আমার একমাত্র তিন বছরের ছেলে আরাত বাসার মেহমানদের সামনে বলে উঠল,”সানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।” কথাটা শুনে আমার বউ আমার দিকে কড়া চোখে তাকালো।মনে হচ্ছে যেনো কথাটা আমি বলেছি।বাসার সব মেহমানও আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমার বন্ধু আমাকে বলল,”কিরে ভাবির নাম তো সানিয়া না!তাহলে কি হচ্ছে শুনি?” আমি তাদের দিকে না তাকিয়ে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।সেও আমার দিকে তাকিয়ে একটা ইশারা দিচ্ছে,”বাসার সবাই যাক। আজকে তোমার খবর আছে।”
ইশারা ইশারায় আমাদের কথা হয়ে গেলো। বুঝতে পারলাম আজ আমার খবর আছে।কিন্তু “সানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি” কথাটা আরাত জানলো কি করে আমি বুঝতে পারছি না।আর আমি তো এ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিনি।প্রেমের আগে যে বলতাম ততটুকুই। এরপর আমার বউ আমার জীবনে আসার পর আমার সামনে বসে বসে আমার ফোন থেকে সব মেয়েকে ব্লক করলো।তাছাড়া যেসব মেয়েদের সাথে “হাই/হ্যালো” করতাম তাদের কনভারসেশন দেখে আমার সাথে দুইদিন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো।এরপর বিয়ের আগেই হুমকি ছিলো এই যে, “যদি কোনো মেয়ের একটা রিপ্লাই আমি দিই তাহলে সে আমার নামে মামলা করবে নারী নির্যাতনের।” এমন বড়সড় হুমকি খেয়ে আমি যখন প্রায় ভেজা বেড়াল হয়ে গেছিলাম সেখানে আমার ছেলে একটা ঝামেলা বাধিয়ে ফেললো। মেহমানদের খাবার জন্য ডাকার আগে সে আমাকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংকেত দিল প্লেটগুলো জোরে জোরে ডাইনিং টেবিলে রেখে।”ঢুস,ঢাস”শব্দে আমি তার দিলে গেলাম। কানে কানে বউয়ের কাছে বললাম,”হয়েছে টা কি?”
“সানিয়া কে?”
“ওমা আমি কি করে জানব?”
“আরাত এখন সব পড়তে পারে।তুমি হয়তো ওকে সামনে রেখে এসব কথা সানিয়া নামের হারামজাদিকে লিখেছো।”
“আহা!আমি কেন লিখব।তুমি আমার ফোন চেক করো।”
“ফোনে ডিলিট নামেরও তো একটা অপশন আছে তাই না?”
এটা বলে আরাতের আম্মু রান্নাঘরে চলে গেলো।ঘটনা খুব মর্মান্তিক হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য।এখন তো বিনা দোষে আমাকে জেলে যেতে হবে। টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হলো।আমার বন্ধু আসলাম আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে, “বিয়ের আগে এসব করতি ঠিক আছে, তাই বলে বিয়ের পর! “
এমনভাবে আসলাম বললো যেন আমি বিয়ের আগে এসব অহরহ করতাম।আসলাম কথাটা আরাতের আম্মুকে শোনানোর জন্যই বলেছে।যেমন কথা তেমন কাজ;সবার প্লেটে ভাত পরলো কিন্তু আমার প্লেটে একটা লেবু আর কিছু শসা পড়ে আছে,যেটা আমি নিজেই নিয়ে একা একা খাচ্ছি।আমার বউ সবাইকে সবকিছু পরিবেশন করে নিজে আরাতের পাশে বসে খেতে শুরু করলো।এদিকে আমার প্লেট পুরো খালি পড়ে আছে।অবস্থার অগ্রগতি না দেখে আমি নিজেই পোলাও আর ভাজি নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
খাবার শেষে এবার বিদায়ের পালা।আসলাম ও তার বউ, সাথে বাচ্চাকাচ্চা বিদায় নিয়ে চলে যাবে এখন।আমার এই প্রথম কোনো মেহমানকে ঘরে রাখতে এত ইচ্ছা করছে। আমি আসলামকে বললাম,”দোস্ত আজকের রাতটা থেকে যা।পারলে আরও দুইদিন থাক।” “না দোস্ত অন্য আরেকদিন আসব আবার সবাইকে নিয়ে।” কিন্তু আমি তো ভয়ে এদিকে ঝিম মেরে বসে আছি।বারবার রিকুয়েষ্ট করার পর আরাতের আম্মু আমাকে বলল,”ভাই থাকতে চাচ্ছেন না তুমি উনাকে এভাবে ফোর্স করছো কেন? ভাই আবার সময় করে আসবেন।” সবাই চলে গেলো।এবার আমাকে একা পেয়ে আরাতের আম্মু ধরবে মনে হচ্ছে। আরাতকে ডাকা হলো। আরাত এসে হাজির।ও খেলনা প্লেন দিয়ে খেলা করছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আরাত!সানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি লেখাটা কোথায় পড়েছিস তুই?”,ওর আম্মুর রাগান্বিত স্বর।
” আমি কোথায় পড়সি মনে নাই তো।” এবার ওর আম্মু আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো ওর মনে না আসার পেছনেও আমিই দায়ী।
আরাত তার ছোট্ট প্লেনের সাথে উড়ে চলে গেলো।আর এদিকে আমি বড় সোফার কোণায় একেবারে কাচুমাচু হয়ে বসে আছি। ওর আম্মু আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,”কাল আমি আমার বাসায় যাব আরাতকে নিয়ে। তুমি ড্রাইভারকে বলে দাও।” “ওমা তুমি এসব কি বলছো!” “তোমার সাথে আমি আর সংসার করব না।থাকো তুমি তোমার সানিয়া কে নিয়ে।” বলে সে বেডরুমের দরজাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে খুললো। মেয়েদের রাগ যেনো বস্তুর শব্দেই প্রকাশিত হয়।একটু আগে প্লেট গুলো জোরে টেবিলে রেখে।মাঝখানে চেয়ার গুলো জোরে ধাক্কা দিয়ে আর শেষে দরজাও ছাড়া পেলো না।
রুমের মধ্যে আমি ঢুকে দেখলাম মহাকান্ড!আরাতের আম্মু ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিয়েছে। আমি তার হাতে স্পর্শ করতেই সে চিৎকার করে বলতে লাগল,”তোমার মতো নির্লজ্জের সাথে আমি আর সংসার করব না।তুমি ওই হারামজাদিকে নিয়ে ঘর কর।আমি আরাতকে নিয়ে চলে যাব।” বলে সে কেদে কেদে চোখের পানি ফেলছে। এমন সময় আমার ছেলে আরাত ঘরে প্রবেশ করলো।তার হাতে যেনো কি একটা দেখা যাচ্ছে।সে তার আম্মুর কাছে এসে সেটা দেখিয়ে বললো, “আম্মু আম্মু এখান থেকে দেখেছি লেখাটা।” ওর আম্মু কাগজটা নিলো। এরপর দেখে একটা হাসি দিলো। এরপর আমার দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে কাগজটা আমাকে দিলো।
আমি কাছে এনে দেখলাম একটা পাচ টাকার নোট যেটায় লেখা, “সানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।” এরপর আর কি!আরাতকে রুম থেকে কতক্ষণের জন্য তার দাদুর রুমে পাঠিয়ে দিল।এবং দরজা বন্ধ করে আমার সাথে কি করলো সেটা আর নাই বলি। রুম থেকে বেরিয়ে খুব ফুরফুরা মেজাজে আমি বললাম,”এরকম আরও দু চারটা নোট বাসায় থাকলে ক্ষতি কি!”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা