“এই মেয়ে! এই! এভাবে কেউ সোফায় বসে? কোন ম্যানার্স নেই! সোফায় বসে এক পা নিচে আর এক পা উপরে দিয়ে আধশোয়া হয়ে চিপস খাচ্ছি আর টিভি দেখছিলাম। এর মধ্যেই একজনের চিল্লানিতে আত্মা কেঁপে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকাতে দেখি নাদিম ভাই আমার দিকে রাগী মুখ করে তাকিয়ে আছে। ওনাকে দেখে আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
—আচ্ছা নাদিম ভাই সোফায় মানুষ কেন বসে? নাদিম ভাই একটু অপ্রস্তুত হলেন বলেই মনে হলো। তাও নিজেকে সামলে বললেন,
নাদিমঃ এটা আবার কেমন প্রশ্ন? সোফায় বসে সবার সাথে বসে গল্প করতে নয়তো টিভি দেখতে!
—হ্যাঁ! কিন্তু তার জন্য তো চেয়ার বা টুলেও বসতে পারে। সোফায় কেন বসে?
নাদিমঃ আরামের জন্য! আমি এবার হালকা হেসে বললাম,
—তো আমার বেলায় অন্যথা হবে কেন? আমি এভাবে বসেই কমফোর্ট ফিল করি তাই বসি!(হেসে)
নাদিম ভাইয়ের চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছি উনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছেন। উনি কখনোই আমার সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারেন না। কারন আমি তাকে ভিন্ন যুক্তি দিয়ে চুপ করিয়ে দেই। এবার একটু পরিচয় করাই!
যার সাথে এতোক্ষণ কথা বললাম উনি হলেন মো. নাদিম সরোয়ার! বলতে গেলে দ্যা পার্ফেক্ট ম্যান। সবকিছু গোছালো হতে হবে ওনার জন্য। সম্পর্কে উনি আমাদের কিছুই হয় না। কিন্তু আমার ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু আর প্রতিবেশির পরিচয়েই ওনার আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া। আর আমি মারোয়া তাহমিন নায়শা। সবচেয়ে অগোছালো একটা মানুষ। আমার মা চিন্তায় শেষ কেননা আমি মেয়ে হয়েও কিভাবে এতো অগোছালো তাই মা বুঝে উঠতে পারে না। আসলে আমি অগোছালো বলতে এমন নয় যে আমি গুছাতে পারি না। আসলে আমি অলসপ্রেমী। হিহি!
একদিন নাদিম ভাই আমাদের বাসায় কি জন্য যেন এসেছিল। বেচারা আমাকে ডাকতে আমার রুমে এসেই দিলো এক চিৎকার। তখন ওনার বেহুশ হবার উপক্রম ছিল। কেননা আমার রুমের অবস্থা এতোই করুন ছিল! খাটে মশারীর এক কোনা টাঙ্গানো, চেয়ারের উপর কাপড় পড়ে রয়েছে। পড়ার টেবিলে বই স্তুপের মতো হয়ে আছে, ড্রেসিং টেবিলে লিপস্টিক, কাজল এখানে সেখানে পরে রয়েছে। আর আমি একটা লুঙ্গি পেঁচিয়ে, ওড়না শাড়ির মতো পেঁচিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে খাটের উপর উঠে সাউন্ড বক্সে জোরে গান চালিয়ে নাচতেছি। আমার তো কোন হুশ ছিল না তখন। নাদিম ভাইয়ের চিৎকারে তার দিকে তাকিয়ে ভয়ে খাট থেকে নেমে দাঁড়ালাম একদম শান্ত একটা মেয়ের মতো। কারন আমি ওনার ওই অগ্নিদৃষ্টি ওয়ালা লুককে অনেক ভয় পাই।
নাদিমঃ এটা কি কোন মানুষের রুম না চিড়িয়াখানা? (অনেক রেগে)
—(আমতাআমতা করে) এটা আমার রুম!
নাদিমঃ তুই কি মানুষের মধ্যে পরিস না?
—অবশ্যই! আমি তো মানুষই! অন্তত আমার বৈশিষ্ট্য তাই বলে!
নাদিমঃ(একটা হাফ ছেড়ে) পাঁচ মিনিটে এই রুম গুছাবি! নয়তো নিহানকে বলে দিবো!
আমি ওনার কথা শুনে কিছুতেই হাসি কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তাই হো হো করে হেসে দিয়েছি। আমার হাসির শব্দে উনি বুঝতে পেরেছেন যে কত বড় হাসির কথা তিনি আমায় বলেছে! তার পরেই এমন এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন যে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুমটা গুছাতে শুরু করি।
আরেকদিন উনি কি মনে করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।তাই বাসায় এসেই রেডি হতে বললেন । কিন্তু আমি তো আমি! কোনমতে একটা কুর্তি পরে চুলগুলো কাটা দিয়ে বেধে পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে এলাম। উনি আমার দিকে জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন৷ এতো তাড়াতাড়ি একটা মেয়ে কিভাবে রেডি হতে পারে। যাই হোক উনি আমাকে দেখে হালকা হেসে গাড়িতে উঠতে বললেন। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো সামনে বসলাম। উনি ড্রাইভিং সিটে বসে খেয়াল করলেন আমি সিট বেল্ট বাধি নি তাই উনি আমার দিকে একটু ঝুকে বেল্ট লাগাতে লাগলেন! ওইদিনই প্রথম আমার এমন এক অনুভূতি হয়েছিল যা আগে কখনো হয় নি। বুকের ভিতরে কেমন একটা ধুক করে উঠেছিল। আমি একটা ঢোক গিলে চুপচাপ বসে ছিলাম৷ আর উনি গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। খুব সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ওইখানের সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে জায়গাটার খোলা হাওয়া, মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো আমি চোখ বন্ধ করে বাতাসের শো শো শব্দ অনুভব করছিলাম তখনই মনে হলো আমার চুলটা খুলে গেছে। তাকিয়ে দেখি নাদিম ভাইয়ের হাতে আমার চুলের কাটা তার মানে উনিই আমার চুলটা খুলেছে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
—আপনি তো অগোছালো পছন্দ করেন না তাই চুলটা বেধে রেখেছি! খুললেন কেন?
নাদিমঃ কারন এই অগোছালো তুমিটাই যে আমার অনেক ভালো লাগে!
—মানে?(অবাক হয়ে)
উনি শুধু মুচকি হাসি দিয়েছিলেন। আজ আমি বাসর ঘরে ওনার অপেক্ষায় বসে আছি আর আগের সব ঘটনাগুলো মনে করছি। সবকিছুর অনিয়ম হলেও একটা বিষয়ে আমি কখনোই অলসতা করি না। আর তা হলো প্রতিরাতে চাঁদ দেখা! শুধু অমাবস্যার রাতে চাঁদ না দেখে ভুতের গল্প শুনি! আজও চাঁদ দেখা মিস করি নি৷ জানালার ধারে বসে চাঁদ দেখছিলাম এমন সময় মনে হলো আমার পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। হঠাৎ চমকে উঠলেও নাদিমকে দেখে শান্ত হয়ে গেলাম কিন্তু মনের ভিতরটা অশান্ত হয়ে গেলো। নাদিম আমার কাঁধে থুতনি রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! কি মনে করে বলল,
নাদিমঃ কখনো ভাবতেই পারি নি তোমার মতো একটা অগোছালো মেয়ে আমার জীবন গুছাতে চলে আসবে।
—তাহলে জীবনে একটা গোছালো মেয়ে নিয়ে আসতেন!
নাদিমঃ কোন চান্স নেই। আমার এ-ই অগোছালো তুমিটাই দরকার ছিল।(কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে)
—সত্যি বলতে আমি কিন্তু ইচ্ছে করেই অগোছালো থাকতাম!
নাদিমঃ(শান্ত ভাবে) জানিতো! আমাকে বিরক্ত করার জন্য অগোছালো থাকতে।
—(অবাক হয়ে) কিভাবে জানতেন?
নাদিমঃ(আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে) এর জন্যই তো বলি আমার অগোছালো তুমি!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা