প্রেগন্যান্ট তাই রান্নাও করা যাবে না।” মুখ মলিন করে বলে।
– আজ আমার শরীর ভালো না।বাইরে থেকে কিছু খেয়ে নিবেন।
– আর কোনো মেয়ে মনে হয় এর আগে প্রেগন্যান্ট হয় নায়। তুই নিজেই প্রথম নাকি?
কথা গুলো অনেক বেশি রেগেই বলে ছিলাম।প্রতিদিন সকালে না খেয়ে অফিস যাওয়াটাও বিরক্ত লাগে। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমেছে।আশে-পাশের সব কলিগ চলেও গেছে তাদের বাসায়।জানালার গ্লাসে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পরছে, কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে চোখ রাখলাম আমি।আকাশে কালো মেঘ।আজ ছাঁতা আনতেও ভুলে গেছি।বউয়ের উপর রাগ করে কাজ করতে করতে বুঝতেই পারিনি কখন সন্ধ্যা হলো আর কখনোই বা রাত! বৃষ্টি নামতে এখনো মিনিট দুয়েক সময় আছে।একটা রিকশা পেলেও পেতে পারি।গেইটের বাইরে পা রাখতে ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে গেলাম।কোনো রকম ফাইল দিয়ে মাথা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছি।দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাপটাতে ভিজে শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
শীতে থরথরিয়ে কাপছিলাম।নাক থেকে সর্দি পরছে।বাসায় ফেরার পর কাপড় বদলিয়ে ঘুমাই।মাঝ রাতে যখন আমার বউ জড়িয়ে ধরে, সে গায়ে হাত রাখতেই বুঝতে পারে প্রচন্ড জ্বর আর সর্দি। সেই বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তিন দিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনি আর এই তিন দিন আমার বউ রাত জেগে জলপট্টি দিয়ে গেছে।আমি বুঝতে পারি নিজের ভুল গুলো।আমার উচিত হয়নি ওর সাথে এমন ব্যবহার করা।সামান্য একটা জ্বরের কারণে যদি তিন দিন এত কষ্ট পাই। তাহলে বউ গর্ভ অবস্থায় প্রতিদিন কতটা কষ্ট পাচ্ছে।১০টা মাস সে কিভাবে সহ্য করবে ব্যাথা। পর দিন সকালে হঠাৎ আমার হাতে “চা” দেখে চমকে গেলো।ঠোটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে।মুচকি হেসে বলে…
– তুমি চা বানালে?
– কেন, স্বামী হয়ে কি চা বানানো পাপ।মনে করো ছোট একটা গিফট।কিছুটা সময় দিলাম তোমাকে।
– পাপ নয় তবে তোমার অফিসের কি হবে।তুমি তো ১০ মিনিট লেইট করছো আজও।
– সারা জীবন অনেক টাকার পিছনে ছুটেছি।এখন না হয় পরিবারের সাথে কিছুটা সময় ভাগ করে নিই।তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো এখন আমরা আর দুজন না তিনজন।এখন থেকে তুমি রেস্টে থাকবে আমি রান্নার কাজ করব।
– পারবে তো?
– পারব না কিন্ত চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।রান্না করার সময় পাশে থেকে শুধু বলে দিবে কোনটা কতটুকু দিতে হয়,
তাহলেই হবে আর রান্নায় ভুল হলে মাপ করবেন।এই কিছু মাস কষ্ট করে সেগুলোই খেতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় কোনো মেয়ের পাশে কেউ একজনের থাকা খুব বেশি প্রয়োজন।এমন সময় অনেকেই মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে যায়।স্বামী হিসেবেও কিছু দায়িত্ব থাকে। সারা জীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েই বিয়ে করেছি।এই সময় স্বামীর পাশে থাকাই বেশি জরুরি। ভাড়ি কাজ কারা থেকে একদম দূরে রাখার চেষ্টা করি।গোসলের সময় হলে বালতিতে পানি তুলে দেওয়া।পিন দিয়ে দেওয়ালে কাগজ লাগাতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বলে…
– এগুলো কি?
– লিস্ট।খাবার তালিকা থেকে শুরু করে বাচ্চার ডেলিভারি ডেইট সব লেখা আছে।কি খাবার খেলে বাচ্চা সুস্থ্য থাকবে, বাচ্চা ৬ মাস আগে কি খাবে ও পরে কি কি খাওয়াতে হবে। মৃদু হাসলো।
– বাহ! এত কিছু ভাবে জানলে।
এভাবেই একটু একটু করে সময় চলে যাচ্ছিলো।ঘনিয়ে আসছিল ডেলিভারির ডেইট।ঠিক তিন দিন পর প্রসব ব্যাথা উঠলো।আমি বাইরে দাড়িয়ে পায়ে চারি করছিলাম।প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।এক সময় ডাক্তার বাইরে এসে হ্যান্ডসেক করলো।মাস্ক নামিয়ে বলল…
– অভিন্দন আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। চোখের কোণে জল ছলছল করে উঠলো।এটা যে খুশির কান্না।বউয়ের পাশে বসি।মেয়ে’কে আমার কোলে তুলে দিলো।অপলক চোখে তাকিয়ে বলে…
– জানেন মেয়েরা চায় তাদের যেন কখনো পাত্র দেখতে না আসে।তারা সাজতে ভালোবাসা বিয়ের নিয়ম না থাকলে মেয়েরাই বেশি খুশি হতো।কিন্তু দায়িত্ববান স্বামী পেলে বিয়ের পর তার থেকেও বেশি খুশি হয়।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা