ক্লিন শেভ করার কারণে বউ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। অনেক জোর করেছি, সরি বলেছি, ডান্সিং স্টাইলে বেলি ড্যান্স দিয়ে কবিতা শুনিয়েছি। কিন্তু বউ মানেনি। তিনদিন যাবত আমার বন্ধু সাল্লুর বাসায় থাকি। সাল্লু পিউর অবিবাহিত, সিঙ্গেল এবং ছ্যাঁকাখোর। ওর সাথে ব্যাচেলার বাসায় থাকতে থাকতে নিজেকেও কেমন জানি অবিবাহিত মনে হচ্ছে। নাহ! এভাবে আর থাকা যাবেনা। যেভাবেই হোক বাসায় যেতেই হবে। কিন্তু বউকে কিভাবে রাজি করানো যায় ভাবতে লাগলাম। অবশেষে বউকে ফোন দিলাম, রিসিভ করেই বলল….
–জি বলুন কি সমস্যা আপনার?
-ও বউ বাসায় যাব?
–কে আপনি? আর কার বাসায় যাবেন?
-আর কখনো ক্লিন শেভ করবনা। প্রমিস তবুও এভাবে কথা বলোনা।
–ক্লিন শেভ কেন করছিলা? কতবার করে বলেছি করোনা। যাইহোক এই বাসায় কারো জায়গা হবেনা।
-ও মনা এমন করেনা।
–টুটটুট….
বউ ফোন কেঁটে দিছে। হায় কপালরে! উপায়ন্তর না পেয়ে একটা সেলফি উঠলাম। দাঁড়ি মোটামুটি গজিয়েছে। আমিও হালকা ইডিট করে আরেকটুকু কালো আর ঘন করলাম। আহ এখন একটু একটু দাঁড়ি দেখা যাচ্ছে। নিজের প্রতিভা আর কুটনামি বুদ্ধির প্রশংসায় নিজেই পঞ্চমুখ হলাম। বউতো ইমপ্রেস হবেই। ডাটা অন করেই বউকে মেসেজ দিলাম….
— ‘এখন গজিয়েছে আমার দাড়ি, তুমি রেখো না আর আড়ি। আমায় মিষ্টি স্বরে বলো, ‘ওগো স্বুয়ামি, তুমি চ্যালচ্যালিয়ে আসো আমার বাড়ি।’ বউ মেসেজটা দেখেই কয়েকটা হাসির ইমুজি দিলো। হাসির ইমুজি আর নাচিং স্টিকার দেখেই বুজলাম বউ আমার খিলখিল করে হাসছে। ভাবতেই দিলমে লাড্ডু সিঙ্গারা ফুটে একাকার অবস্থা। মনে হয় বললাম কাজ হয়েছে। বউ রিপ্লে দিলো….
-ভাবা যায় এগ্লা।
–কেন কি হয়েছে?
-চিল্লায়া মার্কেট ফাওন যায়? তুমি পারোও বটে…হিহিহি পাগল একটা।
–হুম পাগল বলেইতো বাসা থেকে বের করে দিয়েছো।
-আহারে টুম্পার আব্বু রাগেনা, এটা তোমার শাস্তি হু।
–এখনতো দাঁড়ি গজিয়েছে। মাফ করণ যায়না?
-এগ্লা পিক ইডিট করা যায়।
–মানে?
-তুমি যে এই পিক ইডিট করছো সেটা আমি জানি।
–কেমনে কি?
-কারণ আমি তোমার বউ হিহিহি….
আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম কিন্তু বউ বাসায় যেতে বারণ করলো। অনেক বুঝালাম কাজ হলোনা। বারবার ভুল করলে কেই বা মানবে। মোটামুটি একটা শিক্ষা হয়েছে। বউহীন নিজেকে বড্ড একা লাগে। রাত হলেই মিস করি। আজকে খেলা হলোনা লুডু। বিকেলে সাল্লু সহ বিছানার উপর বসে বসে ফেসবুকিং করছি। ট্রুথ, ডেয়ার একটা পোস্ট করলাম। অনেকেই ডেয়ার নিচ্ছে কেউ ট্রুথ আমিও মজা করছি আড্ডা দিচ্ছি। একটু পর সেই পোস্টে বউ কমেন্ট করেছে, আমি ডেয়ার নিলাম। বিয়ের পর যতগুলো ট্রুথ, ডেয়ার পোস্ট দিয়েছি সেখানে বউ একবারো ডেয়ার নেয়নি। আজকে নিলো কাহিনী কি? তারমানে আমি যা যা বলব তাই করবে? আহা শান্তি। আমি রিপ্লে দিলাম….
-তোমার স্বামীকে ক্ষমা করে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাও। আর বাসায় গিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে পেট পুরে বিরিয়ানি খাওয়াও। আমার রিপ্লেতে বউ অবাক হওয়ার ইমুজি দিলো। তারপর রিপ্লে দিলো….
-বাপরে কি ডেয়ার, বউ পাগল নাকি আপনি?
-অতকিছু বুঝিনা, তুমি ডেয়ার পালন করো। রিপ্লে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বউয়ের ফোন। রিসিভ করতেই বলল….
–কই তুমি? কি করো?
-অভিমান করে বসে আছি।
–হিহি, আচ্ছা অভিমান করতে হবেনা। বারান্দায় আসো।
-মানে?
–আসতে বলেছি আসো।
আমি সাল্লুর বাসার বারান্দায় গেলাম। দেখি জান্নাত রাস্তার পাশে রিকশায় বসে আছে। অবাক হয়ে গেলাম জান্নাতের এমন এমন কর্মকাণ্ডে। জান্নাত আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করলো, বললাম….
-তুমি এখানে?
–তোমাকে নিতে আসলাম। আর আমি জানতাম তুমি আমাকে অমন ডেয়ার দিবা।
-কেমনে কি?
–অত ভাবতে হবেনা, এক্ষুণি নিচে নামো। আমি আর এক সেকেন্ডও দেরি করলাম না। তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে আসলাম। জান্নাত আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসা শুরু করলো। আমি আবারো নতুন করে সেই হাসির প্রেমের পরলাম। জান্নাত বললো….
–চলো আজকে ঘুরব।
-কোথায়?
–সারা শহর ঘুরবো? সমস্যা?
-উহু চলো…
তারপর দুজনে রিকশায় করে সারা শহর ঘুরলাম। দিব্যি আছে আমাদের দিনগুলো। সেই সম্পর্কের শুরু থেকে এতটুকুও ভালোবাসা কমেনি আমাদের মাঝে। বরং আরো বেরেছে। ঝগড়া, খুনসুটি সবমিলিয়ে সুখী দম্পতি যাকে বলে…মাঝেমাঝে ভাবি এত ভালোবাসা কি আমার কপালে লেখা ছিলো? অবাক হই, ভাবতে থাকি। জান্নাত ঠিক সেই সময় আমার পাশে বসে, আলতো করে আমার কাঁধে মাথা রাখে। অনুভূতি গুলো সত্যিই অদ্ভুত। বাসায় ফিরতে আমাদের সন্ধ্যা হলো। জান্নাতকে বললাম বিরিয়ানি রান্না না করতে। এমনিতেই সারা বিকেল হাবিজাবি খেয়েছি। পরদিন সন্ধায় অফিসে বসে ফেসবুকিং করছি। দেখি জান্নাত পোস্ট করেছে ট্রুথ, ডেয়ার। আমি বীরপুরুষের মতন ডেয়ার নিলাম। জান্নাত আমার কমেন্টে হাহা রিয়াক্ট দিলো। রিপ্লে দিলো….
–বাসায় এসে লুঙ্গী পরে লুঙ্গী ড্যান্স দাও। সেটা আমি ভিডিও করব তারপর ফেসবুকে আপলোড দিব। বউয়ের রিপ্লে দেখে আহাম্মক হয়ে গেলাম। এইটা কোন কথা? হাউ ফাইজলামি অফ দা সন্ধ্যা? রিপ্লে দিলাম…..
–হুর খাচ্চুন্নি এটা কোন ডেয়ার হলো?
-হ্যাঁ এটাই শাস্তি, না মানলে স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট করব তুমি মিথ্যুক। অলরেডি বউয়ের রিপ্লেতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেছে। বলছে, ভাইয়া না মানলে ভাববো আপনি ভীতু। আমি পুরাই আবুল হয়ে গেলাম। বউকে ফোন করে বললাম এটা পারবনা অন্যটা দাও। বউয়ের এক কথা না মানলে কখনো আর বিরিয়ানি রাঁধবেনা। পরলাম মাইনকা চিপায়। বিরিয়ানি হীন রুবেলের বেঁচে থাকা অসম্ভব। এবার মনে মনে ভাবলাম জীবন ভালোবাসার বদলে বাঁশময়। বাসায় ফিরতেই বউ মুচকি মুচকি হাসা শুরু করলো। আমার অবস্থা তখন চুরি করে মাছ খাওয়া বিড়ালের মতন। মুখটা চুপসে গেছে। বউকে বললাম….
–আমার গুলুমুলুটা কত কিউট, ভালোবাসি গুলুমুলু।
-হয়েছে পাম দিতে হবেনা। ডেয়ার পালন না করলে খবর খারাপ আছে।
–এভাবে মানইজ্জত নিয়ে টানাহেঁচড়া করছো কেন?
-আমি অতকিছু বুঝিনা, তোমার ডেয়ার আমি পালন করছি এবার তুমি আমার ডেয়ার পালন করবা।
–এটা পসিবল না বউ অন্যটা দাও।
-তাহলে কখনো বিরিয়ানি রাঁধবনা , রাজি?
নদীর একুল ও হারিয়েছি ওকুলও। কি করব বুঝতে পারছিনা। বউয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। তার মুখে হাসি। উপায়ন্তর না পেয়ে লুঙ্গি পরলাম। বউ মোবাইল হাতে নিলো ভিডিও করার জন্য। সাউন্ড বক্সে গান জুরে দিয়ে ড্যান্স শুরু করলাম ‘ডামিকোটা সিটা আহ আহ ডামিকোটা সিটা আহ! ঐ ইয়ে ক্যা ডামিকোটা সিটা আহ ! ডামিকোটা সিটা আহ আহ! পুউউউউ আমার নাচ দেখে বউ উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো। হাসতে হাসতে গড়াগরি খাওয়ার মতন অবস্থা। হাসির ঠেলায় চোখে পানি বের হয়ে হয়েছে। প্রসুর রাগ হচ্ছে মনে মনে বললাম খাচ্চুন্নি মর। বউ হাসি আটকিয়ে রাখতে পারছেনা। আমার রাগ দেখে বউ পাশের রুমে গিয়ে হাসা শুরু করলো। খুব অভিমান হলো। কিছুক্ষণ পর শ্বশুর আব্বা ফোন দিলো, সালাম দিতেই বলল….
–জামাই তোমার এই কাজ?
-কি কাজ?
–এত বড় হয়েছো বাচ্চামি গেলোনা, হাহাহা…যাই বলো ড্যান্স টা দারুণ হয়েছে।
শ্বশুরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে লজ্জায় পরলাম। তারমানে বউ এটা সত্যি সত্যিই আপলোড করেছে। ফ্রেন্ডস থেকে শুরু করে সবাই ফোন দিয়ে মজা নিলো। একরাশ অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। বউ অনেকবার ডেকেছে ইচ্ছে করেই কথা বলিনি। সকালে মিষ্টি কণ্ঠে কারো গানের গুনগুন আওয়াজে ঘুম ভাংলো। ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি খাবার টেবিলে জান্নাত বসা। তার পরনে কলাপাতা রং এর শাড়ী। টেবিলে সুন্দর করে প্লেটে বিরিয়ানি রাখা। জান্নাতের মুখে মুচকি মুচকি হাসি। অপরূপ লাগছে তাকে। আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। যতই রাগ করি না কেন। এই মেয়ে এক নিমিষেই সেটা শেষ করে দিবে। আমিও মুচকি হেসে ফ্রেস হতে গেলাম। এবার ইচ্ছেমত বিরিয়ানি কুপামু। ভালোবাসি বউ, ভালোবাসি বিরিয়ানি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা