প্রতিদিন কোচিং শেষ করে মডেল টাউন হয়ে আসার সময় ১২ তালা বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দেখতাম ৪ তালা থেকে একটা মেয়ে ব্যালকনি থেকে আমাদের দিকে
তাকিয়ে থাকে। আসলে কোচিং শেষ হলে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলরা এক সাথেই বের হই। কারো চোখটা সেইখানে না পড়লেও আমি ঠিকই আড়ি আড়ি চোখ নিয়ে সেই
দিকটাতে দৈনিক তাকাতাম। ৪ তলা থাকা মেয়েটা ঠিকই লক্ষ করতো আমি যে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রায় এক মাস এমনে এমনেই কেটে গেলো। সেইদিন কেন
যেনো খুব ইচ্ছে হলো আজ কোচিং এর ছাদের থেকে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে একটু কাছের থেকে দেখবো, তাই সবাইকে চলে যেতে বলে আমি একটু ছাদে গেলাম। খেয়াল
করলাম মেয়েটা আমার ফ্রেন্ডদের দিকে তাকিয়ে কি যেনো খুজছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, মেয়েটা আমাকেই খুজছে। যেতে যেতে একদম ছাদের রেলিং এর
কাছে যেয়ে ছোট একটা ইট নিয়ে ভাবলাম মেয়েটার কাছে ছুড়ে মারবো। তার আগেই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। আমিও হা করে ওর
দিকে তাকিয়ে রইলাম। বেগুনি রঙ এর টি শার্ট আর সম্ভবত প্লাজু পরনে ছিলো। মেয়েটা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আস্তে করে সেখান থেকে চলে গেলো। তবুও আমি
সেখান থেকে যেতে পারিনি। মডেল হিসাবে যে কোনো নায়কের সাথে মেয়েটাকে খুব মানাবে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম মেয়েটা যদি আরেকটা বার একটু আসে!
প্রায় আধা ঘন্টা পর মেয়েটা আবার আসলো। আমাকে দেখে কি মনে করে যেনো একটা হাসি দিয়ে ইশারায় বল্লো, কয়টা বাজে? আমি আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম ৫.৫৫ বাজে।
মেয়েটা আমাকে বুঝালো এখন আযান দিবে। বাসায় যান। এমন করে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো। ফ্রেন্ডরা সন্দেহ করবে দেখে আমরা এক সাথেই বের হতাম
তবে ওরা বাসায় চলে গেলেও আমি আবার ফিরে এসে ছাদে যেয়ে মেয়েটার সাথে ইশারায় কথা বলতাম। কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ করে রুমে যেয়ে প্রায় ২০ মিনিট
কিংবা তারো বেশি সময় পার করে আসতো। আমি হুট করে একদিন ইশারায় বলে উঠলাম, ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? মেয়েটা সেই দিন কিছু না বলে চলে গেলো।
প্রায় ঘন্টা খানিক অপেক্ষা করার পরও মেয়েটা আসলো না। আমি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছিলাম। এইটাই মনে হয় লাভ এট ফাষ্ট সাইট! রাতে ঘুমানোর সময়
মেয়েটাকে খুব কাছে ফিল করতাম। একটা সময় আমার এমন একটা অভ্যাস হয়ে গেলো যে, ওকে নিজের কাছে অনুভব না করলে ঘুমাতেই পারতামনা। আমাদের
সেই ইশারায় ইশারায় কথাটার বয়স দুই মাস হয়ে গেছিলো। আমি যে ওর প্রতি দিন দিন কতটা দুর্বল হয়ে উঠেছিলাম তা ও ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো আমার কর্ম-কান্ড
দেখে। ইশারাতে দূর থেকেই আমি ওর চুলে ব্যানি পাকিয়ে দিতাম, গাল ধরে টানতাম ও খুব ফিল করতো। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর মুখটা হঠাৎ মলিন হয়ে যেতো। এই
জিনিসটা কেন হতো তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি নি।
মেয়েটার নাম আনিকা ছিলো।
.
শুক্রবার দিন আনিকার সাথে আমার দেখা হতো না। কারন শুক্রবার কোচিং বন্ধ থাকতো। কিন্তু চলতি সাপ্তাহের শুক্রবার দিন আমি ওকে দেখার জন্য এসেছিলাম।
মেয়েটাও বের হয়েছিলো। সেইদিন ওকে খুব রিকুয়েস্ট করে ওর ফোন নাম্বারটা নিয়েছিলাম। সেইদিন রাতে ওকে ফোন দিয়ে অনেকক্ষন দুই জন চুপ করে ছিলাম।
মেয়েটা সেই নিরবতা ভেঙ্গে আমাকে বলে উঠলো, রাতে খাওয়া দাওয়া হইছে?
“হুম, তুমি খাইছো?
“হুম।
ওর কন্ঠটার মাঝে আমার প্রতি এক প্রকারের মায়ার আভা খুজে পাচ্ছিলাম। মেয়েটা আমাকে আবার বলে উঠলো, রোজ রোজ এতটা সময় আমার জন্য কেন ব্যয় করেন?
“ভালো লাগে। আপনিও কেন রোজ রোজ আমার জন্য অপেক্ষা করেন?
“একটা সময় আপনার জন্য অপেক্ষা করতাম না। আপনাদের কোচিং শেষ হলে সবাই এক সাথে বের হয়ে যে, দুষ্টামি করতেন তা দেখতাম। হঠাৎ আপনি করে বল্লেন কেন?
“আপনিও আপনি করে বলেছেন তাই।
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা একটু হেসে বলে উঠলো, ঘুমাবা না?
“একটু পর। নাম্বারটা আগে দিলে কি হতো?
“কিছুই হতো না।
“আমি যে তোমার প্রতি কতটা দুর্বল হয়ে পরছি তুমি কি বুঝোনা?
“বুঝে কি হবে!
“আচ্ছা তুমি কি আমাকে যাদু করছো?
আমার কথাটা শুনে আনিকা একটু হেসে বলে উঠলো, আমারো একি প্রশ্ন তুমি কি আমাকে যাদু করেছো?
“নাহ!
“এখন ঘুমাও আমিও ঘুমাবো।
“ওকে।
ফোনটা রেখে বিছানায় গাঁ টা এলিয়ে দিলাম।
.
বলতে বলতে আরো একটা মাস পাড় হয়ে গেলো। কেন যেনো মনে হতো ও আমার কাছে কিছু লুকচ্ছে। ও যে আমাকে ভালবাসে সেটা ও মুখে না বল্লেও ওর এরকম
মায়া জড়ানো কথাগুলোতে ঠিকি বুঝতাম। কিন্তু আমার মনটা বুঝতে চেতনা। আমি চাইতাম ও আমার প্রতি কিছুটা আহ্লাদী হোক, আমার কোনো কিছুতে ভুল ধরে
একটু রাগ দেখাক, ওর লাইফে আমি কতটা ইম্পরট্যান্ট এরকম কিছু আমাকে বুঝাক। কিন্তু তেমন কিছুই ও আমাকে বুঝায়নি। মাঝে মধ্যে খুব রাগ হতো কিন্তু ওর
উপর রাগ করেও থাকতে পারতাম না। দিন দিন ওর প্রতি খুব বেশিই দুর্বল হয়ে উঠেছিলাম। আর আমার পাগলামীর মাত্রাটাও খুব বেড়ে যাচ্ছিলো। একটাবার শুনতে
চেয়েছিলাম ওর মুখ থেকে ও আমাকে বলুক, আচ্ছা ফায়সাল তুমি বুঝোনা আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি! কিন্তু আমার ভাবনাগুলো ভাবনাতেই রয়ে গেলো। আর
আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্কটা তে এক মরীচিকা ঠাই পেতে লাগলো। ওকে এখন ফোন দিলে কথা না বলে চুপ করে থাকে। আবার মাঝে মাঝে ফোন কেটে দিয়ে
ফোন বন্ধ করে দেয়। কোচিং শেষে যখন ছাদে ওঠে ওঠে ওর জন্য অপেক্ষা করি মেয়েটা আমার সামনে একটু এসেই আবার চলে যায়। এমনকি মাঝে মধ্যে ওর কোনো
দেখাই মিলেনা। এই জিনিসটার নামি কি অবহেলা!
.
প্রায় এক সাপ্তাহ হয়ে গেলো আনিকা এই কয়দিনে একটা বারের জন্য ব্যালকনিতে আসেনি। আমি আর টিকতে না পেড়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, আজ ওদের বাসায় যাবো। কোচিং শেষ করে সোজা ওদের বাসায় চলে গেলাম।
.
কলিং বেল চাপতেই একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে বলে উঠলো, কাকে চাই?
“আনিকা আছে?
“এইখানে কোনো আনিকা থাকেনা।
“কি বলেন, ও তো এই বাসায় আর এই ফ্ল্যাটেই থাকে। আমি ওর ফ্রেন্ড লাগি। ওকে বলেন, ফায়সাল নামের একজন ওর খোজে এসেছে।
“বল্লামতো এইখানে আনিকা নামের কেউ থাকেনা।
তারপর আমি মোবাইলটা বের করে মহিলাটাকে আনিকার নাম্বার দেখিয়ে বল্লাম, দেখেন নাম্বারটা চিনেন নাকি?
মহিলাটা আমার দিকে একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেই কিছু বলতে যাবে তখনি আনিকা আমাদের সামনে এসে মহিলাটাকে বলে উঠলো,ভাবি উনাকে ভিতরে আসতে দেও।
মহিলাটা আনিকার কথা শোনে আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিলো। রুমের ভিতরে ঢুকার পর দেখলাম আরো চারটা মেয়ে সোফায় বসে আছে। আর দুইটা ছেলেও ছিলো। মহিলাটা দরজাটা লাগিয়ে আনিকাকে বলে উঠলো, ওই এইটা কে?
“ভাবি এইটা আমার কাষ্টমার।
ওর কথাটা শোনার পর আমি একদম থমকে উঠলাম। মহিলাটা আবার বলে উঠলো, এর আগেতো লাগে দেখি নাই। আর আইয়া যেমনে আমার লগে তর্ক শুরু করছে।
মনে হয়নাতো এনে এর আগেও আইছে। এর আগে আইলে রুমের ব্যাল বাজায়া একটা ইশারা দিলেই বুঝতাম পুরান পার্টি। কিরে তুই জানোস না বাড়ির মানুষ বুঝতে
পারলে কি হইবো?আর তুই শিখায়া দিবিনা। এনে কেমনে আইতে হয়?
“ভাবি আজকে সব শিখায়া দিবো।
.
কথাটা বলেই মেয়েটা আমার হাত ধরে টেনে একটা রুমের ভিতর নিয়ে গেলো। রুমে ঢুকেই মেয়েটা দরজা আটকিয়ে দিয়ে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি বুঝতে পারতেছিনা যে, এগুলা কি হচ্ছে। আর ওই মহিলার কথাটা শুনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। আর আনিকা আমাকে কাস্টমার কেন বল্লো! তার মানে
আনিকা কি…….. ছি! কি সব ভাবতেছি আমি। আমি আর সাত পাঁচ না ভেবে আনিকার কাছে যেয়ে ওর হাতটা আমার হাতে নিয়ে বলে উঠলাম, আমি কিছু বুঝতেছিনা।
কি বল্লো এইসব ওই মহিলাটা।
আনিকা আমার কথাটা শুনে একটু আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, এখনো বুঝতে পারোনি যে, আমি একটা পতিতা। ওর কথাটা শুনে ওর হাত জোড়া আমার হাত
থেকে পড়ে গেলো। এইটা ও কি বল্লো? কোথাও তো লেখাও নেই যে, ও পতিতা। আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারতেছিনা। আমার এরকম নিশ্চুপ থাকা দেখে মেয়েটা
বলে উঠলো, আমারি ভুল হয়েছে ওই ব্যালকনিতে যেয়ে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে এতদিন এমনটা করা। কে জানতো আজ এমনটা হবে, তুমি আমার প্রতি এতটাই দুর্বল
হয়ে পড়বে!
ওর কথাটা শুনে আমি ওর গাল দুটো স্পর্শ করে বলে উঠলাম, আমার না বিশ্বাস হচ্ছেনা! আনিকা আমার এসব একটুও বিশ্বাস হচ্ছেনা। তুমি দুষ্টামি করতেছো তাই না?
আমার এরূপ কান্ড দেখে মেয়েটা চুপ করে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি আবার ওকে বলে উঠলাম, আমি সত্যি বলতাছি, এই যে তোমাকে ছুয়ে
বলতেছি আমি আর কখনো পাগলামি করবোনা তোমার সাথে।
“তোমার ওই পাগলামি গুলোই মাঝে মাঝে খুব অনুভব করতাম। পরক্ষনে আমার মানতে হতো যে, আমার মতো একটা মেয়ের এমন পাগলামি অনুভব করা মানায় না।
এই পাগলামি গুলোর মূল্য অনেক যার দায় আমি কখনো নিতে পারবোনা।
“কেন পারবেনা?
“আমি একটা পতিতা।
“আনিকা!
“তুমি এখান থেকে চলে যাও। আর এইখানে আসবেনা। আমিও এখান থেকে কিছুদিন পর চলে যাবো।
“কই চলে যাবা? আর এরকম নরকের মাঝে তুমি আসলাই বা কেনো?
“পড়া শোনার জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকা এসেছিলাম। আর এইখানে আসার পর জানতে পারলাম আমার মায়ের পিত্ত থলিতে পাথর হইছে। পাথরটা নাকি অনেক আগে
থেকেই হয়েছিলো। মাঝে মধ্যে খুব কাতরাতো ব্যাথায়। এক্সরে করার পর জানতে পারলাম পাথর হয়েছে। অপারেশনের এবং ওষুধ পাতি সব কিছুর জন্য প্রায় ৩৫০০০
টাকা লাগবে। এই কয়টা টাকা কোনো মতেই যোগাড় হচ্ছিলোনা। আত্মীয়-স্বজন যারা আমাদের আছে তাদেরো একি অবস্থা। কেউ একটুও সাহায্য করতে পারেনি।
নিজেদের থাকার ভিটা টা ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা। তাই এই ভাবির সাথে ৬ মাসের কন্টাক্টে এইখানে আসা। আর কিছুদিন পরেই কন্টাক্ট অনুযায়ী আমার ৬ মাস হয়ে
যাবে। তারপর বাড়িতে চলে যাবো।
ওর কথাটা শোনার পর আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারতেছিনা। মেয়েটার চোখ বেয়ে পানি পড়তেছে। এত সুন্দর একটা মেয়ে আল্লাহ এত নিখুঁত ভাবে একে তৈরি করেছে। ভাগ্যের কি পরিহাস!
.
আমি ওর কাছে যেয়ে ওর চোখ দুটো মুছে দিতে লাগলাম। মেয়েটা ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ঠোটে কামড় দিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। আলতো করে ওর
চোখটাতে আমার হাতের আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষন বুলিয়ে দিয়ে ওকে বলে উঠলাম, আজকেই তোমাকে এই নরক থেকে মুক্তি দিতেছি।
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা কিছুটা চমকিয়ে উঠে বলে উঠলো, কি বলতেছো এসব? ভাবি কখনো এমনটা হতে দিবে না। আমি নিজেই খুব চেষ্টা করেছি, এমন কি
পাঁচবারের মতো পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কোনো কাজ হয়নি।
“আমি উনার সামনে থেকে তোমাকে নিয়ে যাবো। তুমি শুধু চুপ করে থাকবে।
“ফায়সা…..
“চুপ! আমি যা বলছি তাই হবে।
কথাটা বলেই আমি দরজাটা খুলে ওই মহিলাটার সামনে যেয়ে বলে উঠলাম, আমি ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।
মহিলাটা আমার দিকে চোখগুলো বড় করে তাকিয়ে বল্লো, হুন বেশি উলটা পালটা করিছ না। পুলিশের লগে হাত রাইখাই এই জায়গায় ব্যবসা করি। একটা ফোন দিমু
আইয়া তরে ধইরা লইয়া জাইবো। বড়জোর মানুষ জানতে পারলে আমারে এই বাসা ছাইড়া দিতে কইবো। কোনো সমস্যা নাই। আমি অন্য জায়গায় নতুন কইরা ব্যবস্থা
কইরা নিমু। ওর টাইম হোক ওরে আমিই ছাইড়া দিমু। দেখতে তো লাগে তরে ভালো মানুষের বাচ্চা। নিজের ক্ষতি নিজে করিছনা।
.
মহিলার কথাটা আমার গায়ে লাগলোনা। আমি নাছোড়বান্দা উনার সাথে আমার একের পর এক কথা বাড়তেই লাগলো। একটা সময় উনি রাজি হয়ে গেলো, ২০০০০
টাকা দিলে নাকি আনিকাকে উনি ছেড়ে দিবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। তারপর উনার কাছ থেকে এক ঘন্টার সময় নিয়ে একটা তালা নিচের দোকান থেকে কিনে
এনে আনিকাকে রুমে ঢুকিয়ে বল্লাম, তুমি রেডি হও আজকেই তুমি গ্রামে যাবে।
কথাটা বলে আমি ওকে রুমে তালা লাগিয়ে টাকা আনার জন্য বাড়িতে গেলাম।
.
এতগুলো টাকা মায়ের কাছে চাইলে দিতে চাইবেনা। তাই ঘরের সিন্দুক খুলে টাকাগুলো চুরি করলাম। যে করে হোক ওকে মুক্তি দিতেই হবে। তারপর টাকা গুলো নিয়ে
সোজা সেইখানে চলে গেলাম। মহিলাকে টাকাগুলো দিয়ে আনিকাকে রুম থেকে বের করে এই পথ থেকে মুক্তি দিলাম।
.
দুইজন বাহিরে বের হয়ে কমলাপুর যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠলাম। চৈত্র মাস, ওয়েদার পরিবর্তন হতে বেশি সময় নেয়না। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে আর গুড়ি
গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। রিকশাওয়ালা একটা পলিথিন দিলো যেনো বৃষ্টিতে না ভিজি। পলিথিনটা মেলে দুইজন একটু ঘেসেই বসলাম। মেয়েটার চোখ দুটো বেয়ে পানি
পড়তেছে। ওর হাতটা আমার এক হাত দিয়ে ধরে বল্লাম, দিনাজপুর রেলস্টেশন থেকে কতক্ষণ লাগবে বাসায় যেয়ে পৌছাতে?
“বেশিনা আধা ঘন্টা।
“এখনো এরকম করে কাঁদবে? কিছু হয়নি! ভাবো যা হয়ে গেছে সব স্বপ্ন ছিলো।
আমার কথাটা শোনে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
কমলাপুর আসার পর রিকশা থেকে নেমে টিকেট কাউন্টারের সামনে যেয়ে জানতে পারলাম দিনাজপুরের ট্রেন ১১.০০ টায় আসবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.৩০
বেজে গেছে। তারপর কেবিন ওয়ালা একটা কামড়ার টিকেট নিয়ে দুইজন একটা বেঞ্চে যেয়ে বসলাম। স্টেশনের লাইটের আলোতে দেখা যাচ্ছিলো মেয়েটার দুই গালে
চোখ থেকে গড়িয়ে পরা পানির ছাপ গুলো। বৃষ্টিটাও খুব জোরসে নেমে গেছে। এই সময়ে রঙ চা আর মিছ করতে নেই। তাই আনিকাকে রেখেই স্টেশনের একটা
দোকান থেকে দুই কাপ রঙ চা আর একটা পানির বোতল নিয়ে ওর সামনে যেয়ে চায়ের কাপ দুইটা রেখে পানির বোতলটা মেয়েটার হাতে দিয়ে বললাম, যাও মুখটা ধুয়ে
নেও।
.
মেয়েটা ওর মুখটা ধুয়ে ওরনা দিয়ে মুখটা মুছে বেঞ্চে এসে বসার পর চায়ের কাপটা ওর হাতে দিলাম। চায়ের কাপটা ওর হাতে নিয়ে মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, তুমি
এতগুলা টাকা কোথায় পাইছো?
ওর কথাটা শুনে আমি মিথ্যা বলে দিলাম যে, টাকাটা আমার জমানো ছিলো।
মেয়েটা চা টুকু শেষ করে বলে উঠলো, আমার ভিতরে নতুন করে পাওয়ার মতো কিছুই নেই। এত কিছু জানার পরেও কেন আমার জন্য এমন করলা?
“নিজের কাছে প্রশ্ন করো পেয়ে যাবে।
“তোমার মুখে বলতে ঘৃণা লাগছে তাই না? তুমি চাইলে আমাকে কিছুদিন তোমার কাছে রেখে দিতে পারো।
“ছি! আনিকা এসব কি বলতেছো তুমি। আমি তোমাকে এমন চোখে দেখি নাই। ভালবাসছি! খুব বেশিই। আর শোনো মন জিনিসটা যে কত মূল্যবান সেইটা আমরা কিন্তু
জানি। এইটা সবাইকে দেওয়া যায়না যাদের উপর অধিক বিশ্বাস বিরাজ করে তাদেরই শুধু দেওয়া যায়। নতুন কিছু পাওয়ার মতো শুধু ওই দামি মনটাই আছে।
.
আমার কথা শুনে আনিকার চোখ দুটি আবার পানিতে ভরে গেলো। মেয়েটা যেনো আমাকে বাধা দিতে চাচ্ছিলো। আমি সেই বাধাটা দেওয়া থেকে ওকে বিরত রেখে ওর
হাতটা ধরে বল্লাম, এক ঘন্টা আগে কি হইছে আমি সব ভুলে গেছি। তোমার অতীতে কিছু হয়নি। এতদিন খারাপ একটা স্বপ্ন দেখছো এই ভেবে নতুন পথ চলা আরম্ভ
করো।
.
মেয়েটা এবার আমার কথাটা শুনে কেদেই উঠলো। ওর হাতটা শক্ত করে ধরে আমি আবার বলে উঠলাম, দেখছো আবার কাঁদতেছে! বলছিতো কিছু হয় নাই। একদম
চুপ। বাড়িতে যেয়ে ওই জায়গার কোনো কলেজ থেকে পড়াশোনাটা করতে থাকো। আর তিনটা বছর অপেক্ষা করো। কি বলছি মাথায় ঢুকছে?
আমার কথাটা শেষ হওয়ার পর ও একটু হেসে আমাকে ইশারায় হ্যা কথাটা বুঝালো। পরক্ষনে খেয়াল করলাম ট্রেন এসে পড়েছে।
.
তারপর ওকে নিয়ে সোজা ওর কেবিনে বসিয়ে দিয়ে বল্লাম, রাতে দরজা খুলবানা। আর আমি বাসায় যেয়ে ফোন দিয়ে কথা বলবো। ঠিক আছে?
“হুম।
“আমি তাহলে বাহিরে যেয়ে দাড়াই দরজাটা ভালো মতো আটকিয়ে দেও।
কথাটা বলে যেই বাহিরে বের হতে যাবো তখনি মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, ক্যান ইউ হাগ মি?
আমি পিছনে ঘুরে দেখলাম মেয়েটা দাড়িয়ে আছে। আমি একটু হেসে বলে উঠলাম, অনুমতি লাগে নাকি আবার আস্তে করে হাতটা ধরে টান দিয়ে বুকে এসে পড়বা।
কথাটা শোনার পর মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ থাকার পর আমার চোখের দিকে একটু তাকিয়ে আমার শুকনো ঠোটে একটা
চুমু খেয়ে ঠোট দুটো ভিজিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,আমার ঠোটটা কিন্তু এই প্রথম কাউকে স্পর্শ করলো। যাও নিচে যেয়ে দাড়াও বাশি ফু দিচ্ছে এখনি ট্রেন ছেড়ে দিবে
এখন।
আমি আর কিছুনা বলে বাহিরে বের হয়ে গেলাম। তারপর ওর কেবিনের জানলার সামনে এসে ওর হাতটা ধরে আবারো বল্লাম, কিছুই হয়নি বুঝছো?
“হুম।
কথাটা শেষ হতেই ট্রেনটা ছেড়ে দিলো। আস্তে আস্তে ট্রেনটা অনেক দূর চলে গেলো। মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো বের করে দেখলাম আনিকার ফোন। ফোনটা
রিসিভ করার পর মেয়েটা বলে উঠলো, যাও এখন বাসায় যাও। বাসায় পৌছিয়ে ফোন দিবা।
“আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা শেষে ফোনটা রেখে হাটা শুরু করলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, যে করে হোক ওকে আমার চাই। ওর অতিত বলতে কিছু নেই। ওকে সৃষ্টিকর্তা আজকে
নতুন করে তৈরি করেছে শুধু আমার জন্য।