:-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।(মেঘা)
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম এমন সময় মেঘা উপরোক্ত কথাটি বললো।আমি আয়নার সামনে থেকে ঘুরে তাকালাম তারপর মেঘাকে জরিয়ে ধরে বললাম
:-শুনি মহারাণী কি বলতে চাই।
:-আমাদের মনে হয় এখন আলাদা হওয়া উচিত।
:-মানে?
:-আমি ডিভোর্স চাই। আমি মেঘার কপালে একটা আদর করে বললাম
:-মহারণী আমার উপর কেনো রাগ করেছে?
:-আমি সিরিয়াস। প্লিজ বিষয়টাকে ফাজলামি ভেবোনা।
:-হয়েছে।আর রাগ করতে হবেনা।আজ অফিসে যাবোনা।সারাদিন তোমাকে সময় দিবো আজ।খুশি এবার?(আমি) মেঘা আমার কাছ থেকে নিজেকে এবার এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো।চিৎকার বললো
:-তুই সবকিছুতে কেনো সিরিয়াস হসনা।আমি বলছিনা তোর সাথে থাকতে চাইনা।(মেঘা)
:-কি হয়েছে আজ তোমার?এমন বিহেব করছো কেনো?
:-তুই বুঝিস না কেনো এমন করছি?
:-মেঘা শান্ত হও।তুমি গর্ভবতী, এভাবে চেঁচামেচি করলে দুজনের ক্ষতি হবে।শান্ত হয়ে বসে তারপর বলো সবকিছু।
:-আমি পারবোনা শান্ত হতে।তোর সাথে থাকতে চাইনা আমি।
:-আমার অপরাধ কি?
:-দুজনের লেভেল।
:-মানে?
:-তুই কিসের চাকরী করিস?সামান্য একটা ব্যাংকে।আর আমি কে জানিস?প্রশাসনে বিসিএস ক্যাডার।কোথায় তুই আর কোথায় আমি।
মেঘার এমন ব্যবহারে মোটেও অবাক হয়নি।কারণ কয়েকদিন যাবৎ মেঘা আমার সাথে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করছে।এতদিন খারাপ ব্যবহার করার কারণটা স্পষ্ট নাহলেও আজ সেটা স্পষ্ট হলো।মানুষ যখন উপরের লেভেলে ওঠে যায় তখন নিচের লেভেলের মানুষকে তারা মানুষ মনে করেনা। ও আমাদের পরিচয় দেওয়া হয়নি।আমি হুসাইম আহম্মেদ।একটা বে-সরকারী ব্যাংকে জব করি।মেঘা আমার ওয়াইফ। আমার বিয়ের প্রায় ২ বছর হতে চললো।
:-আস্তে কথা বলো।বাসায় আব্বু আম্মু আছে।(আমি)
:-আস্তে বলার কিছু নেই।আমি আজ বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি।
:-হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো?
:-সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে নাকি?
:-হ্যা তাই।
:-আমার এই বিয়েটা করার উদ্দেশ্য ছিলো মূলত বিসিএস দেওয়া।আব্বু আম্মু বাসা থেকে অনেক চাপ দিচ্ছিলো বিয়ের জন্য তাই বিয়েটা করেছিলাম।এই জন্য বিয়ের আগে তোর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম আমাকে বিয়ের পরে পড়াবে কিনা।তুই পড়াতে রাজি হওয়ায় করেছিলাম বিয়ে।
:-প্লিজ এমন পাগলামি করোনা।আর মাএ ২ মাসের মত আছে আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার।অনন্ত ওর কথা ভাবো।
:-কারো কথা ভাবার সময় নেই আমার।বাচ্ছাটাকে নষ্ট করে দিবো ডিভোর্সের পরে।
:-তোমার পায়ে ধরি প্লিজ এমন করোনা।তুমি যা চাইবে আমি তাই দিবো।
:-লাগবেনা তোর কিছু।আমি এখন বিসিএস ক্যাডার।তোর থেকে অনেক বেশি বেতন পাবো আমি।আর আমি একজনকে ভালোবাসি।
মেঘা কাউকে ভালোবাসে এটা শুনার পরে মনে হলো আমার মাথায় কেউ পাহাড় সমান বোঝা চাপিয়ে দিলো।যেই মেয়েটা আমি রাতে যত সময় না বাসায় ফিরি, ততসময় না খেয়ে থাকে,যে মানুষটা আমার বুকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারেনা সে বলছে এসব।নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছেনা এই মুহুর্তে।মনে হচ্ছে স্বপ্নে আছি আমি ঘুম ভেঙ্গে গেলে সব ভয় কেটে যাবে।
:-আর তাড়াতাড়ি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে সাইন করে দিও।(মেঘা) আমি মেঘার হাত ধরে বললাম
:-প্লিজ মেঘা এমন করোনা।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি।(আমি)
:-এত সময় ধরে যে কথাগুলো বললাম কানে যায়নি?
:-প্লিজ এমন করোনা।তুমি কি চাও বলো?যা চাইবে আমি তাই এনে দিবো।
:-আকাশের চাঁদ এনে দিতে পারবি?যদি পারিস তাহলে আমি থাকবো।
:-অসম্ভব কিছু কেনো চাইছো?তুমি জানো এটা পৃথিবীর কোন মানুষ পারবেনা।
:-তোর পক্ষে যেমন চাঁদ আনা সম্ভব না তেমনি আমার পক্ষে তোর সাথে পসিবল না।তোর লেভেল আর আমার লেভেলের মাঝে অনেক তফাৎ।(মেঘা)
আর কিছু বলার ভাষা আমার নেই।মেঘার হাত ছেড়ে দিয়ে খাটের উপর বসে পড়লাম।আজ আব্বুর কথাগুলো খুব মনে পড়ছে।আব্বু বলেছিলো বিয়ের পড়ে বউকে পড়াস না।বউকে বেশি পড়ালে দেখবি হিতে বিপরীত হবে।আব্বুর কথাটাই ঠিক হলো।বাবা মায়ের কথা না শুনলে তার জীবনে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়না।বিয়ের পর মেঘাকে পড়াতে দিতে সবাই নিষেধ করেছিলো, শুধুমাএ আমার জেদের কারণেই মেঘা পড়া শেষ করে বিসিএস দিয়েছিলো।১১দিন আগে ওর বিসিএস ভাইবা পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।ও বিসিএসে টিকেছে এই আনন্দে আমি আমার এলাকায় মিষ্টি পর্যন্ত বিতরণ করেছি।সবাইকে গর্ব করে বলেছিলাম আমার বউ এখন বিসিএস ক্যাডার।
:-কিরে এস চেঁচামেচি করছিস কেনো তোরা?(আম্মু) আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুখে বললাম
:-কিছু হয়নি আম্মু।মেঘা ওর বাবার বাসায় যাবে।আমি নিয়ে যেতে চাইনি তাই রাগ হয়েছে ওর।(আমি)
:-কিছু হয়নি আম্মু।
আপনার ছেলেকে কবে থেকে বলছি আমাকে একটু বাবার বাসা থেকে ঘুরিয়ে আনতে কিন্তু ও যাচ্ছেই না।বলেন রাগ হয়না তাহলে?(মেঘা) মেঘার কথা শুনে আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম।এতসময় কি বলছিলো আর এখন কি বলছে।কিছুক্ষণ আগের মেঘার সাথে এখনকার মেঘার আমি কোন মিল পাচ্ছিনা।।
:-হুসাইন তুই আজই বউমাকে নিয়ে আয়।(আম্মু)
:-আমি রেডি হয়ে গেছি আম্মু।এখনি যেতে বলেন।(মেঘা)
:-নিয়ে যা ওকে।একদিন অফিসে না গেলে কিছু হবেনা।আর বউমা তুমি নিজের আর সন্তানের খেয়াল রেখো।সাবধানে যেও।
:-ঠিক আছে আম্মু।
আম্মু চলে গেলো রুম থেকে।আমি মেঘার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। মেঘা আমাকে এভাবে তাকানো দেখে বললো
:-আম্মুর সাথে এমন ব্যবহার করলাম বলে ভেবোনা সবকিছু বদলে যাবে।আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।(মেঘা)
আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকলাম মেঘার দিকে আর মেঘা লাগেজ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।চোখ দিয়ে পানি পরছে নিজের অজান্তে সবকিছু গোছানো শেষে
:-চলুন।(মেঘা)
:-সত্যিই চলে যাবে? (আমি)
:-হ্যা।
:-আমার কি হবে তুমি চলে গেলে?আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বলো?আমি কাকে জরিয়ে ঘুমাবো রাতে বলো?
:-আরেকটা বিয়ে করে নিস তাতেই হবে।
:-প্লিজ এমন বলোনা।আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে।
:-এসব শোনার টাইম নাই আমার।গেলে চল আমার সাথে নাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি।
কি আর করার ইচ্ছা না থাকলেও মেঘাকে নিয়ে বের হতে হলো। আমি আর মেঘা পাশাপাশি বসে আছি।মেঘার দিকে তাকাচ্ছিনা।ওর দিকে তাকালে চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে।মনের সাথে যুদ্ধ করছি আমি।মনটা বলছে মেঘাকে জোর করে বেঁধে রাখতে কিন্তু চাইলেই কি কাউকে জোর করে বেঁধে রাখা যায়।আজ হোক আর কাল যে যেতে চাই সে যাবেই।হাজার চেষ্টা করলেও তাকে আটকে রাখা যাবেনা।
:-কি ভাবছো এত?(মেঘা)
:-কিছুনা।(আমি)
:-তুমি এখানে নেমে যাও।কষ্ট করে বাসা পর্যন্ত যেতে হবেনা।এইটুকু পথ আমি নিজেই যেতে পারবো।
:-আমার কষ্ট হবেনা।তোমাকে বাসায় পৌঁছে তারপর আমি বাসায় ফিরবো।
:-তার প্রয়োজন নেই।তুমি নেমে যাও এখান থেকে।তোমাকে আর সহ্য হচ্ছেনা আমার।
:-আমি চলে গেলে সুখে থাকবে তুমি?
:-অনেক সুখে থাকবো।
এবার আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।চোখের পানি মুছে মেঘার পাশ থেকে ওঠে দাঁড়ালাম।বাস স্টপে থামতেই নেমে পড়লাম।নিজেকে আটকে রাখতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।অনেক বেশি।মনে হচ্ছে আমার বুকে কেউ ছুড়ি দিয়ে কেটে টুকুরো টুকরো করছে। পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘার ভাইকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হবার পর রিচিভ হলো
:-আসসালামুওলাইকুম দুলাভাই।কেমন আছেন?(নিরব)
:-আমি ভালো আছি।তোমার আপু তোমাদের বাসায় যাচ্ছে।বাস স্টান্ড থেকে নিয়ে যেও।
:-আপনি আসছেন না?
:-না।আমার অফিসে জরুরী কাজ আছে।তুমি নিয়ে যেও কিন্তু।আর বাসায় গিয়ে আমাকে ফোন করে জানিও।
:-ওকে।
মেঘা একা বাসায় যেতে পারবেনা।গর্ভবতী হওয়ায় একা চলতে এখন ওর সমস্যা হয়।আমি চাইনা ওর কষ্ট হোক। পরের বাস ধরে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসতেই আম্মুর প্রশ্ন
:-কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি?
:-ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসলাম।(আমি)
:-তাই বলে এত তাড়াতাড়ি?
:-অফিসে কিছু কাজ আছে তাই।পরে আবার যাবো।
আম্মুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমটা আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে বিছানার উপর চোখ পড়তেই একটা ফোন দেখতে পেলাম।মেঘা ভুল করে ফোন রেখেই চলে গেছে। বিছানার উপর থেকে ফোনটা হাতে নিলাম।হঠাৎ মনে হলো মেঘা বলেছিলো ও কাউকে ভালোবাসে।ফোনটা চেক করলে হয়তো জানা যাবে এই ভেবে ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ দিলাম।ফোনের স্কিনে একটস ছবি ভেসে ওঠলো।আমার আর মেঘার।মেঘা আমার গলা জরিয়ে ধরে আছে পিছন থেকে। মেঘাকে আমি জিঙ্গেস করেছিলাম এই পিকটা দেওয়ার কারণ, ও বলেছিলো এই পিকটা ওর কাছে নাকি সবথেকে বেশি ভালো লাগে। নিজের অজান্তেই আবার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো। মেঘার ফোনের লক আমার জানা ছিলো তাই খুলতে কোন সমস্যা হলোনা। মেঘার পুরো ফোন ঘেটেও সন্দেহ জনক কিছু পেলাম না।বরং ওর ফোন চেক করে বুঝলাম ও আমাকে খুব ভালোবাসে। মেঘার ফোন দেখতে দেখতে একটা কল আসলো।নিরব ফোন করেছে।রিচিভ করলাম
:-হ্যালো নিরব।(আমি)
:-নিরব না আমি।(মেঘা)
:-ও তুমি।বলো
:-আমি ভুল করে ফোন রেখে চলে এসেছি,নিরব যাচ্ছে ওর কাছে দিয়ে দিও।
:-ওকে আসতে হবেনা।আমি নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবো।
:-তার দরকার নেই।আমি আপনার চেহারা দেখতে চাইনা।
:-এখন নিরব ফোন নিতে আসলে আব্বু আম্মু সন্দেহ করবে তাই আমি সন্ধার দিকে গিয়ে ফোন দিয়ে আসবো।
:-ওকে।তবে আমার সামনে আসবেন না।
:-ওকে।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।আমি নিজে ফোন দিয়ে আসতাম মেঘাকে আরেকটিবার কাছ থেকে দেখার জন্য।
কিন্তুু মেঘা আর আসলো না। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না ভালো থেকো মেঘা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা