ভার্সিটি যাওয়ার রাস্তায় বৃষ্টির কবলে পড়ে গেলাম। কোন রকমে দৌড়ে এসে একটা গাছ তলার নিচে দাঁড়ালাম। তবু হয়ত শেষ রক্ষা হলো না, বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে আমিও ভিজতে শুরু করলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার উপর বৃষ্টি পরছে না। তাকিয়ে দেখি আমার বাসার পার্শ্ব প্রতিবেশী আমার মাথায় ছাতা ধরে রাখছে। অবশ্য এটা আমি কোন রকমেই আশা করি নি। ও আমায় দেখলেই শুধু ঝগড়া করে কিন্তু এখন আমার মাথায় ছাতা ধরে রাখছে এটা কেমন যেন লাগছে। আমি ঐশির দিকে তাকিয়ে রয়েছি। তখনই ঐশি বলল…
— ওই ডেব ডেব করে কি দেখছো?
— না ভাবছি, মানুষটা কবে থেকে এত্তো ভাল হয়ে গেল।
— এই যে রাজ আমি সব সময়ই ভাল, শুধু খারাপ চোখে ভাল মানুষটা চিনতে পারো না।
— ওই কি বললে আমার চোখ খারাপ?
— খারাপ চোখ বলেই তো এই ভাল মনের মেয়েটাকে ভুল বুঝো।
— আসছে রে আমার ভাল মনের মেয়ে। তোমাদের মেয়েদের মনটা সাইকেলের চাকার মত, শুধু ঘুরে।
— ওই রাজ খারাপ হচ্ছে কিন্তু?
— ভাল হচ্ছে।
— হুমম মেয়েদের নিয়ে যখন এতো এলার্জি তাহলে একটা মেয়ের ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ঐশির কথার উত্তর না দিয়ে যেই ছাতার নিচ থেকে বেড়িয়ে অাসলাম তখন মনে হলো বৃষ্টিটা যেন আরো বেড়ে গেল। ওরে বৃষ্টি আজ মনে হচ্ছে তুইও এই ঐশির দলে। আমি আবার ছাতার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর ঐশি মিটি মিটি হাসছে। তাই বললাম…
— ওই এতো হাসার কিছু হয় নি। এতো বৃষ্টির মাঝে একটা মেয়েকে একা রেখে যেতে ভয় হচ্ছে। তাছাড়া তুমি আমার প্রতিবেশি। যতই ঝগড়াটে হও না কেন এই অসময়ে তোমার পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য।
— ও তাই বুঝি।
কথাটা বলেই ও জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আর আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে হালকা বৃষ্টি কমার সাথে সাথে আমি এক দৌড়। আর ঐশি তো হাসছেই। ভার্সিটি আসতেই দেখি একটা ক্লাস অলরেডি মিস করে ফেলেছি। তাই দৌড়ে পরের ক্লাসটা ধরতে ক্লাসে গেলাম। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে আমি তো অবাক। ক্লাসে কোন স্যার নেই কিন্তু সবাই লেখালেখিতে ব্যস্ত। আমাদের ক্লাসের ছাত্ররা এতো ভাল হয়ে গেল কেমন করে? নাকি আমি ভুল করে অন্য ক্লাস রুমে চলে এসেছি। তাই ভাল করে আবার ক্লাসের নামটা দেখে নিলাম। আমি রুমে ঢুকে রিয়ার পাশে গিয়ে বসলাম। রিয়া হলো আমার লেডি দোস্ত। জানের জান আর পরানের তিতা করলা। যাই হোক, ওর পাশে বসতেই ও ওর খাতাটা আমার থেকে আড়াল করতে চাইলো। আমি তো পুরো অবাক। রিয়া আমার থেকে কি লুকানোর চেষ্টা করছে।
— ওরে বাব্বা রিয়া তুই কি তোর বয়ফ্রেন্ডের জন্য চিঠি লেখছিস রে? মনে হয় আমি দেখলে সমস্যা।
— না তবে ভার্সিটিতে আজ দুপুরের মধ্যে বৈশাখ নিয়ে কবিতা লেখে জমা দেওয়ার কথা আছে।
— মানে বুঝলাম না।
— আরে বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। নিয়ম হলো, আজ দুপুরের মাঝে বৈশাখ নিয়ে কবিতা লিখে নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া। সেরা ৫টা কবিতা ভার্সিটির আর্টিকেলে বের হবে।
— বাহ্ লেখতে থাক।
আমি আর কারো লেখার ডিস্টার্ব না করে নিজেও খাতাটা বের করে একটা কিছু লেখা শুরু করলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমি ভাল কবিতা লেখতে পারি না। তবুও মোটামোটি চেষ্টা করলাম।
এরপর কবিতা লেখা শেষ করে রিয়াকে সাথে নিয়েই নোটিশ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম। ওরে বাব্বা এতো কবিতা জমা হয়েছে। আমি সব গুলো কবিতা একটু একটু পড়তে লাগলাম। হঠাৎ একটা কবিতা বেশ লাগলো ” বাসন্তি রং শাড়ী, খোপায় বেলী ফুল আর মুখে হাসি থাকলে বলবে তে ভালবাসি। ” আমি কবিতাটা পরে নিচে লেখিকার নাম খুঁজে দেখি লেখা আছে ঐশিকা। কবিতা পরে অনেকটা আমার ইচ্ছে কন্যার মত কিছু মিল পেলাম। তাই আমার লেখা কবিটা ওই মেয়ের কবিতার নিচে পিন দিয়ে আটকে রাখলাম।আমার কবিতাটা ছিল ” হয়ত শুকনো গোলাপের পাপড়ী কালো হয়ে যাবে তবু ভালবাসা সতেজ থাকবে। বাসবে কি ভাল একবার? এরপর বাসায় চলে আসলাম। রাতে ছাদে বসে বসে গিটার বাজাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশের ছাদ থেকে একটা আওয়াজ বেসে আসলো।
— কেউ উপকার করলে যে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় সেটা হয়তো কারো জানা নেই। পাশের ছাদে তাকিয়ে দেখি ঐশি এমন একটা ভাব নিচ্ছে যেন আমায় দেখছেই না।
— ওকে ধন্যবাদ।( একটু বিরক্ত হয়ে বলে দিলাম)
— এমন ধন্যবাদ আমার লাগবে না। হুহ পচা ছেলে। ওর কথা শুনে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম..
— ওই রাতে তোমার কি লেখাপড়া নেই? এতো রাতে ছাদে কী?
— বাব্বা আমার জন্য তোমার কত চিন্তা? যাই হোক, তোমার গিটারের আওয়াজেই তো পড়ার মুডটা নষ্ট হয়েগেল।
— ওই কারো জন্য আমার মনে চিন্তা নেই। আর যদি আমার গিটারের কারনে যদি তোমার পড়া নষ্ট হয় তাহলে বেশ হয়েছে।
— ওই আমার সাথে এত্তো ঝগড়া করো কেন হে? একটু ভালবেসেও তো কথা বলতে পারো।
— কিভাবে কথা বলবো?
— না কিছু না। এই রাজ শুনো না, আজ না একটা ছেলে আমার জন্য কবিতা লেখেছে।
— মানে?
— আরে ভার্সিটিতে কবিতা প্রগিযোগিতা চলছে না। আমি একটা কবিতা লেখে নোটিশ বোর্ডে দিছি।এরপর আমার কবিতার নিচে একটা ছেলে কবিতা লেখেছে। মনে হলো কবিতাটা আমাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা।
— ও তাই, আচ্ছা ছেলেটার কবিতাটা বলো তো।
— বলা যাবে না এটা সিক্রেট।
— ওকে বলতেও হবে না। তোমার কপালে যে ছেলে জুটবে না সে দুই দিনেই তেজপাতা হয়ে যাবে।
— কি বললে? তোমার কপালে ইয়া মোটা হাতি বউ হবে দেখে নিও।
— হুহ।
রাগ দিয়ে আমিও ছাদ থেকে চলে আসলাম আর ঐশিও চলে গেল।এই মেয়েটা আমার সামনে আসলেই শুধু ঝগড়া করে। সকাল সকালই ভার্সিটি চলে গেলাম আর প্রথমেই নোটিশ বোর্ডে গেলাম। তারপর অনেক খুজেঁ ঐশিকার লেখা কবিতাটা বের করলাম। এর নিচেই আমার কবিতাটা। আমার কবিতার নিচে আরেকটা কবিতা দেখলাম আর সেটার লেখিকাও ঐশিকা। তার মানে ঐশিকা আমার কবিতার উত্তর দিয়েছে। আমিও ওর কবিতাটা পড়তে লাগলাম। বাহ্ বেশ লেখা ওর। ওর কবিতা শেষ করে আমি নিজে একটা ছন্দ লেখে ওর কবিতার নিচে লাগিয়ে দিলাম। এভাবে প্রতিটা দিন আমার আর ঐশিকার মাঝে কবিতা বা ছন্দের মালা গাঁথা হতে থাকে। আর আমার পাশের বাড়ির ঐশির সাথে ক্রমাগত ঝগড়া চলতেই থাকে।
আমি ভার্সিটিতে খোঁজার চেষ্টা করি কিন্তু ঐশিকাকে পাই নি। শুধু ওর নামের সাথে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট দেওয়া ছিল। হঠাৎ একদিন ভার্সিটিতে এসে নোটিশ বোর্ডে নতুন কোন ছন্দ এসেছে কি না দেখতে গেলে দেখি নোটিশ বোর্ডের সব কাগজ খুলে ফেলা হয়েছে। এর কারনে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। এরপর আর ঐশিকার সাথে কোন তথ্য আদান প্রদান হয় নি তবে মনে মনে ওর জন্য এক প্রকার ভাল লাগা তৈরি হয়ে ছিল। একদিন রাতে ঘুমাচ্ছি হঠাৎ অনেকটা চেঁচামেচির কারনে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গতে দেখি আমাদের বসার ঘরে লাইট জ্বলছে। মা বাবার কিছু হলো কি না ভেবে দৌঁড়ে গেলাম কিন্তু গিয়ে দেখি বাবা আমাকেই ডাকতে আসছিল। পরে বুঝতে পারলাম পাশের বাসা থেকে আওয়াজ আসছে। তার মানে ঐশিদের বাড়ি থেকে। আমি আর বাবা আর দেরি না করে তারাতারি গেলাম।
এরপর দেখি ঐশির বাবা মাথায় অনেকটা আঘাত পেয়েছে আর অনেক রক্তও পরছে। আমি, বাবা আর ঐশিদের নিচ তলার কয়েকজন লোক মিলে ঐশির বাবাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই আর ঐশিও সাথে আসে। এরপর সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু AB পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন পরে। যদিও ঐশিরও এই রক্তের গ্রুপ কিন্তু ডাক্তার কিছু কারনে রক্ত নিতে চাইলো না। এরপর রক্ত না খুঁজে আমিই রক্ত দিতে রাজি হলাম। কারন আমারও একই রক্তের গ্রুপ। যখন আমার হাত থেকে রক্ত নিচ্ছিল তখন ঐশির চোখ গুলো অন্য রকম একটা কথা বলছিল। যেন ও আমার কাছে কোন কারনে ক্ষমা চাচ্ছে। এরপর সারা রাত আমাদের সবার হাসপাতালেই কাটে। সকাল সারে আট টা বাজে ঐশির বাবার জ্ঞান ফিরে। তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওনাকে বাসায় নিয়ে আসি। যখন একটা গাড়ীতে করে সবাই আসছিলাম তখন আমার পাশেই ঐশি বসে ছিল। ও হঠাৎ আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকাতেই বলল “সরি”। আমি কিসের জন্য জানতে চাওয়ায় বলল “এমনি”। তাই আমি আর কোন প্রশ্ন করি না।
এরপর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যায়। আর এখন ঐশিও আমার সাথে ঝগড়া করে না। আর ঐশির ঝগড়াটা আমি খুব মিস করি থাকি।তাই বাধ্য হয়ে আমি ঐশিদের বাসায় যাই। ঐশির বাবা কেমন আছে জেনেও আসবো আর ঐশির সাথে একটু ঝগড়াও করে আসবো। ঐশিদের বাসায় কলিংবেল বাজাতেই ঐশির আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখে ওনিতো খুব খুশি মুখে ভিতরে আসতে বললেন। আসলে এই প্রথম আমি ঐশিদের বাসায় আসলাম। এরপর আমি আঙ্কেলের সাথে দেখা করতে রুমে গেলাম।আমাকে দেখে আঙ্কেলও অনেক খুশি হয়েছে। এরপর উনার সাথে কথা বলতে লাগলাম…
— আচ্ছা আঙ্কেল হঠাৎ করে এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?
— আসলে বাবা প্রেসারে হয়ত চাপ দিছিল আর আমি ওয়াশরুমে যেতেই পিছলে পরে যাই আর ড্রেসিংয়ে আমার মাথাটা পরে। এরপর আর কিছু মনে নেই।
— ও এখন কেমন আছেন?
— অনেক ভাল আর শুনেছি তুমি আমায় রক্ত দিয়েছো।
— এটা আমার কর্তব্য ছিল।
— তবুও তুমি যা করলে এটা অনেক।
— আচ্ছা আঙ্কেল ঐশি কোথায়?
— ও তো ওর রুমেই আছে। যাও দেখা করে আসো।
— ওকে তাহলে আসি আঙ্কেল।
এরপর আমি আঙ্কেলের থেকে বিদায় নিয়ে পাশের রুমে গেলাম। এটাই ঐশির রুম হবে। কারন রুমে ওর একটা ইয়া বড় ছবি লাগানো আর ঘরটাও ঘুছানো। কিন্তু রুমে ডুকে দেখি ঐশি নেই। মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে। তাই আমি ওর রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ চোখ পরলো টেবিলের উপর রাখা ডায়রীটাতে। যদিও কারো ডায়রী পড়া উচিত নয় তবুও ডায়রী পড়ার লোভ সামলানো সহজ নয়। আমি ডায়রীটা খুলেই কত গুলো রঙ্গিন কাগজ পেলাম। আর প্রতিটাই কবিতা, আর সব চেয়ে বড় কথা হলো এই গুলো আমার লেখা কবিতা গুলো। খুব যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে। এরপর ডায়রীটা পরতে লাগলাম।
আমার সাথে ঐশির প্রথম দেখা হওয়া থেকেশুরু করে প্রতিটা ঝগড়া করা ও তারিখ দিয়ে লেখে রেখেছি। সবটা না পরলেও শেষের কয়েকটা পৃষ্টা পরে বুঝলাম ওই হলো ঐশিকা।আর শেষে আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ” রাজ তুমি হয়ত কখনো বুঝবে না আমিই সেই ঐশিকা। যদিও নোটিশ বোর্ডে কাগজ গুলো খুলে ফেলা হয়ে ছিল তবু আমি এই গুলো আমি খুঁজে বার করি। কখনো তোমায় মনের কথা গুলো না বলতে পারলেও এই কাগজ গুলো আমার কাছে তোলা থাকবে। আমি ডায়রীটা পরে চমকেই গেলাম। এমন একটা অনুভূতি আমার জন্য অপেক্ষা করছিল ভাবতেও পারি নি। আমি ডায়রীটা আগের জায়গায় রেখে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। একটু পর ঐশি ওয়াশরুম থেকে বের হয়। কিন্তু আমাকে ওর রুমে দেখে ও তো পুরো অবাক। ও কিছুই বলছে না। তখন আমিই বললাম…
— এতো অবাক হওয়ার কিছু হয় নি। অনেক দিন ধরে তোমার সাথে ঝগরা হয় না তাই ঝগরা করতে এসেছি।
— মানে?
— না কিছু না। আমি চলে যাচ্ছি, এমনি তোমার সাথে একটু দেখা করে গেলাম। আঙ্কেল কেমন আছে এটাই দেখতে এসে ছিলাম।
ঐশি আর আমায় কিছুই বলে নি। আমি চুপচাপ চলে আসলাম। যাক অসময়ে ওদের বাসায় যাওয়াতে আমার অনেক লাভ হয়েছে। আমি আমার ছন্দময়ী ঐশিকাকে ফিরে পেয়েছি আর কেউ একজনকে আমায় এত্তো ভালবাসে সেটাও বুঝতে পারলাম।একদিন বিকালে ছাদে এসে আমি আমার গাছ গুলোকে পানি দিচ্ছিলাম আর ঐশির অপেক্ষা করতে ছিলাম। যখন থেকে জানতে পেরেছি ঐশি আমায় ভালবাসে তখন থেকে বার বার ওরে দেখতে ইচ্ছা করে। অবশ্য আমার তাকানোর কারনে কয়েকবার ধরা খেতে খেতে বেঁচে গিয়ে ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করে ঐশিও ছাদে এসেছে আর ও আকাশে ঘুড়ি দেখছে। ইচ্ছা করছে আগের মত ঐশি আমার সাথে আগে কথা বলুক কিন্তু মেডামের তো আজকাল খুব ভাব বেড়ে গেছিে। তাই বাধ্য হয়ে আমিই ডাক দিলাম…
— এই যে ঝগরাটে মহিলা পয়েলা বৈশাখের শুভেচ্ছা।
— ওই ফাজিল আমি মহিলা হলাম কবে? আর বৈশাখ তো কাল থেকে তাই এখন অযথা শুভেচ্ছা জানিয়ে লাভ কি?
— কথায় আছে মেয়েদের কুড়ি মানেই বুড়ি। তাই সেই দিক থেকে খেয়াল করলে তুমি মহিলা আর বৈশাখের শুরুটা আমি একটু আগেই করলাম।
— বুঝলাম তোমার ঝগরা করার মুড আছে।
— তোমার জন্য এই মুড সব সময়ই আছে।
— ওই একদম এমন ঘুরিয়ে কথা বলবে না।
— কেন?
— বুঝবে না। পচা ছেলে একটা।
— আমি পচা তাই তো এত্তো মেয়ে আমার পিছনে ঘুরে আর যদি একটু ভাল হতাম তাহলে জানি কত মেয়ে আমার পিছনে ঘুরতো।
— হুমম তুমি তো রোমিও।
— হুমম জানো কাল আমি কত কত মেয়ের সাথে মেলায় ঘুরবো?
— কত্তো কত্তো মেয়ে গো?
–আছে আছে অনেকেই আছে।
— হুমম ক্যারেক্টার লেস ছেলে একটা। আর আমায় এইসব বলছো কেনো?
মুখেটা বাকিয়ে চলে যাচ্ছে। ইশশ কত্তো যে কিউটি লাগছে। তখন আমিই আবার ডাক দিলাম…
— এই যে ঝগরাটে মানুষ।
— আবার কি হলো?
— কাল পারলে একটু শাড়ী পরে চোখে কাজল দিয়ো তো।
— বয়েই গেছে যাও তুমি ওই কত্তো কত্তো মেয়ের নিয়ে ঘুরো।
আমার কথা না শুনেই দৌঁড়ে চলে গেল। এই মেয়েকে আমি মাঝে মাঝে বুঝতেই পারি না। একবার মনে হয় ও আমায় ভালবাসে। আরেকবার মনে হয় আমি ওর জানের দুশমন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চারি দিকে গানের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি আজ একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠলাম। বেলকনিতে এসে দেখি ছোট ছোট ছেলে মেয়েটা বৈশাখের নতুন জামা কাপড় পরে ঘুরতেও শুরু করে দিয়েছে। আর বট তলায় হয়ত এতক্ষনে অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। এই দিকে ঐশির কোন প্রকার খবর নেই। ও কি সত্যি সত্যিই সাজবে না নাকি সাজবে। যাই হোক, আমি ফ্রেশ হয়ে নতুন পাঞ্জাবী পরে মা বাবার সাথে দেখা করে ঐশিদের বাসার দিকে গেলাম। ওদের বাসায় আসতেই আঙ্কেল আর আন্টি আমায় দেখে খুব খুশি হলো। আমি শুধু ঐশিকে খুজঁতে লাগলাম। তারপর আন্টিকে বললাম, ঐশি কোথায়? ওনি বলল, রুমেই তো আছে। আমি ঐশির রুমের দিকে যেতে দেখি ঐশি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে। আমাকে দেখে অবাক না হয়ে ভেংচি কাটলো। আমি নিজেই ওরে দেখে পুরো অবাক। বাসন্তি রংয়ের শাড়ী,হালকা গয়না, চোখে কাজলে পুরো মায়বী লাগছে। তখন ঐশির ডাকে আমার ভ্রম কাটলো…
— এই যে মিস্টার এমন করে কি দেখছো হে?
— না কিছু না। তুমি না বললে সাজবে না।
— হুমম কেন সেজেছি বলে কি কোন দোষ করেছি?
— আরে না। আমি তো এখন আমার এত্তো এত্তো জি এফের সাথে ঘুরতে যাবো।
— ( ও কিছু বলল না)
আমি ওর কথার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু ও চুপ করে একটু পরে বলল ” ওকে যাও। ” আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ ওর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম।
এরপর সারা দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মাস্তিতে কাটিয়ে দেই। বিকালের দিকে মেলায় বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা ফুসকার দোকানের দিকে আমার চোখে গেল। ওই খানে একটা কাপলকে দেখলাম একজন আরেকজনকে খাওয়াই দিচ্ছে। বাহ্ বেশ লাগলো। আর ওদের দেখে ঐশির চেহারাটা আমার মনে পরলো। আমি দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসেই আমি আগে ঐশিদের বাসায় গেলাম। ওদের বাসায় গিয়ে শুনি ঐশি নাকি সকাল থেকে শুধু শুধু কান্না করছে আর কাউকে কিছু বলছেও না। তারপর আমি ঐশির রুমে গিয়ে দেখি সকালে যেই শাড়ীটা পরে ছিল ওই শাড়ীটা পরেই আছে তবে শাড়ীটাও এলোমেলো হয়ে গেছে। আর চোখের কাজল গুলো চোখের জলে ভেসেঁ গেছে। আমি চুপচাপ ওর পাশে গিয়ে বসলাম আর বললাম…
— কান্না কি শেষ হয়েছে নাকি আরেকটু কান্না করবে?
— আমার কান্নায় কার কি যায় আসে?
— তাও তো কথা।
— হুমম তোমার এত্তো এত্তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরা শেষ হয়েছে।
— না আরো একজন বাকি আছে।
— তাহলে তারাতারি যাও। ও হয়ত অপেক্ষা করে। বলেই আমায় ধাক্কা দিলো যাওয়ার জন্য আর কান্না চলছেই।
— যাবো তো কিন্তু প্রিয় মানুষটা যদি এইভাবে কাদেঁ তাহলে তাকে কি নিয়ে যাওয়া যায়?
— ( চুপ করে আছে)
ঐশি মাথায় বেলীফুল আর গোলাপ দিয়ে সকালে খোপা করে ছিল। আমি ওই খোপা থেকে গোলাপটা খুলে নিলাম আর ওর সামনে হাটু ঘেড়ে বসলাম।
— হয়ত শুকনো গোলাপের পাপড়ী কালো হয়ে যাবে তবু ভালবাসা সতেজ থাকবে। বাসবে কি ভাল একবার? (এই ছন্দটা আমি ওই নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে ছিলাম) ঐশি আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর ওর বুঝতে বাকি রইলো না আমি সব জানি। ও আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নিলো। তখন আমি বললাম..
— কান্নাটা এবার কমিয়ে একটু ভাল করে সেজেঁ নাও না। নয়ত মেলায় অন্য মেয়ের উপর ক্রাশ খেতে পারি।
— খুনও করে ফেলতে পারি অন্য কাউকে পছন্দ করলে। তারপর ঐশি ওয়াশরুমে চলে গেল আর আমি ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম। মেয়েটা ঝগরাটে আর পাগলী হতে পারে তবে ওর মত করে কেউ হয়ত আমায় ভালবাসতে পারবে না।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা