ভালোবাসার রং

ভালোবাসার রং

প্রত্যেক সকালবেলার এই সময়টাতে অনিকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অনিক হাত বাড়িয়ে কিছু খুজতে থাকে। কিন্তু খুঁজে না পেয়ে চোখ খুলে একটু তাকালে, বরাবরের মতো

দেখলো ঈশিতা বিছানা ছেড়ে উঠে গেছে। মুচকি হাসল অনিক। আবার ধুপ করে শুয়ে পরল।কিন্তু একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আগের মতোই এবারো ঘুম ধরল না

অনিকের। তাই সে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো আজকে কি কি করা যায়। আজকে ছুটির দিন তাই সে ভাবল ঈশিতাকে নিয়ে ও আজকে ঘুরতে যাবে। অনেকদিন হলো

ওরা দুজন কোথাও বেড়ায় না। এর পর শপিং এ একটু ঘুরবে এই আর কি। মনে মনে দিনের পঞ্জিকা করে ফেলল সে। সব দিনেই অনিকের কাছে ছুটির দিন মনে হয়।

বেকারদের কাছে হয়ত তাই মনে হওয়ার কথা! বিছানায় আর শুয়ে থাকতে পারল না অনিক এই বদভ্যাস টা ঈশিতা ঢুকিয়েছে তার মধ্যে। আগে কতো সুন্দর করে সে

দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতে পারতো। কিন্তু এখন পারে না। এই মেয়েটা নিজেও সকালে উঠবে ওকেও উঠানোর একটা ওষুধ রেখে দেয় বিছানায়। এই জন্যে মনে হয়

বিছানায় শুয়ে থাকতে অনিকের অসস্তিবোধ হয়। তাই শেষে থাকতে না পেড়ে ও উঠে পরল। মুখে ব্রাশ ও ঘারে গামছা নিয়ে বের হয়ে আসলো সে। সকালে হেটে ওর

দাত মাজতেই হবে পুরনো অভ্যেস বলে কথা। ডাইনিং এ ঢুকতেই অনিকের মা রাজিয়া বানুর কণ্ঠ ভেসে আসলো।

” লাট সাহেব উঠছেন ঈশিতা?”

” না মা, ঘুমাচ্ছে একটু ঘুমাক”, রিনরিনে গলায় জবাব দেয় ঈশিতা।

” ঘুমানো ছাড়া তো তার কোন কাজ নেই”, রাগ ভেসে উঠে অনিকের মায়ের গলায়।

অনিক কিছু না বোঝার ভান করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ডাইনিং এ ঈশিতা সকালের নাস্তা সাজাচ্ছে। অনিক সোজা এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। ঈশিতা অনিকের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। প্রত্তুত্যরে অনিক মুখ টিপে হাসল।

” মা কোথায়? ” ফিসফিস করে ঈশিতাকে বলে অনিক।

রাজিয়া বানু দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,

” আমি তো আর তোমার মতো বসে বসে থাকি না। আমার অনেক কাজ আছে।”

অনিক মুখ টিপে হাসে। ও জানে ওর মা রাগ হলে ওকে তুমি করে বলা শুরু করে। রাগ হওয়ারি তো কথা নিজের একমাত্র ছেলে বেকার। বউয়ের ইনকামে চলে সে। নানা

লোকে নানারকম কথা বলে এজন্যে। অনিকের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। রাজিয়া বানু চায়ের কাপ টেবিলে রাখতে রাখতে বলেন,

” সারাদিন তো ঘুম ছাড়া তোমার কোনো কাজ নেই। এত বড় ছেলে, বিয়ে করছে এখন বউয়ের বেতনের আশায় বসে থাকে। আমার হয়েছে মরণ দশা। বুড়ো বয়সে

কিসের কি একটু আরাম করে থাকবো তা না। এই বয়সেও খাটতে হচ্ছে।” রাগে গজ গজ করতে থাকে অনিকের মা। হঠাৎ করে অনিকের মন খারাপ হয়ে যায়। ওর

মায়ের কথাতে মন খারাপ করার ছেলে নয় ও। আসলেই তো ও একটা নিষ্কর্মা ছেলে। বউয়ের বেতনে চলে ও। কিন্তু তার মন খারাপের কারণ হলো, কিছুদিন আগে

ঈশিতা ওর কাছ থেকে নীল কাচের চুরি চেয়েছিল। মেয়েটা ওর কাছে সচারাচর কিছু চায় না। কিন্তু সে ঈশিতার এই সামান্য আবদার টুকু পূরণ করতে পারছে না।

” এই ছেলেটা হয়েছে তার বাপের মতো, কথায় কথায় চাকরি ছাড়বে। সংসারের কি হবে না হবে সেই চিন্তা তাদের মাথায় থাকে না। ”

অনিকের মাথা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ওর বাবাকে নিয়ে আসলে সে কোনো কথা শুনতে পারে না। অনিক খুব ভালোবাসত ওর বাবাকে। বলতে গেলে সে তার বাবার

অনেক বড় ভক্ত ছিল। কিন্তু সে তার মাকে কিছু বলতে পারলো না। খাওয়া ফেলে রুমে চলে গেলো। ঈশিতা বাড়বার অনিককে ডাকতে থাকলো। কিন্তু অনিক শুনলে

একটা কথা ছিল। ছোট থেকেই সে একরকম এক জেদি। ওকে শান্ত একজনমাত্র করতে পারতো সেই ব্যক্তি হলেন অনিকের বাবা।

ঈশিতা তার শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

” মা, ও তো চলে গেলো না খেয়ে।”

” যাক , ওর বাবা আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, এখন তোমাকে মারবে। ” রাগে ফুসতে থাকেন রাজিয়া বানু।

” মা, এসব বাদ দিন এখন”, ঈশিতা বলে।

” মারে, সব আমার দোষ। আমি তোর জীবনটাকে নষ্ট করে দিলাম। কেন যে এই হতভাগার সাথে তোর বিয়ে দিতে গেলাম। ”

” মা, প্লিজ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। এখন এসব কথা বাদ দিন তো। আপনি খেয়ে নিন। আমি ওদিকে দেখি। কিছু খাওয়াতে পারি কিনা ওকে।”

রাজিয়া বানু গুনগুন করে কাঁদতে থাকে। ঈশিতা প্লেটে করে কিছু খাবার নিয়ে রুমে যায়। অনিক মাথা নিচু করে কাঁদছে। ঈশিতা কিছুতেই বুঝে না, এই ছেলে বাচ্চা

ছেলের মতো কাঁদে কিভাবে। ঈশিতা কাছে গিয়ে অনিকের কাধে হাত রাখে। পরিবেশ হালকা করার জন্যে বলে,

” এভাবে বাচ্চাদের মতো কেউ কাঁদে নাকি পাগল ছেলে।”

অনিক কিছু না বলে চুপ করে থাকে। ঈশিতা আবার বলে,

” আচ্ছা মায়ের প্রতি কেউ কি রাগ করে? ”

এবার অনিক মুখ খুলে,

” ঈশিতা, আমি মায়ের প্রতি কখনো রাগ বা অভিমান করিনি। কিন্তু বাবার কথা উঠলেই আমার কেমন যেন লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। কেন আমাকে একা

রেখে চলে গেলো বাবা। আমি যে একা কিছুতেই সামলাতে পারি না। ”

” আরে বোকা,সবাই তো একদিন না একদিন মারা যাবে। তাই বলে কি অন্যদের জীবন থেমে থাকবে কখনো ছিল কি?” তাহলে তুমি কেন এইরকম করবে। এখন সব

বাদ দেও আর মা কি বলে বলুক, আমার বর তুমি আমার রোজগার তুমি খাবে না তো কে খাবে। ”

” আচ্ছা ঈশিতা, তোমার কি মনে হয় আমি চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে খুব ভুল করছি?”

” আমি জানি না অনিক তোমার সাথে কি হয়েছে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আর আমি এও জানি তুমি কোন ভুল করনি।”

” বেটা খুব চামার ছিল, সবসময় চাপের মধ্যে রাখতো। আর অকথ্য ভাষায় গালি দিতো। আমার একদম ভালো লাগতো না ঈশিতা। তাই আর সহ্য করতে না পেয়ে চলে

আসলাম কি করব বল কিছু টাকার জন্যে আমি এত গালি কেন সহ্য করব।”

” আচ্ছা বাদ দেও, একটু খেয়ে নেও দেখি সুবোধ বালকের মতো? ”
অনিক চুপ করে খেতে থাকে। ঈশিতা বলে,

” আজকে কোথাও যাবে না কিন্তু?”

” কেন?”

” আজকে পার্টিতে যেতে হবে। আমাদের অফিসের বর্ষবরণ উপলক্ষে পার্টি দিচ্ছে।”

” আচ্ছা আমাকে টানছো কেন? আমি এসবে মানিয়ে নিতে পারি না তো।”

” ওইসব কথা বললে চলবে না। আমাদের কলিগদের সবাই আসবে আমার সাথে অত্যন্ত তুমি চলো। মা নাকি যাবেন না। ”

” কিন্তু আমি তো ভাবলাম আজকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব? ”

” আচ্ছা পরে গেলেও তো হবে। প্লিজ না করে না সোনা। ” ঈশিতা অনুনয় করতে থাকে।

অনিক একটু মুচকি হেসে হ্যা করে দেয়। তাই শুনে ঈশিতা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।

২.

পার্টিতে কখনওই অনিকের মন বসে না। আসলে সে চুপচাপ থাকতেই বেশি পছন্দ করে। অনেকক্ষণ থেকে সে ঈশিতাককে খুঁজছে কিন্তু এই মেয়ে যে কোথায়

হারিয়েছে আল্লাহ্‌ জানে। তাই সে এক কোণে চুপ করে বসে যায়। আজকে যখন ঈশিতা সাজছিল অনিক অনেকটা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। নীল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে

কানে নীল পাথরের দুল। কিন্তু কিসের জানি একটা অভাব লাগছিলো। ও হ্যা, হাতে যদি নীল চুড়ি থাকতো তাহলে বেশ মানাতো ঈশিতাকে। নীল চুড়ি কিনে দেওয়ার তীব্র

এক ইচ্ছা জাগে অনিকের মনে। কালকেই কিছু একটা করতে হবে।

” আরে অনিক তুমি, কেমন আছো? ”

অনিকের ভাবনায় ছেদ পড়ল । সে সামনে তাকালে দেখল, ওর সামনে রিশা দারিয়ে আছে। অনিক কিছুটা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে দেখল তাকে। মনের এক কোণে রাগের মেঘ জমা হতে লাগলো।

” অনিক, কথা বলছ না যে । ”

” হুম ভালো আছি, তুমি?”

” আমিও আছি ভালো। তুমি কি এই অফিসে জব কর নাকি!”

” না, আমার ওয়াইফ চাকরি করে এখানে।”

” আচ্ছা, আমার হাবি এখানে জব করে। কিন্তু তুমি কি করো এখন?”

” কিছু না বেকার।”

” ওহ! ভালো “, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলে উঠে রিশা। অনিকের মাথায় আগুন জ্বলে উঠে অনিকের। এবার রাগের মাথায় বলে ,

” রিশা, তোমাকে বলেছি আমার মুখের সামনে আসবে না। আর তুমি যার জন্যে আমাকে ছেড়েছ তাকে তো তুমি পেয়েছ। তুমি তো চেয়েছিলে টাকাওয়ালা কাউকে,

পেয়েছ। আর এখন তোমার সমস্যাটা কি? আমার সামনে এসে আমাকে তাচ্ছিল্য করার। ”

” হুহ, বেকার লোকের ফালতু কথা। পকেটে কিছু নেই তার আবার বড় কথা। দিন যায় তো বউয়ের টাকায়।” রিশা বলে।

” ও হ্যালো, উনি উনার বউয়ের খায় না নিজের খায় তার কি দরকার আপনার। আর যদি বউয়ের খায় আপনার সমস্যা টা কোথায়। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা বাধাচ্ছেন

মনে হয়। ” পিছন থেকে ঈশিতা বলে উঠে।

” আপনি কে? আমাদের দুজনের মাঝে কথা বলেন কেন?”
” আমি এই বেকার লোকের বউ। আর যাকে আপনি বেকার বলছেন, সেই লোক কিন্তু একদিন আপনাকেও অনেক কিছু গিফট দিয়েছিলো মনে হয়। আর এই লোকের

টাকায় ঘুরেও বেরিয়েছিলেন কিন্তু।”
অপমানে রিশার মুখ কালো হয়ে গেলো। ও আসলে ভাবতেও পারেনি এভাবে ওকে কথা শুনতে হবে। তাই রাগে ফুসতে লাগলো সে। আর অনিক দেখল ব্যাপারটা

বিচ্ছিরি হয়ে যাচ্ছে তাই সে ঈশিতাকে নিয়ে সরে আসলো। পুরো পার্টিতে এক প্রকার নিরানন্দে কাটল অনিকের।

৩.

রাতের আকাশ খুব ভালো লাগে অনিকের। বিশেষ করে ব্যলকনিতে বসে ব্যস্ত শহরের কাজকর্ম। অনিকের মন খারাপ থাকলে ব্যলকনিতে বসে থাকে সে। আজকে

পরপর দুটি মন খারাপের ঘটনা ঘটলো। দুটি ঘটনাই নিজেকে কেন্দ্র করে। রিশার কথা মনে পরতেই অনিকের মাথা চিড়বিড় করে উঠলো। মনেমনে কষে একটা খারাপ

ভাষায় গালি দিলো সে। বেয়াদব একটা মেয়ে। এই মেয়ের কারণে তার এতকিছু। ঈশিতা পিছন থেকে অনিককে জড়িয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখল। অনিক আকাশ

দেখতে দেখতেই বলল,” আচ্ছা ঈশিতা আমি বেকার তাই না। আমাকে বিয়ে করে তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। ” ” আচ্ছা আমি কি তাই বলেছি, তুমি এতো হতাশ

হচ্ছ কেন! আজকে হোক কালকে হোক একটা চাকরি হবে তো। আর না হলে আমি কিসের জন্যে আছি হুম”, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ঈশিতা অনিককে।

অনিক মনে মনে বলছে, ” আসলেই মেয়েদের অনেক রুপ! কেউ করুণাময়ী তো কেউ সর্বগ্রাসী। ”

পরেরদিন, ঈশিতা একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসলো। বাসার দরজায় দেখে খাম বন্ধ একটা কিছু পরে আছে। ও নিচু হয়ে উঠালো। দেখল কিসের

এপয়েটমেন্ট লেটার। অনিকের নাম লেখা। ও কাপাকাপা হাতে খুলে দেখল একটা মাল্টিন্যাশলান কোম্পানি থেকে অনিককে জয়েন করতে বলছে। ঈশিতা খুশিতে কি

করবে বুঝতে পারছে না। তাই সে তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো। রাজিয়া বানু ডাইনিং টেবিলে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ঈশিতা রাজিয়া বানুকে খুশিতে

জড়িয়ে ধরল। ” মা, ওর একটা জব হয়েছে। এই দেখুন এপয়েটমেন্ট লেটার। ” রাজিয়া বানু বলেন, ” মারে, আমার পাগল ছেলেটা এখনো বাসায় আসেনি। সেই সকালে

বেড়িয়ে গেছে কিচ্ছু খায়নি পর্যন্ত। ” ” মা কোনো টেনশন করবেন না। হয়ত কোনো বন্ধুর কাছে গেছে। আপনি কিন্তু বলে দিবেন না। আজকে আমরা ওকে সারপ্রাইজ

দিবো। ” কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো অনিকের দেখা নেই। রাজিয়া বানু বাড়বার দরজার কাছে যাচ্ছেন। ঈশিতা নিজেকে স্থির করার চেষ্টা করছে। তা নাহলে

রাজিয়া বানু আরো ভয় পেয়ে যাবেন। ঈশিতার খুব ভয় হচ্ছে এই পাগল ছেলেটার কিছু হল না তো আবার। নানা ভয় ঈশিতার মনে উকি দিচ্ছে। ওর টেনশন যখন সীমা

ছাড়িয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি সন্ধ্যার কাছাকাছি অনিক বাসায় আসলো । পুরো শরীরের ধুলোবালি মাখা। চলের বেহাল দশা। ঈশিতা অনিককে দেখে হাফ ছেড়ে বাচল।

অনিক ঈশিতাকে ইশারা করে ওর পকেটে হাত ঢুকাতে বলে। ঈশিতা পকেট থেকে সুতোয় বাধা কিছু নীল কাচের চুড়ি বের করে আনলো। চুড়ি দেখে ঈশিতার মুখ হা

হয়ে গেলো। যেন ওর সামনে কেই এভারেস্ট এনে রেখেছে। ঈশিতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। ” এগুলো আমার জন্যে এনেছ!” ” হুম”, স্মিত হেসে জবাব দেয় অনিক।

ঈশিতা চুড়ি গুলোকে হাত দিয়ে নাড়তে থাকে। যেন পরশ পাথরে হাত বুলাচ্ছে সে। ” আচ্ছা তোমার হাতে কি হয়েছে?” পিছনে লুকানো হাতটাকে আরো একটু লুকিয়ে

অনিক বলে, ” কই কিছু না। ” কিছু না তো ওভাবে লুকাচ্ছ কেন! দেখি আগে?” অনিকের হাত দুটোকে টেনে সামনে মেলে ধরে সে। দেখি আতকে উঠে ঈশিতা।

অনিকের দুই হাতে ক্ষত আর লাল হয়ে আছে। ঈশিতার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা পানি অনিকের হাতে পরল। সে অনিককে টেনে এনে টেবিলে বসালো। এক ছুটে রুম

থেকে কিছু তুলা ও মলম নিয়ে আসলো। অনিকের হাত পরিষ্কার করতে করতে সে বলল,” এই পাগলামি করার কি দরকার ছিল? আমি কি বলেছি আনতেই হবে।” ”

আরে না, আসলে তোমার খালি হাত দেখলে আমার ভালো লাগে না। কিন্তু পকেটে টাকাও ছিল না। তাই আর কি ইট ভাঙ্গার কাজ করে নিয়ে আসলাম। ” ” খুব ভালো

কাজ করছ। তোমার কিছু হলে আমার কি হতো তখন। আমি কিভাবে থাকতাম। ” কাঁদতে কাঁদতে অনিকের হাতে মলম লাগিয়ে দেয় ঈশিতা। অনিক বলে, ” ঈশিতা

তুমি আমাদের জন্যে যা কিছু কর তার কিছুই না এর কাছে। ” ” তাই বলে আমার জন্যে এত কষ্ট করবে। দরকার নেই কিছুর আমার কিছু লাগবে না। আমার শুধু তোমায়

চাই। আর কিছুই লাগবে না আমার।”

দরজার আড়ালে রাজিয়া বানু মুখে আচঁল গুজে কান্না করতে থাকেন চাপা স্বরে। ছেলের কাজে তিনি আজ অনেক খুশি। গর্বে তার মন ভরে যাচ্ছে। কান্নার কারণ হচ্ছে,

তার সামনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। একদিন ঠিক এভাবেই অনিকের বাবা তাকে এক জোড়া কানের দুল এনে দিয়েছিল। সেদিন ঠিক এভাবেই রাজিয়া বানু

কেঁদেছিলেন। সুখের কান্না। বেশি দামি ছিল না দুল জোড়া। কিন্তু ভালবাসার পরশ লেগেছিল তাতে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত