বাসর রাতে প্রবেশ এর পর বউয়ের ঘোমটা তোলার পর আমি অবাক হয়ে গেলাম।একটা শ্যাম বর্ণের মেয়ের সাথে আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছে।নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।কি ভাবে সম্ভব। এই কাজ নিজের ছেলের সাথে করতে পারলো আমার বাবা।
আমার নাম নীল। একটা কোম্পানিতে চাকুরী করি।আমাদের পরিবারের রীতি হলো বয়োজ্যেষ্ঠরা যাকে পছন্দ করবে তাকেই বিয়ে করতে হবে।বিয়ের আগে ছেলে -মেয়ের মুখ দেখতে পারে না। আমার পরিবার এর সব ভাইয়ের বউগুলো সুন্দরী। আমিও ভেবেছিলাম আমার বউ সুন্দরী হবে।কিন্তু কি আনলো আমার জন্য। আমি নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। আমি কাকে কি বলবো।কিছুই বলার নেই আমার। নিজের কপালে দোষ দিতে থাকলাম। খাটের উপর বসে থাকা মেয়েটি আমার দিকে তখনও চেয়ে আছে।আমি জিজ্ঞেস করি আপনার নাম কি।মেয়েটি বলে আমার নাম রাবেয়া আরবী। নামটা তো সুন্দর কিন্তু চেহারা তো ভালো না।
আমি আরবীকে বললাম আপনাকে তো আমি দেখি নি বিয়ের আগে।আমি জানতাম না আমার পরিবার আমার সাথে এই রকম করবে আমার কি বিশ্বাস ঘাটকতা করবে।কি আর করার আমাকে এখন সব মেনে নিতে হবে।কিন্তু আরবী শুনেন আমি আপনাকে কোনো দিন স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না।আপনি কোনো দিন স্ত্রীর অধিকার পাবেন না আমার কাছে। আমার কথা শুনে মাথা নিচু করে চোখের পানি পড়তে থাকে আরবীর। আমি বারান্দায় যেয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিলাম।
পরদিন বাসার সবার সাথে ঝগড়া হয় আমার সাথে। সবার কথা মেয়ে ভালো। ফর্সা,শ্যাম, কালো সব আল্লাহর সৃষ্টি। মেয়ে ভালো এটা বড় কথা।আমার মন তো এই কথা মানতে পারছে না।সবার সাথে রাগ হয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম।আরবী আমার সাথে কথা বলতে চাইলেও আমি ওর কথা শুনতাম না। বাসায় যে কয়দিন থাকতাম দেখতাম নীরবে জায়নামাজ এ বসে আরবী চোখের পানি ফেলতো।আমি হ্রদয়টা পাষাণ এর মত হয়ে গেছে। কিছু দিন পর আমি ঢাকায় চলে আসি।বাসার কারোর সাথে যোগাযোগ হয় না তেমন। আরবী শুধু আমাকে ফোন দিতো খাবার এর সময় খেয়েছি কিনা।অনেক সময় ইচ্ছাকৃত ধরতাম না ফোন।
এই ভাবে কিছুদিন চললো।এরমধ্যে আমি একটা বিপদ এ পড়ি কোম্পানির একটা কাজে।আমার উপর ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়ার চাপ উঠে।কি করবো কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বাসার সবাইকে বলি।কেউ তখন এতো টাকা আমাকে দিতে চায় না।সবাই মজা নিতে থাকে আমার থেকে।সবাই যখন আমার পাশে থেকে সরে গেছে তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আরবী।নিজের সব অলংকার এবং নিজের বাপেরবাড়ি থেকে টাকা এনে আমার হাতে দেয়।আমাকে বলে আমি যেন তারাতাড়ি এই ঝামেলা দিয়ে তারাতাড়ি মুক্ত হই।আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। যাদের আজ আমার পাশে দাড়ানোর কথা তারাই আমাকে পাত্তা দিলো না।আর যাকে এতো দিন আমি সুন্দর না বলে অপমান করতাম দিন শেষে সেই আমার পাশে।নিজের কাছে আজ নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে।দৈহিক সুন্দরতা চেয়ে যে মনের সুন্দরটা বড় আজকে বুঝতেছি।
আমি আরবীর টাকা নিয়ে নিজের ঝামেলা থেকে বাচলাম।আমি নিজেই বুঝি সব দোষ আমার। ভুল আমার ছিল। কারণ আমি মানুষ চিনতে পারি নি। আমি আরবীর কাছে ক্ষমা চাই।আরবী আমাকে বলে কি করেন আপনি। আপনি আমার স্বামী। আমি জানতাম আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন একটা সময়। আজ দেখুন তাই হয়েছে। আসলে আমার বউটিকে ভালো মতো করে কোন দিন দেখি নাই।আরবীকে কোলে করে ছাদে নিয়ে যাই।এরপর আরবী আমার কোলে শুয়ে থাকে। দুইজন এর মিলে আকাশে ভালোবাসার তারা দেখতে ছিলাম।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা