কাল অবন্তীর হলুদ ছোঁয়া।পরশু অবন্তীর বিয়ে অবশ্য সেটা আমি ভাবতে পারছি না।প্রিয় মানুষটির বিয়ে এটা ভাবতে গেলে মৃত্যুটা খুব সহজ মনে হয় তাই সেটা ভাবছি না।আজ সারাদিন ধরে রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে।যেদিন থেকে অভিমান বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকে একটা ব্যাপার খেয়াল করতাম,আমার অভিমান হলে কষ্ট হলে সেদিন আকাশটাও অভিমান করে কাঁধে।আকাশের বৃষ্টির সাথে সেদিন আমার চোখের বৃষ্টি হয়।শেষ বিকেল ডুবে গিয়ে সন্ধা হওয়ার কথা কিন্তু সেটা না হয়ে ঘন অন্ধকার হয়ে গেছে নিমিষেই।এখন আর সেই রিমঝিম বৃষ্টি নেই,ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।কিছুক্ষন পর পর আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে,আকাশে বিদুৎ চমকিয়ে অন্ধকার টাকে কিছুক্ষনের জন্য আলোকিত করে দিয়ে যাচ্ছে।
ঠিক যেমন অবন্তী আমার জীবনে এসে আমাকে আলোকিত করেছিলো।হঠাৎ করে বিদুৎ চমকানোর মতো করেই অবন্তী আমার জীবনে এসেছিলো।এখন আবার অন্ধকার করে দিয়ে চলে গেছে।একাকিত্বের সঙ্গী হয়ে খুব তাড়াতাড়ি আমার মনে যায়গা করে নেয় অবন্তী।সারাদিন তাকে নিয়ে ভেবেও শেষ হতো না।আমাদের ছোট্র একটা সংসার হবে,বেশি কিছু চাহিদা থাকবে না।অবন্তী কে বেশি কিছু না দিতে পারলে আমার মনে হয় খুব সুখেই রাখতে পারবো।অবন্তীকে বলেছিলাম হানিমুনে সুইজারল্যান্ড নিয়ে যেতে না পারলেও কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবো।তিন বেলা খেতে না দিতে পারি দু বেলা পেট পুড়ে খাওয়াতে পারবো নিজের হাতে।দামি রেষ্টুরেন্টে নিতে না পারি,সপ্তাহে একদিন তোমার পছন্দের ফুসকা খাওয়াতে নিয়ে যাবো।সারা বিকেল নৌকায় ঘুরে শেষ বিকেলে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরবো।বড় ইচ্ছে পূর্ণ না করতে পারলেও তোমার ছোট ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করবো অবন্তী।আমি তোমাকে ভালোবাসে সুখে রাখবো প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না অবন্তী! অবন্তীর একটা কথা সেদিন আমাকে চুপ করিয়ে দিলো।মূহুর্তেই সব স্মৃতি গুলোকে শেষ করে দিয়ে বললো আমার বাবা মা’র অসম্মান হউক সেটা নিশ্চয়ই তুমিও চাও না।চুপ করে মনে মনে একটু হেঁসে দিয়ে বললাম ঠিক আছে।বাবা মা’র পছন্দ করা ছেলেটিকেই বিয়ে করো।ওপাস থেকে অবন্তী বললো…….
-আর কিছু বলার আছে?
-না!তবে শেষ একটা রিকুয়েষ্ট আছে।
-কি রিকুয়েষ্ট?
আমাকে একদিন সময় দিতে হবে।ভুলে যেতে হবে কিছুদিন পর তোমার বিয়ে।আমি শুধু একটা দিনের জন্য তোমাকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে চাই!তারপর থেকে তোমার রাস্তা আলাদা,আমার রাস্তা আলাদা।
-কিছুক্ষন চুপ থেকে অবন্তী রাজি হয়ে গেলো।
আজ আকাশটা মেঘে আচ্ছন্ন,হাল্কা বাতাস হচ্ছে,মোটামুটি রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ।অবন্তী রেল স্টেশনে অপেক্ষা করতে বলেছে।প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা নীল পরীর আগমন।আমার কথামতো অবন্তী নীল শাড়ি পড়ে এসেছে।কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে অবন্তীকে।পিছনে লুকিয়ে রাখা বেলীফুলের খোঁপা চুলে বেঁধে দিলাম অবন্তীর।হাত টা শক্ত করে ধরে রেললাইনের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম।অবন্তী অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি আমার?আজকে কোন গন্তব্য নেই,কোন উওর নেই।সারাদিনটা যেহেতু আজকে আমার আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানেই নিয়ে যাবো! কিছু দূর হেঁটে একটা রিক্সা নিয়ে পদ্মা নদীর তীরে চলে গেলাম।একটা নৌকা নিয়ে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করলাম।দুপুর হয়ে গেছে প্রায়,একটা রেষ্টুরেন্ট গিয়ে কেভিন বসে ভাত আর পদ্মার ইলিশ অর্ডার করলাম।মামা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?হ্যা করুন।মামা আপনার মানুষ দুজন খাবার এক প্লেট অর্ডার করলেন।আপনে কি খাবেন না?একটু হাসি মুখে বললাম না মামা আমার খিদে নেই।একটু করুণ চোখে করে ওয়েটার চলে গিয়ে কিছুক্ষন পর খাবার নিয়ে এলো।
অবন্তী সেই পর্যন্ত চুপ করেই আছে কিছুই বলছে না।অবন্তী কিছু বলছো না যে? আচ্ছা বলতে হবে না হা করো, ইলিশ মাছের কাটা বেচে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছি অবন্তীকে।অবন্তীর চোখের জল টলমল করছে,চোখের টা বন্ধ করলেই মনে হয় টুপ করে দু’ফোটা জল বেরিয়ে আসবে। অবন্তী আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো আপনে খাবেন না?তখন বললাম না খিদে নেই।আজকে সারাদিন না খেলেও হবে। নিমিষেই দুপুর কেটে গিয়ে বিকেলে হতে লাগলো।প্রিয় মানুষটি পাশে তাই মনে হয় সময়টাও বেঈমানী করছে।মনে হচ্ছে দিনটা খুব তাড়াতাড়ি আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছে।শেষ বিকেলের সময়টুকু অনেক সুন্দর।অবন্তীর হাতটা শক্ত করে ফুসকার দোকান নিয়ে গেলাম।অবন্তী ফুসকা খুব পছন্দ করে।ফুসকা খাওয়া শেষ অবন্তীকে বিদায় দিতে হবে।
শেষ বিকেলের সূর্য ডুবে যাওয়ার মতো অবন্তীও আজকে ডুবে যাবে।বিদায়ের মূহুর্তে অবন্তীর চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলো না।অবন্তী কাঁদছে।এই কান্না টা আমাকে অদ্ভুত সুখ দিচ্ছে কেন জানি।আমি আজকে কাঁদছি না এটা ভেবে সারাজীবন এক সাথে কাটাতে না পারলাম অতন্ত্য একটা দিন তো অবন্তীকে নিজের করে ফেলাম।ধন্যবাদ দিয়ে অবন্তীকে বিদায় জানালাম।আজ আর পিছনে ফিরে তাকাবো না।কারণ অবন্তী আমার জন্য এখন অতীত।অতীত যত তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারি সেটাই আমার জন্য মঙ্গল।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা