সুন্দরপুর ৫০ পরিবার নিয়ে গঠিত একটি গ্রাম। সে গ্রামে রয়েছে পাইলট থেকে বাজারে সবজি বিক্রি করা পযর্ন্ত মানুষ।
সবাই সবার মতো জীবনযাপন করে। সব থেকে কষ্টের মানুষটার নাম হলো সিয়াম। সিয়ামের পরিবারে রয়েছে তার মা- বাবা, চাচা -চাচী, দাদা- দাদী। চাচা-চাচীর ছেলে মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই চাকরী করে। সিয়ামের বাবা ব্যবসা করেন। সিয়ামের বাবা চান সিয়াম ব্যবসা করবে। কিন্তু সিয়ামের একটা ইচ্ছা আছে সেটা হলো সে পাইলট হবে। বিমান পাইলট মানে ত্যাগ স্বীকার করা। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে বিমান নিয়ে আকাশে উড়া। সিয়াম এসব কাজ করতে চায়। সে দেশের জন্য কাজ করতে চায়। সে কিছুতেই এই চাকরী টা পাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করছে চাকরী টা পাওয়ার জন্য। চাকরীটা এদিকে সে পাচ্ছে না তারপর তার প্রতি গ্রামের মানুষের কুসংস্কার। একদিন সিয়ামের মা সিয়াম কে বলেন…….
>> সিয়াম তোর বাবা বলছেন তুই নাকি তোর বাবার সাথে ব্যবসা করতে সিংগাপুর যাবি।
>> মা আমি কতবার বলব। আমি ব্যবসা করব না। আমার এসব ব্যবসা করতে ভালো লাগে না।
>> সিয়াম দেখ পাইলট হতে হলে অনেক টাকাপয়সা লাগে। আমাদের এতো টাকাপয়সা আছে কি?
যা আছে তা তো তোর বাবার ব্যবসার উপর দিয়ে চলে যায়। তুই এসব চিন্তা মাথা থেকে দূর কর।
>> মা আমি একটু পাইলট অফিসার স্যার এর সাথে যোগাযোগ করে আসি। স্যার বলেছিলেন স্যার এর সাথে যোগাযোগ করতে।
>> তোর বাবা বকাবকি করবেন। প্লিজ তুই যাস না।
>> মা শুন।
বাবা কে বল না।
.
শিশির নামে একটা মেয়ে আছে। শিশিরের পরিবার খুব ধনী। শিশিরও ভালো ছাত্রী। ভালো ছাত্রী হলে কি হবে একদম অহংকারী। সিয়ামের সাথে শুধু ঝগড়া করে। সিয়াম কে একদম দু’চোখে সহ্য করতে পারে না। সিয়াম কে দেখলেই যেন শরীর টা জ্বলতে থাকে। সিয়ামের স্বপ্ন তো বড়। তাই সিয়ামের সাথে মজা করে।
সিয়াম রাস্তা দিয়ে পাইলট অফিসার স্যারের সাথে দেখা করতে শহরে যাচ্ছে। শিশির শহরের ভার্সিটি তে লেখাপড়া করে। সিয়াম শিশির কে দেখেই লুকিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু তা আর হলো কোথায়। তার আগেই শিশির দেখে পেলল। শিশিরও তার বান্ধবী সবাই এসে সিয়ামের কে বলতে লাগল। কি পাইলট সাহেব। কি খবর?
চাকরী হলো?
>> না হয় নি। আজ আবার দেখা করতে আসলাম।
>> হা হা হা হা হা।
এই তোমাকে কে চাকরী দিবে ?
খেয়েধেয়ে উনাদের কোনো কাজ নাই।
যাও যাও গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ কর।
>> তুমি শুধু আমার সাথে মজা নেও কেন? আমার কি ইচ্ছা করে না দেশের জন্য কাজ করার।
>> দেশের কাজ করার জন্য আমাদের মতো পরিবার রয়েছে। আমরা দেশের কাজ করব। যাও যাও তোমরা গিয়ে কৃষি কাজ কর। নইলে কে কৃষি কাজ করবে।
>> তোমার দাদু কে তোমার কথা বলব। তুমি শুধু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার কর। তোমার দাদু আমাকে খুব ভালবাসেন।
>> দাদুর ধারেকাছে তোমাকে দেখলে তোমার শরীরের চামড়া আর চামড়া থাকবে না। আমি কাল বাড়িতে যাব।
>> আচ্ছা। আমি এখন স্যার এর সাথে দেখা করতে যাই।
.
>> আরে সিয়াম। কি খবর? (শিশির এর দাদু)
>> ওর আবার খবর। তুমি না কাল স্যার এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে কি হলো চাকরীর।
>> না। স্যারের সাথে দেখা করতে দেয় নি দারোয়ান।
>> আমি জানতাম দিবে না। তোমাকে দারোয়ান ভিতরের যেতে দিবে। হাহাহাহা।
>> শিশিরভাই তুমি এতো অবহেলা কর কেন? ছেলেটা চাচ্ছে দেশের জন্য কাজ করবে। তার ইচ্ছাটা তো ভালো। তোমার লেখাপড়া শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি বলছ চাকরী করবে না। এই টা কি ঠিক।
>> দাদু আমার এসব চাকরী করা ভালো লাগে না। দাদু শুন। তুমি সিয়ামের পক্ষ হয়ে কোনো কথা বল না । ও কোনো দিনও চাকরী পাবে না ।
>> শিশির প্লিজ এ কথা বল না। আমার না অনেক শখ। মন টা দুর্বল কর না।
>> ঠিক আছে যাও। আমার সামনে পড়বে না।
.
>> সিয়াম কোথায়? (বাবা)
>> কোথায় হয়তো ঘুরতে গেছে।
>> আমি তোমাকে কত বার বললাম। ছেলেটাকে বল আমার সাথে কাজ করতে। না তুমি শুন না। ছেলের পক্ষ হয়ে কথা বল। ও জীবনে চাকরী পাবে। চাকরী পেতে হলে অনেক টাকা লাগে। সে টাকা কি আমাদের আছে।
>> এমন করছ কেন? ছেলেটা তো চেষ্টা করছে। চাকরী পাওয়া কি এতো সহজ। চাকরী পেতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়।
>> শুধু কষ্ট করতে হয় না। টাকাও লাগে। আমি একদম বলে দিচ্ছি ব্যবসার কোনো টাকা আমি দিব না ।
>> তাইলে ছেলেটা কোথায় টাকা পাবে। আমরা তো তার বাবা-মা।
>> আমার ভাইয়ের ছেলেদের দেখছ। তারা কি করে চাকরী পেল। তারা এতো বড় স্বপ্ন দেখে না। তাদের যা যোগ্যতা আছে তা দিয়ে ওই চাকরী করে।
>> তুমি এমন এমন কথা বললে ছেলেটা কষ্ট পাবে। ছেলেটার মন এমনিতেই খারাপ।
>> থাক তুমি তোমার আদরের ছেলে কে নিয়ে।
.
সিয়াম একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেতে লাগলো। হঠাৎ শিশির দেখে পেলল। শিশির দেখেই সিয়ামের কাছে এসে বলতে লাগল।
>> এই এই তুমি কি এই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছ নাকি?
>> আমি কর্মচারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে যাব কেন? আমি এখানে খেতে এসেছি।
>> ও। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এখানের নতুন কর্মচারী।
তো খাও। ও এ কথা তো বলা হলো না। আমার না চাকরী হয়ে গেছে। তুমি এক কাজ কর আমার গার্ড হিসাবে আমার সাথে রয়ে যাও।
.
সিয়ামের চোখ থেকে পানি পড়ে যাচ্ছে। এতো বড় অপমান মূলক কথা আর কি হতে পারে। সিয়াম এখান থেকে খেয়ে মনে মনে রাস্তায় হাঁটছে। হঠাৎ সিয়াম দেখতে পায় বিমান পাইলট অফিসারের ছেলে রাস্তায় হাঁটছে। বয়স ৫ বছর হবে। একটা গাড়ি সামনের দিকে আসছে। অফিসার তার ছেলে কে দেখতে পেয়ে ছেলে কে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই উদ্ধার করতে পারবেন না। কারণ তিনি ছেলেটির ধারে আসার আগেই গাড়ি পৌছে যাবে । তিনি অনেক দূর। সিয়াম একটা দৌড় দিয়ে ছেলেকে গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার করে। অবশেষে অফিসার ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন। ছেলেটিকে চুমাতে থাকেন। খুব আদরের ছেলেটি। তিনি সিয়াম কে দেখা মাত্রই চিনতে পারেন। সিয়াম একদিন স্যারের ধারে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন পরে আসতে। কিন্তু সিয়াম পরে স্যারের সাথে দেখা করতে পারে নি। অফিসার জিজ্ঞাস করেন…
>> তুমি সিয়াম না?
>> জ্বী স্যার।
>> তুমি এখানে কেন? তোমার তো চাকরী হবার কথা ছিল। তোমাকে বলেছিলাম তুমি আমার সাথে দেখা করতে। তুমি কর নি কেন?
>> স্যার আমি অনেকবার গিয়েছিলাম। কিন্তু দারোয়ান আমাকে আপনার অফিসে ঢুকতে দেয় নি।
>> বল কি?
ঠিক আছে। তুমি কাল একবার তোমার সব কাগজপত্র নিয়ে আমার অফিসে যাবে।
>> সত্যি স্যার।
>> হ্যা।
সত্যি । তোমার মতো সাহসী ছেলেরা যদি এসব পাইলটের চাকরী না করে তাইলে কে চাকরী করবে ।
>> সিয়াম স্যারকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকল। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
.
সিয়াম আজ গ্রাম থেকে চলে যাবে। আজ তার চাকরীর প্রথম দিন। গ্রাম থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে। সিয়ামের মা সিয়াম কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে তার কপাল টা মুছে দিতে লাগলেন। কপালে একটা চুমু দিলেন। মুখটা হাতিয়ে দিতে লাগলেন। চুলগুলো বাইল করে দিতে লাগলেন।
সিয়ামের বাবা বলতে লাগলেন আমি এতো দিন চাই নি তুই এসব চাকরী কর। কারণ কেন চাই নি জানস। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। তুই ছাড়া আমাদের দেখার কেউ নেই। পাইলট মানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে আকাশে উড়া। কিন্তু তোকে আমি আজ বলছি। তুই দেশের জন্য কাজ করবি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবি। তুই একজন পাইলট । তোর সমস্ত বুদ্ধি দিয়ে বিমান চালাবি। তোর ধারা যেন দেশের মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। মানুষ যেন আমাকে দেখে বলে ওই দেখ সিয়াম পাইলট স্যারের বাবা যাচ্ছেন।
সিয়াম তার বাবার দিকে চেয়ে কান্না করতে থাকল। বাবা আমাকে পারতে হবে। আমি তোমাকে তোমার সম্মান এনে দিব। আমি একজন সাধারণ সিয়াম ভুলে গেলাম। আজ থেকে আমি একজন পাইলট ।
.
সিয়াম শিশিরদের বাড়িতে গেল। বাড়িতে গিয়ে শিশির ও শিশিরের দাদু কে দেখতে পেল। দাদু সিয়াম কে দেখেই পাইলট ক্যাপ্টেন বলতে শুরু করলেন। সিয়াম অনেক খুশি হলো। দাদুর আশীর্বাদ নিয়ে চলে আসতে লাগল। সিয়াম শিশিরের দিকে থাকালে। শিশির মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
.
সিয়াম ঢাকায় আসতেই চমকে যায়।
শিশির কে দেখে। শিশিরের মন টা খারাপ লাগছে। কিন্তু শিশিরের মন টা খারাপ কেন? শিশির একটা কাগজ বের করল। তাতে লেখা ভালবাসি তোমাকে। তুমি আমাকে রেখে চলে যাচ্ছ। যাও যাও। আমি তো তোমার ঝামেলা। তোমাকে বিরক্ত করি। তোমাকে অপমান করি। কিন্তু এসবের মাঝে তোমাকে খুব ভালবাসি। যে ভালবাসা আজ আমি প্রকাশ করলাম। ভালো থেকো। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। যে এতো দিন তোমাকে বিরক্ত করছি।
সিয়াম শিশিরের কাছে গিয়ে হাতটা ধরে বলল ভালো থেকো। তারপর গন্তব্য স্থানে যেতে লাগলো।
.
৩ জানুয়ারি ২০১৭ সাল।
আজ সিয়াম বিমান চালাবে। সিয়ামের আজ সব থেকে খুশির দিন। এই প্রথম সে বিমান চালাবে। ছোট বেলা থেকে তার ইচ্ছা ছিল সে একজন পাইলট হবে। আর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিমানটি আসবে সিংগাপুর থেকে বাংলাদেশ। বিমানটির মধ্যে রয়েছে ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে বড় বড় মানুষ। বাংলাদেশে সবাই সবার কাজ নিয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তারা সেখানে চাকরী করে। কেউ সেখানে লেখাপড়া করে। কেউ তাদের জন্মভূমি মাটিতে আসছে। প্রিয় জন্মভূমি কে দেখার জন্য। কত স্বপ্ন তাদের। তারা নিজের বাংলাদেশেকে দেখবে ।
.
সব যাত্রী নিয়ে আকাশে বিমান উড়তে থাকলো। কিন্তু হঠাৎ আকাশে প্রচণ্ড বৃষ্টি দিতে শুরু করল। যা একজন বিমান চালকের জন্য খুব অসুবিধা। বিমানটি ঠিক ভাবে চালাতে পারবে না। তারপর আবার সব থেকে বড় বিপদ বিমানের যন্ত্রর মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের এয়ার কন্ট্রোল ট্রাফিক কোনো ধরণের সাহায্য করতে পারছে না। কারণ কিভাবে সাহায্য করবে। একদিকে আকাশে বড় কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে তারপর বিমানের যান্ত্রিক সমস্যা। সিয়াম ইয়ার কন্ট্রোল থেকে সাহায্য চাইছে কিন্তু কোনো সাহায্য পাচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশে কাছাকাছি এসে পড়েছেন। সিয়ামের বিমান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। হাতের অবস্থা খুব খারাপ। হাত লাল হয়ে গেছে। এ দিকে টিভিতে খবরের মধ্যে বলা হয়েছে। সিংগাপুর থেকে আসা বিমানটি বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এই ১০০ বছরের রেকর্ডের মধ্যে এ রকম ঝড় হয় নি। তারপর আবার যান্ত্রিক সমস্যা। এসব সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে আসা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের বিমানের রাস্তা একদম পিছলা হয়ে গেছে। যা কোনো ভাবেই বিমান কন্ট্রোল রাখা সম্ভব না। বিমানের যাত্রীরা কান্না করতে থাকল। কেউ কেউ তাদের স্বপ্নর কথা তাদের পাশের মানুষের সাথে বলতে লাগল।
একটা ছোট মেয়ে বলতে লাগলো সে নাকি প্রথম তার দাদুর সাথে দেখা করতে এসেছে। সে কি দেখা করতে পারবে না। তারপর কান্নায় ভেংগে পড়ল।
সিয়াম খুব চেষ্টা করছে বিমানটিকে বাংলাদেশে নামাতে কিন্তু এয়ার কন্ট্রোল বাংলাদেশ অনুমতি দিচ্ছে না। নামলেই বিপদ ১০০% হবে। তাই তারা জেনেশুনে কিভাবে বিমানটি নামতে দিবে। এ দিকে তেল প্রায় শেষের পথে।
একজন বৃদ্ধ লোক কান্না করতে থাকলেন। কারণ তিনি চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে সিংগাপুর গিয়েছিলেন ভালো চিকিৎসা করাতে। তিনি এখন সুস্থও আছেন। কিন্তু অবশেষে তিনি বাংলাদেশে আর নামতে পারবেন না। আকাশের মাঝেই তাকে হারিয়ে যেতে হবে।
সিয়াম নিচের দিকে নামতে শুরু করল। এয়ার কন্ট্রোল বার বার বলছে নামবে না নামবে না।
সিয়ামের মা বাবা টিভিতে বিমানটি দেখতে লাগলেন। তাদের খুব কান্না হচ্ছে। সিয়ামের বাবা ভাবতে লাগলেন তার ছেলে তাকে আর বাবা বলে ডাকবে না।
সিয়ামের মা বলতে লাগলেন আমার ছেলে আমার কাছে ফিরে আসবে। আমার ছেলে পারবে। পারতে হবে থাকে। সে দেশের মানুষ কে রক্ষা করবে।
শিশির টিভির ধারে বসে উড়নো দিয়ে মুখ ডেকে কান্না করতে থাকে। শিশিরের আজ থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে। কারণ ভালবাসার মানুষ টা আর তার কাছে ফিরে আসবে না।
শিশির দাদু শিশির কে বলেন কাঁদিস না। সে পারবে। তাকে পারতে হবে। কারণ তার ইচ্ছা ছিল সে দেশের জন্য কাজ করবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। দেশের মানুষকে রক্ষা করবে।
.
সিয়াম প্রায় বাংলাদেশের মাটিতে নেমে গেছে। সবাই চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। কেউ চোখ খুলছে না। যুদ্ধ হচ্ছে যুদ্ধ।
সিয়াম ও বিমানটির মধ্যে। বিমানটি বার বার তার গতির সীমা অতিক্রম করছে কিন্তু সিয়াম তা করতে দিচ্ছে না। সিয়াম সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেক চাপ দিচ্ছে। বিমানটির শক্তির কাছে সিয়ামের শক্তি কিছুই না। বিমানটি বিমানটির গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিমানটির মধ্যে বসে থাকা মানুষ কেউ ভালো নেই। সবাই প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছে। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সিয়ামের চোখে ঘুম নেই। নেই অজ্ঞান হওয়ার কোনো চিহ্ন।
ব্রেক দিতে গিয়ে সিয়ামের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে ব্রেক দিচ্ছে। গলার মধ্যে চামড়ার অবস্থা খুবি খারাপ যেন চামড়া চিড়ে যাচ্ছে।
তবুও বিমানটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
বিমানটা নিয়ন্ত্রণ না করলে বিমানটা বিপদগ্রস্ত হয়ে যাবে। সিয়াম বিমান থেকে লাফ দিতে পারে। কিন্তু সে কিছুতেই লাফ দিবে না। কারণ এতে দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতক হবে । দেশের মানুষকে বাঁচাতে যদি নিজের প্রান চলে যায়। তাতেও সে প্রস্তুত।
বিমানটির গতি কিছুতেই থামছে না। সিয়াম কি করবে? আসলে সিয়ামের কিছু করার নেই। কারণ এ রকম বিপদের মধ্য থেকে কেউ রক্ষা হতে পারে নি।
সিয়াম এবার দাড় হয়ে ব্রেকের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল। ব্রেকটা কিছুতেই কাজ করছে না। সিয়ামের চোখের পানি শেষ হয়ে গেছে। কান্নাও আসছে না। বিমানটি তার রাস্তা অতিক্রম করে যেই একটা দালানের সাথে ধাক্কা লেগে যাবে ঠিক সেই সময় বিমানটি দাঁড় হয়ে যায়।
সবাই থমকে যায়। সবাই চেয়ে থাকে বিমানটির দিকে। কিভাবে এই বিমানটি রক্ষা পেল।
তারপর বিমানের যাত্রীরা সবাই নেমে কান্না করতে থাকে। কেউ কেউ মাটিতে শুয়ে পড়ে। কেউ কেউ আপন জনের গলায় ধরে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিন্তু সিয়াম কোথায়?
হে সিয়াম আছে বিমানটির মধ্যে। সে সুস্থ নেই। সেখানেই মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। তার হাত পা কিছুতেই এখন আর কাজ করছে না। সেবাকর্মীরা তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।
সিয়াম ঘুমিয়ে আছে। চোখ খুলতেই সিয়াম তার গ্রামের মানুষ,মা-বাবা,ভাই বোন সবাই কে দেখতে পায়।
সাথে শিশিরও আছে। খুব কান্না করছে।
সিয়াম চোখ দিয়ে বলে কান্না করতে নেই আমি সুস্থ। ভালবাসি তোমায়। খুব ভালবাসি। তাইতো সকলের ভালবাসার কারণে ফিরে আসলাম।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা