শুভ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।ওর চোখের পানিতে আমার গলা ভেসে যাচ্ছে।এতোটা পাগল বলে বোঝাতে পারবো না।বিয়ের তিন বছরে অনেক রকম পাগলামি দেখেছি ওর।কিন্তু কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি।কিন্তু আজ অনেক কাঁদছে। আমি ওকে বাধা দিচ্ছি না।কাঁদুক ও।কাঁদলে মন হালকা হয়।শুভ আমার গলা থেকে উঠিয়ে ভেজা কন্ঠে বলল”নিপা আমি পারবো না এটা করতে।”
আমি কিছু বললাম না শক্ত করে ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরে রইলাম।তারপর কিছুক্ষণ পর বললাম”তোমাকে পারতে হবে শুভ।তোমাকে আমি ভালোবাসি।আমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে হবে তোমায়।আর তাছাড়া আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।আমি তোমার কাছেই আছি।তুমি অমত করো না।বাবা মায়ের এই ইচ্ছেটা তুমি পূরণ করো।কথা দাও আমায় কাল তুমি বিয়েটা করবে।” শুভ কিছু না বলে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো।আমারও অনেক কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করলে পাছে শুভ যদি ভেবে বসে আমি কষ্ট পাচ্ছি তাহলে কেউ ওকে দিয়ে বিয়েটা করাতে পারবে না।
সারা রাত স্বামী স্ত্রী কান্না করলাম।সকাল উঠতে গিয়ে দেখলাম শুভ আমাকে দুইহাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আমি ওর মুখের ওপর ঝুকে ওকে দেখতে লাগলাম।কাল সারা রাত কান্না করে চেহারা ফুলিয়ে ফেলেছে।এভাবে কখনোই হয়তো আর দেখা হবে না ওকে।তাই আজ নাহয় প্রাণ ভরে একটু দেখে নেই।আমি আস্তে করে ওরে ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে পড়লাম। নাস্তা বানাচ্ছিলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ পেটে হাত দিয়ে থুতনিটা আমার ঘাড়ে রাখলো।বুঝলাম এটা শুভ।মুচকি হাসলাম কিছু বললাম না।শুভ ঘুমঘুম কন্ঠে বলল”নিপা তোমার চুলের ঘ্রাণটা এতো সুন্দর কেনো?পাগল হয়ে যাই আমি।”
শুনলাম আমি কিন্তু কিছু বললাম না।শুধুই হাসলাম।শুভ কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা করে নি।ঘুরিয়ে কোমরটা ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার চুলের আধো খোপা খুলে দিলো তারপর কিছুটা হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আমিও ধরলাম।অনুভব করলাম সে কাঁদছে।আমারও কিছু বলার মতো ভাষা নেই।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল”নিপা এটা না করলে কি হয় না?”
“না হয় না।তুমি এটা করবে।আমি তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেবো না।আমার কারণে তুমি কেনো বাবা ডাক শুনবে না?তোমাকে মানুষ এর জন্য অপমান করবে এটা আমি সইতে পারবো না।আমি চাই আমার শুভ বাবা হোক।তার একটা বাবু থাকুক।তাকে যেনো কেউ বাবা বলে ডাকে।” শুভ কিছু বলল না আবার জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওকে নাস্তা খাইয়ে ওর বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।সেখানে ওর বাবা মা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। শুভ চলে যেতেই বুঝলাম না কি হলো আমার।দুচোখ ভরে ভরা বর্ষণ শুরু হলো।কিছুতেই মানতে পারছিলাম না আমার শুভ অন্য কারো হবে।
যেদিন শ্বাশুড়ি মা বলেছিলেন তিনি নাতি নাতনি চান।তাই শুভকে মুক্তি দিতে সেদিনই আমি একবোতল বিষ কিনেছিলাম।কারণ আমি জানতাম আমি বেঁচে থাকতে ওকে আর কারো সাথে দেখতে পারবো না।ভেবেই রেখেছিলাম যেদিন শুভ অন্যকারো হবে সেদিনই আমি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো।অতঃপর হাতে থাকা মুক্তির মহা ঔষধটা পান করে নিলাম।গলাটা জ্বলছে।আস্তে আস্তে জ্বলুনি বাড়ছে আর সেই সোনালি দিনগুলি মনে পড়ছে।শুভর প্রত্যেকটা পাগলামি মনে পড়ছে।এতোটা পাগল ছিলো ও যে আমার সামান্য জ্বর হলেই সে চিন্তায় নিজেরও জ্বর বাধিয়ে ফেলবে।আর সব থেকে অদ্ভুত জিনিস হলো কষ্ট পেলে আমার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করবে।আমার সাথে অভিমান করলেও আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখবে কিন্তু কথা বলবে না।তখন আমি ওর অভিমান ভাঙানোর জন্য কাতুকুতু দিতাম।আর ও হেসে উঠতে।এভাবেই মহারাজের রাগ ভাঙাতাম।এতটুকুই মনে পড়ছে।আর কিছু মাথায় আসছে না।বুঝতে পারছি সময় শেষ।চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়েছি।
শুভ রাস্তা দিয়ে হাটছিলো।রাস্তা পার হওয়ার সময় কি জানি কি হলো শুভ গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পড়লো।শুভ কি এটা ইচ্ছে করে করেছে কি না কে জানে।তবে ওর লাশের পাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। নিপার বাসার কলিং বেল বাজছিলো।দরজা খুলতেই শুভ নিপাকে জড়িয়ে ধরে রাগ করে রইলো।নিপা হেসে কাতুকুতু দিতেই সে হেসে দিয়ে আবার গাল ফুলিয়ে বলল”তুমি আমাকে একা ফেলে এসেছিলে কেনো?”
“ওরে বুদ্দু দেখো তুমি আমাকে একা আসতে দিলা কই নিজেও তো আমার সাথে চলে এসেছো।”
“তুমি তো জানোই তোমাকে ছাড়া পারবো না থাকতে।”
“হুম আজকের পর থেকে কেউ আমাদের আলাদ করতে পারবে না।আমাদের ভালোবাসা অমর।”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা