমার খুব পরিচিত।এইটা নীলিমার চুলের গন্ধ।মেয়েটা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই তার মুখটা দেখতে পাচ্ছিনা।যে করে হোক আমাকে তার মুখটা দেখতে হবে।আর নীলিমা এখানে কেনো আসবে।সেতো অন্য শহরে থাকে।নীলিমা হচ্ছে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা।আমি নীল।অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি।আর নীলিমাও ৩য় বর্ষে।দুই বছর আগে তাকে প্রথম দেখেছিলাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্টানে।সেদিন ওকে দেখে মনের ভিতরে এক শিহরণ জেগেছিল।অনুষ্টানের প্রতিটা সময় আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়েছিলাম।এরপর থেকে আমি ওকে ফলো করতাম।এইটা সে খেয়াল করেছিল।একদিন সে আমাকে এসে বলল,
নীলিমাঃএই ছেলে তোমার সমস্যা কি?আমাকে প্রতিদিন ফলো কর কেনো? আমি সেইদিন নিশ্চুপ ছিলাম।ওর কথাগুলো আমার কাছে খুব মধুর মনে হয়েছিল। আমি কিছু না বলে পিছনে ফিরে হাটা দিলাম।এভাবে প্রায় ৬মাস ওকে ফলো করতাম।নীলিমা আমাকে মাঝেমধ্যে ডেকে অনেক বকা দিত।আমি ওর কথা হা করে শুনতাম।অনেক সাহস নিয়ে কোনো এক গৌধুলী বিকালে আমি তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।সেইদিন সে আমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলল,
নীলিমাঃএই কথাটা বলতে এতদিন লাগলো?
আমিঃকি করবো বল প্রতিদিনই আসি কথাটি বলার জন্য কিন্তু বলতে পারিনা।
নীলিমাঃকেনো?
আমিঃতোমার সামনে আসলে আমি সব ভূলে যায়।
নীলিমাঃতাই।
আমিঃহুমম।
নীলিমাঃআমাকে ছেড়ে কখনো যাবেনাতো?
আমিঃনা।
তখন নীলিমা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এরপর থেকে আমাদের একসাথে পথ চলা।কিন্তু কথায় আছে সুখ বেশিদিন স্থায়ী থাকেনা।কোনো এক কালবৈশাখী ঝড় এসে সব কিছু তছনছ করে দিল।নীলিমার বাড়িতে আমাদের সম্পর্কে জানতে পারে।তখন তার বাবা তাকে নিয়ে অন্য শহরে চলে যায়।ওর সিমটাও ভেঙে ফেলে দেয়।আমি অনেক খুজেছি তাকে।কিন্তু পায়নি খুজে।ওকে ভুলে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।খুব টেনশনে পড়ে যায়।সারাক্ষণ ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম।কিন্তু প্রতিদিন দেখতাম বাড়িতে থালা মারা।তারপর আমি ফিরে আসতাম।খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিলাম।মা-বাবা আমার অবস্থা দেখে কান্না করতো।একদিন আম্মু এসে বলল,
আম্মুঃবাবা আর কত নিজেকে কষ্ট দিবি।আমাদের কথা একটু ভাব।তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কিভাবে বাচবো বল?প্লিজ বাবা এসব ভুলে নতুন করে সব শুরু কর।
ঐদিন মায়ের কথা শুনে নিজেকে পাল্টে নি।আমি নীলিমার স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য নিজের শহর ছেড়ে এই শহরে চলে আসি।আসলে অনেক ভাবে চেষ্টা করতাম ওর কথা ভুলে থাকতে।কিন্তু পারলামনা।এখানে এসেও তার কথা ভেবে কাঁদতাম।এভাবে কেটে গেল দুই বছর তিন মাস দশদিন।আজকে হঠাৎ এভাবে ওকে খুজে পাবো ভাবতে পারিনি।আমি এখনো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ সে আমার দিকে মুখ ঘুরালো।আমি অবাক।এইটা সত্যিই নীলিমা। ওকে দেখে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুইফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।নীলিমার চোখেও নোনা জল দেখতে পেলাম।সে আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।নীলিমা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আর আমি তার দিকে।তখন বাসের এসিস্টেন্টের কথায় আমার ঘোর খাটলো। এসিস্টেন্ট বলল, মিরপুর চলে এসেছি।আমি তাড়াতাড়ি নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।দেখছি নীলিমাও নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।দুজনে একসাথে নামলাম।কিন্তু কেউ এখনো কথা বলিনি।হঠাৎ নীলিমা বলে উঠলো,
নীলিমাঃকেমন আছো নীল?
আমিঃযেমনটা রেখে গিয়েছিলে।
নীলিমাঃসরি আমাকে ক্ষমা করে দাও।ঐদিন আব্বু আমাকে জোর করে এইখানে নিয়ে আসে।আমি আসতে চাইনি।সত্যি বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অনেক ভালিবাসি।
আমিঃনিশ্চুপ।
নীলিমাঃজানো প্রতিটা সময় শুধু তোমার কথা মনে পড়তো।তোমার কথা ভেবে আমি প্রতিটা রাত কেঁদেছি।আব্বু মোবাইল ভেঙে ফেলার কারণে আমি আর তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।যানো আজকে আমি খুব একা।এই পৃথীবিতে আমি একা হয়ে পড়েছি।(কান্না করতে করতে) নীলিমার কান্না আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।ওকে কাদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে।ভালবাসার মানুষটাকে কাদতে দেখলে খুব কষ্ট হয়।তখন আমি বললাম,
আমিঃতুমি একা হতে যাবে কেনো?আনকেল আন্টি আছে তো।
নীলিমাঃনাই ওনারা কয়েকমাস আগে একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়।আর আমি এই পৃথীবিতে একা হয়ে পড়ি।যানো একটা মেয়ের পক্ষে এই পৃথীবিতে বেচে থাকা খুব কষ্টের।অনেক কষ্টে কয়েকটা টিউশন করিয়ে পড়ালেখা আর অন্যান্য খরচ জোগায়।(কান্না করতে করতে) এবার আমিও কাদতে লাগলাম।এতটা কষ্ট সহ্য করেছে সে।আর আমাকে একটিবার জানানোর চেষ্টা করলোনা সে?আমি বললাম,
আমিঃএকটি বার আমাকে জানাতে পারতে?
নীলিমাঃকিভাবে জানাবো বল?তোমার নাম্বার ছিলনা আমার কাছে। না আমি আর ওকে কষ্ট সহ্য করতে দিবনা।হয়তো তাকে এখনো খুব ভালিবাসি।নিজের থেকেও বেশি।তাইতো তাকে কাদতে দেখে নিজেও কেদে দিয়েছি।এবার আর তাকে কষ্ট পেতে দিবনা।তখন আমি বললাম,
আমিঃআমাকে আরেকটিবার সুযোগ দিবে তোমার সাথে পথ চলার?দিবে কি একটা সুযোগ তোমার দুঃখকে আপন করে নেওয়ার।খুব ভালবাসি।ঠিক আগের থেকেও বেশি। নীলিমা প্রথমদিনের মত আজকেও কান্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
নীলিমাঃআমাকে ছেড়ে কখনো যাবেনাতো?
আমিঃনা যাবোনা।আর তোমাকেও যেতে দিবনা।চল আমার সাথে।
নীলিমাঃকোথায়?
আমিঃকাজী অফিসে?
নীলিমাঃকেনো?
আমিঃতোমাকে একেবারের জন্য আপন করে নিতে।
আমি একটা রিক্সা ডেকে আনলাম।রিক্সায় আমি আর নীলিমা বসে আছি।রিক্সা তার আপন গতিতে চলছে।আর নীলিমা আমার কাধে মাথা রেখে কাদছে।এইটা সুখের কান্না।কাঁদুক না আরেকটু।এরপর থেকে আর কোনোদিন তার চোখে জল আসতে দেব না।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত