-শাড়ি পড়তে না পারলে পড়িস কেনো তুই
-মানে কি যা তা বলছেন আপনি
-আমি যা তা বলছি আমি ( রেগে গিয়ে )
-হ্যা হ্যা আপনি
-ভালো যা গিয়ে সবাইকে তোর পাতলি কামার দেখা যা যা ( বলেই আমার গাল চেপে ধরলো )
-কি করছেন টা কি ছাড়ুন ( বলেই উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে চলে আসলাম )
এইবার পরিচয় দেয়া যাক আমি মিশমি চৌধুরী। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার আদরে বাঁদর হওয়া মেয়ে । মায়ের লক্ষী মেয়ে । আর এতোক্ষণ যার সাথে কথা হলো সে হলো আমার একমাত্র ফুফি মায়ের একমাত্র ছেলে। রাফিল নির্ণয় আহমেদ। পেশায় সদ্য পাশ করে বের হওয়া ডাক্তার। মেয়েদের ক্রাশ তাকে দেখলেই মেয়েরা ক্রাশ খায় । জানি না উনার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই উনার এই অত্যাচার এই করবে না সেই করবে না। আমার সকল বিষয়ে তার মতামত গুরুত্বপূর্ণ। বাবা মা ও তাকে কিছু বলেন না আমি কিছু বললেই মুচকি হেসে বলে তুমিও বুঝবে একদিন। ভাবতে ভাবতে কখন যে নিচে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি।
-আরে মামুনি চলে এসেছো তুমি ওরা কোথায় ?
-তোমার যে ছেলে ফুফিমা সে থাকতে আমি ওখানে থাকতে পারবো বলে তোমার মনে হয় !
-আরে মা রাগ করছিস কেন দাড়া আমি ওকে বকে দিচ্ছি । এখন তুই যা রান্না ঘরে তোর মায়ের সাহায্য কর।
-আচ্ছা ফুফিমা ।
চলে আসলাম রান্নাঘরে এসেই চকোলেট কেক বানাতে শুরু করলাম। ভাবতে লাগলাম একবার বিকেলে ছাদে বসে পাশের বাসার একটা ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। হুট করে কোথা থেকে রাফিল ভাই এসে টেনে নিচে নিয়ে গেলেন। আচমকা এমন ঘটনায় আমি শকট হয়ে গিয়েছিলাম। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চুলায় হাত লেগে পুড়ে গেছে বুঝতে পারলাম না । যখন বুঝলাম দিলাম চিংকার আর ওমনি কোথা থেকে রাফিল ভাই এসেই আমাকে বকা শুরু করলেন আবার পানিতে ভিজিয়ে দিলেন একটু পরে আমাকে সোফায় বসিয়ে বলতে লাগলেন !
-মন কোথায় থাকে তোর বেয়াদব
-কথা বলছিস না কেন যখনই দেখি কিছু না কিছু ভাবতেই থাকিস । কি এতো ভাবিস তুই একটু বল আমাকে আমিও শুনি ।
-আহা রাফিল বাবা বাচ্চা মেয়ে আমার ভুল করে ফেলেছে ( বাপি )
-হ্যা রে রাফিল আর বকিস না মেয়েটার মুখ টা দেখ শুকিয়ে গেছে একদম ( ফুফা )
-আরো বকা দরকার এই মেয়ের সারাদিন কি ভাবে কে জানে ( মাম্মা )
– হয়েছে চুপ করবে তোমরা ! আমার কেকটা পুড়ে গেলো এখন আমি খাবো কি ( বলেই একটা সেড ফেস করলাম যাতে কেউ আর না বকে )
– দেখেছো তোমরা আমরা ওর চিন্তা করছি আর ও কেকের চিন্তা করছে ( দুহাতে আমার মুখটা টেনে বলেন ) তোর যদি কিছু হয়ে যেত ( বলেই সবার সামনে জড়িয়ে ধরলেন ) । সবাই হাসতে হাসতে চলে গেল। আর আমি এক বেকুব যে কিনা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না কি হলো এটা এই গম্ভীর লোকটা আমাকে জড়িয়ে ধরলো কিভাবে হাউ ক্যান বি ইট হ্যাপেন।
– রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়বি এখন। আমরা এখন চলে যাবো কল দিলে যেন একবারেই রিসিভ হয় বলে দিলাম নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না ( বলেই আমাকে রেখে চলে গেলেন এই লোকটা কি কিছুই বুঝে না যে তার জন্য আমার মনেও কিছু অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করে । খুব তাড়াতাড়ি বলে দিবো আমার মনের কথা আর আপনাকে তো আমার হতেই হবে বায় হুক কর বায় কুক বলেই একটা হাসি দিয়ে বেস্টুকে কল করলাম।ওর সাথে কথা শেষ করে শুতে গেলেই ফোনে আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে !
আমার বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে বৃদ্ধ হতে চাই তোমার সাথে এমন আরো অনেক ম্যাসেজ আসে কিন্তু কখনো কল দিলে ওপাশ থেকে মহিলা কন্ঠে বলে উঠে এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না প্রতিবারের মতো এবারও হতাস হলাম ফোন সুইচট অফ । জানি না কে সে তবে মনে হয় আমার কাছের কোনো মানুষ সে । চলতে থাকলো এভাবেই আমাদের দিনগুলি।কখনো এটা করার জন্য বকা তো কখনো ওটা । লোকটা কখনো বুঝলোই না আমাকে । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে নিজের মনের কথা বলবো কালকে । সব কিছু ঠিক করে নিলাম । তাকে ফোন করে বললাম দেখা করতে ঠিকানাও দিয়ে দিলাম । জায়গা টা খুব সুন্দর শাপলা বিল আছে পাশে বড় একটা মাঠ । আজকে সাদা শাড়ি পরেছি সাদা চুড়ি পরেছি চেষ্টা করেছি তার মনের মতো নিজেকে তৈরি করতে । জানি না পেরেছি কি না তবে চেষ্টা করেছি আপ্রাণ। রাফিল এসেই বলতে লাগলেন!
-কি ভাবনার রানী কেনো ডেকেছিস
-আপনাকে কিছু বলতে চাই
-তুই আবার কি এমন বলবি যে এখানে ডাকলি ( বলেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো )
-আমার কথা গুলো শুনে শুধু উত্তর দিবেন আর কিছু চাই না ( বলেই চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করলাম )
আমি তর্কে জিতে যেতে চাই না ভালোবেসে হেরে যেতে চাই। আত্মসম্মান হারাতে চাই না তোমার আত্মায় মিশে যেতে চাই। আমি আবেগে ভাসতে চাই না তোমার আবেশে ডুবে থাকতে চাই। আমি তোমার সচ্ছ উদ্দাম প্রেম হবো, অবারিত পথপার্শ্বে অজানা ফুল হবো। বিলীন হবো বৃষ্টির ঝরঝর শব্দঋণে, আমি তোমার ভুলের মাঝে শুদ্ধ হবো।
বৃদ্ধ কালের শেষ আশ্রয় হতে চাই, আমার ব্যাকুল চিত্তকে সামান্য ভাবো কেনো? আমিই তোমার ভরসাহীন যুগের আশা হবো, সূর্য উদয়ে তোমার ঝলমল আকাশ হবো। একবার মাত্র তুমি আমাকে পূর্ণ করে দেখো আমি তোমার অপূর্ণতার সীমারেখা মুছে দিবো। ভালোবেসে দেখো, আমি তোমার শর্তহীন ভালোবাসার একমাত্র কারণ হব বানাবে কি আমাকে তোমার প্রিয়তমা বলেই চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ একজন আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা