ভূতটাও রোমান্টিক ছিল

ভূতটাও রোমান্টিক ছিল

তুই আমাকে আজ থেকে ভুলে যাবি।দিন দিন তুই ফাজলামি করে জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছিস।অনেক হয়েছে আর না এখন থেকে আমিও তকে ভুলে যাব।রাগে

গজগজ করতে করতে রুপা ফোনে কথা বলে লাইন কেটে দিল।আমি তো আকাশ থেকে পরলাম প্রাণের বান্ধবী এতকষ্ট করে তোমার মন জয় করে ভালবাসার পাহাড়

গড়ে তুলেছি,তুমি সেই পাহাড়ে জুম চাষ করে পাহাড়টাই ধ্বংস করে দিবা তা হবেনা।রুপা গতকাল রাতে বলেছিল আজ দেখা করার জন্য আমি সকালে উঠে বাসায়

ফোন রেখে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে চলে গেছিলাম।বাসায় এসেছি সন্ধ্যার দিকে এসে দেখি ফোনে চার্জ শেষ রাতে চার্জে লাগানো হয়নি,চার্জে লাগিয়ে ফোন অন করা

মাত্রই রুপার কল এবং ব্রেকআপটা হয়ে গেল।
.
এখন রাত ১০.৩০ ডিসিশন নেয়া শেষ এবার কাজের পালা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী সাথে সাদা টুপি এবং মার্কার দিয়ে মুখে কয়েক টান দিয়া বাসা থেকে বের হইছি।

ভালবাসার জন্য আজ মনে হচ্ছে ঠান্ডায় আইসক্রিম হতে হবে।রুপার বাসায় হেঁটে যেতে ২০মিনিটের বেশি লাগার কথা না।রুপার বাসায় গিয়ে পিছনের দরজার দিকে

দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম ভাগ্য খারাপ ফোন বন্ধ।একবার ভাবলাম রিটার্ণ চলে যাব,আবার ভাবলাম এতদূর এসেছি যখন সারপ্রাইজ দিয়ে যাই।পিছনের গ্রীলের জানালা খুলা

আমি সেই জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করছি।হঠাৎ দেখি রুপার আম্মু জানালার সামনে আমাকে দেখেই তিনি ভু….ভু…ভূত বলে মাথা ঘুরিয়ে পরে

গেলেন।আমি কি করব ভেবে না পেয়ে ডাক দিলাম,
-রুপা রুপা…
রুপা জানালার কাছে এসে আমাকে প্রথমে দেখে চিৎকার দেয়ার আগ মুহূর্তেই চিনে ফেলল,মুখ টা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।এখন চোখ মুখ শক্ত করে বলছে,
-কি ব্যাপার এই সাদা কাপড় পরে ভয় দেখাতে আমারে আসছো।
-আরে আমারে সাদা কাপড় পরা দেখে শ্বাশুড়ি মা অজ্ঞান হয়ে পরে আছে উনারে পানি দেও।
-মানে।
.
এতক্ষণ পর রুপা দেখল শ্বাশুড়ি মা সাইটে পরে আছেন।সে দ্রুত পানি আনতে গেল,পানি নিয়ে এসে যেই পানি দিতে যাবে তখন বললাম,
-ওয়েট পানি দিও না,পানি দিলেই জেগে যাবেন।
-কুত্তা তোমার এই কাপড় দেখেই অজ্ঞান হইছেন আর মুখে এসব কি?আমি তোমারে ছাড়ব না।
-বালিকা ফোন খুলা রাখলে এই অবস্থা হইত না।আমারেও সাদা কাপড় পরে ভূত সেজে আসতে হত না।
-তোমারে যে আমি কি করি?
-কিছু করতে হবেনা শুধু ব্রেকআপ টা না করে সেভেন আপ খেয়ে মাথা ঠান্ডা রাখলেই হবে।
-ফাজলামি না করে বিদায় হও।
-বিদায় তো হব আগে একবার বল আই লাভ ইউ।
-তোমার কপালে ঝাড়ু অপেক্ষা করছে।
.
রুপা শ্বাশুড়ি আম্মার চোখ মুখে পানি দিতেই উনার জ্ঞান আসতে শুরু করছে আমিও কোন দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে মেইন রাস্তায় চলে এসেছি।রাস্তায় এসে আপন

মনে হাঁটছি যেন রাজপথের রাজা ট্রাক নয় আমি।এমন সময় দেখি সামনে শহীদ ভাই তিনি সিগারেট টেনে টেনে বাসার দিকে যাচ্ছেন।কোথাও হয়ত ব্যাটমিন্টন বা

ক্যারাম খেলে আসছেন।শহীদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম,
-আসসালামু আলাইকুম।
শহীদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-খাইছেড়ে আমারে।
তিনি লুংগি হাতে ধরে দৌড়াতে শুরু করলেন,আমিও কম যাই কিসে আমিও দৌড়াতে শুরু করলাম তিনার সাথে সাথে মাঝে মাঝে কথা বলছি,
-ভাই সাহেব দৌড়াচ্ছেন কেন?
-হুজুর আপনি কি আর কাউরে পেলেন না।
-না এত রাতে কাউকে পাওয়া যায় না,আসেন ভাই কোথাও বসে গল্প গুজব করি।
-না ভাই বসার টাইম নাই।
-আরে ভাই বসে সুখ দুঃখের আলাপ করি।
.
দৌড়াতে দৌড়াতে শহীদ ভাই একসময় তিনার বাসায় পৌঁছে গেলেন ১৫মিনিটের রাস্তা তিনি বেশি হলে ৫মিনিটে অতিক্রম করেছেন।বাহ রাতের জন্য দেখছি এই

পোষাকটা অসাধারণ কাজ করে দিনের বেলা যাদের ধমক খেয়ে ভড়কে যেতে হয় রাতে তাদের সুন্দর করে একটা সালাম দিলে তারা লুঙ্গি তুলে দৌড় শুরু করে।বাসায়

এসে পোশাক বদল করছি এমন সময় দেখি আম্মু এসে হাজির তিনি আমার দিকে তাকিয়ে অতি আদুরে কণ্ঠে বললেন,
-বাপধন এই সাদা পোষাক পরে আপনি কোথায় বেড়িয়ে ছিলেন?মুখের অবস্থাও দেখছি বেশি ভাল না।
-সেও এক কাহিনী আম্মু অনেক কষ্ট করে আলমারি খুলে দাদার এই সাদা পাঞ্জাবী,সাদা পায়েজামা পেয়েছি।
-কোথায় পেয়েছেন সেটা জিজ্ঞেস করিনি,বলছি কোথায় গিয়েছিলে?
-সত্য বললে বিশ্বাস করবা না আম্মু।
-কে বলছে করব না?তারে আমার সামনে আন ২টা চড় দিয়ে জিজ্ঞেস করব কেন বিশ্বাস করব না আমি?
-বান্দা আপনার সামনে হাজির আছে ২খানা চড় মেরে চলে যেতে পারেন।
-ফাজলামি না করে বল কোথায় গেছিলি?
.
যখন বুঝলাম আম্মু আমাকে ছাড়বেন না তখন দ্রুত কাহিনী বানাতে শুরু করে দিলাম।কাহিনীটা হতে হবে হাস্যকর যাতে আম্মু আমাকে সহজে ছেড়ে দেন।আমি

আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,তাহলে শোন আমার বন্ধু হৃদয়কে চিন তো,সে এই ঠান্ডায় এত বড় বিছানায় নাকি একা ঘুমাতে পারেনা।আমার কাছে সাজেশন এর জন্য

আসছিল আমি বলছি বিয়া করে ফেলতে পারিস।আমার কথা শুনে সে ওই দিন ওই ইলমা মানে ওর ইয়ে কে বিয়ে করে ফেলে।তারপর বন্ধু এবং বন্ধুর বউ নিয়ে আমরা

হাজির হলাম বন্ধুর বাসায়।বন্ধুর বাসায় দরজা খুলে লেডি হিটলারের মত বন্ধুর মা দাঁড়িয়ে কঠিন কণ্ঠে বললেন,
-এসব কি এত রাতে এরা কারা এই মেয়েটাই বা কে?
আমি তখন বললাম,
-আন্টি এ হচ্ছে আপনার ছেলের বউ।আপনার ছেলে নাকি এত বড় বিছানায় একা ঘুমাইতে পারেনা সেইজন্য খাট কেটে শর্ট করতে গেছিল ভাগ্য ভাল তখন আমি তারে বিয়ার সাজেশনটা দেয়ায় আপনার খাট রক্ষা পাইছে।
-তুমি চুপ থাকো,হৃদয় তুই বল এসব কি?
-ইয়ে মানে আম্মা এ হচ্ছে ইলমা।
-থাকুক সে কলিমা,আমি বলছি তার পরিচয় কি?
-সে আপনার ছেলের বউ।ইলমা যাও তো আম্মুকে সালাম কর।
ইলমা আন্টিকে সালাম করতে যেই মাথা নিচু করছে সাথে সাথে আন্টি লাফ মেরে সোফায় উঠে বলছেন,
-চুপ হারামজাদী তুই এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা।হৃদয়ে তুইও বের হয়ে যা নইলে আমি খুন করে ফেলব।
তখন আমি আন্টিরে বললাম,
-আন্টি খুন টা কাল করলে হত না,আজ এই ঠান্ডায় এদের বাহিরে বের করে দিচ্ছেন ওরা তো ঠান্ডায় আইসক্রিম হয়ে যাবে।
-আইসক্রিম হউক বা তিব্বত ক্রিম হউক এটা আমার জানার ব্যাপার নয়।এখন দূর হয়ে যাও।
.
আন্টি আমাদের বাসা থেকে বের করে দেয়ার পর আমরা প্রাচীন যুগের বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবলাম আন্টিরে ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করতে হবে।তাই বাসায় এসে দাদার এই

পাঞ্জাবী পরে গেছিলাম আন্টির বাসায় গিয়ে বললাম,হে মূর্খ তুই কি বুঝিস নি যে তর ছেলে হীরার টুকরা বউ ঘরে এনেছে।কিন্তু তুই হীরাকে বাহিরে বের করে দিলি তর

কপালে আছে দুঃখ,হতাশা,অভিশাপ।আম্মু আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললেন,তারপর কি ঘরে ঢুকিয়ে নিল।আমি মাথা চুলকে বললাম,আন্টি উত্তর দিলেন

ফাহিম তর কপালে কাল দুঃখ আছে।আমি তরে কাল পাই জিন্দা ছাড়ব না।আসলে আন্টি আমাকে চিনে ফেলছেন।বন্ধু আর বন্ধুর বউ বাসায় ঢুকতে পারলেও আমার

জন্য সেই বাসার দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।
.
আম্মু অবশেষে হেসে হেসে বললেন,তুই কিন্তু দারুন মিথ্যা গল্প বানাতে পারিস।বিছানায় শুয়ে শুয়ে রুপারে ফোন দিলাম,বেচারি শ্বাশুড়ির অবস্থা জানা প্রয়োজন।
-হ্যালো রুপা।
-তোমারে বলছিল কে আসতে?
-আরে ভাবছিলাম সারপ্রাইজ দিব কিন্তু সারপ্রাইজ যে শ্বাশুড়ি মা টা পাবে সেটা বুঝতে পারিনি।
-কুত্তা মেরে ফেলব সব সময় আজব কাজ-কর্মে তোমার মন থাকে।
-আরে ভূত সেজে দেখলাম প্রেম করতে কেমন লাগে।
-আম্মু হয়ত তোমাকে চিনে ফেলছেন আমাকে জ্ঞান আসার পর বললেন,ফাহিম এর মত লাগছিল।আমি বলছি মনে হয় ফাহিমের রুপ ধরে আসার চেষ্টা করছিল।এখন কাল সারা বাড়ি মসজিদের ইমাম দিয়ে বাঁধানো হবে।
-হাহাহা মারাত্মক ব্যাপার হইছে।ধর আমি আর তুমি হাত ধরে গল্প করছি এমন সময় যদি আম্মু দেখতেন তাহলে তিনি অজ্ঞান হওয়ার আগে নিশ্চই বলতেন,ব্যাটা ভূত শেষ পর্যন্ত গাছ থেকে নেমে আমার মেয়ের গাড়েই চাপলি।
-সব কিছুতে তোমার বেশি বেশি।
-মন টা বেশি বড় তো তাই বেশি বেশি সব কিছু করি,অতিরিক্ত সব হয়ে যাক কিন্তু টান না মারুক মানে ঘাটতি না মারুক।
-হাহাহা ফাজিল।
.
ভালবাসা চলছে,বালিকার রাগ শেষ হয়েছে, অভিমান গলে গেছে,মুখে কথার ফুলঝুরি ছুটছে,অন্যদিকে শ্বাশুড়ি মার স্বপ্নে ব্যাটা ভূত হানা দিচ্ছে।
:
…………………………………………… সমাপ্ত ……………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত