আমার ভালো লাগে পড়ন্ত বিকেল। ভালো লাগে লাল রঙা অস্তি যাওয়া সূর্যটাকে। ভালো লাগে স্নিগ্ধ বিকেলের মৃদু বাতাস। ভালো
লাগে নিরব বিকেল। তাই রোজকার মত পড়ন্ত বিকেলে ছাদে গিটার নিয়ে বসলাম। লম্বা ছাদটার ঠিক কর্নারে বসে আছি গিটার
নিয়ে। কখনও গান করি না, কিন্তুু গিটারে গানের সুর তুলি আমার মতকরে। আমার ছাদ থেকে একদম পাশে আরেকটি ছাদ। আর
সেই বাড়িটিতে থাকে একটি মেয়ে। তবে আগে দেখিনি তাকে কখনও।
বেশ কয়েক দিন ধরে লক্ষ করছি মেয়েটি আমার টুংটাং করা গিটারের শব্দ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মনে হয় মেয়েটি
ব্যালকুনিতে এই একটি মাএ কারনেই আসে। কেননা বিকেল ছাড়া অন্য কোন সময়ে মেয়েটিকে ব্যালকুনিতে দেখা যায় না।
কুকড়ানো কুকড়ানো চুল আঙ্গুল দিয়ে পেচিয়ে আকাশের দিকে ধ্যান মগ্ন হয়ে এক নজরে তাকিয়ে থাকে।
পাশাপাশি বিল্ডিং এ থাকি। এর আগে কখনো মেয়েটিকে দেখিনি। মনে হয় বেড়াতে এসেছে। আচ্ছা মেয়েটি কি আমায় পছন্দ
করে? নাকি শুধু আমার গিটারের ঐ টুংটাং শব্দটাকে? মাসখানেক হয়ে গেল মেয়েটির মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না।
একদিন জানালার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থেকে মেয়েটির অনুভূতিটা পরীক্ষা করছি। মেয়েটি ঠিকি ব্যালকুনিতে এসে কিছুক্ষন
থেকে আবার চলে গেল। আর যাওয়ার সময় মেয়েটির মুখটাতে অভিমানের ছায়া দেখতে পেলাম। আমাকে আরো একটু পরীক্ষা
করতে হবে। এমনি করে ঠিক চার দিন মেয়েটির পরীক্ষা করলাম। এই চারটা দিন তার চেহারায় হাসির ফোয়ারা দেখতে পেলাম
না।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না মেয়েটি ঠিকই ব্যালকুনিতে বিকেল বেলায় আমার জন্যই আসে মানে আমার গিটারের টুংটাং
শব্দটা শুনতেই আসে।
পঞ্চম দিন আমি গিটার নিয়ে ব্যালকুনিতে হাজির হলাম কিন্তু মেয়েটিকে দেখতে পেলাম না। প্রায় অনেক্ষন মেয়েটির জন্য
অপেক্ষা করলাম। মনে হয় আমার গিটারের আওয়াজ ওর শ্রবণকে স্পর্শ করে নি। আজ মনে হয় আর আসবে না। রুমে যেই
ঢুকতে যাব অমনি মেয়েটি হাজির। খুব অস্তির লাগছে মেয়েটিকে। চুলগুলো এলোমেলো। আমাকে মনে হয় কিছু বলবে, অনেক
কথা চাপা করে রেখেছে বোধহয়।
দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছি।
– কি নাম আপনার?
নিরাবতা ভেঙ্গে আমিই প্রথম মেয়েটিকে জিঙ্গেস করলাম। মেয়েটি চুপ করেই রইল। আমার সাথে কথা বলল না।
– আচ্ছা ঠিক আছে নাম বলার দরকার নেই। আজ আসি।
এই বলে গিটারটা হাতে নিয়ে রুমে যাব ঠিক তখন ওপাশ থেকে একটা শব্দ শোনা গেল “নিলীমা”
– বাহ বেশ সুন্দর নাম তো আপনার। (আমি)
আমি নিলীমা নামের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কথাটি বললাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করল। হয়ত লজ্বা পেয়েছে তাই। আমিও চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তখনি তিনি বললেন..
– আপনার শরীর ঠিক আছে? (নিলীমা)
– হ্যাঁ আমি স্বাভাবিক।
– তাহলে এই চারদিন আসেন নি কেন?
– এমনিতে আসি নি।
– হুম।
– আপনি কি এখানে বেড়াতে এসেছেন?
– হুম। আজ গিটার বাজাবেন না?
– অনেক্ষন বাজিয়েছি এখন আর ইচ্ছে করছে না।
– ও আচ্ছা আমি ঘুমিয়েছিলাম এতক্ষন। আমি তাহলে মিস করলাম। আচ্ছা আসি।
কথাটি শেষ করেই মেয়েটি চলে গেল। আমি সেখানেই দাড়িয়ে আছি। কেমন যেন মনে হচ্ছে,, কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে। মনে মনে বললাম,
আরেকটু বাজালে কি বা হতো। কি দরকার ছিল এই কথাটা বলার। মেয়েটির চেহারা নিমিশেই মলিন হয়ে গেল।
নিলীমার জন্য আমার মায়া জন্মাতে লাগল। কিছুক্ষন পর পর জানালার ফাক দিয়ে দেখছি নিলীমা ব্যালকুনিতে আসছে কিনা। কি অদ্ভূত অনুভূতি তৈরি হয়েছে নিলীমা নামের মেয়েটির প্রতি আমার, বিশ্বাস হচ্ছে না।
..
– চলেন আজ ছাদে যাই। যাবেন?
পরেরদিন বিকেল বেলাতে বাইরে মানে গেটের বাইরে পায়চারি করছি কোনো কারন ছাড়া। তখনি নিলীমা এসে কথাটি বললো। আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম..
– কেন?
– তেমন কিছু না মুক্ত আকাশের নিচে হাটতে আমার ভাল লাগে। ধমকা মৃদু বাতাসের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নেই। তাছাড়া মুক্ত আকাশের নিচে আপনার গিটারের আওয়াজটা ভালো ভাবে উপলব্দি করতে পারব। তবে আপনার ইচ্ছে না হলে থাক।
– আচ্ছা চলেন। তবে সাথে গরম চা হলে ভালো হতো। চা খাওয়াবেন তো? (আমি)
– হি হি হি আচ্ছা।
.
ওর হাসিটা খুব মিষ্টি ছিল। এই মিষ্টিমাখা হাসিটার প্রতি কেন জানি দূর্বল হয়ে পড়ছি। সামনের একটি দাত কেমন যেন হালকা
বাকানো। দেখতে বেশ লাগছে। যাই হোক ছাদে গেলাম। ওদের বিল্ডিং আর আমাদের বিল্ডিং পাশাপাশি থাকায় লাফ দিয়ে এক
বিল্ডিং থেকে আরেকটায় আসা যাওয়া করা যায়। নিলীমা চা হাতে ছাদে আসল। আমি লাফ দিয়ে ওদের বিল্ডিং এ চলে আসলাম।
তখন নিলীমা একটু ভয় পেয়েছিল মনে করেছে আমি নিচে পড়ে যাব। যা ওর চেহারা প্রতিচ্ছবি দেখে বুঝলাম। কেমন করে
আমার দিকে তাকিয়ে ও বলল..
– এই ভাবে লাফ দিলেন কেন? যদি পড়ে যেতেন।
– পড়ব কেন? আপনি তো আমাকে ধরে ফেলতেন আমি জানি।
– কচু এই ভাবে আর লাফ দিবেন না। জানেন আমার একটা পাখি আছে। ওর নাম টুনি। ওকে ভীষন মিস করছি। যখন আমার মন
ভাল থাকে না তখন ওর সাথে কথা বলি। ও আমার কথা ঠিকি বুঝে কিন্তু ও কথা বলতে পারে না। আচ্ছা পাখিরা কি মানুষের কথা
বুঝে? হ্যাঁ বুঝেই তো কারন আমি যখন ওর সাথে কথা বলি তখন ও চুপটি করে আমার কথা শোনে। ও একটুও শব্দ করে না।
জানেন আমি কথা বলার সময় কথার মাঝখানে যদি কেউ কথা বলে আমার খুব বিরক্ত লাগে একদম ভালো লাগে না। আচ্ছা
আপনার নাম তো আমায় বলেন নি। কি নাম আপনার?
এক নাগাড়ে নিলীমা কথা গুলা বলতে থাকে। আর আমি অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ওর কথা গুলা শুনছি। কেমন একটা
অনুভব হচ্ছে নিজের মাঝে। হঠাৎ করেই সব যেন ভালো লাগতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? আমি ওর দিকে তাকিয়ে
বললাম..
– ও আসলে তো আমার নাম আপনাকে বলা হয় নি। আমি না একটা পাগল। নিলয় আমার নাম। আর আমরা এখানেই থাকি।
– হি হি হি (নিলীমা)
– হাসলেন কেন?
– আপনি পাগল তাই।
– একটা কথা বলি?
– বলেন।
– আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর।
– তাই বুঝি?
– হুম।
– এই নেন চা খান। চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল।
– আরে আমি তো এমনি বলেছিলাম চায়ের কথা। আপনি তো সত্যি সত্যিই চা নিয়ে আসছেন। আচ্ছা কোথাও ঘুরতে যান না?
– না।
– সারাদিন কি এই চারদেয়ালের ভিতর বন্ধী হয়ে থাকতে ভালো লাগে আপনার।
– না তা না। আসলে আমি তো ঢাকা শহরের অলিগলি তেমন চিনি না।
– যাবেন আমার সাথে বই মেলায়?
– সত্যি নিয়ে যাবেন?
– হুম যদি আপনি যেতে চান।
.
তিন দিন পর আজ নিলীমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। খুব নার্ভাস লাগছে। নীল রাজ রানী লাগছে আমাদের। আমি নীল পাঞ্জাবী আর
নিলীমা নীল শাড়ী পড়েছে। চোখে কাজল দিয়েছে ও। ওর চোখের পাপড়ি গুলো এত নিখুত আমি দেখে চোখ সরাতে পারি নি।
সত্যি এই মায়াবী চোখের প্রেমে পড়ে গেছি আমি। আমি অপলক তাকিয়ে আছি। হুট করেই নিলীমা বলল..
– কি দেখেন এমন করে?
– আপনার চোখ দুটোকে। আপনার চোখে জাদু আছে।
– হি হি হি ন্যাকা। এই ভাবে তাকিয়ে থাকলে চলবে? রিক্সা ডাকবেন না?
রিক্সায় পাশাপাশি হয়ে একসাথে বসে আছি। দুজনেই নিরব হয়ে বসে আছি। অন্যসময় নিলীমা কত কথা বলে কিন্তু আজ এত শান্ত কেন বুঝতে পারছি না। আমি রিক্সাওয়ালাকে বলে রিক্সাটা থামিয়ে দুটো কোণ আইসক্রিম কিনলাম।
একটা আমার জন্য আরেকটা নিলীমার জন্য। দুজনেই আইসক্রিম খাচ্ছি। হঠাত্ রিক্সার চাকা একটা পাথরের উপর চলাতে রিক্সাটা নাড়াচড়া হয় এতে আমার আইসক্রিমটা পড়ে যায়।
নিলীমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর হাতের আইসক্রিমটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
– এটা নেন।
– মানে?
– আরে পড়ে গেছে তো।
– নাহ ঠিক আছে।
আমি না করে দেই কিন্তু নিলীমা ওর ড্যাবরা ড্যাবরা চোখ বড় করে আমার দিকে তাকালো আমি একটু ভয় পেয়ে গেছি। তারপর দুজনেই একটা আইসক্রিম ভাগাভাগি করে খাই।
.
বইয়ের এই স্টল থেকে ঐ স্টলে দুজনেই ঘুরে ঘুরে দেখছি। নিলীমা কয়েকটা বই কিনল। আমিও একটার পর একটা বই হাতড়িয়ে যাচ্ছি কিন্তু বই কিনিনি।
– আপনি কিছু কিনবেন না?
– হ্যাঁ কিনব।
হ্যাঁ আমি কিনেছি একটা সাদা গোলাপ নিলীমাকে দিব বলে। ওর রেশমি চুলে গেথেঁ দিব বলে। কিন্তু দেই নি।
এই প্রথম নিলীমার সাথে আমি পাশাপাশি হাটছি। মাঝে মাঝে আমার আঙ্গুল দিয়ে ওর হাত ছোয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সাহস হয় নি। যদি গালে চটাস করে থাপ্পর মেরে দেয় এই ভয়ে।
অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
..
– নিলীমা ফুচকা খাবেন?
– হুম। ফুচকা আমার অনেক প্রিয়।
ফুচকা খেয়ে রিক্সায় চড়ে বাসার দিকে রওনা হলাম। .
– সময়টা খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেল। তাই না নিলীমা?
– কই নাতো ঠিকি তো আছে। সময় সময়ের মত চলছে। আচ্ছা আপনি তখন ফুলের দোকানে কি করছিলেন?
– কিছু নাতো। এমনি ফুলগুলো দেখছিলাম।
.
এর পরের দিন ছাদে আমি আর নিলীমা দাড়িয়ে আকাশটা দেখছি। আকাশে রংবেরঙ্গের ঘুড়ি উড়ছে।
– আজ আকাশটা খুব শান্ত।
– হুম।
– নিলীমা আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
– হুম বলেন।
– একটু পরে বলি?
– হুম।
– নিলয় একটা গান শুনাবেন?
– অবশ্যই। এই বলে গিটারটা হাতে নিয়ে গাইতে থাকলাম…..
“একটা গোপন কথা ছিল বলবার বন্ধু সময় হবে কি তোমার,
একবার শোনে ভূলে যেও বারবার ভূলেও কাউকে বলো না আবার
মুখে ভালোবাসি না বলে মনেতে প্রেম নিয়ে চলে আছে অনেকেই
এতদিন ছিল সাধারন তার মাঝে একজন যাকে আজ বড় আলাদা লাগে. . . . .
গানটা শেষ করতেই নিলীমার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সে বলল..
.
– নিলয় আমি কাল চট্টগ্রাম চলে যাব। এই বইটা নেন। আমি মেলায় লক্ষ করেছি এই বইটা বার বার হাতড়িয়েছেন। আপনি যখন ফুলের দোকানে গিয়েছিলেন তখন আপনার জন্য এটা কিনেছি। এই বইটা এখান থেকে গিয়ে সাথে সাথেই পড়বেন। ও হ্যাঁ আপনি না আমাকে কি যেন বলবেন…
.
কি বলব আমি? আমার জগত্ থমকে গিয়েছে। মুখ দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। কি করে বলব আমি? “নিলীমা তোমাকে যে আমি ভালোবাসে ফেলছি”।
.
– নিলয় আপনার কিছু বলার নেই?
আমার চুপ থাকা দেখে সে আবার বলল। কিন্তু আমার গলা যে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে।
নিজেকে কনট্রোল করলাম। আমি মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা দিলাম। আমার এই না সূচকে ওর চোখের কোনায় জলের বিন্দু বিন্দু ছাপ দেখতে পেয়েছি।
.
আমার গোপন কথাটা বলা হলো না নিলীমাকে। নিলীমা চট্টগ্রাম চলে গেল। ব্যালকুনিতে নিলীমার জন্য অপেক্ষা করছি অপেক্ষার প্রহর যে ফুরাবে না। আমি তো ভূলেই গেছি নিলীমা চলে গেছে।
কেন হুট করে এসে আবার হুট করে চলে গেল এই মেয়েটা।
আজ তিন দিন পার হয়ে গেল একটা মুহুর্তের জন্য নিলীমাকে ভূলতে পারছি না। আমাকে ভীষন পেইন দিচ্ছে ওর স্মৃতি গুলো ওর মিষ্টি মাখা হাসি গুলো।
.
এই পেইন গুলো ভূলার জন্য নিলীমার দেওয়া বইটা হাতে নিলাম। বইটা খুলতেই বইয়ের প্রথম পাতায় কলম দিয়ে কিছু লেখা দেখতে পেলাম।
………নিলয় হাদা,
আপনি একটা আস্ত হাদাঁরাম। এত বোকা কেন আপনি? ঐ দিন কতবার আমার হাত ছোয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু স্পর্শ করেন
নি। ফুলের দোকানে একটা সাদা গোলাপ কিনেছিলেন আমাকে দেখে সাথে সাথেই পিছনের পকেটে ফুলটা লুকিয়ে
ফেলেছিলেন। আচ্ছা ফুলটা কি আমার জন্য কিনেছিলেন? আর যদি আমার জন্যই বা কিনে থাকেন তাহলে আমাকে দেন নি
কেন? তখন কি মনে হয়েছিল জানেন আপনার কান দুইটা ইচ্ছে মত টেনে দেই। আপনি এত্তগুলা পচা। কিন্তু এই পচা
হাদাঁরামটাকেই আমার অনেক ভালো লাগে। কেন জানি আপনার প্রতি আমার এক ধরনের আকর্ষন জন্মনিয়েছে। আচ্ছা
আমাকে কি আপনার ভালো লাগে?
শেষে একটাই কথা বলি আপনি কি আমায় রোজ গান শোনাবেন? অপেক্ষায় রইলাম কাল সকাল পযন্ত কেননা আমি কাল চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছি।
..
তার মানে সেদিনই সে বইটা দিয়েছিল আর আমি বোকার মত না পড়ে রেখে দিয়েছি? ধুরর আমি আসলেই হাঁদারাম। ধুরর ছাই…
অনেক দেরি করে ফেলছি। এক মুহুর্তের জন্য আর বসে না থেকে আমি ওর বাসার ঠিকানা ওর কাজিন থেকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসলাম।
.
কখন থেকে দরজার কলিং বেল বাজাচ্ছি। কিন্তু কারো খোলার নাম নেই। ঠিক তখনি একটা ছেলে দরজাটা খুলে। খলতে বলল..
– কি চান?
– আমি ঢাকা থেকে এসেছি। নিলীমার বাসা তো এটা?
– জ্বি। এই নিলীমা আপু একটু এদিকে আসো তো তোমাকে একজন লোক খুজতেছে।
নিলীমা এগিয়ে আসে। আমাকে দেখে আচমকা থেতিয়ে উঠে। কাছে এসে আমাকে চটাস করে একটা থাপ্পর মারে। কি অদ্ভূত
মেয়ে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। এমনকি আমাকে বাসায় ডুকতে দিল না। দরজার বাহিরে থেকেই ওর সাথে কথা বলতেছি।
.
– কেন এসেছেন এখানে হুহ? (নিলীমা)
– আপনাকে গান শোনাতে।
– আরেকটা থাপ্পর মারা উচিত্ আপনাকে। চলে যান এখান থেকে। আপনাকে সিবালোভা। আর কক্ষনো এখানে আসবেন না।
.
চট করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। কান্নামাখা মুখ নিয়ে আমাকে কথা গুলা বলল। মানছি নিলীমা অভিমান করেছে আমার উপর।
কিন্তু এই সিবালোভা মানেটা কি? এটা কি চাটগাইয়া গালি নাকি চাইনিজ গালি। কিছুই বুঝতে পারছি না। রাস্তায় এসে একটা পাথর
নিয়ে দেয়ালে সিবালোভা লিখলাম। অনেকক্ষন ভাবতে ভাবতে এই শব্দটা উল্টো করে পড়লাম। আমার আর বুঝতে বাকি রইল
না।
.
আমি এক দৌড়ে ওদের বাসায় গিয়ে দেখি জেনিয়া ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদঁছে।
– আপনি ব্যথা পেয়েছেন তাই না? (ও)
– হুম।
– কানে ধরছি আর কক্ষনো এমন হবে না।
– হুম।
– খুব লেগেছে তাই না?
– হুম
– আসলে একটু রাগ উঠে গেছিল।
– হুম
– এই দেখো সত্যিই কানে ধরছি আর এমন হবে না।
– হুম
– কিসের হুম হুম হুহ?
– কানে কানে বলছি শোনেন। ওমিআ কেনাপআ সিবালোভা।
আমি কথাটি শুনে হাবার মত ছেয়ে আছি। সে মুচকি হাসছে হয়ত এটা ভেবে যে ওর কথা বুঝতে পারছি কিনা। কিন্তু আমি যে এত বোকা না। তাই আমিও কানে কানে বললাম..
“ইয়ার ইনতা আইয়্যা”
নিলীমা আমার দিকে বোকার মত চেয়ে আছে। তখন মনে মনে বললাম। বুঝে নাও ওটা কোন দেশের ম্যাজিক্যাল শব্দ। পরে না হয় বলবো তোমায়
:
…………………………………………….. সমাপ্ত …………………………………….