রুপু-রাহাত গল্প সমগ্র

রুপু-রাহাত গল্প সমগ্র
বাসর ঘরে বউ সাজে বসে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে রুপুর।সাথে মাজাটাও টনটন করছে ব্যাথায়। সেই রাত আটটায় যে রুমে এসে খাটে উঠে বসেছে তো বসেই আছে। দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘরির কাটা দুইটার ঘরে। উফফ এতোক্ষণ বসে থাকা যায়। রুপু কার উপর রাগ করবে বুঝতে পারছেনা। কার উপর রাগ করবে রুপুর বড় বোন রুনুর ওপর?যে কিনা নিজের রসকষহীন কাঠখোট্টা বন্ধুর সাথে বোনের ঘটকালি করে বিয়ে দিয়ে দিলো? নাকি রাগ করবে রুপুর বাবা মায়ের ওপর?যারা রাহাতদের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে একলাফে রাজি হয়ে গেলো।
এমনকি বিয়েতে রুপু রাজি না থাকা সত্বেও ব্লাকমেইল করে,কেঁদেকেটে,একপ্রকার জোর করে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিলো। ওরা তো জানতো রুপু অন্য একজনকে ভালবাসে,তারপরও এমন করলো? রুপুর রাগে হাত পা কাঁপছে। সে কিছুতেই এ বিয়ে মানতে পারছেনা। অন্য কোন অচেনা অজানা ছেলে হলে তবু মেনে নেওয়া যেতো কিন্তু রাহাত ভাইয়ের মতো অসভ্য,বদমেজাজি লোককে রুপু কিছুতেই মানতে পারবেনা। যদিও রাহাত ভাই দেখতে স্মার্ট,সুদর্শন,হ্যান্ডসাম। জোড়া ভ্রু,গভীর চোখের দিকে তাকালে যে কোন মেয়েই ফিদা হয়ে যায়।রুপুও হয়েছিলে এককালে ফিদা।কিন্তু ফিদা খেয়ে সোজা হয়ে উল্টো মুখ থুবড়ে পড়েছিলো রাহাত ভাইয়ের শয়তানি ব্যবহারে। লোকটার ব্যবহার দেখলে মনে হয় আস্ত এক রাক্ষস সে। রুপুর বাবা মা বোনের সামনে রাহাত লক্ষী, ভদ্র ছেলে।তখন যেনো রাহাত সাধু দরবেশের রুপ ধারন করে।আর রুপুর সামনে আসলেই ধারন করে রাক্ষসের রুপ।
রুপু সকল জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে উঠে দাড়ায়। আর বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।আর কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকলে নির্ঘাত পা খুলে পরে যেতো রুপুর। তাছাড়া গায়ে জড়ানো বেনারসিটা মনে হয় শ’মন ওজনের। বেনারসির ভারে রুপু ঠিকমতো নড়তেও পারছে।শ্বাস আটকে আসছে তার। দরজার দিকে আর একবার তাকিয়ে ভালো মতো দেখে নিলো রুপু। নাহ রাহাত ভাই নেই। আসবে কিনা তারও ঠিক নেই। রুপু পাশের ব্যাগ থেকে একটা সুতির থ্রী পিস তুলে নিলো পড়ার জন্য। শাড়ির আচলটা বুক থেকে সরাতেই দরজায় খট করে শব্দ হলো। ঘুরে তাকিয়ে রুপু তো হা। সামনে দাড়িয়ে আছে রাহাত ভাই।তার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ রুপুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বাঁকা হেসে এগিয়ে এলো সে। দরজাটা ভেতর থেকে আটকে হেসে বললো,
—কিরে রুপু?আমার মন পাবার জন্য শরীর দেখাচ্ছিস নাকি রে? ততক্ষণে রুপু শাড়ির আঁচল ঠিক করে ফেলেছে। রাহাতের মিচকে হাসি দেখে গা জ্বলে উঠলো রুপুর। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—আমি মোটেও আপনার মন পাবার জন্য এসব করিনি রাহাত ভাই। রাহাত মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো,
—কি বললি?আবার বল কি বললি? অভিনয় করে আহাজারি শুরে বললো,
—হায় হয় এও ছিলো আমার কপালে?এটাও শুনতে হলে আমায়? রুপু কিছুটা অবাক হলো,কি এমন বললো সে যে রাহাত ভাই এমন ভাবে বলছেন।
—কি বললাম আমি রাহাত ভাই? রাহাত কিছুটা তেড়ে এসে তেজি গলায় বললো,
—ওই ছেমড়ি,ওই,ভাই কারে কস তুই হ্যা?ভাই কারে বলিস? মুহুর্তে এমন রুপ পরিবর্তনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো রুপু। বললো,
—কাকে আবার,আপনাকে ডাকি। রাহাত যেনো আগের চেয়েও বেশি ক্ষেপে গেলো। চিৎকার করে বললো,
—আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি?বিয়ে করা বররে তুই ভাই ডাকিস কোন আক্কেলে? রুপু কিছুটা লজ্জা পেলো কথাটা শুনে।তার একটুও মনে ছিলো ব্যাপারটা।আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই রাহাত শয়তানি হেসে বলে উঠলো,
—লজ্জা পেলে তোকে পুরা পেতনি পেতনি লাগে রে। রুপুর কিছুটা ভাল হওয়া মেজাজ ফট করে আবার খারাপ হয়ে গেলো। রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহাত রুপুর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসছে। রুপুর ইচ্ছে করলো ছুটে গিয়ে হাতুড়ি দিয়ে রাহাতের সবগুলো দাঁত টুকরো টুকরো করে ভাঙতে। কিন্তু ব্যাপারটা সম্ভব না বিধায় দু-হাত সামনে নিয়ে ইচ্ছে মতো মোচড়াতে লাগলো। রাহাত সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার হাসলো। এবারের হাসিটা রুপুর দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেলো। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে রাহাত আবার বললো,
—তুই শাড়ি পরেছিস কেনো রে রুপু? রুপু চোখতুলে তাকিয়ে বললো,
—কেনো?বিয়েতে তো মানুষ শাড়িই পরে।
—কিন্তু তুই কেনো পরেছিস?
—-কেনো?আমার পরা নিষেধ নাকি?
—অবশ্যই নিষেধ।মানুষকে ভয় দেখানো নিষেধই তো। রুপু অবাক হয়ে বললো,
—আমি মানুষকে ভয় দেখালাম কখন? রাহাত বিজ্ঞের মতো বললো,
—এই যে শাড়ি পরে ভয় দেখাচ্ছিস?শাড়ি পরলে তোকে কি পরিমানে ভয়ংকর দেখায় তুই জানিস? রুপু হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ কথাটা বোঝার চেষ্টা করলো।বুঝতেই হাজার গুন রেগে গটগট করে হেটে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো।এই ছেলেটার সাথে রুপুর কথা বলতে একদমই ইচ্ছে করছে না।কি বদ ছেলেরে বাবা। অতিরিক্ত রাগে রুপুর কান্না পেলো। বেলকনি জুড়ে লাল সাদা গোলাপের চারা গাছ লাগানো।কি অপরুপ লাগছে দেখতে।
পাশে আছে একটা দোলনা। এসব কিছুই তো রুপু চেয়েছিলো।বেলকনিতে এরকম একটা দোলনা,পাশে লাল সাদা গোলাপের টব। এরকম পূর্নিমার চাঁদ, এরকম একটা রাত! সবকিছুই একরকম আছে শুধু মানুষটা ভিন্ন। রুপু এসব কিছু ভেবেছিলো তার মনের মানুষের সাথে।যে কিনা রুপুকে বুঝতো,পুরোপুরি বুঝতো। দিনরাত যার সাথে কথা বলতে বলতে সময় কাটতো রুপুর। ছেলেটার সাথে রুপুর পরিচয় হয়েছিলো রং নাম্বারে। তারপর থেকে কথা বলতে বলতে ভাললাগা,ভালবাসা। কতোশত গল্প করতো তারা।ভবিষ্যতের গল্প, ইচ্ছে, কল্পনা, জল্পনা সব গল্প। তার নাম বা ছবি রুপু কখনো দেখেনি। নাম জিজ্ঞেস করলেই ছেলেটি বলতো আমায় তুমি প্রেমিক পুরুষ বলে ডাকতে পারো।যে তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তাকে প্রেমিক পুরুষ ছাড়া অন্যকোন নামে মানায় না। রুপুও মেনে নিয়েছিলো।
কথা হয়েছিলো দুজনের বিয়ের পর বেলকুনিতে বাসর পালন করবে।বেলকনির পাশে থাকবে ছোট্ট দোলনা সেখানে বসে বলা হবে প্রনয়ের কথপোকথন। চারপাশে থাকবে লাল সাদা গোলাপ গাছ। রুপু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ছেলেটি তার কথা রাখেনি। হুট করেই রুপুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সে। আর তারপরই তো রুপুর বিয়ে হলো রাহাত ভাইয়ের সাথে।বাবা মাকে কতো করে বোঝালো রুপু,কিন্তু তারা কোন কথাই শুনলোনা।বিয়ে দিয়ে দিলো এই বদ ছেলের সাথে। বুক ফেটে কান্না পেলো রুপুর। হঠাৎ একজোড়া হাত রুপুর কোমড় পেচিয়ে ধরলো। রুপু পেছনে ঘুরতে চেয়েও পারলোনা।পেছন থেকে জাপটে ধরেছে কেউ তাকে। রুপু বুঝলো লোকটা রাহাত ভাই।কিন্তু সে হঠাৎ এমন রুপে কেনো?রুপু কাপাকাপা গলায় বললো,
—-রাহাত ভাই? রাহাত রুপুকে ছেড়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,
—আবার ভাই? বল রাহাত?বল? রুপু কিছুটা ভয় পেয়ে বললো,
—রাহাত? রাহাত আবার এগিয়ে এসে সামনে থেকে জড়িয়ে নিলো রুপুকে। বললো,
—আরেকটা নাম আছে আমার জানিস? রুপু উত্তর দিলো না, রাহাত আবার বললো,
—প্রেমিক পুরুষ। রুপু ধুম করে রাহাতকে ছেরে চোখে চোখ রাখলো। রাহাতের মৃদু হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। ঝাপিয়ে পড়লো রাহাতের বুকে। ইচ্ছে মতো কিল ঘুসি মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে বুকে মাথা এলিয়ে দিলো। রাহাত ততক্ষণে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
—ভালবাসি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত