গোপন-প্রেম

গোপন-প্রেম
-কিরে হারামজাদা রাস্তায় বাইক চালাস নাকি প্লেন চালাস? ধাক্কা দিলি কেন রিক্সায়? আমি হেলমেট পরা তাই বোধহয় আমারে থাপ্পড় টাই শুধু মারা বাকী ছিলো। যেভাবে চিল্লায়া উঠছে মেয়েটা আমি ভয়ে আয়তুল কুরসি পড়া শুরু করছি।
-আসলে সরি। আমি খেয়াল করি নাই।
-তা খেয়াল করবেন কেন? বাপ একটা বাইক কিন্না দিছে সেই নিয়া এত ফুটানি আর ভাব নিয়া চালাইলে তো এখানে সেখানে ধাক্কা মারবেনই। ফকিন্নি কোথাকার।
-আমি সরি বললাম তো। আর কি করতে হবে?
-এরপর থেকে চোখ কান খুলে বাইক চালায়েন। যত্তসব … গরু ছাগল গুলা বাইক নিয়া রাস্তায় নামে।
মেয়েটা বিড়বিড় করে আরো কি কি যেনো বলতে বলতে গেলো। ইয়া আল্লাহ এইটা কি আসলেও মেয়ে ছিলো। এত ভয় আমি যদি আম্মাকে পাইতাম তাহলে আমি জীবনে অনেক কিছু করতে পারতাম। মেয়েটা রিক্সা নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি বাইক এর স্টার্ট বন্ধ করে বেক্কলের মত তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে পরিচিত কেউ যাচ্ছে তাকে ধরা উচিৎ … যেন তাকে আরেকবার পাওয়া না গেলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে টাইপ। কিন্তু যেই বদমেজাজি মেয়ে রাস্তায় না আবার মানুষ দিয়ে মাইর খাওয়ায়া দেয় ভয় লাগছিলো। কেন যেন খুব সাহস নিয়ে মেয়েটার পিছনে রওনা হলাম। কিন্তু তার রিক্সার বেশ দূরে দূরে আমার বাইক। কি করবো জানের আর ইজ্জতের ভয় কার না থাকে? পাশাপাশি ও যেতে মন চাচ্ছিলো কিন্তু ঐ যে মেয়েটার প্রথম চেহারা দেখেছি ঝগড়া মার্কা মুডে তাই ভয় পাচ্ছিলাম । কিন্তু মেয়েটা কিন্তু মিষ্টি খুব মিষ্টি আমি যে কেন মেয়েটার পিছনে যাচ্ছিলাম সেটা আমি কাল পর্যন্ত জানতে পারি নাই।
আজ জানতে পেরেছি। যার কথা বলছি তার নাম তনু। আজকেই তার বাসা থেকে বিয়ের ব্যাপারে তার মায়ের সাথে কথা বলে আসলাম। চলে যাই এই তনুর সাথে এতদূর সম্পর্ক কাছে আসার গল্পে। সেদিন বাইক নিয়ে পিছনে পিছনে গেলাম তনুর বাসা পর্যন্ত। অনেকগুলা বাজারের ব্যাগ নিয়ে নামলো রিক্সা থেকে। ইচ্ছা করছিলো হেল্প করি কিন্তু যেই চিৎকার মারে এই মেয়ে ভয়েও সামনে যাওয়ার সাহস নাই আমার। কিন্তু আমি এই মেয়ের পিছনে কেন আসলাম তখন আমার মাথায় একদমই আসলো না। কতক্ষণ বেকুবের মত দাড়িয়ে থেকে চলে আসলাম। ঐদিন আর বাইরে কোথাও আড্ডা না মেরে বাসায় চলে গেলাম… আম্মা আমাকে এত তাড়াতাড়ি বাসায় দেখে অবাক।
-কিরে তোর সাঙ্গোপাঙ্গোরা আজকে তোকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো।
-না আম্মা রাস্তায় এক মেয়ে বকা দিছে তাই ভয় পেয়ে বাসায় চলে আসলাম।
-মেয়ে বকা দিছে কেন?
-হুদাই আম্মা। অবশ্য আমার দোষ ছিলো। বাইক এর ব্রেকফল করে রিক্সায় ধাক্কা লাগায়া দিসিলাম। সে রাস্তায় পড়ে গেছিলো তাই বকা দিছে।
-তুই আবার বকা ঝকা ভয়ও পাস?
-আজকে কেন যেন পাইলাম। আম্মা একটু আয়তুল কুরসি পরে বুকে ফু দেও তো।
-সর তো ইফতি জ্বালাইস না। যা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার দেই।
-আচ্ছা আমি আসি। এই আম্মা আব্বা কই?
-জানিনা রে বাবা। আমারে কিছু বলে নাকি?
আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আমার বাসায় আমরা ৫ জন প্রানী। আব্বা ,আম্মা , ফারিয়া (আমার বোন) ,সায়েম (ভাইগ্না) আর আমি অধম ইফতি। ফারিয়ার ১ বছর হলো ডিভোর্স হইছে। নেশাখোর টা ধরে পিটাইতো … আব্বা ডিভোর্স নেওয়ায়া আমাদের কাছে ফেরত নিয়ে আসছে।একটা পুতুলের মত ৮ মাসের ভাগ্নে সহ। ওরা বোধহয় ছোটখালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। ডিভোর্সের পর থেকে ফারিয়া খুব আপসেট থাকে তাই আমরা ওকে এখানে সেখানে ঘুরতে পাঠাই। ওর ডিভোর্স করিয়ে আব্বা ভালোই করছেন। অন্যায় আব্বা একদমই সহ্য করতে পারেন না। আমার আদর্শ তিনি। আমি এম বি এ করার পর বাবার অফিসে বসি। কিন্তু আড্ডার নেশা আমার অনেক।
সেদিন আম্মা বলছিলো আমাকে নাকি ঘরমুখো করতে হলে তাড়াতাড়ি একটা দজ্জাল বৌ ঘরে আনতে হবে। আজকের মেয়েটা কিন্তু ভালোই দজ্জাল ছিলো। আচ্ছা আমি মেয়েটাকে নিয়ে কেন ভাবছি? খাওয়া দাওয়া শেষে আম্মার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে আসার পর টের পেলাম আব্বা ঘরে ফিরেছে। আম্মা আব্বাকে খুব সম্মান করেন। তাদের মধ্যে আমি কোনদিন ঝগড়া দেখি নাই। আব্বা একটু খামখেয়ালি আম্মা তাও খুব যত্নশীল। আচ্ছা সেই কথা বাদ …আমি সেই রাতে বারবার শুধু ওকে নিয়েই ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলা আব্বার সাথে মর্নিং ওয়াক করে আমি অফিসে চলে যাই। ঐদিন আমার অফিসে কোন মনোযোগ নাই। আমার ভাবনা তখন
-মেয়েটার নাম কি?
-এমনে ধমকাইলো কেন আমাকে?
-ঐ বাসায় কি মেয়েটা থাকে?
-বিবাহিত নাকি? (বাজার নিয়ে যেহেতু দেখেছি)
-এই মেয়ে কি দজ্জাল?
-মেয়েটা এত মায়াবী কেন? সে ধমকাইলো আর আমার কেমন শান্তি শান্তি লাগলো…
সন্ধ্যায় কোনরকমে অফিস করেই বাইক নিয়া দিলাম টান। তার বাসার সামনে। হেলমেট পড়েই দাড়িয়ে রইলাম। কত মানুষ আসে যায় ঐ মেয়েটাই শুধু নাই। ব্যর্থ হয়ে ফেরত গেলাম। পরেরদিন আবার একই কাজ করলাম। আবার ব্যর্থ …৩য় দিন দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আর গুন গুন করে গান গাচ্ছিলাম “বন্ধু ৩ দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না” আমি তখন হেটে হেটে গান গাচ্ছিলাম। হঠাৎ চমকিয়ে উঠলাম এক ধমক মার্কা স্বরে
-এই ছেলে সমস্যা কি? বস্তির পোলাপাইন এর মত দাড়ায়া দাড়ায়া গান গাচ্ছেন কেন? আমি পুলকিত তাকে দেখে ইনি সেই ফুলনদেবী যাফ জন্য আমি গত তিনদিন দাড়িয়ে ছিলাম। কি মিষ্টি ধমক দেয় রে বাবা। আমি বলে উঠলাম
-আপনি এভাবেই ৫ মিনিট আমাকে বকেন আমি সেটা মোবাইলে রেকর্ড করি। প্রতিদিন প্লে করে শুনবো কষ্ট করে আর এখানে মশার কামড় খেতে দাড়াতে হবে না।
-মানে কি? এই ছেলে মাইর খাইসো না খাবা? ফালতু পোলাপাইন …
-মারবেন কি আপনি? এই বলে আমি রাস্তায় হাটু গেড়ে বসে হাসি দিয়ে বললাম ” মারেন না প্লিজ” সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল
– যা এইখান থেকে নাইলে সত্যিই পিটামু।
-এই মেয়ে তুমি এত রুড কেন?
-ধুর ধুর আমি কেন আমার সময় নষ্ট করতেছি? এই বলে সে চলে গেলো। আমি তাকিয়ে রইলাম… সে যে বাসায় বিড়বিড় করে গালি দিতে দিতে ঢুকলো আমি সেই বাসার দারোয়ান কে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গেলাম
-মামা উনি কে? চিনেন?
-কোনডা মামা?
-ঐ যে হাসেন খালি ধমকায় ঐ মেয়েটা।
-কেডায় কইসে হাসে না? খালা শুধু তার মায়ের লগে হাসে। অনেক হাসে।
-এই বাসায়ই থাকে?
-হ এই বাসায়ই থাকে। খালা আর খালার মা। দুইজনই থাকে।
-আর কেউ থাকে না? বাবা , ভাই ,বোন ,স্বামী ,বাচ্চা …
-আরে মামা খালার বিয়া হয় নাই। স্বামী আর বাচ্চা আইবো কোইত্থেকা? খুব কৌশলে জেনে নিলাম তিনি আনম্যারিড।
-ওহ আচ্ছা আচ্ছা। আপনার খালার নাম কি?
-তনু খালা।
-বাহ সুন্দর নাম। কি করে আপনার আপা?
-আপনে এত কথা জিগান কেন মামা? কি হইসে?
-আরে মামা বিয়ার বয়স হইসে। বৌ খুজতাছি।
-হাহাহাহাহা মামা বিয়ার আশা ছাইড়া দেন। খালা অনেক কঠিন মানুষ। সে তার বাসায় বিয়ার কথা আইলে পুরা এলাকা মাথায় উঠায়া নেয়।
-হায় হায় কেন কেন? মাথায় কি ডিস্টার্ব আছে?
-না .. খালা বিয়া করতে চায় না।
-এ কেমন কথা। আচ্ছা যাই হোক ঐটা আমি পরে দেখবোনে…আপনি বলেন আপনার খালা কি করে? কই যায় কেমনে কি?
-মামা আমিও চাই খালার বিয়া হোক কিন্তু খালা অনেক রাগী। আমার সাথে রাগ দেখায় না। খালা পড়াশোনা করে। ঐ যে টিকাটুলি একটা মহিলাগো কলেজ আছে না? ঐখানে প্রতিদিন সকালে পড়তে যায়। আর সন্ধ্যায় সে পড়াইতে বের হয়।
-উনার আম্মা?
-উনি খুব নিরীহ মানুষ … স্বামীর শোকে মাঝে মাঝে চিল্লায়া কাইন্দা উঠে বেচারী। চাকরি করে। কোন আত্মীয়স্বজন আসে না। তারা কোন জায়গায় যায় না।
-মামা তোমারে অনেকগুলা থ্যাংকস … আজকের জন্য অনেক তথ্য দিছো। আবার দরকার পরলে তোমারে জ্বালাবো কিন্তু।
-আচ্ছা মামা শুনেন আমি চাই খালার বিয়া হোক। তাইলে হয়ত খালার রাগ টা কইমা যাইবো আর খালার মা হয়ত মেয়েরে বিয়ে দেওয়ার পর মেয়ের খুশি দেইখা আর কোনদিন কানবো না। দারোয়ান লোকটা ও ভালো মানুষ। অনেক গুলা কথা বলে আমার উপকার করলো। এরপর থেকে প্রতিদিন ঐ বাসার সামনে হেলমেট পড়ে বসে থাকতাম। অফিস বাদ দিয়ে কাজ ফেলে তার বের হওয়া আর ফেরার সময় গুলোতে দাড়িয়ে থাকতাম। সে দেখতো কিন্তু শুধু ভ্রু কুচকিয়ে চলে যেতো। একদিন হেলমেট খুলে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। চিনতে পারলো না। দিলো ধমক
-এই ছেলে সমস্যা কি?
-অনেক সমস্যা। আমি আপনেকে প্রতিদিন দেখি। মশা কামড়ায়। পাড়ার আন্টিরা আমার চেহারা মুখস্থ করে ফেলছে কিন্তু আপনি এত হৃদয়হীনা একটু তাকান না।
-যত্তসব ফাইজলামি। যান এইখান থেকে। যান সে চলেই যাচ্ছিলো তাকে ডাক দিয়ে বললাম
-তনু রাগ দিয়ে কোন কষ্ট লুকায়া রাখো অন্তত এতটুক কি জানতে পারি? কি ইতিহাস এই রাগের পিছনে যা কাউকে বুঝতে দেও না? সে আর এক কদম সামনে আগালো না। মনে হলো মেয়েটা বরফ হয়ে গিয়েছে। এরপর খুব ধীর গতিতে এসে বলল
-দেখুন আমার আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কোন ইচ্ছা নাই…আপনি প্লিজ এখানে আর কখনো দাড়াবেন না।
এই বলে সে দাড়ালো না। কিন্তু ঐদিন মেয়েটাকে অন্যরূপে দেখলাম। একটা শান্ত মেয়ে যে না জানি কোন কথা মনে করে চোখ ছলছল করে আমার সামনে এগিয়েছিলো। ভেবেছে আমি দেখি নাই…আমি দেখেছিলাম … এত দিন শুধু ভালো লাগা কাজ করত আজ থেকে ভালোবাসাও কাজ করছে। কি লক্ষী লাগে আস্তে আস্তে কথা বললে মেয়েটাকে। মা শা আল্লাহ … একদম মায়ায় জড়ানো মায়াবতী। এরপর থেকে আমি প্রতিদিন আগের মত সময়ে দাড়িয়ে থাকতাম। দারোয়ানের সাথে গল্প করতাম। ও আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। এভাবে প্রায় ২.৫ মাস পার হয়ে গেলো। একদিন দেখলাম সে তার মাকে নিয়ে দৌড়ে বের হইছে। মনে হলো বিপদ। তার মা শ্বাস নিতে পারছিলো না। তনু রিক্সা খুঁজছিলো কিন্তু পাচ্ছিলো না। দারোয়ান এখানে ওখানে রিক্সার জন্য দৌড়াচ্ছে। তনুর চোখে ভয়। মাকে জড়িয়ে ধরে বারবার বলছে
-ও মা কথা বল না মা।
কি করুন দৃশ্য … আপন কাউকে হারাই নাই। তাই এই অভিজ্ঞতা আমার নাই। আর তনুর তো আপন বলতে আর কেউই নাই। আমি দৌড়ে গেলাম রিক্সা না পেয়ে সি এন জি নিয়ে তনুর মাকে কোলে তুলে তনুকে সহ সি এন জি তে তুলে দিলাম। আর আমি বাইকে করে পিছনে গেলাম। তনু আজ আমাকে কিছুই বলে নি। সে আজ খুব ভীত। ঐ দজ্জাল তনু আজ নাই। হাসপাতালে ইমার্জেন্সিতে ওর মাকে ভর্তি করে আমি বাইরে দাড়িয়ে আছি। তনু অঝোরে কান্না করছে। খুব ইচ্ছা করছে ওকে জাপটে ধরে বলি “চিন্তা কইরো না পাগলি সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু এই সাহস আমার নাই। কেউ দেখলে বলবেই না এই মেয়েটাই সেই মেয়েটা যে রাস্তায় ছেলেদের ভ্রু কুচকিয়ে ধমকায়। ডাক্তার ঔষধ দিয়ে বললেন
-তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা তাই হয়ত কিছু নিয়ে বেশি চিন্তা করছিলেন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিলো। আপনারা চাইলে বাসায় নিতে পারেন। আমি তনুকে জিজ্ঞেস করলাম
-কি করবা? বাসায় নিবা নাকি মা ভর্তি থাকবে?
-বাসাতেই নেই। আমি খেয়াল রাখবো। আমরা ওর মাকে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে গেলাম। ওর মা অজ্ঞানের মত ঘুমাচ্ছে। তাকে সি এন জি থেকে নামিয়ে বাসার উপরে কোলে করে নিয়ে দিয়ে আসলাম। সেদিন প্রথম তনু বলেছিলো
-চা খেয়ে যান। আমি খুশি হব নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। একদিন তনু এভাবে আস্তে করে আমাকে ডাকবে এটা আমার ২.৫ মাসের স্বপ্ন।
-হুম খাওয়া যায়।
-আপনি মায়ের পাশেই বসেন। আমি চা করে আনি তনু রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় ফিরে তাকালো। উফফফফ এত মায়াবী কিভাবে হয় একটা মানুষ? আমি তনুর মায়ের মাথার পাশে বসে আছি। তিনি ঘুমাচ্ছেন। তনু চা নিয়ে আসলো।
-নিন আপনার চা।
-আমিও কি বোকা। এসবের মধ্যে আবার চা খেতে বসে গেলাম।
-না ঠিকাছে।
-আন্টির প্রবলেম কতদিন ধরে?
-যেদিন থেকে আমার মাকে তার প্রেমিক ছেড়ে গিয়েছেন।
-মানে ঠিক বুঝি নাই।
-আমার বাবা নাই।
আমি যার মেয়ে সে আমার মায়ের প্রেমিক ছিলো। তাদের বিয়ে হয় নি। তিনি আমাকে ৪ মাস বয়সে আমার মায়ের গর্ভে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। আর আসেন নি। আমি খেয়াল করে দেখলাম তনু কাঁপছে। কেন যেনো মনে হচ্ছে এই গল্পটা সে প্রথমবারের মত কাউকে বলছে
-তারপর?
-মাকে নানীর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। মা আমাকে জন্ম দিবে বলে। এরপর থেকে মা ই আমার সব।
তনুর চেহারা তখন একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মত হয়ে গিয়েছে যে তার শেষ সম্বল হারানোর ভয়ে আতংকিত।
-কান্না কইরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আন্টির খেয়াল রেখো। আর আমার নাম্বার রাখো। কোন দরকার হলে জানিয়ো। আমি উঠে চলে আসছিলাম। পিছন থেকে তনু ডেকে বলল
-এইযে আপনার নামটা? কি অদ্ভুত মেয়েটা আমার নামও জানে না।
-আমার নাম ইফতি। আসি আমি।
সিড়ি দিয়ে নামার সময় যতবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম দেখলাম তনু আমার দিকে মায়ার চোখে তাকিয়ে আছে। দারোয়ান মামা আমার দিকে মিটিমিটি হাসে সম্পূর্ণ রাস্তা আমি এভাবে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বাসায় ফিরেছি।
আমি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলছিলাম। এত মায়া দিয়ে তাকিয়ে ছিলো ঐ মায়া ভুলার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেয় নি। পরেরদিন তনুর মাকে দেখতে গেলাম বাসায়। তনু তার বান্ধবীর ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলো…আন্টি অনেক নীরব মানুষ …চেহারায় একটা অসহায়ত্বের ভাজ তার কিন্তু এত সুন্দরি তিনি বলার বাইরে। আস্তে আস্তে তনুর সাথে আমার কথা বাড়লো। মাঝে মাঝে তাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসতাম ক্লাশে। মাঝে মাঝে বাজারে যেতাম ওর সাথে। ও বাজার করতো আমি তাকিয়ে দেখতাম। আমার সাথে মেয়েটা এখন আর মেজাজ দেখায় না। মাঝে মাঝে ঘাড়ে হাত দিয়ে বাইকে বসে। একদিন বাসায় নামিয়ে আসার সময় ওকে বললাম
-তনু একটা কথা ছিলো।
-জ্বী বলুন।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা তুমি বুঝো?
-আমার মায়ের সাথে যা হয়েছে নিসন্দেহে আমি চাইনা সেটা আমার সাথে হোক। আমি বিয়ে করবো না। যতদিন বাঁচবো মায়ের দেখাশোনা করবো।
-মায়ের দেখাশোনাটা দুজন মিলে করলে হয় না?
-মানে?
-আমার বৌ হয়ে যাও।
-আমার মাকেও তার প্রেমিক বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো। আমি তনুর কাছে গিয়ে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললাম
-আমি একজন ভালো মানুষ কিনা জানিনা। আমার পরিবার অনেক ভালো। তারা আমাকে এই শিক্ষা দেয় নি তনু। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। তুমি একটু ভেবে দেখো। তাহলে আমি আমার বাসায় বলে তোমাদের বাসায় আসবো।
আমি আর কিছু না বলে বাইকে স্টার্ট দিলাম। লুকিং গ্লাসে দেখলাম তনুর চোখে আমাকে আটকানোর টান কিন্তু ওর মায়ের সাথে যা ঘটেছে সেই ভীতি তাকে বারবার আটকাচ্ছে। মেয়েটাও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল…
বিয়ের জন্য একেবারেই সময় নিবো না। তনু যেই ভয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে না সেটা আমি জানি। তাই সরাসরি তনুর মা এর সাথে কথা বলার জন্য পরেরদিন প্রিপারেশন নিলাম। তার আগে আমার বাসায় কথা বলাটা জরুরি। বিশেষ করে আব্বার সাথে। আব্বা আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট দিয়েছেন। এবারও আব্বার সাপোর্টের আশায় আমি। তনুর বাসা থেকে সোজা আমার বাসায় গেলাম।
আম্মা আমাকে শেষ ৩ মাস ধরে বেশ লক্ষ্য করেন। সে খুব খুশি আমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি। আগে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে অনেক রাত করতাম। এখন সেটা করি না। আম্মার কাছেও এখন লক্ষী। কেউ তনুর সাথে বিয়ের ব্যাপারে না করবে না ইন শা আল্লাহ। তনু আমার বাসায় বৌ হিসেবে এসে ভালোই থাকবে। সবাই আদর করবে। আব্বা আম্মা দুইজনই মেয়ের মত আদর করবে। বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এরপর আগে আম্মার সাথে বসলাম। আম্মাকে সব বললাম কিন্তু আম্মাকে বলেছি তনুর বাবা মারা গিয়েছে। আম্মা অনেক খুশিই হলেন। এরপর আব্বার সাথে কথা বলার পালা। আব্বা টিভি দেখছিলেন। আমি পাশে গিয়ে বসলাম
-আব্বা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।
-তাই নাকি? মেয়ে কোথায় থাকে? কি করে?
-আব্বা ওরা মতিঝিল থাকে…ও এবার অনার্স ৩য় বর্ষে আছে।
-বাসায় কে কে থাকে?
-ওর মা আর ও।
-বাবা নাই? আর ভাই বোন?
-না আব্বা ওর বাবা নাই। ভাই বোনও নাই।
-আহারে একদম এতিম মেয়েটা।
-জ্বী আব্বা।
-আমার কোন সমস্যা নাই। তোর পছন্দ হলে আমরা গিয়ে কথা বলবো। আমি খুশি হচ্ছিলাম কিন্তু আব্বাকে আংশিক সত্য বলার জন্য খুব খারাপ লাগছিলো। তাই আব্বাকে আবার বললাম
-আব্বা আরো কিছু বলার ছিলো।
-বল ইফতি।
-আব্বা তনুর বাবা মানে তনুর মা এর ……
-কি হইসে?
-আব্বা তনুর মা অনেক ভালো মানুষ .. তার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে তনুর মাকে একজন ধোকা দিয়ে চলে গিয়েছিলো। বিয়ে করে নাই। তনুর বাবা নাই আব্বা। আব্বা বসে ছিলেন। উঠে দাড়ালেন। আমাকে খুব জোরে ধমক দিয়ে বললেন
-আমার ঘরে এমন অপবিত্র কোন জারজ সন্তানের জায়গা নাই। এই ব্যাপারে আর কোন কথা আমি বলতেও চাই না। শুনতেও চাই না। আব্বা উঠে তার রুমে যাচ্ছিলেন। আমি বললাম
-আব্বা আমি তনুকে অনেক ভালোবাসি। যা ঘটছে এতে ওর কোন দোষই নাই। আপনি যদি আমাকে বিয়ের ব্যাপারে সাপোর্ট না দেন তাহলে হয়ত প্রথম এবং শেষবারের মত আমাকে আপনার অবাধ্য হতে হবে।
-তুই যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে করিস ইফতি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-খারাপ ভালো তো জানা নাই আব্বা। আপনেকে অনেক সম্মান করি তাই আপনাকে সত্য বলেছিলাম। মিথ্যাও বলতে পারতাম। তা করি নাই। আপনি আমাকে মাফ কইরেন… এই প্রথমবার আপনার কথা রাখতে পারবো না আব্বা।
-ইফতি তোর গায়ে আমার হাত উঠার আগে বের হয়ে যা। যেই মা বিয়ে ছাড়া কোন পুরুষের সাথে অবাধ সম্পর্ক করে তার মেয়ে আর কতটা ভালো হবে এটা একটু ভেবে নিস।
-আব্বা আপনি আমার আব্বা হন তাই আমার আপনেকে মুখে মুখে উত্তর দেওয়া সাজে না। তবে তনুকে নিয়ে কথা আমিও শুনতে পারবো না। আমি আসি।
এই বলে আমি বাসা থেকেই বের হয়ে গেলাম। আম্মা আর ফারিয়া আমাকে বের হওয়ার সময় ধরলেন কিন্তু আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তাই বের হয়ে গেলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। রাস্তায় হাটাহাটি আর ফুটপাতে বসে রাত পার করে দিলাম। আব্বার কথাগুলো খুব পীড়া দিচ্ছিলো। আব্বা এমন বলবে আমি কল্পনাও করি নাই। সকালে আমি আমার বাসায় না গিয়ে গেলাম তনুর বাসায়। তনুর বাসার দারোয়ান এত ভোরে আমাকে দেখে বেশ অবাক। এরপর তনুর ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছি। গেইটে টোকা দেওয়ার সাহস নাই। ঘুরে চলে আসছিলাম এমন সময় তনুর মা গেট খুললেন।
-আরে ইফতি তুমি?
-জ্বী আন্টি। আসলে একটু কাজ ছিলো।
-বাবা তনু তো বাসায় নাই। ও গতরাতে এক বান্ধবী জোর করে তার বাসায় ধরে নিয়ে গিয়েছে… আজকে ওর জন্মদিন। এই দিনে ওর খুব মন খারাপ থাকে তাই আমিই ওর বান্ধবীকে বলে ওকে এখান থেকে পাঠাইসি। আমার কান্না দেখলে মেয়েটাও কান্না করত। কি দরকার বলো বাবা?
-আমি আসলে জানতাম না আজকে ওর জন্মদিন …
-তুমি ভিতরে আসো। বাইরে দাড়িয়ে কথা বলতে নাই। আমি ঘুরে ঢুকে বসলাম।
-আন্টি আমার আপনার সাথে কথা বলার ছিলো।
-বলো।
-আন্টি আমি তনুকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
-ইফতি তুমি কি তনুর বাবার সম্পর্কে জানো?
-জ্বী। আমাকে তনু সব বলেছে আন্টি …
-তনুই আমার একটা মাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন বাবা।
-আমি জানি আন্টি। আপনার তনু আমার কাছে দুঃখি থাকবে না।
-বাবা তনুর বাবা আর আমার সম্পর্কের সময় সে ও বলত সে আমাকে দুঃখি করবে না।
সে আমাকে বিয়ে করবে করবে বলে ঘুরত ফিরতো। আমি জানতামই না তার বিয়ে হয়েছিলো । সে ঘরে একটা বাচ্চাও আছে। যখন জানলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। তার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা পাই নাই। সে আমাকে আজে বাজে গালাগালি করে চলে গেলেন আর কোনদিন ফিরলেন না। তনু তখন আমার গর্ভে। বাবা মাও আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলেন। কারণ আমি তনুকে জন্ম দিতে চেয়েছিলাম। এই মেয়েটা ছাড়া আমার কেউ নাই বাবা। ওর এত টুকু কষ্টও আমার সহ্য হবে না। আমি যেই কষ্ট পাইসি তার বিন্দু পরিমান কষ্ট যেন ও না পায় আমি এই দোয়া করি। আমার মেয়েটা রাগী না। কিন্তু ও পুরুষ মানুষের প্রতি খুব ঘৃনা … ও অনেক নরম। নিজেকে শক্তিশালী বুঝাতে এভাবে চিল্লাফাল্লা করে। ও যে তোমাকে পছন্দ করে সেটা আমিও বুঝি। তোমরা ভালো থাকলে আমার কোন আপত্তি নাই বাবা।
-আপনি চিন্তা কইরেন না আন্টি। আমি আছি তো। আমি কথা দিলাম ও ভালো থাকবে।
-কথার তালে তালে তোমাকে নাস্তার কথা বলাই হয় নি। তুমি বসো আমি নাস্তা বানাই।
-না আন্টি আমি নাস্তা খাবো না।
-বসো তুমি নাস্তা বানাই…আর তনুকে একটা ফোন দিয়ে আসতে বলো।
আমরা আজ একসাথে নাস্তা করি তিনজন। আজকে তনুর জন্মদিন অথচ আমি কিছুই আনি নাই ওর জন্য। ভাবলাম একটা চিঠি লিখি ওর জন্য। ভালোবাসি সেটা বলার জন্য। আন্টি নাস্তা বানাতে গেলো। তনুকে ফোন দিয়ে বললাম বাসায় আসতে। আমি তনুর পড়ার টেবিলে বসে কাগজ কলম খুঁজছি। চিঠি লেখার জন্য। একটা সুন্দর ডায়েরি ওর টেবিলে। কিছুতেই লোভ সামলানো যাচ্ছিলো না সেটায় কি আছে তা দেখার। শেষ লেখা পৃষ্ঠাটায় চোখ দিলাম। গতরাতেরই লেখা। “ইফতি বিয়ের জন্য বলেছে। আমি আজ অনেক খুশি।
আমার এই জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহার। আচ্ছা ইফতি কি জানে আমিও ওকে সেদিন থেকে ভালোবাসি যেদিন থেকে খেয়াল করলাম ও প্রতিদিন আমার জন্য দাড়িয়ে থাকে। আমি দেখেও না দেখার ভান ধরে যেতাম। ইফতি কে ভালোবাসি এটা কি ও জানে? ও যে আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এটা কি ও জানে? কাল আমিও ইফতিকে বলবো আমিও ওকে ভালোবাসি। ইফতি আমাকে মায়ের প্রেমিকের মত ছেড়ে যাবে না তো? অনেক ভয় হয়। মা অনেক ধৈর্য্যশীল। আমি তো এত শক্ত না যতটা মানুষকে দেখাই। আমি তো ধোকা সইতে পারবো না। নাহ ইফতি আসলে আমার সাথে এমন করবে না … ও অন্যরকম। ও একটা ভালোবাসা। আমি ইফতিকে ভালোবাসি। ওকে বিশ্বাস করি।”
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময় আমি পার করেছি এই লেখাটা পড়ে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হুম একটা ছেলের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি মেয়েটাকে। আমি যে এটা পড়েছি তাকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। আমি চাই সে সামনে থেকে আমাকে এই কথাগুলো বলুক। আর আমি বলবো “তনু আমি প্রেমিক না বৈধতার অধিকারেই তোমাকে স্পর্শ করবো। তার আগে না। যেই ভয় তোমার মধ্যে ঐ ভয় কে ভুল প্রমান করবো আমি।” আহারে মেয়েটা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। আমি এখন আমার বাসায়। তনুর মুখ থেকে আর ভালোবাসিটা আমার শোনা হলো না। ওর জন্য ওর জন্মদিনের গিফটটা নিতে এসেছি।
তনুর কথা ভাবতে ভাবতে সূক্ষ্ম এক ধারালো ব্লেড আমার হাতের রগটা কখন পার হয়ে গেলো টের পেলাম না।
রক্ত বেয়ে আমার মেঝে থেকে দরজার নিচ দিয়ে যাচ্ছে। আম্মা আর আব্বা আর ফারিয়ার চিৎকার আমার কান পর্যন্ত আসছে। আমি কাল পর্যন্ত জানতাম না তনুর সাথে আল্লাহ কেন আমাকে পরিচয় করিয়েছিলো। আমি আজ জানি। যখন তনুর ডায়েরি রাখতে নিলাম। ভিতর থেকে একটা সাদাকালো কিছুটা নষ্ট হয়ে যাওয়া ছবি চোখে পড়লো। যাতে একজন ভদ্রমহিলা কে জড়িয়ে ধরে আছেন একজন পুরুষ “মহিলাটা তনুর মা আর পুরুষটা আমার আব্বা” বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। বুঝতে বাকী ছিলো না তনুর মায়ের প্রেমিক আমার আব্বা। কিন্তু এমন হতে হলো কেন? শরিয়ত অনুযায়ী তনু আমার বোন হয়ে যায়।
ইসসসসস!! তনু জানলে পাগল হয়ে যাবে। আমি কিভাবে এদের সামনে চোখ তুলে তাকাবো? যেই আব্বাকে আদর্শ ভাবতাম যেই আব্বা তনুকে জারজ বলে দাবি করলেন সেই আব্বাই তনুর মায়ের প্রেমিক। তনুর অবৈধ পিতা। আমার মনে হচ্ছিলো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। শুধু ছবিটা আমার বুকে জড়িয়ে আস্তে করে বেরিয়ে পড়েছিলাম। তনুর মা রান্না ঘরে। তনু এখনো বাসায় ফিরে নাই। তাকে না বলে বের হয়ে আসলাম। দারোয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে কারণ আমার চোখে পানি। খুব ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলাম … বাইক ছাড়া বের হয়েছিলাম রাতে। হেটেই বাসায় গেলাম। তনু ফোন দিচ্ছে। আমি ধরছি না। আমি আমার বাসায় গেলাম। আমার বাসায় ফিরাতে সবাই বেশ খুশি। আমি ডানে বামে না তাকিয়ে বাসায় এসে প্রথমে আব্বার রুমে গিয়ে দেখি আব্বা শুয়ে আছে। আব্বা আমাকে দেখে বললেন
-আমি জানতাম তুই ফিরবি। আমি ছবিটা আব্বার হাতে দিয়ে বললাম
-আব্বা জারজ মেয়েটার মায়ের প্রেমিককে খুঁজে পেয়েছি। আব্বার হাতে ছবিটা দিয়ে আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করলাম।
হুম আমি সব ঝাপসা দেখসি। তনু ফোন দিচ্ছে। আমি দেখছি। কিন্তু রিসিভ করার শক্তি নাই। নাহলে একটাবার হলেও বলতে চাচ্ছিলাম “আল্লাহ তাআলার বিধিবিধান জানিনা তনু। তুমি কে না জেনেই ভালোবেসেছিলাম। আজকের দিনে জন্ম হয়ে তোমার কষ্টের দিন শুরু হয়েছিলো। তোমার কষ্টের কারণ যে ছিলো সে আজ আমার মৃত্যুর পর থেকে কষ্ট পেয়ে যতদিন বাঁচবে প্রতিমুহুর্তে মরবে। তনু ভালোবাসি। ও তনু আমি শরিয়ত বিধি বিধান সমাজ এত কিছু সামলাতে পাড়ার ভয়ে চলে যাচ্ছি। কারণ আমিও একটা কাপুরুষেরই সন্তান।” আমার চোখ বুজে আসছে। আমি আস্তে আস্তে আব্বা আম্মা ফারিয়ার আওয়াজও শুনতে পাচ্ছি না। আমার চোখে শুধু শেষ বারের মত তনুর মায়াবি চেহারার ঝলক দিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস টা ছেড়ে আমার আব্বার শাস্তি নিশ্চিত করলাম।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত