– তিশা তোমাকে আমি ভালোবাসি।
– ভালোবাসা মাই ফুট। তোকে না বলেছি আমার সামনে আসবি না।
– চেয়েছিলাম সামনে না আসতে। কিন্তু কি করবো। ভালোবাসার পরিমান যে অনেক বেশি।
– তোর মত ছেলেদের আমি চিনি, সামনে থেকে যা। আর ভুলেও আমার সামনে আসবি না।
আমি কোনো কথা বললাম না। কি বলবো আপাতত খুজেও পাচ্ছি না। তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা দিব্যিই ভালো আছে। কিন্তু সে আমাে অনুভুতিগুলো একদমই বোঝার চেষ্টা করছে না। আমি চাইলেও ওর থেকে দুরে যেতে পারছি না। এমন কেনো করে মেয়েটা? আমি ওর পাশে বসলাম। আমার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ও।
– কি সমস্যা কি আপনার? বারবার একি কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। যেদিন থেকে ভার্সিটিতে এসেছি আপনার চেহারা খানা বিরক্তিকর হয়ে গেছে। কেনো যে যেচে পড়ে ক্লাসের ঠিকানাটা নিতে গিয়েছিলাম। অসহ্য। দেখেন ভাই রাহাত, সাফ জানিয়ে দিচ্ছি ভালোবাসা আমার দ্বারা হবে না।
আমি সামনের দিকে তাকালাম। কি বলবো আসলেই বুঝতে পারছি না। মেয়েটা নতুন এসেছিল ভার্সিটিতে। প্রথম দেখায় যে ভালো লাগা তৈরী হয়েছিল সেটা আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম বুঝতে পেরে। এত মেয়ে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় কারো প্রতি কোনোদিন এমন টান অনুভব হয়নি আমার। কিন্তু এই দুই ইয়ার জুনিয়ার মেটার প্রতি এমন অদ্ভুত টান অনুভব করবো বুঝতে পারিনি। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কথায় বলে না “মন যাকে চাই তার প্রতি শত বারনেও তাকে পেতে চাই।” তিশার প্রতি অজস্র টান অনুভব করার পর বুঝে ছিলাম ভালোবাসা কেনো ছ্যাঁচড়ামো বানায়। সত্যিই ওর পিছনে গত আটমাস ধরে পড়ে আছি।
– এভাবে বসে আছেন কেনো? লজ্জা করে না আপনার? সেদিন সবার সামনে চড় মারলাম তবুও আমার সামনে এসেছেন? চান টা কি আপনি? (তিশা)
– তোমাকে চাই। সবসময় তোমাকে চাই। তোমাকে ঘিরেই তো আমার যত পাগলামো। (আমি)
– আপনার পাগলামো নিয়ে আপনি থাকেন। আজাইরা পাবলিক। বেয়াদপ একটা ছেলে ছ্যাঁচড়া দেখেছি এমন দেখেনি কোনোদিন। (তিশা)
আমি কিছু বলতে যেয়েও পারলাম না। কি বলবো? তিশা তো ঠিকই বলেছে। আমি ছ্যাঁচড়া, বেয়াদপ। ভার্সিটির সবচাইতে বখাটে ছেলের মধ্যে প্রথম আমি। তিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কিছু বলতে যাবো তখনি পিছন থেকে কে যেন কষে একটা চড় দেয় আমার পিঠে। তাকিয়ে দেখি প্রিন্সিপাল এসে দাঁড়িয়েছে। ওনার পিছনে তিশার বেষ্ট ফ্রেন্ড ইতু দাঁড়িয়ে আছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই গালে আরো একটি চড় অনুভব করলাম। ঠোঁট ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে অনুধাবন করেছি।
– এমন কেনো তুই? জীবনে কি কোনোদিন মানুষ হবি না? রোজ তোর জন্য বিচার যায় আমার কাছে। অমানুষ কেনো হলি তুই? যে তোকে পছন্দই করে না। তোর উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না তার পরও তুই কেনো তার পিছনে পড়ে থাকবি? এমন কেনো তুই? কিছুই বললাম না। ইতুর দিকে আড়চোখে তাকালাম। সে ওনাকে ডেকে এনেছে। উনি কান ধরে অফিসের দিকে নিয়ে গেলেন। নিজের চেয়ারে বসে খানিকটা গালাগালি করলেন তিনি।
– তুই কোনোদিন কথা শুনবি না তাই তো? চাস টা কি তুই? বেয়াদপ ছেলে।
– আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে বেয়াদপ বলার। আর আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নেই কি চাই আমি।
নিজের মত থাকুন আর আমাকেও আমার মত থাকতে দিন। নিজে কি করছেন সেটা ভাবুন, কেনো আমার পিছনে লাগতে আসেন? কথাটা বলেই বের হয়ে এলাম ওনার অফিস থেকে। পকেট থেকে ফোন বের করে মাকে কল দিয়ে বললাম..
– তোমার হাজবেন্ডকে বইলো আমার পিছনে যেন না লাগতে। ছেলে হয়েছি বলে কি যখন তখন আমাকে ওনার আদেশ মানতে হবে এটা যেন উনি না ভাবেন। তোমরা তোমাদের মত থাকো আমাকে আমার মত থাকতে দিবা। না হলে কিন্তু খৃব খারাপ হবে। ফোন কেটে দিলাম। রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে করছে। ক্যামপাসে এসে গাছের নিচে বসলাম। দুর থেকে তিশাকে দেখছি আমি। বান্ধবিদের সাথে বসে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গিমা, হাসি আমাকে সত্যিই পাগল করে দেয়। ভার্সিটিতে প্রথম যেদিন সে আসে সেদিন থেকেই দেখেছি অনেক ছেলে ওর আশে পাশে ঘুর ঘুর করে। প্রথম দেখায় যে ভালোলাগাটা হয়েছিল ওর প্রতি তা ভালোবাসার রুপ নেয়।
তাই ভয়ে থাকতাম যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয়। নিজে থেকেই প্রথম যেদিন ওকে জানায় ভালোবাসি। সেদিন খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছিল “মি,রাহাত সাহেব, ভালোবাসছেন ঠিক আছে। ভালোবাসতেই পারেন। এতে কোনো বারন নেই। কিন্তু নেক্সটাইম আমাকে এটা বলবেন না, আর পাশেও যেন না দেখি। আপনি আপনার মত থাকবেন আমি আমার মত। ভূলেও আমাকে বাধ্য করবেন না আপনার গালে চড় মারতে। আমি ভালোবাসতে পারবো না। এই বিষয়টা অনেক বিরক্তিকর। তবে ভাববেন না যে আমি প্রেম করেছি আগে তাই এমন বলছি। থাকে না মানুষে কিছু বিষয়ে অপছন্দ। আমারো এসব বিষয়ে অপছন্দ। সো এসব ভুলে যান।” কিন্তু কে শোনে কার কথা? ভালোবাসা তো কোনো বারন শোনে না। যতক্ষন না মনের আকুতিগুলো পুরো শেষ না হয় ততক্ষন অবদি বারনগুলোও যেন ভালোবাসার আহ্বান মনে হয়। আমি পরেরদিন থেকেই জ্বালাতে শুরু করি। কিন্তু প্রতিদিন অপমান আর চড় আমি পেয়ে এসেছি। কেনো জানিনা এসব এখন ভালোই লাগে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বন্ধুরা একে একে হাজির হল। আবির এসে মাথায় জোরে গাট্টা দিয়ে বলে..
– শালা, প্রেম করার মেয়ে পেলি না। নে সিগারেট খা। প্রেম করবি তাহার শনে যে তোর পানে পথ চেয়ে বসে থাকে।
আবিরের হাত থেকে সিগারেট নিলাম। আবির আমার সবচাইতে কাছের বন্ধু। মেয়ে পটাতে উস্তাদ কিন্তু কখনো কাউকে ভালোবাসেনি সে। তার কাছে ভালোবাসা মানে মরিচিকা। হয়ত তাই। ওর মা বাবা বেঁচে থাকলেও ওর কেউ নেই। কথাটা শুনেই অবাক হয়েছিলাম।
যখন সে কলেজে ওঠে সবকিছু থাকাা সত্তেও ওর মা ওনার। অফিসের কলিগের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আবির ওর মায়ের বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। মা থাকতেও সে মা হারা হয়ে পড়ে। বাবার সাথে কিছুুদিন থাকার পর একদিন দেখে ওর বাবা তার হসপিটালের এক সুন্দরি নার্সকে প্রতিনিয়ত বাড়িতে এনে নিজের মত করে মাস্তি করে। আবির মেনে নিতে না পারলেও কিছুই বলতে পারতো না। একদিন বিশাল ডক্টর মহিুলার সাথে বাবা কেলেংকারিতে ফেঁসে গিয়ে তাকেই বিয়ে করে বসে। আর মহিলাটি আবিরকে ছাড়া ওর বাবাকে নিয়ে চলে যায় অন্য শহরে। আবির বাড়িতে একাই থাকে। অথচ সে দেখে এসেছে ছোট থেকেই মা বাবার মাঝে ভালোবাসার কত মিল, কত সুখানুভুতি। তারপরও সবকিছু এলোমেলো। হয়ত সেখান থেকেই ওর কাছে ভালোবাসাটা মরিচিকা। আবিরকে চিনতে আমার কষ্ট হয়, বড্ড কষ্ট হয়। সবসময় কষ্টে থাকলেও বলবে সবসময় ভালো থাকি। আজব সত্যিই সে আজব রহস্যময় একজন। পাশে তাকালাম। দেখি আবির তিশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে আর পাশে গেলাম।
– হ্যালো তিশা, কখনো মৌমাছি দেখেছেন?
– আসছে আরেকটা অসহ্য লোক।
– আহা রাগ করেন কেনো? আপনাকে জ্বালাতে আসিনি। বলছি আমার বন্ধু হল মৌমাছি, আর আপনি ফুল। যতই ঝড় হোক না কেনো, ফুল মাটিতে ডাল ভেঙে পড়ে গেলেও মৌমাছি কিন্তু সেই ফুুলটার উপরেও বসে। যতক্ষন না ফুলটা শুকিয়ে পঁচে না যায়।
– ঐ চল তো এখান থেকে। এসব আজাইরা পাবলিকের কথা শোনার সময় আমার নেই। তিশা হনহন করে চলে যায়। আবির মুচকি হাসে। আমি আবিরের কান্ড দেখে হাসি। হারামিটা আমার জন্য সব পারে। পাশে সাকিব এসে বলে..
– আমাকে ছাড়াই তোর মাল খাচ্ছিস। শালা যা কথা নেই।
– শালা তোকে রেখে কিছু করেছি?
– হ, আমাকে রেখে তো করিস নাকি। (সাব্বির)
– আমাকেও বাদ রাখে। (আদিফ)
– বকবক না করে চল ক্যান্টিনে যায়।
একে একে সব বন্ধুরা হাজির হয়। আমি কেবল উদাস হয়ে চেয়ে থাকি। মা বাবার ব্যস্ততার চার দেয়ালে বড় হয়ে ওঠা এই রাহাত বন্ধুুদের পেয়ে বড্ড খুশি। যখন বুুঝতে শিখি তখন দেখেছি কাজের বুয়া আমাকে গোসল করিয়ে দেয় খাইয়ে দেয়। স্কুল থেকে আসলে তিনিই বেড়ে খাইয়ে দিয়েছে। কোনোদিন মা বাবার সাথে বসে কিছুই খায়নি। বাবার ব্যস্ততা, মায়ের আরো ব্যস্ততা কেমন যেন করে তুলেছে আমার। কেমন আছি, কি করিু কখনো খোঁজ নেয়নি ওনারা।
সবসময় নিজেদের কাজ, কিভাবে টাকা বানাবে সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বায়না করে কিছুই চাইতে হয়নি আমার। বায়না করে চাওয়ার মাঝে এক ধরনের আনন্দ সেটাও বুঝতে দেয়নি। বিছানার পাশে টাকা থাকতো নিয়ে ঘুরতাম। কবে কি ড্রেস লাগবে জানতে তারা চায়নি। তাই একা থাকার এই চার দেয়ালে বন্ধু বলতে আবির, সাকিব, সাব্বির আর আদিফই আছে। আরো দুজন ছিল, সুমাইয়া আর অনন্যা। কিন্তু তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে আর তেমন কথা হয়না। আর আছে তিশা। না না তিশা তো পাত্তায় দেয়না আমার। ও আপন না।
পরেরদিন
– তিশা, কবে বুুঝবে তুমি আমার মনের কথাগুলো? সত্যিই যে তোমাকে ভালোবাসি।
– ঐ ইতুু, দেখ ছ্যাঁচড়াটা আবার আসছে। কত করে বোঝাবো তাকে, আপনার আমার পছন্দ না।
– গুছিয়ে তো নিতে পারো। প্রমিস কখনো ছেঁড়ে যাবো না।
– তোর প্রমিস আর গুছিয়ে নেওয়ার আমি নিখুচি করি। দুর হ আমার সামনে থেকে। হেট ইউ যাষ্ট হেট ইউ। দুদিন পর ভালোবাসা চলে যাবে।
– ভালোবাসা কখনো চলে যায় না তিশা। এটা গভীর হয়। তিক্ততা আসে তবুও হারায়না। ভালোবাসি তোমাকে বুঝবে কবে?
– দেখ ভাই রাহাত, তোকে বুঝতে আমি চাই না সামনে থেকে যা।
আমি কিছুই বললাম না। তিশার হাত শক্ত করে ধরলাম। জানিনা কি হল, সাহস কোথা থেকে আসলো, এমন কাজ করবো ভাবতেও পারছি না। সাথে সাথেই তিশা আমার বাম গালে কষে চড় দেয়। ভার্সিটির সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চিৎকরে ঝটকা মেরে হাত ছাঁড়িয়ে তিশা বলে..
– তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার। বের হয়ে যা সামনে থেকে। তোর লজ্জ সরম কিছু নেই নাকি? কুকুরের মত খাবারের জন্য পড়ে আছিস? এরপর যদি আমার সামনে আসছিস তো আমি নিজেই নিজেকে মেরে ফেলবো তোর প্রমিস।
– এমন কেনো করেন, জানেন ভালোবাসাটা পাপ। দুর হয়ে যান। (বিউটি, তিশার বন্ধু)
আমিু কিছুই বললাম না। চোখ তুলে আশে পাশে তাকালাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তিশারা চলে যেতে থাকে। পিছন ঘুরতেই দেখি বন্ধুগুলো দৌড়ে আসছে। তাড়াতাড়ি চোখের পানিগুলো মুছে নিলাম। হাসি হাসি মুখে ওরা কাছে আসতেই বললাম..
– দোস্ত, থাক,বাসায় যাবো। দরকারি কাজ আছে।
আর দাঁড়ায়নি। ভার্সিটি থেকে সোজা হন হন করে হেঁটে চলে যায় আমি। সিমটা ভেঙে ফেললাম। ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসি শহর ছেড়ে অনেক দুুর নানু বাড়িতে। বুয়া আর বন্ধুুদের পরই নানু আমাকে আদর করে অনেক। কত বছর যে এখানে আসিনি আমি। আমাকে দেখেই নানু জড়িয়ে ধরে বলে..
– এতদিন কেনো আসিস নিই?
কাঁদেন তিনি। মানুষগুলো সত্যিই বড়ই বিচিত্রময়। আপন মানুষগুলো খালি আপনদের জন্যই কাঁদে। আসলে যারা আপন হয়, তারা আপনই হয়। আর যারা হয় না, জোর করে হওয়াতে চাইলেও কখনো হয় না। ১৫ দিন হল আমি এখানে আছি। ইচ্ছেই নেই আমার ঢাকাতে ফিরে যাওয়ার। একা একা পুকুর পাড়ে বসে আছি। হঠাৎ কারো স্পর্শ টের পেলাম আমি। পাশে তাকিয়ে দেখি আবির এসেছে। অবাক হলাম। ও জানলো কি করে আমি এখানে আছি? কিছু বোঝার আগেই সে পাশে বসলো। পানির সাথে পা ডুবিয়ে পকেট থেকে ছোলা ভাঁজা বের করে বললো..
– নে শালা, খা। একটু শক্ত। তবে চিবিয়ে খেতে দারুন লাগে।
– তুই এখানে?
– কেনো, তিশা আসার কথা ছিল নাকি?
– না মানে।
– তুই একটা হারামি। তিশার জন্য চলে এসেছিস। বুঝলাম ভালোবাসিস, তবুও আমাদের ভালোবাসা দেখলি না। আচ্ছা যা মাফ করে দিলাম। তোর জন্য গুড নিউজ আছে রে। ফোন অন থাকলে বুুঝতি।
– মানে?
– তিশা তোকে খুজছে।
– গান্জা টেনে আসছিস নাকি?
– আবির কখনো গাঁন্জা খায় না। যেটা বললাম এটাই সত্য। বন্ধুরা বসে ছিলাম, সরাসরি সে এসে বলে “ভাইয়া রাহাত কই?” আমরাও অবাক হয়েছিলাম হুট করে ভাবওয়ালিটা তোকে খুজছে বলে। কিন্তু যখন বললাম জানিনা। তখন ওর চোখ মুখে মন খারাপের একটা আভা টের পেয়েছিলাম।
– হয়ত, ভাবছে মরে গেছি মানবতার খাতিরে এমন মন খারাপ করেছে।
– যাহ শালা, এমনটা না। চল ফিরে চল।
– না যাবো না। (আমি)
– আচ্ছা, থাক তাহলে। জোর করবো না। যে আসার সে একবারেই আসে। জোর করার কিছুই নেই।
– ভালোবাসা থাকলে জোর করা যায় রে গাধা।
– ভালোবাসা থাকলে মন খারাপও হয় রে গাধা।
– হেহেহে। (আমি)
আরো সপ্তাহ খানিক পর ঢাকায় ফিরে আসি। আবিরের সাথে কথা বললে মন ভালো হয়। ও কষ্টে থাকলেও কখনো কাউকে বলে না। কিন্তু অন্যদের ঠিকই মন ভালো করে দেয়। ওর একটাই কথা “নিজেকে চেনার চেষ্ট কর, কখনো আবিরকে চিনতে আসবি না। কষ্ট পাবি।”
ভার্সিটিতে আজ আড়াই মাস পর এসেছি। মাথাটা নিচু করে হাঁটছি। যেন তিশাকে না দেখতে পায়। আর এমন ভাবে যাচ্ছি যেন তিশার সামনে না পড়তে হয়। কিছুদুৃর হাঁটার পর একটা ছেলে এসে বলে. “ভাই কংগ্রাচুলেশনস”। আমি হাবার মত তাকায়। ইশারায় একটি গাছের দিকে তাকাতে বলে। সেখানে একটি পোষ্টার ঝুৃলানো। আর তাতে লেখা “রাহাত, তোমাকে ভালোবাসি। তোমার অপেক্ষাতে তিশা বসে আছে। ফিরে আসো প্লিজ।” আমি চমকে উঠি। এটা নিশ্চয় বন্ধুদের কাজ।
আমি এগিয়ে গেলাম। কিছুদুর যেতেই ইতু সামনে আসে। পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখনি ইতু বলে “ভাইয়া, এই নিন ফুল। তিশা দিয়েছে। সে আপনার জন্য অপেক্ষাতে আছে।” আবারো অবাক হলাম। সবাই কি পাগল হয়ে গেছে? এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। কেনো সে অপেক্ষা করবে আমার জন্য? ক্যামপাাসে প্রবেশ করলাম। কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ে দৌড়ে আসে আমার কাছে। সবার হাতে একটি করে লাল গোলাপ। আমাকে দেখেই চিৎকার করে বলে “আই লাভ ইউ রাহাত। হ্যাপি রিলেশন ইউথ তিশা।” মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। এসব কেনো হচ্ছে। না না, ভার্সিটি থেকে বের হতে হবে। পিছনে ঘুুরতেই দেখি মা আর বাবা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা এবার সত্যিই কেমন যেন ঘুরতে থাকল।
প্রথমবার মা বাবাকে একসাথে দেখছি আমি। এটা আদৌকি সম্ভব? ওনারা কাছে আসলেন। আমাার মাথায় হাত দিয়ে বললেন.. “বুঝিনি রে তুই আমাদের ছাড়া কষ্টে আছিস। কখনো জানতে চাইনি কিছুই। তিশা, আবির, সাকিব এরা সবাই বুঝিয়ে দিয়েছে তোর প্রতি অন্যায় করেছি আমরা। নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত কখনো জানতে চাইনি তুই সারাদিন কি করিস। সরি রাহাত।” মা বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। খুব জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। জড়িয়ে ধরে কাঁদলামও খুব। মা বললেন “যা, দেখ তিশা মেয়েটা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।” ভার্সিটির পিছনে চলে আসলাম। ছোট্ট একটি পুকুর। বাবার ক্ষমতা আর টাকার জেরে পুকুরের। চারপাশ পাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর সেই পুকুরে শাপলা ফুলও ফুটেছে। তিশা পাড়ে বসে আছে। সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি ওর পাশে যেয়ে বসলাম।। আঁড়চোখে তাকালো ও। আমি ভয়ে মাথাটা নিচু করে নিলাম।
– কেমন আছো?
বুকটা কেঁপে উঠল। ওর কথায় আজ কোনো ঝাড়ি নেই। নেই কোনো বিরক্তির ছাপ। কি মায়া জড়িত কণ্ঠ নিয়ে কেমন আছি জানতে চাইছে। আমিও আবিরের মত করে হেসে হেসে বললাম..
– সবসময় ভালো থাকি আমি। তুমি?
– হিহিহি… এতদিন আসোনি কেনো?
– তুমি তো মানা করেছিলে।
– আমি বারণ করেছি বলে শুনতে হবে নাকি?
– হুম।
– তাহলে এতদিন শোনোনি কেনো?
– জানিনা। (আমি)
– ভালো।
খুব ভালো। জানো রাহাত, আমার বড় একটি আপু ছিল। সে একটা ছেলেকে ভালোবাসতো। কিন্তু ছেলেটা রিলেশনের কয়েকমাস পরেই আপুর বান্ধবির সাথে পালিয়ে যায়। আপুু এটা সত্যিই মেনে নিতে পারেনি। রাতেই ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মারা যায়। কি দোষ ছিল আপুর? ভালোবেসেছিল বলে? সেদিন থেকে সবচাইতে বেশি ঘৃনা করতাম ভালোবাসা বিষয়টাকে। চেয়েছিলাম সব ছেলেদের কষ্ট দেবো। কিন্তু না করিনি। সবাইকেই আমার থেকে দুুরে সরিয়ে দিয়েছি। তবে…
– তবে কি? (আমি)
– পারলাম না আমি।
নিজের পাতানো আইন নিজেই ভেঙে ফেললাম। মা বাবাকে বলেছিলাম কখনো কষ্ট দেবো না। কিন্তু মনে হয় আর সেটা হলো না। তোমাকে ফিরিয়ে দিতে কষ্ট হচ্ছিল তবুও করেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার অনুপস্থিতি আমাকে বুঝিয়ে দেয় তোমার প্রতি অকারনে একটা বিশাল টান। কি করবো পারিনি ধরে রাখতে। আমি জানি এখন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে। কারন তোমাকে যে অনেক অপমান করেছি। জানিনা কি করবো, পরিবারের অমাতে ভালোটা বেসেই ফেললাম। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তিশার হাত ধরলাম আমি। কিন্তু আজ সে ছাঁড়িয়ে নিচ্ছে না। কিছুই বলছে না। করুন চোখে তাকিয়ে আছে। হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছি আমি। তিশা প্রশ্ন করে..
– কোথায় যাচ্ছি?
কিছুই বললাম না। পকেট থেকে ফোন বের করে মা বাবাকে কল দিয়ে বললাম “তিশাদের বাড়ির দিকে যাও। ওকে আজকেই বিয়ে করবো।” তিশা বোকার মত তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো ফোন দিলাম বন্ধুদেরকে। “একটা কাজি নিয়ে তিশাদের বাড়িতে চলে আয়। আপাতত বিয়ে করি, পরে তোদেরকে ট্রিট দেবো। দেরি যেন না হয়।”
তিশা খালি হাবার মত চেয়ে আছে। হয়ত সে এটা আশায় করেনি একদম। ক্যামপাস থেকে বের হতেই দেখি বন্ধুগুলো বাইক নিয়ে রেডি। বন্ধুরা তাকিয়ে আছে। একটা বাইক দেখিয়ে ইশারায় মুচকি হেসে অল দ্যা বেষ্ট বলেই চলে গেল। তিশাকে নিয়ে বাইকের কাছে আসলাম। তিশা খালি অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে। বাইকে বসতে বলেই স্ট্রার্ট দিলাম। সে মনে হয় তখনো অবাক হয়ে বসে আছে। থাকুক না হয় কিছুক্ষন এমন ভাবে। একটু পরেই তো শেষ হবে তার অবাকের অবসান।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা