“জোছনার এই রাত জাগে আমারি সাথে
দীঘির জলধারা তোমার ছবি আঁকে,
কোথায় আমার আজ ঘুম হারাল
স্বপ্ন হয়ে তবু দু’হাত বাড়ালো।”
জোৎস্নার আলোতে সিক্ত হয়ে ছাদের কার্ণিশের ধারে আকাশের বুকে থাকা গোল চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে লাইন চারটে বলে উঠলো সমৃদ্ধ তার স্বপ্নচারিনির উদ্দেশ্যে। কিন্তু যার জন্য সমৃদ্ধ আজ 2 বছর নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে কেবল চাঁদ তারাদের সাথে কথা বলে সেই হয়তো অবগত নয় সমৃদ্ধর এই পরিস্থিতি সম্পর্কে। যদিও সমৃদ্ধই তার কাছে পৌঁছানোর সমস্ত দরজা বন্ধ করে রেখেছে কিন্তু কেন তার উত্তর কেবল সমৃদ্ধই জানে।
―যা না বাবা,একবারটি মেয়েটার সাথে দেখা করে আয়। এতগুলো ভালো সম্বন্ধ এলো কিন্তু কোনটাতেই তুই রাজি হলি না। কতবার তোকে জিজ্ঞেস করছি যে কাউকে যদি পছন্দ থাকে তো বল আমরা কথা বলে আসবো কিন্তু তুই তো কিছু বলছিসই না।
―কি করে বলবো মা যে 2 বছর আগে দেখা সেই বড় বড় গভীর চোখদুটো আজও আমার ঘুম কেড়ে নিতে সক্ষম। কি করে বলবো যে তার সাথে কাটানো সেই 2 মাসের এক একটা মুহূর্তের স্মৃতি আজও আমার ঠোঁটের হাসির কারণ আর কি করেই বা বলবো তোমায় যে তার কাছে পৌঁছানোর রাস্তা যে আমি নিজেই বন্ধ করেছিলাম!! —মনে মনে বলল সমৃদ্ধ কিন্তু মায়ের কথায় বাস্তবে ফিরে এলো সে।
―কিছু বলছি আমি তোকে। দেখ বাবু আজ যদি তুই মেয়েটার সাথে দেখা করতে না যাস তাহলে কিন্তু আমি অন্নজল মুখে তুলব না।
―মা,,,,,!! এইসব আবার কি?? বিয়ে করাটা কি খুব জরুরী। তোমাকে তো বলেছি আমাকে সময় দাও একটু,,, —বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো সমৃদ্ধ।
―সময়!! আর কত সময় বাবু?? আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে,কিছু ইচ্ছা তো আমাদের আছে তোকে ঘিরে। আমাদের শেষ ইচ্ছাটাও কি তুই রাখতে পারবো না??
―মায়ের কথাটা শোন না সমু। দেখা করলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
ঠিক আছে। করবো দেখা। জানিয়ে দাও তুমি ওদের কিন্তু হ্যাঁ কোনো ক্যাফে তে না,বলো বিকেল 5 টায় প্রিন্সেব ঘাটে আসতে। —গম্ভীর ভাবে বলে চলে গেল সমৃদ্ধ নিজের ক্লিনিকের উদ্দেশ্য।
সমৃদ্ধ মুখার্জি, পেশায় একজন সাইকিয়াট্রিস্ট; বয়স 31-32 এর কাছাকাছি, মোটামুটি ফিট চেহারা,গায়ের রং ফর্সা,চুলগুলো সাইড পার্টিশন করে পিছন দিকে ব্রাশ করা আর ঠোঁটে থাকে একটা মনকাড়া হাসি। দুবছর আগেই সমৃদ্ধ নিজের স্টাডি কমপ্লিট করে নিজের নামের আগে ডঃ উপাধি অর্জন করেছে আর অল্প কিছু মাসের মধ্যেই তার নামের বেশ পসার ছড়িয়েছে। আধঘন্টার মধ্যে সমৃদ্ধ এসে পৌঁছালো তার ক্লিনিকে। সবাইকে গুড মর্নিং উইশ করে সে গিয়ে বসলো নিজের কেবিনে। দশ মিনিটের মধ্যেই তার কেবিনে আনাগোনা শুরু হলো পেশেন্টের। কিছু পেশেন্টকে স্টাডি করে এডভাইস দিলো আর কিছু পেশেন্টকে কাউন্সিলিংগের ডেট। বেশ কিছু পেশেন্ট দেখার পর তার কেবিনে ঢুকলো একটা বেশ কমবয়সী যুবক,সম্ভবত কলেজ পড়ুয়া এবং তার সাথে এলেন তার মা।
―প্লিজ সিট,,,
―থ্যাংক ইউ ডক্টর। —বলে ছেলেকে নিয়ে চেয়ারে বসলেন উনি।
সমৃদ্ধ দেখলো ছেলেটা মাথা নিচু করে বসে আছে,মুখের ভাবভঙ্গির কোনো প্রকার পরিবর্তন নেই। চুলগুলো এলোমেলো, দীর্ঘদিন নিদ্রাহীন রাত্রি কাটানোর ফলে মুখটা বিমর্ষ আর চোখ অক্ষিকটরে ঢুকে গেছে এবং বহুদিন দাঁড়িগোফ না কাটার ফলে সেটিও নিজের দৈঘ্যতা বাড়িয়ে যাচ্ছে।
―ডক্টর মুখার্জি,আমি অর্পিতা সেন আর এটা আমার ছেলে রক্তিম। কলেজে 2nd ইয়ারে পরে। গত 7 মাস ধরে ওর এরকম অবস্থা। কারোর সাথে কথা বলে না,কলেজে যাওয়া তো কবেই বন্ধ করে দিয়েছে, সারাদিন নিজেকে রুমে লক করে রাখে,ঠিকমতো খায় না আর,,,, —বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললেন অর্পিতা দেবী। সমৃদ্ধ তার দিকে জলের গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলল— শান্ত হন,,মিসেস সেন। আপনি খুব স্ট্রং মহিলা,এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আপনি এক কাজ করুন বাইরে গিয়ে বসুন,আমি রক্তিমের সাথে একা কথা বলতে চাই।
―হম্ম,,, —বলে করুন চোখে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেলেন অর্পিতা দেবী।
―আচ্ছা রক্তিম,,,তোমার মা এত স্ট্রং আর তার ছেলে হয়ে তুমি এত উইক,,,,,না না যে সুইসাইড আটেম্প করতে পারে তাকে অবশ্য উইক বলা চলে না।
সমৃদ্ধর কথা শুনে রক্তিম হতবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে আর বলল— আপনি কি করে জানলেন আমি সুইসাইড,,,,
―তোমার শার্টের স্লিভসের ফাঁকা থেকে দেখা যাচ্ছে ব্যান্ডেজ টা। আচ্ছা যার জন্য এই দুঃসাহসিক কাজ টা করলে সে জানে??
―জানি না,,,,হয়তো জানে। আমার বন্ধুরা হসপিটালে দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে,ভেবেছিলাম হয়তো ও আসবে কিন্তু,,,,
―কিন্তু আসেনি। একই কলেজের স্টুডেন্ট হলে তো এই খবরটা তার ও জানার কথা,,,,আবার হতেও পারে জানে না। এখন অসম্ভব কিছুই না। আচ্ছা, আমি কি জানতে পারি যে এমন কি হয়েছে যার জন্য তুমি তোমার মা কে একা রেখে মরার সিদ্ধান্ত নিয়েছ??
―আমি,,,আমি চাইনি মরতে ডক্টর। আমি তো বাঁচতে চেয়েছিলাম ওর সাথে। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম ওর হাতে হাত রেখে কিন্তু আমি,,,আমি কি করে জানবো যে ওর শুধু সেই হাত না ওর সারা শরীরে অন্য কারোর স্পর্শে লিপ্ত!! আচ্ছা ডক্টর যদি আপনি দেখেন আপনার প্রেমিকা যার ঠোঁটে আপনি আপনার নাম শুনে বহুবার আপ্লুত হয়েছে সেই ঠোঁট অন্য কারোর ঠোঁট আঁকড়ে ধরেছে, যদি দেখেন যে ঘরের বিছানায় বসে আপনারা নিজেদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাজিয়েছেন,খুনসুটিতে মেতেছেন দিনের পর দিন,কাঁধে মাথা স্বপ্ন সাজিয়েছেন কতো; সেই বিছানার চাদরের কোচকানো প্রতিটা ভাঁজে প্রতিফলিত হচ্ছে অন্যকারোর সাথে আপনার প্রেমিকার অন্তরঙ্গতা দৃশ্য,মানতে পারবেন আপনি,,,!! —ফুঁপিয়ে কেঁদে চিৎকার করে উঠে বলল রক্তিম।তারপরে কিছুটা থেমে বলল— আমি তবুও ওকে ভালোবেসে গেছি ডক্টর সব ভুলে কিন্তু,,,,,কিন্তু সেদিন ও কলেজে বলল আমি ওর যোগ্য না,ওর মতো মেয়ের পাশে আমাকে মানায় না। আমি সেদিন অনেক মিনতি করি যাতে আমাকে ছেড়ে না যায়,ওর পাও ধরেছিলাম কিন্তু ও চলে গেল,,,পেছন ফিরে একবারও তাকালো না,,,,,,।
―ঠিকই তো বলেছে,,ওর মতো মেয়ের পাশে কি আর তোমার মত ছেলেকে মানায়। এক কাজ করো তুমিও ওর মতো হয়ে যাও মানে আর কি ও যা যা পছন্দ করে সেরকম,,,,,
―আমি চেষ্টা করেছিলাম ডক্টর কিন্তু পারিনি। কোথাও গিয়ে আটকে গেছি আমি,,,,
―হম্ম,,,কোথায় গিয়ে আটকেছ জানো?? তোমার বিবেকে,তোমার শিক্ষায়,,,,যে শিক্ষা তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছ। আর আশ্চর্যের বিষয় তুমি তার ভালোবাসার পাওয়ার জন্য এমন একজনের ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করছো যার শেষ সম্বল তুমি আর যে সারাজীবন তোমাকে ভালোবেসে কাটিয়ে দিলো!! বাহ,,,,মানতে হবে তোমায় আর তোমার ভালোবাসাকে। সত্যি তোমার ভালোবাসার কাছে তোমার মায়ের ভালোবাসা একেবারেই তুচ্ছ!!
―না,,,,না ডক্টর আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। —কান্নাভেজা ভারী গলায় বলল রক্তিম।
―হ্যাঁ ভালোবাসো কিন্তু তোমার প্রেমিকার থেকে বেশি নয়। আচ্ছা তুমি যখন ওকে এতই ভালোবাসো তখন আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি ওকে পেতে। রক্তিম কিছুক্ষন হতবাক চোখে সমৃদ্ধর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল— না ডক্টর,,,,আমি ওকে ভালোবাসি খুব কিন্তু পেতে চাই না আর। আমি নিজের স্বার্থের জন্য মা কে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর না। রক্তিমের কথা শুনে একটা তৃপ্তির হাসি খেলে গেল সমৃদ্ধর ঠোঁটে আর ও বেল বাজিয়ে অর্পিতা দেবীকে কেবিনে ডেকে পাঠালেন।
―অর্পিতা দেবী আপনি শুধু শুধু এতগুলো টাকা দিয়ে ওকে এখানে আনলেন। ওর কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট এর দরকার ই নেই। ও তো পুরো সুস্থ,,,।
―কিন্তু ডক্টর!!
―আপনি চিন্তা করবেন না,ওকে নিয়ে বাড়ি যান। কোনো অসুবিধা হলে না হয় আবার এখানে আসবেন। —হেসে বলল সমৃদ্ধ।
অর্পিতা দেবী তো কিছুই বুঝতে পারলেন না,ভাবলেন হয়তো বাকি ডক্টর দের মতো ইনিও রক্তিমকে ঠিক করতে পারেননি তাই এইরকম বলছেন। উনি রক্তিমের সাথে বেরিয়ে গেলেন আর ওনারা বেরিয়ে যাওয়ার পর সমৃদ্ধ মুচকি হেসে ডেস্কের ওপর রাখা ফোন নিয়ে গ্যালারি ওপেন করে একটা ছবি বের করে বলে উঠলো— আজ বহুদিন পর কোনো পেশেন্টকে স্টাডি করতে গিয়ে তোমার কথা মনে পড়লো মন। তোমার সাথেও তো এইরকম পরিস্থিতিতেই দেখা হয়েছিলো আমার আর তোমার সেই গভীর কালো চোখের চাহনির জালে সেই যে ফাসলাম দেখ এখনো পর্যন্ত নিস্তার পেলাম না। —বলেই হেসে উঠলো সমৃদ্ধ।
অর্পিতা দেবী হতভম্বের মতো কি করবেন ভাবতে ভাবতে ক্লিনিকের বাইরে বেরোচ্ছেন তখনই রক্তিমের ডাকে উনি পেছন ফিরলেন আর রক্তিম এসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলল— সরি মা,,তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে,প্লিজ,,,!! আচমকা কি হলো প্রথমে বুঝতে না পারলেও নিজের হতভম্বতা কাটিয়ে অর্পিতা দেবী রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো আর মনে মনে সমৃদ্ধকে ধন্যবাদ জানালো।
দুপুরের দিকে সমৃদ্ধর ফোনে রিতাদেবীর কল এলো।
―হ্যাঁ মা বলো,,,
―খেয়েছিস বাবু??
―না,,খেয়ে নেব।
―আচ্ছা শোন তুই তো ক্লিনিক থেকেই ওর সাথে দেখা করতে যাবি তাই আমি ওর ফোন নাম্বার পাঠিয়েছি তোকে,কথা বলে নে।
―আবার কথা বলার কি আছে? ওখানে গিয়েই তো,,,,
―ওখানে যে যাবি তা মেয়েটাকে চিনবি না কেমন করে শুনি। কথা বলে নে,,, রাখছি।
―হম্ম,,,ঠিক আছে। —কল কেটে সমৃদ্ধ নাম্বার টা বের করে ঠিক করলো এখন না ও প্রিন্সেব ঘাটে গিয়ে কল করে নেবে আর তাকে বলে দেবে যে ও বিয়ে করতে চায় না।
বিকেল 4.30 নাগাদ সমৃদ্ধ বাইক নিয়ে রওনা দিলো গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে। ওর ক্যাফেটেরিয়ার মতো বদ্ধ জায়গা পছন্দ না তাই মেয়েটিকে ও এখানে আসতে বলেছিলো। বাইকটা পার্ক করে সমৃদ্ধ চারিপাশে তাকাতে তাকাতে গঙ্গার সামনে এসে দাঁড়ালো। গোধূলি লগ্নের প্রারম্ভে ক্লান্ত সূর্যের লাল আভা আকাশের বুকে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করছে আর তার প্রতিচ্ছবি ভাসছে শান্ত স্নিগ্ধ গঙ্গার জলে। কয়েক মুহূর্ত আকাশগঙ্গার মনোমুগ্ধকর রূপ আস্বাদন করে সমৃদ্ধ ভাবলো একবার কল করবে সেই নাম্বারে,5 টা তো বেজে গেছে প্রায়। পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়েল করলো সমৃদ্ধ ফোন নাম্বারটিতে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কলটা রিসিভ হতেই সমৃদ্ধ বলল— হ্যালো,আমি সমৃদ্ধ বলছি। আমি গঙ্গার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি আসলে আপনার নামটা ঠিক জানিনা তাই,,,,
―জানো,,,শুধু আমার নাম না,তুমি আমাকেও খুব ভালোমতো জানো। অপর প্রান্ত থেকে আসা গলার স্বরে সমৃদ্ধর বুকটা কেঁপে উঠলো। আর ও অস্ফুটস্বরে বলে উঠতে চাইছিল—মো,,,মন,,,,
―মোনামী!! —পেছন থেকে আসা একটা অতিপরিচিত গলার স্বরে সমৃদ্ধ পিছন ফিরে তাকাতেই থমকে গেল। যাকে গত দুবছর আগে ও শেষবারের মতো দেখেছে,যার একটা ফটোর সাথে কথা বলেছে ও রাতের পর রাত আর যার স্মৃতিই ছিল কারণে অকারণে ফুটে ওঠে ওর ঠোঁটের হাসির কারণ; আজ সেই স্বপ্নচারিনি দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,সেই মিষ্টি মুখ,সেই হালকা কোঁকড়ানো চুল আর সেই গভীর কালো চোখ যাতে রয়েছে অবাক চাহনি,অল্প অভিমান আর অনেকটা,,,,,
―কেন করলে এরকম! কেন না বলে চলে গেলে?? এত মেসেজ এত কল এর শুধুমাত্র একটা রিপ্লাই― “নিজের পায়ে দাঁড়াও আর ভালো থেকো!!” —একপা একপা করে সমৃদ্ধর কাছে এগোতে এগোতে কথাগুলো বলল মোনামী। সমৃদ্ধর একদম কাছাকাছি এসে অভিমানী দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মোনামী বলে উঠলো— নিজের পায়ে তো দাঁড়িয়েছি আমি,তোমার চ্যালেঞ্জও পূরণ করেছি কিন্তু ভালো থাকতে পারিনি। তুমি আচমকা আমার বিবর্ণ জীবনে রঙিন আবিরের মতো এসে আমাকে রাঙিয়ে আবার আচমকাই চলে গেলে!! আর কি বলেছিলে― আমি শুধু তোমার পেশেন্ট!! সত্যি আমি শুধুমাত্র তোমার পেশেন্ট ছিলাম?? তোমার প্রাকটিক্যাল প্রজেক্টের একটা অংশমাত্র ছিলাম?? মোনামির শেষের কথাটা শুনে সমৃদ্ধ অবাক হয়ে বলল— তুমি,,,তুমি কি করে জানলে??
―এই প্রশ্নেরই উত্তরের আশায় ছুটে গেছিলাম সেই ক্লিনিকে যেখানে আমি গেছিলাম তোমার পেশেন্ট হয়ে। কারোর বাধা না মেনে ডক্টর শুভদীপের কেবিনে ঢুকেছিলাম কিন্তু প্রত্যাশিত মানুষটার দেখা পেলাম না। ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করেছে,পদে পদে আমাকে অনুভব করিয়েছে যে আমি চাইলে সব করতে পারি,যে আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য মোটিভেট করেছে,যে বলেছিল খুশি হতে কোনো নির্দিষ্ট মানুষকে দরকার পড়ে না আর যার সাথে প্রতি রবিবার কেটেছে নন্দনে সে নাকি ডক্টর শুভদীপ নয় বরং তারই স্টুডেন্ট!!
―আ,,,, আসলে,,,,,আ,,, আমি,,, —মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘাড় চুলকাচ্ছিলো সমৃদ্ধ এটা ভেবে যে ও কি বলবে।
―তোতলাচ্ছ কেন আজ?? তখন তো পদে পদে বেশ খোঁটা মেরে কথা বলতে,,,তাহলে আজ কি হলো হ্যাঁ?? কি ভেবেছিলে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পার পেয়ে যাবে,,,,
―নাহ,,,,আমি অপেক্ষায় ছিলাম সেইদিনের, যেদিন আবার এই রাজপথের কোনো না কোনো মোড়ে দেখা হবে আমাদের আর আমায় জর্জরিত হতে হবে তোমার প্রশ্নের।
―সে তো হতে হবেই ডক্টর সমৃদ্ধ মুখার্জি। নাম টা তো জেনে গেছি এবার বাকি প্রশ্নের উত্তর চাই আমার আর তার সাথে এতবছরের অপেক্ষার মাশুলও।
―আচ্ছা আর এই অপেক্ষার মাশুল টা কি নন্দনের ইভিনিং শো??
এই প্রশ্নের উত্তরে সমৃদ্ধ দেখতে পেলো মোনামীর সেই মিষ্টি হাসি যেটা ও সারাজীবন আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি করলো নিজমনে। আর ওদের এই দূরত্বের অবসান ঘটলো গোলাপি আভায় মোড়ানো আকাশের নিচে কারণ― “দূরত্ব হোক না হাজার মাইল ; আকাশ তো একটাই।”