দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেছি, ফেসবুকে ঢুকলে এখনো অনেক মেয়ে প্রশ্ন করে, বাবু খাইছো? ছবি এডিটিং ফেডিটিং কইরা শাকিব খানের মতো একটা পোজ মাইরা প্রোফাইল পিকচার দিয়েছি, লোকজন কি আর জানে, আমি আসলে বুইড়া বুইড়া দুই পোলাপাইনের বাপ? মাঝে মাঝে আমার ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি,বাবুটা আসলে কে? কেননা আমার বউও মাঝে মধ্যে ছেলেমেয়েদের প্রশ্ন করে,বাবু খাইছো? তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? আমিও বাবু আমার পোলাপানও বাবু? কেমনে কী??
আফসোস একটাই, পরের বউয়ের কাছে বাবু হইতে পারলেও নিজের বউয়ের কাছে পারলাম না! নিজের বউয়ের কাছে আমি শয়তান। দুনিয়া বড়োই নিষ্ঠুর!! আহা! পরের বউ গুলো কত হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথা বলে! নিজের বউগুলো মনে হয় সারাক্ষণ মুখে করল্লাার রস নিয়ে বসে থাকে, নইলে তেনাদের কথা এতো তিতা কেন? আমি গবেষনা করে দেখেছি,পরের বউ আমাকে যতোটা ভালবাসে নিজের বউ ততটা বাসে না। মাঝে মাঝে আফসোস হয়, কেন যে পরের বউ রেখে নিজের বউকে বিয়ে করতে গেলাম!! বউয়ের ধারণা, ফেসবুক আমার মাথাটা খেয়েছে! বউকে কী করে বুঝাই, ফেসবুকের মেয়েরা অনেক ভালো,ভদ্র । ওরা কত সুন্দর করে কথা বলে! ওরা যখন কথা বলে, তখন মনে হয়, ঢাকা শহরের সব মিষ্টির দোকান উনাদের মুখের ভিতরে!
আর আমার বউ যখন কথা বলে তখন মনে হয়, এইমাত্র বুড়িগঙ্গার পঁচা পানি খেয়ে এসেছে, মুখে এমন দুর্গন্ধ!!
ফেসবুকে আজকাল মেয়েরা নিজেকে সিঙ্গেল এবং অবিবাহিত বলে প্রচার করতে পছন্দ করে। এতে নাকি ফেসবুকে তাদের ফ্যান ফলোয়ার্স দ্রুত বাড়ে! দুইদিন পর নাতি নাতনির মুখ দেখবে,সেই মহিলাও ফেসবুকে ‘অবুঝ বালিকা ‘ আইডি নাম দিয়ে লিখে, I am single ! এইসব দেখে মনে হয়, আহা! কেন যে বিয়ে করলাম! আর কয়দিন পর বিয়ে করলে আরও ভালো বউ পাইতাম!! শুনেছি, বউ আর মোবাইল, যতো দেরিতে সংগ্রহ করা হয়,ততোই নাকি লেটেস্ট মডেল পাওয়া যায়!! বউয়ের যন্ত্রণায় লুকিয়ে লুকিয়ে ফেসবুক চালাতে হয়। কী করে বউকে বুঝাই, ফেসবুক আমার লাভ,ফেসবুক আমার হেভেন!!
প্রয়োজনে বউ ছাড়তে রাজি আছি, ফেসবুক ছাড়তে পারবো না। একবার এক সুন্দরী মেয়ে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল। আমি একসেপ্ট করে লিখলাম, তুমি কি বাবু? নাকি বাবুর মা? মেয়েটা লিখলো,হায় আল্লাহ! আমার তো এখনো বিয়ে হয় নাই ভাইয়া! আমি সিঙ্গেল। আমি মজা করে লিখলাম, তোমার ভাই আমার বন্ধু। তোমার যে চারটা ছেলে মেয়ে আছে, এটা আমি জানি! হায় আল্লাহ! কী বলেন ভাইয়া! আমার ছেলেমেয়ে তো দুইটা!! তাহলে যে বললে তুমি সিঙ্গেল, তোমার বিয়ে হয় নাই! তাহলে ছেলে মেয়ে আসলো কীভাবে? গুগল থেকে ডাউনলোড করে পেয়েছো? আমাজানে অর্ডার করছিলা? বুঝলাম না কেন মেয়েটা আমাকে ব্লক মেরে দিল! মেয়েদের মনটা আসলে কিছুটা লোকাল বাসের মতো। ভিতরে চল্লিশ জন গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে, তারপরও কন্ট্রাক্টর বলবে, আসেন ভাই আসেন,ভিতরে কেউ নাই!!
অবশ্য অনেক সময় ফেসবুকে মানুষের গাধামি দেখেও হাসি। কিছুদিন আগে এক মেয়ে একটা বাচ্চার ছবি পোস্ট করে লিখেছে, হাই বন্ধুরা, প্রথম মেয়ের মা হলাম। উৎসাহ পেলে আরও ছেলেমেয়ের মা হতে চাই!! আমি মেয়েটাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য লিখলাম, আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাডাম। বাচ্চার মা হয়েছেন জেনে খুশি হলাম। আরও বাচ্চার মা হতে চান জেনে পুলকিত হলাম। বাচ্চা হওয়ার জন্য কোন সহযোগিতার দরকার হলে জায়গায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিবেন। আমরা বিনা পয়সায় ফ্রী সার্ভিস দিবো। প্রয়োজনে বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতা নিবো,তবু আপনার বাচ্চা হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ! উৎসাহ চেয়েছে, দিয়েছি, এরপরও মেয়েটা কেন যে আমাকে ব্লক লিস্টে পাঠালো!
মেয়েদের মন ভারী অদ্ভুত। ভারতের পিঁয়াজ দিয়ে আপনি পাকিস্তানি মুরগী রান্না করতে পারবেন, কাটা চামচ দিয়ে আপনি চা খেতে পারবেন। পিপড়াদের মুখে লিপস্টিক পরাতেও পারবেন, মাগার কখনোই কোন মেয়ের মন পুরোপুরি রক্ষা করে চলতে পারবেন না!! একদিন নীলিমা নামের দূরসম্পর্কের এক মামাতো বোন আমাকে মেসেঞ্জারে নক করে বললো, ভাইয়া,আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে ভালবাসে না।আমি আত্মহত্যা করতে চাই। একটা সমাধান দেন! আত্মহত্যা করবে ভালো কথা। সহজ উপায়ে চাও নাকি জটিল উপায়ে? সহজ উপায় বলেন, ভাইয়া। বিষ টিষ খেয়ে লাভ নাই, আজকাল বিষ অনেক নকল। আরাম করে মরতে পারবে না।মাঝখানে আজরাইলে আর হাসপাতালের টানাটানি! মুখে ফ্যানাট্যানা উঠলে মুখ বিশ্রী দেখাবে। সমাজে তোমার ইজ্জত ফালুদা হয়ে যাবে। তাহলে সমাধান কী,ভাইয়া?
মরতে চাও কেন? তোমার বয়ফ্রেন্ড কি পল্টি মেরেছে? পল্টি কী ভাইয়া? আরে বইন, তোমাকে ছেড়ে আরেকটা ধরেছে? তা তো ধরেছেই! সেটা সমস্যা না। কথা হলো আমার চেয়ে ঐ মেয়েকে বেশি ভালবাসবে কেন? আমি ওর চেয়ে বেশি সুন্দরী না? আমার কি কষ্ট হয় না? বলেন ভাইয়া? তা তো অবশ্যই। বইন রে! তোরে আমার নিজের গার্লফ্রেন্ড মনে করে একটা উপদেশ দেই? কী উপদেশ ভাইয়া? তোর বয়ফ্রেন্ড যেমন তোকে রেখে আরেকটা ধরেছে, তুইও আমাকে ধর। ধরাধরিতে কাটাকাটি। তারপর দেখ, কত ধানে কত পোলাও! ভালো বলেছেন তো, ভাইয়া!আশ্চর্য, এই কথা আমার মাথায় আসে নাই কেন?আজ থেকে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড!! ব্যাস! মেয়েটার সাথে আমার চ্যাটিং ম্যাটিং চলতে লাগলো। বউ একদিন টের পেয়ে গেল। সে বললো, নীলিমার সাথে তোমার কী সম্পর্ক?
আমি নিরীহ গলায় বললাম, কোন নীলিমা? কলেজে পড়ে সেইটা, নাকি ভার্সিটিরটা? কয়টা নীলিমার সাথে তোমার সম্পর্ক? যাই হোক, একটা হলেই হলো। আরে, ওরে তো আমি দোয়া দুরুদ শিখাই! শত হলেও মামাতো বোন! বল কী? দোয়া দুরুদ শিখাও তুমি? হাউ ফানি, জরিনার নানি! তুমি নিজেই তো কোন দোয়া জান না। তা কী দোয়া শিখাও? বয়ফ্রেন্ডের সাথে সুসম্পর্ক রাখার দোয়া! অবশ্য আমিও গার্লফ্রেন্ড পটানোর দোয়া শিখছি!! বউরা কখনোই জামাইয়ের সুখ দেখতে পারে না। এদের পেট বোঝাই হিংসা। নইলে সেই মেয়ের সাথে চ্যাটিং করতে দেখে আমাকে তেড়ে আসবে কেন? কই, একটু উৎসাহ দিবো, তা না। আমি তো কত মেয়েকে উৎসাহ দেই!! বউকে কখনোই প্রেম ভালবাসা বুঝাতে পারলাম না, আমি যেটাকে প্রেম বলি,বউ সেটাকে ফস্টিনস্টি বলে!!
ফেসবুক চালাতে দেখলেই বউয়ের গায়ে জ্বালা ধরে। একদিন বউ আমাকে ডেকে বললো, সারাদিন যে এতো এতো ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাক,এ থেকে কি কিছু শিখতে পেরেছো? আমি বললাম, অবশ্যই অনেক কিছু শিখেছি, এই যেমন ধর,বিয়ের আগেই কীভাবে বাসর করতে হয়, পরকীয়া করার সহজ উপায়, বউকে কীভাবে ফাঁকি দিতে হয়,,, বউ কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, মনে রেখ, ফেসবুকের বাইরেও কিন্তু দুনিয়া আছে! আমি অবাক হয়ে বললাম, বল কি? ফেসবুকের বাইরেও দুনিয়া আছে? লিংকটাও দাও তো, আজই ডাউনলোড কইরা লই,,, বিবাহিত জীবনে একটা জিনিসই শিখেছি, জীবনটা সিনেমা নয়। সিনেমায় নায়ক নায়িকার বিয়ের পর গল্প শেষ হয়ে যায়, বাস্তবে বিয়ের পর সিনেমা শুরু হয় !!
বউ যতো খুশি পিছনে গালি দিক,সামনে না দিলেই হলো। রাজাকেও তো মানুষ পিছনে শালা বলে! বউয়ের সব কথা কি ধরতে আছে? বিড়াল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঘ মনে করতেই পারে, আসলে সে একটা ম্যাঁও!!
মাঝে মাঝে দুই হাত তুলে আল্লাহ তায়ালাকে বলি, হে খোদা, স্কুল জীবনে জরিনার সাথে প্রেম করলাম, বেশি দিন টিকলো না, কলেজ জীবনে রিয়ার সাথে প্রেম করলাম, তাও বেশি দিন টিকলো না, মামাতো বোনকে বিয়ে করতে চাইলাম, তারেও আরেক পোলার লগে ভাগাইয়া দিলা, বিয়ে করছি অনেক বছর হইছে, জাস্ট তোমাকে মনে করাইয়া দিলাম আর কী!!
আচ্ছা, সব কিছুরই তো একটা এক্সপায়ার ডেট থাকে, কাবিন নামার থাকে না কেন? নাকি ওটা লিখতে কাজি সাহেবরা ভুলে যায়? দিস ইজ নট ফেয়ার!! আমার ধারণা, ছেলেরা অতটা খারাপ নয়,যতোটা বউ ভাবে। আবার অতোটা ভালোও নয়,যতোটা মা ভাবে!!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা