রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালার এই প্রথম ঝগড়া লেগেছে। ঝগড়ার কারন জানি না। দূর থেকে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। আমার জানার দরকার ও নাই। আমি টিভি রুম থেকে দৃশ্যটা দেখছি। টেলিভিশন বন্ধ করে চেয়ার এদিকে ঘুরিয়ে বেশ আরাম করে তাদের ঝগড়া দেখছি। সাথে দারোয়ান বদরুদ্দীনরে দিয়ে পপকর্ন আর কোক আনিয়েছি। আমার অনেকদিনের শখ এমন একটা দৃশ্য দেখবো। রুপন্তীর আম্মু রাগ করে প্লেট ভাঙছে আর জরিনা খালা ডিস্কো পাতিল আছাড় দিচ্ছে। টুংটাং শব্দগুলো বেশ দারুণ। মনে হচ্ছে কোন ভারতীয় টিভি সিরিয়াল চলছে। অবশেষে তাহলে মধুর বন্ধন টা ভাঙতে যাচ্ছে। আহা! ঝগড়ার কিছুক্ষণ পর দুজন চুপচাপ। এটা কেমন কথা। মজাটায় গেল বোধহয়। আমি এগিয়ে গেলাম আগুনে এট্টু পেট্রোল ঢালার জন্য।
কি হয়েছে তোমাদের সকাল সকাল কি জন্য ঝগড়া করছো? জরিনা খালা বলে উঠলো, দেহেননা ভাইজান আফায় কইতাছে অপু ভাই নাকি সেরা। কিন্তু আঙ্গো মামুন রে আফায় দেহেনা। রুপন্তীর আম্মু পাল্টা উত্তর দিল, উহ হ আইছে মামুনের চামছা। অপু ভাইয়ের ভিডিও দেখছো। কতো সুন্দর করে ভিডিও বানায়। আর মামুন্না এক্কান বস্তুির পোলা। দেখছেননি ভাইজান মামুনরে বস্তির হোলা কইছে। এক মিনিট একমিনিট!!! এই অপুভাই আর মামুন কেডা? আরে রুপন্তীর পাপ্পা আপনি অপু ভাইরে চিনেন না। ওই যে আমাদের দেশরে রিপ্রেজেন্ট করছে যে পোলাটা লাইকি ভিডিও বানায়। আরে রাখেন, দেশরে রিপ্রেজেন্ট কইরছে আঙ্গো মামুন। এই দেহেন ভাইজান! ভিডিও দেখলাম লাল সাদা চুল ওয়ালা এক ছেলে গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে যাচ্ছে।
রুপন্তীর আম্মু একটা দেখালো শালায় দেখি কথা বলার আগে হাসে। তাদের চুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে বাঁশখালী থেকে কিনে আনা ঝাড়ুর কিছু অংশ। এরা কি প্রতিবন্ধী? এটা বলার সাথে সাথে রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা আমার উপর রেগে গেল। জরিনা খালা কইলো, ও ভাইজান মুখ সামলে কথা কন আমরা হেতাগো ফ্যান! আপনি কি জানেন রুপন্তীর পাপ্পা? এরা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতেছে বহিঃবিশ্বে। আমার জানার দরকার নাই! তোমাদের প্যাচাল বন্ধ করো। রুপন্তীর আম্মু বললো, না বন্ধ করবো না। আমি ভাবছি রুপন্তীকে অপুভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিবো। জরিনা খালা পাল্টা আক্রমণ করলো, না রুপন্তী মামুনরে বিয়া কইরবো। এদের মধ্যে আবার ঝগড়া লেগে গেল।
আমি চিল্লাইয়া বললাম, আরে তোমাদের এসব থার্ড ক্লাস পোলাপাইনরে রুপন্তী বিয়ে করবে না। তাকে আমি বিসিএস ক্যাডার বিয়ে করাবো। জরিনা খালা বললো, আইচ্ছা রুপন্তীরে ডাহেন এহনি দুধ আর হানি ক্লিয়ার অই যাইবো। রুপন্তী …. অ্যাই রুপন্তী! জ্বী পাপ্পা! ডাকছো আমায়? সাথে সাথে রুপন্তীর আম্মু বললো, ওই তুমি অপুভাইরে বিয়ে করবা না। জরিনা খালা কইলো, না তুই মামুনরে বিয়া করবি। রুপন্তী বললো, না আমি এদের কাউরে বিয়া করতে পারবো না। আমি রিপনকে ভালোবাসি! আমরা তিনজনে ত্রি গলায় বললাম, রিপন ক্যাডা আবার? রুপন্তী বললো,
তুমি আমি ফুলের কলি ফুটবো একসাথে তোমার আমার দেখা হবে ফুলশয্যার রাতে ……….
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা