এক কাপ চা ও তুমি

এক কাপ চা ও তুমি
বিছানার চাদর শরীরে জড়ানো অবস্থায় ঘুমঘুম চোখে অবন্তী বললো,
— এই নীল?
— [নীলয়ের আবেশিত স্বর] হুম বলো।
— ক’টা বাজে?
— [মৃদু হেসে] এইতো ছ’টা।
— তবে আমি উঠে চা দিচ্ছি?
— হুম দাও।
অবন্তী চোঁখ খুলতেই বিছানার পাশে রাখা ল্যাপটপে Skype ভিডিও কলে নীলয়ের মুখটা দেখেই অবাক হয়ে গেলো! তারমানে ওই এতক্ষণ পূর্বেই কানেক্ট করে রাখা ভিডিও কলের মাধ্যমে সব দেখে শোনে কথা বলছিলো! অবন্তী অবাক হয়ে কপালকুঞ্চিত করে দ্রুত জিজ্ঞেস করলোঃ
— এই তুমি কই?
— এই টাইমে কোথায় আবার থাকব, এইতো অফিসে!
— এত সকালে….
এটুকু বলেই অবন্তী দ্রুত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে 9:30 বাজে! তারমানে নীলয় ওকে মিথ্যে বলেছে যে ৬ টা বাজে, আবার ওকে ডাক না দিয়ে এভাবে অফিসেও চলে গেছে। সেজন্য ওই নীলয়ের উপর ভীষণ রাগ করে কলটা কেটে দেয়! অতঃপর খাট থেকে নেমে চপ্পলে পা রাখতেই সেখানে একটা চিরকুট দেখতে পায়! “জানতামতো কলটা কেটে দেবে, যাও দাঁত ব্রাশ করে নাও। পাশের টেবিলে ব্রাশ- পেষ্ট রাখা আছে!” ব্রাশটা হাতে নিয়ে মুচকি হাসে অবন্তী, কিন্তু পেষ্ট হাতে নিতেই ওটার নিচে পুনরায় আরও একটি চিরকুটটা চোখে পড়ে- “এমন মিষ্টি করে হেসো না প্লিজ, এত দূর থেকেও তোমার হাসি ঘায়েল করে আমাকে! আচ্ছা যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
এটা পড়ে আরও এক গাল হেসে নিল অবন্তী। শেষে বিরবির করে বলল, “পাগল একটা!” যাহোক অতঃপর বাথরুমে ঢুকতেই দরজায় লাগানো চিরকুট দেখতে পায়। হাতে নিয়ে পড়ল, “গীজারের সুইচ অন করাই আছে, সো গরম পানির জন্য তোমাকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে না!” অবন্তী হেসে বাথরুমে ঢুকতেই ওর প্রিয় পারফিউম ‘ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান‘ এর মিষ্টি ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে যায়। তারপর মনে মনে বলে, “পাগলটা কখন কি-যে করে!” অতঃপর অবন্তী ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে হাতে নিতেই তার ভাঁজ থেকে আবার চিরকুট বেরিয়ে আসে, “আমার পছন্দের শাড়িটা আইরন টেবিলে ভাঁজ করা আছে, প্লীজ ওটা পরে নাও!”
মৃদু হেসে বাথরুম থেকে বের হয়ে শাড়িটা পরে নেয়। এরপর ড্রেসিং টেবিলে আসতেই, ওখানে লাগানো চিরকুটে দেখতে পায়: “এই চুলটাতো ভাল করে মুছে নাও, এখনও টিপ টিপ করে পানি ঝরছে। আমার কলিজাটার তো ঠান্ডা লেগে যাবে!” তারপর ভেজা চুল মুছে টাওয়ালটা স্ট্যান্ডে রাখতে গিয়ে, “এই তুমি তো টিপ পড়তে ভুলে গেছ!” অবন্তী দৌড়ে এসে টিপ পড়তে গেলে, লাল টিপের পাতার নিচে লেখা পায়, “এই বেলকনিতে একবার যাও নাগো প্লীজ” তারপর ওখানে যেতেই টি-টেবিলে অবন্তীর পছন্দের আদা- চায়ের সমস্ত ব্যবস্থা সাথে চিরকুট রাখা, “ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে চা বানালাম না। দু, চামচ চিনি দিয়ে চা টা বানিয়ে নাও!”
অতঃপর চা বানিয়ে প্রিচসহ কাপ তুলতেই, নিচ থেকে আবার চিরকুট বেরিয়ে আসলো:- “একাই চা খেবে, আমাকে ডাকবে না? আমি কিন্তু চা না খেয়েই অফিসে চলে এসেছি!” অবন্তী ফোনটা হাতে নিয়ে নীলয়কে কল করতেই দরজাতে কলিং বেল বেজে উঠে। ওই ছুটে দরজা খুলতেই, নীয়ল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলেঃ “লাভ ইউ, আমার জান পাখিটা!” অবন্তী কিছু বলতে পারে না শুধু শক্ত করে নীলয়কে জড়িয়ে ধরে! এমন সময় নীলয় আবার বলে,
— এই চা কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আর আমি মিথ্যে বলে অফিস থেকে বেড়িয়ে এসেছি, তাই বেশি সময় দিতে পারবো না! তারপর অবন্তী, নীলয়কে এক হাতে পেচিয়ে বারান্দার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
— নীলয়, তুমি এমন কেন?
— (মৃদু হেসে) আমার এই পাগলিটার জন্য!
— কিন্তু আমায় ঘুম থেকে তুললে না কেন?
— তুললে কি পাগলিটা আমায় এমন করে জড়িয়ে ধরতো?
— কিহ্?! “অতঃপর ওরা দু’জনেই হাসতে হাসতে চায়ের কাপে চুমুক দেয়!”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত