বিবাহবার্ষিকী

বিবাহবার্ষিকী
আজ আমাদের ৭ম বিবাহবার্ষিকী। গতবার বিবাহবার্ষিকীতে তার দেওয়া লাল পাড়ের কালো শাড়িটি পড়লাম। হালকা করে সাজলাম কাজলও লাগালাম চোখে। জানি কাজলে আমার চোখ ভীষন জ্বালা করে তবুও প্রিয় মানুষটার জন্য তো একটু কষ্ট সহ্য করাই যায়। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কানের দুল আর হাতে লাল কালো মিলিয়ে কাঁচের চুড়ি পড়লাম। আমার চারবছরের পিচ্চি মেয়ে এসে বলে,,,
“”মাম্মাম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে একদম প্রিন্সেসের মাম্মাম লাগছে। “”
“”তাই নাকি আম্মু?? “”( গাল টেনে বললাম )
“”হুহুহু। আমার মাম্মাম দি বেস্ট বিউটি কুইন মাম্মাম। “”( হাতে চুমো খেয়ে বলল )
“”আমার মাম্মামকেও খুব সুন্দর লাগছে৷ একদম প্রিন্সেসের মতো। “”
“”মাম্মাম আমি প্রিন্সেস ড্রেস পড়েছি।
“”হ্যাঁ তো।””
“” মাম্মাম,, ড্যাডি কখন আসবে?? “”
“”ওয়েট করো মাম্মাম। আমি তোমার ড্যাডিকে কল করছি। “”
“”আচ্ছা আমি টিভি দেখি। “”
“”আচ্ছা যাও মাই ডিয়ার। “”( ওর কপালে চুমো খেয়ে বললাম )ইরিশা চলে যাওয়ার পর ওর বাবাকে কল করলাম।
“” কি হলো?? তুমি কই?? “”
“”ব্যাস্ত আছি অফিসে । অফিসে আজকে বস আসছে। আসতে দেরি হবে। তোমরা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। “”
“” আচ্ছা।
( একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম। এ আবার নতুন কি ?? ) রুমের লাইট অফ করে জানলার সাথে মাথা হেলান দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। আমাদের প্রেমের বিয়ে। প্রেম ছিলো ৩ বছর তারপর ফ্যামিলির সাপোর্টেই বিয়ে। কত সুন্দর ছিলো আমাদের জীবন!! সে বিয়ের আগে আমাকে যখন তখন ঘুরতে নিয়ে যেত আমি রাগ করে থাকলে আমাকে জোর করে কোলে তুলে নদীর পাড়ে নিয়ে যেতো। সেরকম একদিনের ঘটনা — “”ডার্ক চকলেট তুমি কি জানো নদীর একটি বৈশিষ্ট্য?? “”আমি চুপ করে ছিলাম৷ ভীষণ অভিমান ছিলো তার সাথে। সেনিজেই উত্তর দিলো –
“”নদীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো তার একপাড় ভাঙ্গবে অন্য পাড় গড়ার জন্য। আমাদের মানুষের জীবনটাও অনেকটা এই রকম। আমাদের মনও ভাঙ্গে কেন জানো?? অন্য পাড় গড়ার জন্য। অন্য কারো জন্যই আমাদের মতো হাজার হাজার সম্পর্ক ভেঙে যায় কারন তাদের চাহিদা শেষ এখন অন্য কাউকে তাদের প্রয়োজন তাই নদীর পাড়ের মতোই তাদের সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়। কিন্তু নদীর পানির কোনো বদল হয় না কারন জানো?? নদীর পানি এক। আমাদের ভালোবাসতে হবে নদীর পানির মতো,,, পাড়ের মতো নয় তাহলে তা ভেঙে যাবে। নদীর স্রোতের পরিবর্তন হয় কিন্তু পানির হয় না। আমাদেরও ঠিক তেমনি সম্পর্ক হবে নদীর স্রোতের মতো যেখানে রাগ অভিমান ঘুনসুটি সব থাকবে আবার সময়ের সাথে সব পরিবর্তনও হবে কিন্তু ভালোবাসাটা হবে নদীর পানির মতো যা কখনোই পরিবর্তন হবে না। তাই যখন তোমার আমার উপর অভিমান করবে নদীর স্রোত আর পানির পার্থক্যের কথা মনে করবে তাহলেই বুঝবে আমাদের সম্পর্কের স্থানটা কোথায়। “”
“”ভালোবাসি প্রিয়। “”
“”আমিও৷ “”( মুচকি হাসি দিয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে )
অতীতটা কতই না সুন্দর ছিলো !! কিন্তু এখন ?? আমার সবকিছুই সে ভুলে যায়। আমাদের বিবাহবার্ষিকীটাও সে ভুলে গেছে জোর করব না মনে রাখার জন্য। কারন ভালোবাসাটা তো অমলিন আজও সে আমাকে ভালোবাসে। ঘুরতে না হয় নাইবা গেলাম বিশেষ দিনগুলোর কথা তার নাই বা মনে থাকলো কিন্তু রোজ অফিসে যাওয়ার সময় টাই বাঁধতে তার আমাকে প্রয়োজন,, বের হওয়ার আগে কপালে চুমো আঁকতে সে ভুলে না,, আমাকে  জড়িয়ে না ধরে সে ঘুমোতে পারে না,, থাকুক না অস্পষ্ট ভালোবাসা আর কি চাই এই ছোট্ট সংসারে !! চোখের কোণাবেয়ে নোনাজলের স্রোত বইছে।
কল্পনায় ছেদ পড়লো যখন বাড়ির ভিতরে গাড়ি ডুকতে দেখলাম। সে এসেছে!! এত তাড়াতাড়ি?? আমার খুব অভিমান হচ্ছিল তার উপর ইচ্ছে করেই রুমের দরজা লক করে বসে ছিলাম। লক করে লাভ কি ডুপ্লিকেট চাবি তো তার কাছে আছেই। ইরিশার চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছি তার বাবা আসার খুশি যেন উপচে পড়ছে৷ কি জানি কি হয়েছে?? যা ভেবেছিলাম তাই হলো সে ঠিকই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে আবার দরজা লক করে দিলো। আমি আগের ন্যায় জানলায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভীষণ ইচ্ছে করছিলো পিছন ফিরে একবার তাকে দেখি কিন্তু আমি তো অভিমান করেছি তাকাবো কেন?? কিছুক্ষণ পর পিছন থেকে সে জড়িয়ে ধরলো তাতে আমার কি আমি তো অভিমান করেছি। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“Happy Marriage Anniversary Dark Chocolate”
“”তোমার মনে ছিলো বুঝি?? “”( ভেংচি মেরে বললাম)
“”আজকের দিনেই তো আপনাকে পেলাম ম্যাম এইদিনটা ভুলি কিভাবে?? “”
“”তাহলে যে বললে বিজি আছো আসতে পারবে না।””
“”অভিমানিনীর অভিমানটাকে মিস করছিলাম। যখন ফোন দিয়েছিলে তখন আমি তোমাদের বাসায় ছিলাম। তোমার আম্মুকে নিয়ে আসলাম। আজকে ইরিশার কাছে তিনি থাকবেন আর তুমি আমি সারারাত লং ড্রাইভ করব ভাবছিলাম কিন্তু এখন…. থাক। “”( একটা শপিং ব্যাগ থেকে শিউলী ফুলের মালা এনে চুলের খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলল )
“”কেন যাবো না?? “”
“”কিভাবে যাবো?? ডার্ক চকলেট তো কান্নাকাটি করে সব চোখের কাজল ছড়িয়ে ভূত হয়ে আছে। “” ( হাসতে হাসতে বলল )
“”আচ্ছা আচ্ছা আমি সবই বুঝি আমাকে নিয়া যাবা না সেটা বলো। টিস্যু ফ্লোডার থেকে টিস্যু পেপার নিয়ে আলতো হাতে চোখের কাজল তুলে দিচ্ছিল। আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি শোভা পাচ্ছিল। আমার প্রিয় এখনো আমারই আছে। সে কি আর আমাকে এত সহজে ভুলতে পারে আমি তো তার ডার্ক চকলেট। কাজল তুলে দেওয়ার পর বলল,,,,
“”কালকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। ভাবছিলাম ইরিশার সাথে একটা খেলার সাথি আনা লাগবে৷ এই লুকে দেখে তো আমার চকলেটটাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। “” ( হাসতে হাসতে বলল ) তার কথায় লাজুক হাসি দিলাম। আর কি বা বললো?? এই তো সে আছে আমার প্রিয় সে তো শুধু আমারই। তার বুকেই তো আমার শান্তি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত